পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার সাক্ষরসম্বলিত অনুলিপি অফিসার ইন চার্জের কাছে জমা দেয়ার পরও এভাবে তাকে ধরে নেয়া এবং হত্যা করাটা নিশ্চয় উপরের নির্দেশ নয়। বরং সোর্স ও গুটিকতক পুলিশ কর্মকর্তার ষড়যন্ত্র। হত্যার পর এসআই নারায়নের রহস্যপূর্ণ মামলাটিও তারই প্রমাণ বহন করে।
একটি বিখ্যাত নদীর (তিতাস) দু’পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ নির্বাক দাঁড়িয়ে। কারণ সাদা পোশাকে হলেও তারা ‘পুলিশ’। থানার নামকরা কর্তা। একটি ছেলেকে নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে, পানিতে চুবাচ্ছে, গায়ের কাপড় এমনকি পরনের লুঙ্গিটাও খুলে ফেলেছে। তারপর সে অবস্থায়ই থানায় ধরে নিয়ে গেছে অসংখ্য পথচারির সামনে দিয়ে। তারচেয়েও আশ্চর্যের বিষয়, এ নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে নির্যাতিতের মা, বোন, স্ত্রী ও নাবালেক সন্তানদের চোখের সামনে। এমনটাই বলছে আলামীনের পরিবার ও এলাকাবাসী। নিরাপত্তারক্ষীরা অপরাধ করলে নাকি প্রমাণ না রেখেই করে। জানা যায়, ঘটনাস্থলে কেউ যেন মোবাইলে ভিডিও করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা ছিল। থানায় ধরে আনার সময় পার্শ্ববর্তী বাজারের (টানবাজার) সব সিসি ক্যামেরাও খুলে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়। এর দুদিন পর নিহত আলামীনের স্ত্রীকে শান্তনা দিতে এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকার সর্দারদের নিয়ে লোকজন বৈঠকে বসলে থানা থেকে তাৎক্ষণিক পুলিশ গিয়ে বৈঠককারীদের তাড়া করে, ডেকোরেটর থেকে ভাড়া নেয়া চল্লিশটি চেয়ার পুলিশ গাড়িতে ভরে নিয়ে যায়। কয়েক সপ্তাহ যার ভাড়া গুণতে হয়েছে আলামীনের অসহায় বৃদ্ধা মাকে।
এ সম্পর্কে মূল নিউজটি পড়ুন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যুবক হত্যা : ওসি-এসআই এর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
মাসদেড়েক পর অনেক দেনদরবার করে সেসব ফেরত আনতে হয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী বলছে আলামীন মাদকব্যবসা ছেড়ে ভালো হয়ে গিয়েছিল। নিহত হওয়ার দুমাস মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ সুপার তাকে লিখিত নিরাপত্তা এবং পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয়। এরই প্রেক্ষিতে সে তাবলীগে সময় দিয়ে বাড়িতে এসে গরু পালন শুরু করে। নদীর পাশে একটি গোয়াল ঘর তোলে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেটার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। পরিবার জানায়, আলামীন শুধরে যাবার পর তার নামে নতুন কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। অন্যদিকে পুলিশের স্বীকৃত দুই সোর্স মাইমল হাটির খোকন ও সুমন এবং তাদের সহযোগী রোকেলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা এবং জেল খাটারও ইতিহাস আছে। মূলত পুলিশের সোর্সরাই এ এলাকার মাদকব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। আলামীন ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ায় তাকে এ নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়।
অন্য এক সূত্র বলছে, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার সাক্ষরসম্বলিত অনুলিপি অফিসার ইন চার্জের কাছে জমা দেয়ার পরও এভাবে তাকে ধরে নেয়া এবং হত্যা করাটা নিশ্চয় উপরের নির্দেশ নয়। বরং সোর্স ও গুটিকতক পুলিশ কর্মকর্তার ষড়যন্ত্র। হত্যার পর এসআই নারায়নের রহস্যপূর্ণ মামলাটিও তারই প্রমাণ বহন করে। যে মামলায় আসামী করা হয় জেলে আটক এবং ভারতে চিকিৎসাধীন ক’জন ব্যক্তিকে। উল্লেখ করা হয় ‘তাদের গুলিতে’ আলামীন নিহত হয়েছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরপর আরও ক’জন মাদকব্যবসায়ী নিখোঁজ ও গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে। সূত্রটি বলছে, যেহেতু একটি হত্যা হয়ে গেছে এবং তা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি ও জানাজানি হয়েছে, তাই এটা ঢাকতে এমন হত্যা আরও করছে। যদিও সেসবের সঙ্গে আলামীনের বিষয়টির সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে।
কারণ ১. আলামীন আত্মসমর্পণ করে শুধরে গিয়েছিল, ২. তার বাবার মৃত্যুর পর তার মানসিক পরিবর্তন ঘটে এবং তাবলীগ ও গরু পালন শুরু করে, ৩. তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী, ছোট তিনটি মেয়ে, বৃদ্ধা মা এবং ছোট তিনটি ভাই নিয়ে মানবেতর জীবন। এমন একটি অসহায় ছেলেকে এভাবে অমানবিক নির্যাতন এবং পরিকল্পিত হত্যার কোনো উপযুক্ত কারণ পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এ নিউজটি গত ২০১৭ এর ১৭ এপ্রিল পাক্ষিক দেশ দর্শনের প্রিন্ট পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল। তখন দেশ দর্শনের ওয়েব সাইট না থাকায় এর কোনো ইন্টারনেট সংস্করণ নেই। এখন দেশ দর্শনের ওয়েব সাইট হওয়ায় সংরক্ষণের স্বার্থে পুরনো এ নিউজটি ওয়েব সাইটে দেয়া হল।
ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া
[sharethis-inline-buttons]