বৃহস্পতিবার দুপুর ১২:২৮, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

তিতাস নদী এখন মৃতপ্রায়, পানি অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে

দেশ দর্শন প্রতিবেদক

এককালের খরস্রোতা তিতাস নদীর সেই বিশালতা আর নেই। প্রাচীনতম জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে সহজে পণ্য পরিবহন আর যাতায়াতে ব্যবহার হতো এ তিতাস নদী। এখন এটি ক্রমশ পরিণত হচ্ছে শীর্ণ খালে।

বাংলাদেশের বুকে জটাজালের মতো অসংখ্য নদী। শুভ্র জলের নদী, ঘোলাটে জলের নদী। কাকচক্ষু জলের নদী, তামাটে জলের নদী। কুলুকুলু ঢেউ-খেলানো নদী, ফুঁসে-ওঠা সাপের ফণার মতো উদ্ধত ঢেউয়ের নদী। কোনো নদী খ্যাপা দুর্বাসার মতো ভয়ংকর অভিশাপপ্রবণ আবার কোনো নদী বাল্মীকির মতো শান্ত ও শুভাশিসদাতা। কোনো নদীরই রূপের মহিমা এক নয়, চরিত্র অভিন্ন নয় – স্বতন্ত্র। কিন্তু তিতাস এই স্বতন্ত্রের মধ্যেও স্বতন্ত্রতম। এর ব্যতিক্রমতা অনন্য।

‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসটির ভূমিকাংশে অদ্বৈত মল্লবর্মণ লিখেছেন, ‘তিতাস একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের হাওয়ায় তার তন্দ্রা ভাঙে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়, রাতে চাঁদ ও তারারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।’ তিতাস নদী ও তার দুই কূলের মানুষের জীবনযাত্রাকে ঘিরে রচিত তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসে কিশোর, সুবল, অনন্ত, বনমালী প্রমুখ চরিত্রগুলো স্থান পেয়েছে। আর এ উপন্যাসের কাহিনীকে উপজীব্য করেই চলচ্চিত্র স্রষ্টা ঋত্বিক কুমার ঘটক ১৯৭৩ সালে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহের কারণ হিসেবে ঋত্বিক কুমার ঘটক বলেন, ‘তিতাস পূর্ববাংলার একটা খণ্ড জীবন, একটি। ইদানীং সচরাচর দুই বাংলাতেই এ রকম লেখা দেখা পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আছে প্রচুর নাটকীয় উপাদান, আছে দর্শনধারী ঘটনাবলি, আছে শ্রোতব্য বহু প্রাচীন সঙ্গীতের টুকরো ।

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানাঘেঁষে এটি আরো দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানাঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহত্ নদী মেঘনার সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় প্রায় ৯৮ কিলোমিটার তিতাস নদীটি। তিতাস ও মেঘনা নদীকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে অনেক উপকথা প্রচলিত আছে।

সন্ধ্যাকালীন তিতাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

তিতাস নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রবাহমান একটি নদী। বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমানাসংশ্লিষ্ট নদী হিসেবে এটি পরিচিত। নদীটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানে বাংলা ভাষায় হাওড়া নদী এবং স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় সাঈদ্রা নদী নামে তিতাস নদীর নামকরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানাঘেঁষে এটি আরো দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানাঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহত্ নদী মেঘনার সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় প্রায় ৯৮ কিলোমিটার তিতাস নদীটি। তিতাস ও মেঘনা নদীকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে অনেক উপকথা প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে একটি উপকথায় বলা হয়েছে যে, তিতাস নদী মেঘনার কন্যা বা মেয়ে।  তিতাস নদীর উপকূলে প্রাপ্ত গ্যাসক্ষেত্রটিও তিতাস গ্যাসক্ষেত্র নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র।

সকালের তিতাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

এককালের খরস্রোতা তিতাস নদীর সেই বিশালতা আর নেই। প্রাচীনতম জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে সহজে পণ্য পরিবহন আর যাতায়াতে ব্যবহার হতো এ তিতাস নদী। এখন এটি ক্রমশ পরিণত হচ্ছে শীর্ণ খালে। এক সময় লঞ্চের শব্দ আর বড় বড় পাল তোলা নৌকার মাঝি-মাল্লাদের কণ্ঠধ্বনিতে তিতাস পারের মানুষের। এখন ধারণ করেছে এর ভিন্ন রূপ। প্রভাবশালীরা এর দুপাড়েই গড়ে তুলেছে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা আর দালান-কোঠা। নদীর বিভিন্ন স্থানে পলি আর আবর্জনা জমে শীর্ণকায় হয়ে যাচ্ছে তিতাস নদী। এ নদীর প্রবাহিত পানি ব্যবহার করে হাজার হাজার কৃষক ফলাতো জমিতে সোনালী ফসল। নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ায় তিতাস পারের জেলে সম্প্রদায়ের চলছে চরম দুর্দিন। তাদের জীবন-জীবিকায়ও এসেছে পরিবর্তন। এক সময় যে নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বাণিজ্যিক হাট-বাজার সেই নদীর করুণদশায় তিতাস পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির সম্মুখীন।

ছবি ও তথ্য : ইন্টারনেট

ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ: তিতাস নদী

[sharethis-inline-buttons]

Comments are closed.