শনিবার রাত ১১:০১, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আকুতি আব্দুল হামিদের

সায়মন ওবায়েদ শাকিল

এই শেষ বয়সেও তার কপালে জুটেনি বয়স্ক ভাতা। আমাদের সকলেরই উচিত, এই অসহায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের পাশে দাঁড়ানো। এই বয়সে এসেও শুধুমাত্র দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আকুতি তার।

জীবন চলে এখন আব্দুল হামিদের বেহালা বাজিয়ে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার শান্তিনগর গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র আব্দুল হামিদ (৮০)। বেহালা বাজিয়ে গান গেয়েই সংসার চালান। বিকাল হলেই পেটের দায়ে বেহালা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে। গ্রাম থেকে বাজারে, স্থানীয় ডাকবাংলোতে বেহালা বাজিয়ে গান গেয়ে মানুষকে বিনোদিত করেন তিনি। এই বয়সেও গান গাওয়াতে তার কোনো ক্লান্তি নেই। কেউ শুনতে চাইলে বেহালা হাতে তুলে নিয়ে গান গাইতে শুরু করে দেন। সংগ্রামের আগে থেকে প্রায় ৪৭ বছর ধরে এ মানুষটি গান গেয়ে চলছেন।

প্রথম জীবনে দুতারা বাজিয়ে গান করতেন। পরে এটি বাদ দিয়ে বেহালা বাজিয়ে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে পুরোদমে গান গাওয়া শুরু করতেন। দিন দিন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকলে এক সময় তিনি গিয়ে বেহালার প্রতি আকৃষ্ট হন। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় উন্নত মানের বেহালা কিনতে না পারলেও থেমে থাকেনি তার জীবন। যে বেহালাটা আছে এটাই ঠিকঠাক করে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এই বেহালা বাজিয়েই গান গেয়ে মানুষের মনকে জয় করে চলছেন আব্দুল হামিদ। গান থেকে উপার্জিত অর্থেই চলে তার সংসার।

গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে যা দেন তাই তিনি গ্রহণ করেন। অর্থ-বিত্তের প্রতি কোনো লোভ নেই তার। বয়সের ভারে অন্য কোনো কাজ করার সামর্থ্য নেই। গানের সুরই সাদামাটা এ মানুষটির জীবন ধন্য করেছে। যৌবনে গ্রামীণ জনপদে ক্ষেত-খামারের কাজ করেই সংসার চালাতেন।

বেহালা বাদক ও গায়ক আব্দুল হামিদের সঙ্গে লেখক সায়মন ওবায়েদ শাকিল

স্ত্রী, তিন মেয়ে ও তিন পুত্রসহ সাত সদস্যের পরিবার তার। গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে যা দেন তাই তিনি গ্রহণ করেন। অর্থ-বিত্তের প্রতি কোনো লোভ নেই তার। বয়সের ভারে অন্য কোনো কাজ করার সামর্থ্য নেই। গানের সুরই সাদামাটা এ মানুষটির জীবন ধন্য করেছে। যৌবনে গ্রামীণ জনপদে ক্ষেত-খামারের কাজ করেই সংসার চালাতেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন পালা গানের দলে বেহালা ও দুতারা বাজাতেন। এগুলো বাজাতে বাজাতেই এক সময় গানের প্রতি তিনি আসক্ত হয়ে পড়েন। আত্মশুদ্ধির পথ খুঁজে নেন গানের মাঝেই।

গান গাইতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য বাউল সাধকের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি নাসিরনগরের শিল্পী ঝাড়ু মিয়া, ওমীয় ঠাকুর, মোহনলাল ঠাকুরসহ অনেকের কাছেই প্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিক ও সকলের প্রিয়- উকিল মুন্সি, বাউল সম্রাট আব্দুল করিম, দূরবীন শাহ, হাসন রাজা প্রমুখ শিল্পীদের গানই বেশি করেন।

বিকেল হলেই জীবিকার সন্ধানে আব্দুল হামিদ বেরিয়ে পড়েন বেহালা হাতে। পথে পথে ঘুরে বেড়ান অচিন মানুষের সন্ধানে। এই শেষ বয়সেও তার কপালে জুটেনি বয়স্ক ভাতা। আমাদের সকলেরই উচিত, এই অসহায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের পাশে দাঁড়ানো। এই বয়সে এসেও শুধুমাত্র দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ার আকুতি তার।

ক্যাটাগরি: বিশেষ প্রতিবেদন,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply