শুক্রবার দুপুর ২:৩৬, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

আলেমদের মনগড়া ধর্মীয় ব্যাখ্যা

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

“সারা পৃথিবীর ইসলামের ব‍্যাখ‍্যা একদিকে, আর আমাদের দেশের আলেম নামধারীগুলোর ব‍্যাখ‍্যা থাকে অন্যদিকে। যতসব কুসংস্কার আর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এদের মধ্যে। যেগুলো বিজ্ঞান তো দূরের কথা, ইসলাম ধর্মের সাথেই যায় না।”

সারা পৃথিবীর আলেমরা ধর্মের ব‍্যাখ‍্যা দেয়। আর আমাদের দেশের আলেমরা মনগড়া উপদেশ দেয়। লক্ষ‍্য করলে দেখা যায়, এরা কখনো কোনো সূরা বা হাদিসের ব‍্যাখ‍্যা ওয়াজ-নসিহতগুলোতে দেয় না। দেয় মনগড়া উপদেশ, ধর্মকে ঢাল বানিয়ে। এদের কাছে কোরআন শরীফ বা হাদীস থেকে ব‍্যাখ‍্যা চাইলে চোখ বুজে এরা আপনাকে মুনাফিক বলে বসবে। কারণ এরা নিজেরাই কখনো কোরআন বা হাদীস ঠিকমতো পড়েছে কিনা সন্দেহ। তাই ব্যাখ্যা দিলে তো তাদের ধোঁকাবাজি ধরা পড়ে যাবে।

আরো পড়ুন> উঠতি বড়লোকের টাকার গরম

আমি এক হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি আমাকে বলেছিলেন, এদেশের বেশিরভাগ আলেম নামধারীরা নাকি কিসসা ওয়াজ করেন। যেগুলো হাদীস বা কোরআন থেকে নয় বরং নিজেদের মনগড়া। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম-অমুসলিম দেশে মুসলিম আলেমরা কোরআন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে এমন ব‍্যখ‍্যা দিয়ে মানুষদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। আর আমাদের দেশের আলেম নামধারী ভণ্ডগুলো মনগড়া কুসংস্কার ছড়িয়ে আমাদের সমাজকে আরো বিপদগ্রস্ত করে চলেছে। এদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে নারীরা। সমাজের এতো এতো সমস্যা, সেদিকে এদের নজর নেই। এদের যতো নজর সমাজের মেয়েদের দিকে। তাঁরা কি করলো, কি পড়লো, কি খেল, এই হচ্ছে এদে দের ভাবনার বিষয়।

“দেশের অর্থনীতি বা সামাজিক উন্নতি নিয়ে এদের মাথাব্যথা নেই। এদের মাথাব্যথা শুধু বিয়ে আর কোরবানিতে। এরা ব‍্যাখ‍্যা দেয় নারীকে শিক্ষিত না করতে। অথচ কোরআনের প্রথম কথা হচ্ছে ‘ইকরা’; যেখানে বলা আছে, ‘পড়’, তোমার প্রভুর নামে।”

তুরস্ক বা ইরানের মতো গোঁড়া মুসলিম দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, এরা কতটা এগিয়ে গিয়েছে। সেখানকার নারীরাও লেখাপড়া করছে। সমাজে নিজেদের দৃঢ় ভূমিকা রাখছে। আর আমাদের দেশের মুখোশধারী আলেমগুলো সমাজকে কীভাবে পেছানো যায়, ধর্মের ভুল ব‍্যাখ‍্যা দিয়ে মেয়েদের কি করে পদদলিত করা যায় সেসব ফন্দি ফিকিরে মগ্ন।

দেশের অর্থনীতি বা সামাজিক উন্নতি নিয়ে এদের মাথাব্যথা নেই। এদের মাথাব্যথা শুধু বিয়ে আর কোরবানিতে। এরা ব‍্যাখ‍্যা দেয় নারীকে শিক্ষিত না করতে। অথচ কোরআনের প্রথম কথা হচ্ছে ‘ইকরা’; যেখানে বলা আছে, ‘পড়’, তোমার প্রভুর নামে। সেখানে কি কোথাও লেখা আছে পুরুষ পড়বে, নারী পড়বে না? হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করতে সুদূর চীন ভ্রমণ করতে। সেখানে কি তিনি বলেছেন শুধু পুরুষ যাবে আর নারী যাবে না?

“ইসলামের মতো আধুনিক জীবন ব‍্যবস্থাকে এরা মেনে নিতে পারে না। তাই ধর্মের ভুল ব‍্যাখ‍্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এসব থার্ডক্লাস আস্তিকদের কারণেই থার্ডক্লাস নাস্তিক তৈরি হযচ্ছে এ দেশে।”

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ, তাঁর কন‍্যাগণ এবং সাহাবীগণের স্ত্রী-কন‍্যাগণ যে এত শত শত হাদীস মুখস্থ করতেন, তার মানে কি তাঁরা ভুল ছিলেন? আর আমাদের দেশের আলেম নামধারীগুলো সঠিক? আল্লাহ মানুষেকে নাকি আদেশ দিয়েছেন, “আমার কোরআন নিয়ে, আমার পৃথিবী নিয়ে, চন্দ্র-সূর্য-গ্ৰহ-তারা সবকিছু নিয়ে তোমরা আলোচনা কর, গবেষণা কর।” সেখানে কি তিনি বলেছেন শুধু পুরুষজাতি করবে, নারীরা করবে না?

লেখকের সব লেখা

সারা পৃথিবীর ইসলামের ব‍্যাখ‍্যা একদিকে, আর আমাদের দেশের আলেম নামধারীগুলোর ব‍্যাখ‍্যা থাকে অন্যদিকে। যতসব কুসংস্কার আর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এদের মধ্যে। যেগুলো বিজ্ঞান তো দূরের কথা, ইসলাম ধর্মের সাথেই যায় না। ইসলামের মতো আধুনিক জীবন ব‍্যবস্থাকে এরা মেনে নিতে পারে না। তাই ধর্মের ভুল ব‍্যাখ‍্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এসব থার্ডক্লাস আস্তিকদের কারণেই থার্ডক্লাস নাস্তিক তৈরি হযচ্ছে এ দেশে।

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি : কলামিস্ট, ঢাকা

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

[sharethis-inline-buttons]

One response to “আলেমদের মনগড়া ধর্মীয় ব্যাখ্যা”

  1. জাকির মাহদিন says:

    বাংলাদেশের আলেমরা যেমন, সারা বিশ্বের আলেমরাও তেমনি। বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। আর থাকা সম্ভবও নয়। বিশ্বের বহুল স্বীকৃত মুসলিম বা ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর আলেম এবং ইসলামি গবেষক ও স্কলাররা যদি সত্যিই ইসলামের প্রকৃত রূপ ও গুণ-বৈশিষ্ট্য কিছুটা হলেও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারতেন, তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বই তাদের কথা মানতে বাধ্য হতো। ইসলাম, সত্য বা আলো এমনই এক বিষয়, যা কোথাও সামান্য প্রস্ফুটিত হলে তা কেউ ঢেকে রাখতে পারে না।

    বাংলাদেশেও প্রচুর-হুজুর-মৌলভী এবং মুফতি-মুফাচ্ছের আছেন, ইসলামি গবেষক ও স্কলার আছেন যারা কোরআন-হাদিসের প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়ে দিয়েই কথা বলেন। কিন্তু ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতির উপর নির্ভর করে না।

    সুতরাং “বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম-অমুসলিম দেশে মুসলিম আলেমরা কোরআন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে এমন ব‍্যখ‍্যা দিয়ে মানুষদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।” এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। বরং সবাই “কোরআন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত”- এ কথা বলে বলেই নিজেরা বিভ্রান্তিতে ঘুরছে, অন্যদেরও বিভ্রান্ত করছে।

Leave a Reply