শুক্রবার বিকাল ৪:৩২, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

ঘেট্টো (ghetto) : এক সমৃদ্ধ ইতিহাস

বিশ্ব : নাহিদ হাসান

ঘেট্টো (ghetto) ইতালিয়ান একটি শব্দ। শব্দটি ইংরেজি ছয় অক্ষরে হলেও এর ইতিহাস ও ব্যাখ্যা অনেক বড় এবং সমৃদ্ধ। এই ঘেট্টোর মানে এই রকম বুঝায় যে “কোন একটি নগরের একটি ছোট্ট অংশে বসবাস করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যারা সাধারনত সামাজিক,আইনি ও অর্থনৈতিক চাপের ফলে সেখানে থাকতে বাধ্য করা হয়”। ঘেট্টোর প্রথম প্রথম কোন প্রচার বা এতো মানুষ এই শব্দের সাথে পরিচিত ছিলো না ইতালির ভেনিস শহরের  আশে পাশের মানুষ এটাকে গালি হিসেবে প্রচলন ঘটায় পরে  আসতে আসতে এর প্রচলন সারা দুনিয়াতে ঘটে।ইতিসাসে প্রথম ১৫১৬ সালে ইতালির ভেনিসে এই শহরের প্রথম উদ্ভাবন হয়।পরে ১৮৯৯ সাল নাগাদ অন্যান্য  সংখ্যালঘুগোষ্ঠীর আওতাধীন এলাকা গুলো এই নামে আত্মপ্রকাশ ঘটে সারা বিশ্বে অন্তর্জাতিক ভাবে।

“ঘেট্টো” শহর বলতে আমরা যা বুঝি বা টিভিতে বা প্রচার মাধ্যমে দেখি তা হচ্ছে আমরা হয়তো ভাবি য্ব ১৫১৬ সালে হয়তো ইহুদি সংখ্যালঘুদের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু কালের বিবর্তনে আমরা দেখতে পাই যে শুধু ইটালিতে ইহুদিদের জন্য নয় সারা দুনিয়াতেই এর আওতায় অনেক শহর তৈরি হয় ।

নিম্নে দেওয়া হলোঃ

১। প্রথম “ঘেট্টো”র সৃষ্টি বা উদ্ভাবন হয় ইতালিতে ভেনিস শহরে তা আগেই বলেছি।এটাই প্রথম ইহুদিদের জন্য করা হয় যাতে পর্যায়ক্রমে লোক ইহুদি সংখ্যালঘু  ছিলো :

সাল          =           সংখ্যা

১৫১৬         =           ৭০০

১৫৮১         =           ১০৫০

১৬৪২        =          ৩৩০০

১৭৭০         =           ১৮০০

১৮৭১         =          ২৬৭০

১৯৩৮        =          ২২০০

২।  দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি রিজিম গ্রুপ ইহুদী ও রোমান জনগনকে পূর্ব ইউরোপের শহরগুলোতে আটকে রাখার জন্য কিছু “ঘেট্টো” প্রতিষ্টা করে ।নাৎসি রা তাদের দলিলে এই “ঘেট্টো” কে দস্তাবেজ বা সাইনেজ দ্বারা উল্লেখ করে। ১৯৪৩ সালের ২১ জুন ,হেনরিক হিমলার পূর্ব ইউরোপের সকল “ঘেট্টো” কে নাৎসি দের কন্সেন্ট্রেশন শিবিরে রুপান্তরিত করার আদেশ জারি করেন।

৩। ঐতিহাসিকভাবেই ইহুদিদের বসবাস ছিলো জার্মানিতে ।এটা ছিলো ফ্রাংফুটে। ইউরোপ্রের মানুষ ইহুদিদের ভিন্ন গ্রহের প্রানী মনে করতো। ফলস্বরূপ, ইহুদিদের বেশিরভাগ ইউরোপীয় শহরগুলিতে কঠোর নিয়মের অধীনে  রাখা হয়েছিল। ইউরোপে একমাত্র ইতালির শহর ভেনিসেই ইহুদিরা “ঘেট্টো”তে ভালো ভাবে বসবাস করতো তাছাড়া সারা ইউরোপে যত গুলো ঘেট্টো ছিলো অই গুলোতে ছিলো মারাত্মক দারিদ্রতা এবং তাদের জন্য ছিলো সংকীর্ণ রাস্তা ও ভিড়যুক্ত ঘর।  বাসিন্দাদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা ছিল।

