আড়িয়াল খাঁ নদীটি বরিশাল সদর উপজেলার ভাসানী চরে এসে ভাসানীচর নদী নাম ধারণ করে। বরিশাল শহরের ৫ কিমি উত্তরে এই নদীর নাম হয় কীর্তনখোলা, নলছিটি উপজেলায় (ঝালকাঠি জেলা) নলছিটি এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলায় প্রবেশ করে হয় সুগন্ধা। এই সুগন্ধাই ঝালকাঠি শহরের কাছে এসে বিষখালী নাম ধারণ করে। এই বিষখালী নদীর একপাশ দিয়ে সল্প প্রসারিত জায়গা নিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। খালের পাশেই একটি বড় গ্রাম। গ্রামটি নলছিটি থানার অন্তর্ভুক্ত। গ্রামটা বেশ সবুজ শ্যামল অার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর। গ্রামের বেশির ভাগ জায়গা গাছপালায় অাচ্ছ্বাদিত। জনবসতি তেমন ঘন নয়। অার মাঝে মাঝে চোখে পড়ে ফসলের মাঠ।
এ গ্রামের খাঁন পরিবারের ছেলে তারেক খাঁন ঢাকায় ভালো বেতনের চাকরি করেন। তার পরিবার গ্রামেই বাস করেন। তার বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। পরিবার বলতে অাছে মা,স্ত্রী অার দুই মেয়ে। মেয়ে দুটো খুবই ভাল স্বভাবের। তারা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরেও বের হয় না। ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণী অার বড় মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। তারেক সাহেব এক সময় পরিকল্পনা করেছিলেন পরিবারের সদস্যদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু তার সিদ্ধান্তে তার মা কিছুতেই রাজি হয়নি। তাছাড়া তার স্ত্রীও রাজি হয়নি কারণ গ্রামে মেয়েদের পড়াশোনায় বেশ সুবিধা আছে। তারপর সবকিছু চিন্তার পর তারা এখন গ্রামেই থাকেন। তারেক সাহেব মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে বাড়ি অাসেন।তারও গ্রামের প্রতি যথেষ্ট টান অাছে থাকবেই না কেন কত সুন্দর একটা গ্রাম। তাছাড়া ছোট বেলা তো গ্রামেই বেড়ে ওঠা। অার তারেক সাহেবের মা সে কিভাবে যাবে শহরে এ স্নেহের গ্রাম থেকে। নিজের স্বামীর ভিটেবাড়ি ছেড়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব।
তারেক সাহেবের মায়ের বয়স এখন নব্বই প্রায়। তবুও তিনি প্রতিনিয়ত নানা ধরনের চারাগাছ রোপণ করেন। নিজের হাতে প্রায় দু’তিন শত সুপারি গাছ লাগিয়েছেন।সেগুলোর থেকে প্রতিবছর অনেক টাকা অাসে।তাছাড়াও বাড়ির চারপাশে লাগিয়েছেন প্রায় সব প্রজাতির ফলজ উদ্ভিদ।
বাড়ির থেকে একটু দূরে পূর্ব দিকে তৈরি করেছে নিজ হাতে একটা কলাবাগান। তার কলাবাগানে অাছে প্রায় সব প্রজাতির কলাগাছ।অার বাড়ির সামনে রয়েছে একটি শাকসবজির বাগান। সেখানে তিনি নতুন নতুন সৃজনে অালাদা অালাদা শাকসবজির চাষ করেন। সকল সৃজনে কোন না কোন তরকারি বা শাকসবজিতে উঠোনের বাগানটা ভরপুর থাকে।
তাই তাদেরকে বাজার থেকে তেমন তরকারি কিনতে হয় না। তাছাড়াও সংসারের সকল কাজে তারেক সাহেবের মা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশ নিতে চান। নিজেই যেন এই বয়সেও সংসারটাকে অাগলে রাখতে চান তিনি। তিনি যেন সংসারের লাঠি। তাকে ছাড়া মনে হয় সংসার টা অচল হয়ে পড়বে। তিনি না থাকলে কে করতো বাইরের কাজগুলো। তিনি বর্ষায় রান্নার জন্য জ্বালানি দ্রব্য গাছ থেকে সংগ্রহ করে রাখেন।
যদিও তিনি এতো কিছু করেন এসব কিছু তার বয়সের সাথে একদমই মানায় না। পরিবারের কেউ এসব কাজে সন্তুষ্ট নয়।তবে সত্যি এটাই তার এসব কাজ মহা মূল্যবান।তিনি অতীতে যেভাবে সংসার অাগলে রেখেছেন এখনও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তাকে যে যতই না করুক না কেন সে তার মতোই তার কাজ চালিয়ে যান সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারো কথা শুনে না কাজ করাটা একটি নেশা তার।কাজ না থাকলে কাজ খুঁজে বের করে নেন তিনি। তার কাজের দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা দেখে বিশ্বাস হয় না এই বয়সে এতো সুন্দর করে কাজ করতে পারে। এতো পরিশ্রম করতে পারে। তার বয়সের মানুষ গ্রামে অার দ্বিতীয়টি নেই। তাঁকে কেউ কাজ করতে বাঁধা দিলে বলেন অামি না করলে কে করবেন এসব কাজ।অার উল্টো রাগান্বিত হন।তার কাজের যেন কোন শেষ নেই।
এভাবেই চলছিলো তারেক সাহেবের সংসারের লাঠি অর্থাৎ তার মায়ের দিনগুলো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা কাজ করে চলছিলো। হঠাৎ একদিন খুবই অসুস্হ হয়ে পড়েন। কয়েক দিন বিছানায় পড়ে ছিলো তখন সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছিলো যে তিনি সংসারের জন্য কতোটা দামী। তারপর এক পর্যায়ে অসুস্হ বেশি হয়ে পড়লে তারেক সাহেব ঢাকা থেকে এসে তার মাকে নিয়ে বরিশালের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে দ্রুত রওনা দেন।
Some text
[sharethis-inline-buttons]