রবিবার দুপুর ২:৫৫, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

উদার ও উন্নত মানসিকতার পরিবার অপরিহার্য

মারিয়া বিনতে দানা

যে পরিবারের গুরুজনেরা উদারচিন্তা আর উন্নত মানসিকতার হন, সে পরিবার অনেক দূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়। আমরা পরিবারের প্রতি অনেক অসচেতন থাকি। আর আশপাশে জ্ঞান ‘বিতরণ’ করে বেড়াই। পরিবারের বিষয়ে বেখেয়ালীপনা দেখিয়ে থাকি। প্রদীপের আলোর মতো নয়, এনার্জি বাল্বের মতো সবটাই আলোকিত করা উচিত। পরিবারের উন্নতিই প্রকৃতপক্ষে দেশ, সমাজ ও জাতির উন্নতি।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হল পরিবার। আমরা মানুষে মানুষে যে পার্থক্য দেখি, এর মূলে রয়েছে পরিবার। একজনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উন্নত, সুদূরপ্রসারী। অন্যজন একই সমাজ, দেশের হয়েও অনেক নিচ; কদাকার। এর প্রায় সবটাই পারিবারিক শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির ফল। আমি বলছি না আমার মতামত সর্বস্বীকৃত। আমি আমার লেখায় আমার দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা থেকেে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করব।

একটা পরিবারই পারে পৃথিবীর সেরা সন্তান তৈরি করতে। আপনারা বলতে পারেন, কেন? এমন অনেকেই তো আছেন, যাদের পিছনে কোনো পরিবার ছিল না। তাদের জন্মেরই কোনো ঠিক ছিল না। অথচ তারা পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছিলেন, হচ্ছেন। হ্যাঁ, আপনার সাথে যখন একটা ভালো পরিবার থাকবে, আপনি আপনার স্বপ্নের সাথে থাকতে পারবেন। আবার যখন আপনাকে নিচে টানার কেউ থাকবে না, আপনি যখন সমস্ত বন্ধন ছিন্ন, মুক্ত ও স্বাধীন হবেন, তখন আপনার সেরাটা পৃথিবীকে দিতে সক্ষম হবেন। যখন একটা পরিবার বিশেষ কোনো একটা দিকে প্রতিষ্ঠিত, আর সে পরিবারের যে সন্তান সে সেদিকেই মনোযোগী, সেখানেই কিছু করতে চায়, তখন তার জীবন থাকে অনেকটা নিরাপদ, নিশ্চিত। ভালো ও উন্নতি করলে আদর-কদর বেড়ে যায়। কত জয়ধ্বনি উঠে তার নামে।

আর যখন সে পরিবারের সন্তান অন্যকোনো মুক্তপ্রাণ, স্বাধীন শাখায় আগ্রহী থাকে, তখনই নেমে আসে কালরাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ। তখন সে বুঝতে পারে, স্বপ্ন বাস্তবায়ন কত প্রকার ও কি কি! তাকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। এই সংগ্রাম তার অনেক সময়, শক্তি, আত্মবিশ্বাস ও স্থান নষ্ট করে দেয়। তাকে শক্তিশালীও করে বটে। আপনারা বলতে পারেন, এত পুরনো একটা বিষয়ে এত কথা বলছি কেন?

আমি আমার লেখাটা একটু দূর থেকে লিখছি। দেশের বাইরে, পাঞ্জাবের জলন্ধর শহরের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি (Lovely Proffessional University) থেকে। LPU সুবিন্যস্ত, বিশাল, আধুনিকতার সমন্বয়ে এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে শালিকের শিস সবসময় শোনা যায়। কাঠবিড়ালী এ গাছ থেকে ওগাছে ঘুরে বেড়ায়। পাঞ্জাবের লাভলী আমাকে ঢাকার ব্যাঙের ছাতা থেকে অনেকগুণ বেশি আনন্দ দিচ্ছে, অ্যাসাইনমেন্ট আর ক্লাস প্রেসারের পরও। যেখানে সত্তর ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থী আইডি কার্ড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ভেতরে ঢুকছেন। আপনার এটেনডেন্স, যে কোনো মেসেজ, তথ্য সাথে সাথেই আপনার হাতের স্মার্ট ফোনে চলে আসছে। সুতরাং নিশ্চয় সেখানকার মানুষ অনেক উন্নত, সেটাই ভাবছেন।

হ্যাঁ, খোলামেলা ছোট পোশাক পরছে, সমকামিকায় বাধা নেই। তো এরা উন্নত নয় কীভাবে? তবে আধুনিক পোশাক আর ভাবের সাথে গলায় মোটা তাবিজ, আঙ্গুলভর্তি আংটি, হাতে নানারঙের সুতা আর পায়ে বেল্টের ন্যায় ফিতা পরা ইন্ডিয়ানদের একটু বেমানান তো লাগেই। পোশাক আর সমকামিতায় এরা ইউরোপিয়ানদের অনুসরণ করেছে সন্দেহ নেই। অন্যদিকে ধর্মীয় কুসংস্কার আর গোড়ামী থেকেও মনে হয় পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেনি। আত্মিক উন্নতির চেয়ে বাহ্যিক উন্নতিতে এরা বেশি মনোযোগী।

পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি সাধনের চেয়ে এরা পারিবারিক অর্থায়নে বেশি আগ্রহী। কিসে সন্তানের ভালো লাগে সেদিকের চেয়ে কী করলে সন্তান বেশি উপার্জন করতে পারবে সেটাই এদের কাছে অধিক মূল্যবান।

যে পরিবারের গুরুজনেরা উদারচিন্তা আর উন্নত মানসিকতার হন, সে পরিবার অনেক দূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়। আমরা পরিবারের প্রতি অনেক অসচেতন থাকি। আর আশপাশে জ্ঞান ‘বিতরণ’ করে বেড়াই। পরিবারের বিষয়ে বেখেয়ালীপনা দেখিয়ে থাকি। প্রদীপের আলোর মতো নয়, এনার্জি বাল্বের মতো সবটাই আলোকিত করা উচিত। পরিবারের উন্নতিই প্রকৃতপক্ষে দেশ, সমাজ ও জাতির উন্নতি।

মারিয়া বিনতে দানা : ভারতের পাঞ্জাব থেকে

ক্যাটাগরি: নারী,  প্রধান কলাম,  সম্পাদকের বাছাই

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

২ responses to “উদার ও উন্নত মানসিকতার পরিবার অপরিহার্য”

  1. দেশ দর্শন says:

    লেখাটা ভালো লেগেছে

  2. ফুয়াদ উদ্দিন says:

    যুক্তি সংগতভাবেই উপস্থাপন করেছে লেখিকা।

Leave a Reply