৪। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি উপকূলে ভিবিন্ন উপজাতির সাথে কয়েকটা সংখ্যালঘুদের বসবাস ছিলো। এদের মধ্যে ছিলো আরবদের সাথে ব্যাংসটাউন ,ইতালিয়ানদের সাথে লিচহার্ড ,গ্রীকদের সাথে এরলঊড , আবোরিজিন্সদের সাথে রেডফার্ন। এদের মধ্যে লিচহার্ডের বেশির ভাগ লোক তাদের পরিচয় ইতালিয়ান পেয়েছে। রেডফার্ন অন্যদের বৈষম্য সময় কালে নিজেদের তৈরিকৃত বাড়ির কারনে তারা আদিবাসী পরিচয় পেয়ে গেছে যদিও তারা অধিকাংশই দরিদ্র।

৫। নর্থ আয়ারল্যনাডেও আমরা দেখতে পেয়েছি তারা তাদের জাতীয়তাবাদী ও প্রজাতন্ত্রের পক্ষ থেকে একটি “শান্তি লাইন” যাকে ইংরেজিতে “বেলফাস্ট” বলা হয় ।ঘরের ছোট ছোট বাগানগুলি সুরক্ষিত থাকে কারণ কখনও কখনও অন্য দিক থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়।

উত্তর আয়ারল্যান্ডে, নগর ও শহরগুলিকে জাতিগত, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক লাইনগুলির সাথে দীর্ঘ ভাগ করা হয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের দুটি প্রধান সম্প্রদায় তার আইরিশ জাতীয়তাবাদী-প্রজাতন্ত্রের সম্প্রদায়।যারা মূলত আইরিশ বা ক্যাথলিক বা তার অন্তর্ভুক্ত সম্প্রদায় । ১৯৬৯ সালে এই দুই দলের দাংগার কারনে এই ঘেট্টো আবির্ভূত হয় ।তার ফলে ১৯৬৯ ব্রিটিশ সরকার তাদের সেনা মোতায়েন করে যাতে দুই দলকে পৃথক করা যায়।

৬। যুক্তরাজ্যে জাতিগত ছিটমহলের অস্তিত্ব বিতর্কিত। সাউথহল ব্রডওয়ে  লন্ডনে প্রধানত এশিয়ান এলাকা যেখানে ১২ শতাংশের কম জনগোষ্ঠী সাদা। কিছু লোক এটাকে ” ঘেট্টো ” সাথে মিলিয়ে উদাহরন দেখাচ্ছে কিন্তু বাস্তবে এতদ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতি গোষ্টী ও ধর্মীয় লোকের বসবাস। ২০০১ সালে আদমশুমারী থেকে দেখা যায় ইংল্যন্ড এবং ওয়েলসে ,উভয়  বার্মিংহামে একটি প্রভাবশালী অ-সাদা জাতিগত গোষ্ঠী ছিল, যা স্থানীয় জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ছিল।২০০১ সাল নাগাদ, দুটি লন্ডন বুরোহ – নিউহ্যাম ও ব্রেন্ট – সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ছিল , এবং শহরের অধিকাংশ অংশে বিভিন্ন জনসংখ্যা আছে।

উপরোক্ত, “ঘেট্টো” ছাড়াও এই দুনিয়াতে আরো অনেক “ঘেট্টো” ছিলো বলে ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি তার মধ্যে ডেনমার্ক,ফ্রান্স,মরক্কো, শাঙ্গহাই,ফলিস্তিন,আমেরিকা ছাড়াও আরো অনেক নাম না জানাও ছিলো বলে ধারনা করা হয়।

লেখক : নাহিদ হাসান

ক্যাটাগরি: সারাদেশ

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply