জাতীয় দৈনিকগুলোর খবরে প্রকাশ, হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সেই রাতেই থানার দায়িত্বরত এসআই নারায়ণ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে একটি পৃথক অস্ত্র মামলা দায়ের করেন, যাতে বলা হয় পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তাদেরই একটি গ্রুপ আলামীনকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। কিন্তু দৈনিকগুলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য! পুলিশের মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের কেউ ভারতে চিকিৎসাধীন, কেউ আবার আগে থেকেই জেলে বন্দী।
ওসি মঈনুর ও এসআই আশরাফ বদলি
গত ৬ ফেব্রুয়ারি (২০১৭) ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়াস্থ মাইমল হাটিতে বাড়ি থেকে পুলিশের পোশাকে আলামীন নামে এক যুবককে ধরে স্বজনদের সামনে নির্মমভাবে পেটানো ও থানায় নিয়ে হত্যায় শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিছুদিন শহর উত্তাল থাকে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল হয়। নিহতের মা নেছা বেগম বাদী হয়ে সদর থানার দায়িত্বরত এসআই আশরাফ, ওসি মঈনুর রহমান, তাদের দুই সোর্সসহ আরো কয়েকজনের নামে আদালতে মামলা করেন (মামলা নং-১০১)। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হলে (facebook.com/alaminHotyarBicharChai) প্রশাসনের কিছুটা টনক নড়ে। এর ভিত্তিতে ওসি মঈনুর ও এসআই আশরাফকে বদলী করা হয়।
এদিকে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলোর খবরে প্রকাশ, হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সেই রাতেই থানার দায়িত্বরত এসআই নারায়ণ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে একটি পৃথক অস্ত্র মামলা দায়ের করেন, যাতে বলা হয় পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তাদেরই একটি গ্রুপ আলামীনকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। কিন্তু দৈনিকগুলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য! পুলিশের মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের কেউ ভারতে চিকিৎসাধীন, কেউ আবার আগে থেকেই জেলে বন্দী।
এদিকে অনুসন্ধান ও বিচারকাজে পুলিশের করা সেই সাজানো মামলাটিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এবং নিহতের মায়ের করা মামলাটিকে নিষ্ক্রিয় কিংবা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা হচ্ছে বলে আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট ফরহাদ আহমেদ দেশ দর্শনকে জানান। তিনি আরো বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) থানা-পুলিশ প্রভাবিত করছে। তাই পিবিআই নিহতের মায়ের করা মামলাটি স্থগিতের আবেদন করেছে আদালতে। এ জন্য আমরা মামলাটিকে উচ্চ আদালতে স্থানান্তর করার আদেন করেছি। কারণ সাধারণ আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে ন্যায়বিচার পাবার আশা নেই।
এদিকে আলামীনের পরিবার জানান, এসআই নারায়নের পক্ষ থেকে পেশকারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে, বিচারককে কাগজপত্র ঠিকমতো সরবরাহ না করতে। এ বিষয়ে জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার এসআই নারায়ন চন্দ্রকে দেশ দর্শন থেকে ফোন করা হলে তিনি দুইবার কল রিসিভ করে অন্য ফোনে আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে ‘আপনি কে? থানায় আসেন। আমার কথা বলার সময় নেই’ ইত্যাদি বলে ধমকাতে থাকেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় জেনে বলেন, তিনি ফোনে কথা বলবেন না। জানার থাকলে থানায় এসে কথা বলতে হবে।
উল্লেখ্য যে, দেশ দর্শনে গত সংখ্যায় (১৭ এপ্রিল ২০১৭) ন্যায় বিচার দুরাশা : অসহায় পরিবারটির নিরাপত্তা দেবে কে? শিরোনামে প্রথম পাতায় প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। একই সংখ্যার শেষ পাতায় কেমন আছে নিহত আলামীনের পরিবার শিরোনামে আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এ নিউজটি গত ২০১৭ এর ১০ জুলাই পাক্ষিক দেশ দর্শনের প্রিন্ট পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল। তখন দেশ দর্শনের ওয়েব সাইট না থাকায় এর কোনো ইন্টারনেট সংস্করণ নেই। এখন দেশ দর্শনের ওয়েব সাইট হওয়ায় সংরক্ষণের স্বার্থে পুরনো এ নিউজটি ওয়েব সাইটে দেয়া হল।
ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া
[sharethis-inline-buttons]