শুক্রবার রাত ১:২৬, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

কাজীপাড়া মৌলভীহাটি মসজিদের পুকুর এখন কচুক্ষেত

ভিডিও- দেশ দর্শন

পুকুরটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কথা বলেন কাজীপাড়া ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তিনি বলেন, পুকুর ভরাটের একটি চক্র এই শহরেই রয়েছে। এরা পুকুর ভরাটেরই ব্যবসা করে।

জহির রায়হান: ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়াস্থ মৌলভীহাটি জামে মসজিদ সংলগ্ন শত বছরের পুরনো পুকুরটি এখন গৃহস্থালী বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না করায় পুকুর হয়েছে জংলী কচুর ক্ষেত। কাছে গিয়েও এখন বোঝার উপায় নেই যে এটি কখনো পুকুর ছিল। অথচ পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ, কবরস্থান ও ১২ ফুট প্রসস্থ গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। যে রাস্তা দিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার প্রায় ৩ সহস্রাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে প্রতিনিয়ত গৃহস্থালী বর্জ্য ফেলে শত বছরের এই পুরনো পুকুরটি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সংস্কারের অভাবে ও অযত্ন-অবহেলায় দৃষ্টিনন্দন পুকুরটি এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানান এলাকাবাসী।

জানা যায়, কাজীপাড়া ‘মৌলভীহাটি পুকুর’ নামে পরিচিত মোট ৩২ শতক জায়গা নিয়ে থাকা শত বছরের প্রাচীন এই পুকুরসহ স্থানীয় অনেক জায়গার মালিক ছিলেন ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ’র বংশধর। পরবর্তীতে প্রায় ১৭ বছর আগে মৌলভীহাটির এই পুকুরের জায়গাটি বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে ১২ শতক জায়গা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৈরতলার সৈয়দ লিয়াকত রেজা ক্রয় করে মৌলভীহাটি মসজিদের নামে দান করেন। আর বাকী ২০ শতক জায়গা মৌলভীহাটি মসজিদ কমিটির সভাপতি ফরহাদ সিদ্দিকী কিনে নেন। এরপর থেকেই গৃহস্থালী বর্জ্যের মাধ্যমে সুকৌশলে চলছে পুকুর ভরাটের যজ্ঞ। এজন্য সভাপতিকেই দায়ী করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি।

মৌলভীহাটি মসজিদের ঘাটলা

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি ফরহাদ সিদ্দিকী মুঠোফোনে জানান, মসজিদের তহবিলের জন্য কমিটির সদস্যদের নিয়ে রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে পুকুরের অংশটুকু ভরাট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নানা বাঁধার সম্মুখীন হওয়ায় সেটা আর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে তার একক সিদ্ধান্তে পুকুরটি ভরাটের কথা তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে মৌলভীহাটি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: সালামত উল্লাহ’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মৌলভীহাটি জামে মসজিদের নামের এই পুকুর ঘিরেই চলতো মৌলভীহাটি এলাকার মানুষের নিত্যদিনের কাজকর্ম। অজু-গোসল থেকে শুরু করে সবধরনের কাজে ব্যবহৃত হতো এই পুকুরের পানি। নিত্যদিনের কাজকর্ম ছাড়াও আশপাশের এলাকার শিশুদের সাঁতার শেখানো হতো এখানে। কিন্তু গত তিন/চার বছরে নষ্ট হয়েছে পুকুরের পরিবেশ। গৃহস্থালী বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হওয়া পুকুরটি এলাকার পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরের মোট তিনটি অংশে ফেলা হয়েছে প্রায় কয়েক টন গৃহস্থালী বর্জ্য। আর এসব বর্জ্য নিচ থেকে সড়ে গিয়ে পুকুরের তলা ভরাট হয়ে সেখানে জন্মেছে বিভিন্ন ধরনের আগাছা। বর্তমানে পুকুরটিতে পানির কোনো চিহ্নও নেই। এদিকে পুকুরের উত্তর পার্শ্বে রাস্তা সংলগ্ন অযু করার জন্য নির্মিত মসজিদের বাউন্ডারি করা পাকা একটি ঘাটলা চোখে পড়লেও পুকুরে পানি না থাকায় সেটি এখন কোনো কাজেই আসছে না। এছাড়া পুকুরের উত্তরের পূর্ব-পশ্চিম পাশে গৃহস্থালী স্তূপীকৃত বর্জ্য-আবর্জনার উৎকট গন্ধ সহ্য করেই ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন মসজিদের মুসল্লী, শিক্ষার্থীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। সেখানে কথা হয় এলাকার বাসিন্দা নাজিমুল্লাহ নাজুর সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় তিন বছর ধরে প্রতিদিন এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে না ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। এসব কারণে এলাকার অনেকেই তাঁদের গৃহস্থালি বর্জ্য পুকুরে ফেলছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর বা অন্য কেউ এতে বাধা না দেওয়ায় ধীরে ধীরে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে পুকুরটি।

এটি পুকুর বলে বোঝার কোনো উপায় নেই

পুকুরটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কথা বলেন কাজীপাড়া ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহ মো: শরীফ ভান্ডারী। তিনি বলেন, পুকুর ভরাটের একটি চক্র এই শহরেই রয়েছে। এরা পুকুর ভরাটেরই ব্যবসা করে। কাজীপাড়ায়ও বিগত দিনে একদল ভূমিদস্যু তিনটি পুকুর ভরাটের চেষ্টা করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীহাটি মসজিদের পুকুরটিও ভরাটের উদ্দেশ্যে রাতের আঁধারে গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে এরা।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নুরুল আমিন বলেন, এই ধরনের অভিযোগ পেলে প্রথমত আমরা নোটিশ করি। পুকুরটির ব্যাপারেও নোটিশ পাঠানোর কাজ শেষ হয়েছে। অতএব পুকুরটি দখলের কেউ চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই পুকুর পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার (ভারপ্রাপ্ত) প্যানেল মেয়র-১ আলহাজ্ব মো: ফেরদৌস মিয়া। কিন্তু তার এ আশ্বাস কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কাছে আটকে যায়। অন্যদিকে পৌরসভার মেয়রের এদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

জহির রায়হান: বিশেষ প্রতিবেদক

ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া,  ভিডিও নিউজ,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ: প্রধান খবর,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply