গত বছর সরকার বাহাদুর বিদ্যুৎ অপচয় ও ট্রাফিক জ্যাম দূর করার জন্যে অটো-রিকশা, ইজিবাইক, ভটভটি, লেগুনা, নসিমন-করিমন প্রভৃতি বাহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, গাড়ির মালিক-সমিতি ও চালক-শ্রমিক সংগঠনের দাপটের কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না! গত বছর ২০১৭ সালের মাঝামঝি সময়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অসহায়ত্বের কথা খুব দুঃখ করে প্রকাশ করেছেন!
সারাদেশের মতো ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরের পাড়া-মহল্লা-বাজার ও সড়ক-মহাসড়কজুড়ে অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইক, পাওয়ারটিলার, ভটভটির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ শহরবাসী। আঞ্চলিক ভাষায় এসব বাহনকে টমটম, পঙ্খীরাজ, ভটভটি বলে। ট্রাফিক আইনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্বিঘেœ চলছে এগুলো। মাত্রাতিরিক্ত বিকট শব্দে প্রতিনিয়ত শব্দদুষণ হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পা-চালিত রিকশা, ঠেলাগাড়ী ও ভ্যানগাড়ী সম্পূর্ণরূপেই উধাও!
এসব অযান্ত্রিক বাহন গুলো চালাতে কোনো ধরনের কায়িক শ্রম করতে হয় না, চালকের লাইসেন্স লাগে না, এমনকি পৌরসভা বা সিটির্কপোরেশনের কোনো ধরনের অনুমতিপত্রেরও প্রয়োজন হয় না। ফলে ছোট্ট শিশুরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে এবং সড়ক-মহাসড়কে এখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করে অসহনীয় যান জটের সৃষ্টি করে যাত্রীদের সময় অপচয় করছে।
সড়ক-মহাসড়কে অন্যান্য গাড়ির চেয়ে ইজিবাইক ও অটো-রিকশার সংখ্যা অনেক বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশিল মোড়ের লাইনম্যানের কাছ থেকে জানা যায়, শহরের বিভিন্ন রোডে প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫ হাজার গাড়ি আসা-যাওয়া করে। ছোট এ শহরে এত গাড়ি তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে! আশির দশক পযর্ন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে বলা হত পুকুরের শহর। কালের প্ররিক্রমায় তা পরিণত হয়েছে অভিশপ্ত ইজি-বাইকের নগরিতে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা যায়, নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে শহরের প্রতিটি মোড় ঘোরানো ও ওভারটেকিং করার সময় প্রতি দিনই প্রায় ২০/২৫টি গাড়ি দুঘর্টনায় পতিত হচ্ছে। শহরে এসব গাড়ির উল্লেখযোগ্য স্ট্যান্ড হলো- মঠের গোড়া-বর্ডারবাজার, বর্ডারবাজার-কালিশীমা, কালিবাড়ীমোড়-গোকর্ণঘাট, কালিবাড়িমোড়-বিজেশ্বর, টেংকেরপাড়-পীরবাড়ি, বিরাশার-অষ্টগ্রাম, রেওয়েস্টেশন-কাউতলি, ফকিরাপুল-কাউতলিসহ বিভিন্ন এলাকা। জরিপ করে জানা যায়, এসব এলাকার গাড়ি থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে একটি চক্র। এই টাকার একাংশ চাঁদা আদায়কারী ব্যক্তি, থানাপুলিশ, ট্রাফিকপুলিশ, মালিকপক্ষ ও রোড -প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভোক্তভোগীদের মতে, এসব বাহনের কারণে রাস্তা পারাপার হতে বেশ সময় লাগে। অনেক সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনাও ঘটে। অনেকে আজীবনের জন্যে পঙ্গুও হয়ে যায়।
বর্ডার বাজার এলাকার অটো-রিকশা চালক মফিজ মিয়া বলেন, থানায় টাকা দিলে লাইসেন্স লাগে না। আর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কেমা দিলে সব ঠিক। রেওয়েস্টেশন-কাউতলি এলাকার নিয়ন্ত্রণকারী কয়েকজন প্রভাশালী নেতা বলেন, গাড়ি প্রচুর, কিন্তু অনেক ড্রাইবারই কেমা দেয় না।
স্থানীয় এক পৌর কাউন্সীলর বলেন, এসব হাজার হাজার গাড়ি থেকে যদি পৌর কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন ফি বাবদ নিয়মিতভাবে ফি নিতো তা হলে পৌরতহবিলে কোটি কোটি টাকা জমা হতো। এই টাকা দিয়ে উন্নয়ন কাজ করা যেতো। কিন্তু বিপরীত কথা বললেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ট্রাফিকপুলিশ কর্মকর্তা। তার মতে, এসব গাড়ি যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এসব গাড়ির গতি ৫/৬ কিলোমিটার আর অন্যগাড়ির গতি ৪০/৪৫ কিলোমিটার; ফলে সড়ক-মহাসড়কে এসব অটো গাড়ি চললে এমনিতেই দীর্ঘ যানজট লাগে।
গত বছর সরকার বাহাদুর বিদ্যুৎ অপচয় ও ট্রাফিক জ্যাম দূর করার জন্যে অটো-রিকশা, ইজিবাইক, ভটভটি, লেগুনা, নসিমন-করিমন প্রভৃতি বাহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, গাড়ির মালিক-সমিতি ও চালক-শ্রমিক সংগঠনের দাপটের কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না! গত বছর ২০১৭ সালের মাঝামঝি সময়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অসহায়ত্বের কথা খুব দুঃখ করে প্রকাশ করেছেন!
তাহলে কি সরকার বাহাদুরের ব্যর্থতার জন্যে আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের এই নরক-যন্ত্রণা আজীবন ভোগ করতেই হবে? কবে পাবো এ অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি? কবে দূর হবে সড়ক-মহাসড়কের এই নৈরাজ্য?
ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া
[sharethis-inline-buttons]