শনিবার রাত ৯:৪৫, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

আদিকাল থেকেই কন্যাশিশুরা অবহেলিত

আদিত্ব্য কামাল

কন্যা শব্দের অনেকগুলো বিকল্প শব্দ আছে, যেমন- দুহিতা, আত্মজা, তনয়া, সুতা, নন্দিনী, মেয়ে, দুলারী ইত্যাদি। মেয়ে শিশুরা কখনোই যে অবহেলার বিষয় নয়, এই ডিজিটাল যুগে তা অনেকভাবেই প্রমাণিত। আজ জাতীয় কন্যাশিশু দিবস।

প্রসঙ্গত, পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করে থাকে। তবে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর।

মূলত কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার, খাদ্য ও পুষ্টির সুরক্ষা, আইনি সহায়তা ও ন্যায়বিচারের অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা এবং বলপূর্বক বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে এ দিবসের সূচনা হয়।

আদিকাল থেকেই পরিবার ও সমাজে কন্যাশিশুরা অবহেলিত। এক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের প্রভাব রয়েছে। এগুলো ভাঙতে হবে। কারণ কন্যাশিশুদের বাদ দিয়ে আমরা কখনোই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। যে কোনো কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য নারী-পুরুষের অবদান অনস্বীকার্য।

শুধু পুরুষরাই সব সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত নয়, নারীদের সুযোগ দিলে তারাও পুরুষের মতো সমাজকে আলোকিত করতে পারে। সেজন্য সব শিশুকেই সমভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার দিতে হবে। তবে কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য প্রাগৈতিহাসিক। সেই ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বব্যাপী কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

বাল্যবিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের প্রধান অন্তরায় এবং আমাদের সমাজ কন্যাশিশুদের বোঝা মনে করে। কন্যাশিশুদের পড়াশোনার পেছনে টাকা খরচ করতে চায় না। তারা মনে করে, বিয়ে দিতে পারলে বোঝা দূর হয়ে যাবে। তবে সময় অনেক বদলেছে। কন্যাশিশুরা এখন আর বোঝা নয়; বরং তারা হলো সর্বোত্তম বিনিয়োগ ও সমাজের আলোকবর্তিকা। তাদের মধ্যে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও আদর্শ মা খুঁজে পাই। লক্ষ করলে দেখা যায়, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বাবা-মায়ের বেশি যত্ন নেয়।

আসলে কন্যাশিশুর পেছনে যদি ভালো বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে সে একদিন বড় হয়ে আদর্শ ও মহীয়সী মায়ে পরিণত হয়। আসলে শিক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি। শিক্ষা কন্যাশিশুর উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ এবং শিশুমৃত্যুর হার কমানোর নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং প্ল্যান বাংলাদেশের এক যৌথ জরিপমতে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা ২৬ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগে।

নিরক্ষর নারীদের বেলায় এ হার ৮৬ শতাংশ। সরকার বিগত বছরগুলোতে ছাত্রী ও নারীদের শিক্ষায় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য নারীবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ফলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে ছাত্রী প্রবেশ এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

কন্যাশিশুকে অবজ্ঞা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে কখনোই ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব নয়। এ বাস্তবতায় নারী ও কন্যাশিশুর শিক্ষার বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। সেটি শুরু করতে হবে কন্যাশিশুর জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে তাদের জন্য সমসুযোগ ও সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দক্ষ ও সুশিক্ষিত মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। আর এই মানবসম্পদ গড়ার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে কন্যাশিশুর জন্মলগ্ন থেকেই।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ও জাতীয় কন্যা শিশু দিবস নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়েন। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের ১১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। এদিকে প্রতিবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। এই শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস হিসাবে।

আদিত্ব্য কামাল: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply