সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ, ভাবসাব, চলাফেরা, দেখতে শুনতে নাদুস নুদুস, পরিচিতি ব্যক্তিত্ব, দেখলেই বুঝা যায় তার অবস্থান। প্রচুর পরিমাণে গুনগ্রাহী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, অন্যরকম পরিবেশ, এসি বাড়ি-গাড়িতে থাকা চলাফেরা। আদর্শের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ, হোক আস্তিক অথবা নাস্তিক। নাস্তিকরা দেখে আস্তিকদের এমন ভাবের বড় মানুষদের উল্টোপাল্টা আচরণ। আর আস্তিকরা দেখে নাস্তিকবাদী আদর্শওয়ালাদের অপকর্ম। চিন্তাগত মিল- একজনের পিছনে আরেকজনের লেগে থাকা। কেউ কারো বিষয় নিতে পারো না। নেয়ার কথাও নয়।
দুজনের মানসিকতা সম্পূর্ণ বিপরীত। তাহলে সমাধান কী, শুধুই যুদ্ধ? হয় মুখে, নয় রাস্তায়। আসলেই কি তারা যে যার অবস্থানে থেকে যে যার গোত্রের প্রতিনিধিত্বে বা উপকারে ব্যস্ত? মূলত এখানে মানদণ্ড হচ্ছে, নিজের ব্যক্তিগত সুবিধাবাদী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আসলে কেউ যদি আদ্যোপান্ত গবেষণা রাখে তবে এ দু’দলের মধ্যে থাকবে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক। একজন আরেকজনকে পাশে বসিয়ে, চা খাইয়ে আদর্শের মতবিনিময় করতেন। যার দ্বারা ভালো-মন্দের মাঝখান থেকে ভালোকে উদ্ধার করে সঠিক সত্য তুলে আনা সম্ভব হতো।
অথচ ব্যক্তিগত স্বার্থের কাছে জাতির আদর্শ আজ বন্দি। নাস্তিকরা আস্তিকদের যে আদর্শ দেখে তা কি আদৌ আদর্শ? ইসলাম ধর্মে স্রষ্টাকেন্দ্রিক মনোনীত সর্বশেষ আদর্শ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম । যার জীবনের বাস্তবতা এমন, অনেকেই জীবন পরিবর্তন করেছে তাকে দেখা মাত্রই। তাহলে তারা তার কী দেখেছিল? যে বিষয়গুলো নিয়ে আজ আস্তিক নাস্তিকদের গবেষণার মূল বিষয়, সেগুলো চাপা পড়ে এখন স্বার্থবাদী বিষয় নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ির প্রতিযোগিতা।
যদি কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাশাপাশি বসে ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করে চিন্তা ও জ্ঞানগত বিষয় রাখে, তখন অবশ্যই কোনো না কোনো সমাধানে আসা সম্ভব। যদি তা নাও হয় তবে অন্ততপক্ষে একজন আরেকজনের কাছে নিরাপদ থাকবে মৌখিক ও শারীরিকভাবে।
মূলত সমস্যা কোথায়? জ্ঞান ও চিন্তায়। যারা আস্তিক মানসিকতায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানী তারা কখনো নাস্তিকদের আক্রমণ করবে না বরং সার্বক্ষণিক তাদের উদ্ধার ও হেদায়ার চিন্তা-চেষ্টায় ব্যস্ত থাকবে। আর নাস্তিকদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞানী যারা তারা কখনো আস্তিক্যবাদী মানুষদের আক্রমণ না করে তারা তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সমাধান নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। যদিও চিন্তাগত দিক থেকে বিশ্বের বড় বড় চিন্তাবিদ নাস্তিকরা সরাসরি তাদের নাস্তিকতার উৎস সন্ধান নিয়ে সন্দেহ করে কোনো আস্তিককে আক্রমণ করে না । যারা করে তারা উগ্রপন্থী আস্তিক ও নাস্তিক।
এ দলটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিপদজনক। যদি কেউ সুস্থ মস্তিষ্কে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পাশাপাশি বসে ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করে চিন্তা ও জ্ঞানগত বিষয় রাখে, তখন অবশ্যই কোনো না কোনো সমাধানে আসা সম্ভব। যদি তা নাও হয় তবে অন্ততপক্ষে একজন আরেকজনের কাছে নিরাপদ থাকবে মৌখিক ও শারীরিকভাবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামের আদর্শ হচ্ছে- সে মুমিন, যার প্রতিবেশী তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ। সে পরীক্ষায় এখন আস্তিক-নাস্তিক দুজনই ফেল।
আরো পড়ুন> মানুষ দ্বৈত প্রাণের অধিকারী
বাকস্বাধীনতা প্রত্যেকটা মানুষের সর্বভৌমত্বের অধিকার। যার যা ইচ্ছা সেটা বলতেই পারে, কিন্তু ভুল সঠিক যাচাই-বাছাই পরামর্শের দ্বারা হতে পারে। যদি সেই সুযোগটা কেউ না দেয় তবে সমাধান কিভাবে সম্ভব? যারা আস্তিক তাদের চিন্তা করা উচিত, যদি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমে যায় তখন তারা বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে কিভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন। আর যারা নাস্তিক তাদের চিন্তা করা উচিত, যদি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেড়ে যায় তখন কি তারা ফ্যাসিস্ট মানসিকতায় ধার্মিকদের দমন করবেন? এভাবে পাল্টাপাল্টি কি আমাদের জন্য শান্তির সমাধান?
আমার ভাই নাস্তিক হয়ে গেছে, ভয়ে আমি তার সাথে কথা বলতে পারি না। তাই বলে তো তাকে ছেড়েও দেয়া যাবে না, মেরেও ফেলা যাবে না। কারণ স্রষ্টা মৃত্যুক্ষণের নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত প্রত্যেকটা মানুষের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকেন তার হেদায়ার আশায়। যদি আমার দ্বারা স্রষ্টার একটা বান্দার মানসিকতা পরিপূর্ণ তালাবদ্ধ হয়ে যায় তবে সেই দায়ভার কার?
নবী’র আপন চাচা আবু জেহেল তার ভাতিজা এবং ধর্ম সম্পর্কে বুঝে শুনে জেনেও অন্ধ ভক্তির কারণে ফিরতে পারেনি। তবুও তিনি আশা ছাড়েননি। অথবা জিহাদের আগে সর্বোচ্চ পর্যাযয়ে ভালোবাসা দিয়ে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন। কে এ আদর্শ নিয়ে চিন্তা করে? আর নাস্তিকরা কাকে আদর্শ মেনে এমন উৎশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে? সত্যিই চিন্তার বিষয়।
সরকার জুম্মান: সাংবাদিক ও লেখক
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]