এইতো আমাদের পাশের বাড়ির দাদার সংসারে দুই ছেলে। অর্থ বা জমির অভাব নেই দাদার। যা অভাব তা হলো মানসিক শান্তি। বড় ছেলে ব্যাবসা করে। মস্ত বড় দোকান তার, অার ছোট জন জেলা শহরে ভালো পোস্ট এ চাকুরি করছে। দাদার মনে ইচ্ছা ছিল,এমন দিন একদিন সে দেখবে। খুব সুখের সংসার কত স্বপ্ন ছিল। তার স্ত্রীর ও তাই স্বপ্ন ছিলো। তার স্ত্রী তো অার অাজ নেই। বুঝা যায় দাদার চোখের কোনায় জল গড়িয়ে পড়ছে। দাদার তো সুখের স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু কেন তার এতো দুঃখ?
হ্যা, তারও একটা কারণ অাছে। সেই কারণটা হলো তার দুই ছেলে। তারা নিজেদের মধ্যে অবিরাম ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখে। একভাই যেন অারেক ভাইয়ের মুখের দিকেও তাকায় না। দাদা তাদের এই সব অাচরনে খুব কষ্ট পায়।কিছু বলারও যেন অধিকার নেই তার। কারণ মানুষ বৃদ্ধকালে যেন নবজাতক শিশু।
ঐ তো সেদিন শুধু একটা জলপাই গাছকে কেন্দ্র করে দু’জনার মধ্যে কি তুমুল লড়াই। দাদার চোখে সেদিন বড় ছেলের বউয়ের দোষ ধরা পড়ল। বউ মা দাদার বড় ছেলের কানে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে কি সব বলার পরই দৌড়ে গিয়ে গাছ তলায় উপস্থিত হলো। ছোট ভাই রফিক গাছ কাঁটার জন্য যেই কুড়ালটা গাছে ঠেকাতে যাবে তৎক্ষনাৎ দাদার বড় ছেলে সফিকের অাগমন ঘটেছিল সেদিন।
তারপর তাদের মধ্যে তাদের মায়ের লাগানো জলপাই গাছটি নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক চলে। এক পর্যায়ে তারা একে অন্যের গায়ে অাঘাত করে রক্তাক্ত ও জখম করে। সেই দিনটা দাদাকে অনেক ব্যথা দিয়েছিলো। দাদা এক ধরনের অচল তাই সে নিরবে সহ্য করেছিলো সব।
সে মনে মনে ভাবছিল, ভাই-ভাই সম্পর্কটা কি সত্যি এমন? শুধু ঝগড়া, বিবাদ?
তার নিজের ভাইয়ের কথা মনে করে বলে ভাই তো অামারো ছিলো। অামাদের সম্পর্ক তো ছিলো মধুময়। অামরা দুঃখ,সুখে একে অপরের পাশে দাড়িয়েছি। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা,প্রেম হারিয়ে গেছে অাজ?
এসব ভাবতে ভাবতে দাদুর রাত্রি দিন কাটছিলো।
একদিন হলো কি অবাক কান্ড! হঠাৎ ছোট ছেলে সিদ্ধান্ত নিলো সে তার ভাগের সব জমি বিক্রি করে শুশুর বাড়ি গিয়ে উঠবে। তার মন এতে সাড়া দেয়নি তেমন। কিন্তু পত্নী প্রেম বড় জিনিস। তার বউয়ের দেওয়া বুদ্ধিতে নিজ পিতার ভিটে মাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে জমি বিক্রির জন্য ক্রেতার খুজ নেওয়া শুরু করেছে। তার বুকের ভিতর যেন কেমন একটা চাপা কান্না মুখ দেখলেই বোঝা যায়।
জমি বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা তার বাবাকে সে জানাই নাই।ভাইকেও না। একটি লোক দাদার বড় ছেলেকে বিষয়টি জানায়। সে তেমন কোন উত্তর করল না। কিন্তু তার মনটা যেন বিষাদ পূর্ণ হয়ে গেল। অার রাত্রি কালে ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছেনা।তার ভাইয়ের সাথে কাটানো শৈশবের মিষ্টি,দুষ্টু কত স্মৃতি চোখে ভাসছে তার। দুজনে একসাথে কত খেলাধুলা করেছে। বিলে মাছ ধরেছে। মায়ের কুল ভাগাভাগি করে শুয়ে থাকার সেই মুহূর্তগুলোও চোখে ভাসছে।
মনে মনে বলছে ভাই অামি কি তোর শত্রু? তুই অামাকে ছেড়ে চলে যাস না। তারপর ঘুমাতে না পেরে ভাইয়ের ঘরের দিকে ছুটে গেল।
শাকিল আহমেদ সৌরভ
Some text
[sharethis-inline-buttons]