২৯ জুলাই ২০২০ রোজ বৃহস্পতিবার। দু’দিন পর কুরবানির ঈদ। মাদরাসা বিরতি হলো।প্রিন্সিপাল সাহেব বিদায়ের সময় বললেন ভাই! হায়াত মওতের কথা বলা যায় না আমরা একে অপরকে মাফ করে দেই।
অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ির পানে রওয়ানা করলাম নাড়ীর টানে বন্ধুবর মুফতী মাহমুদুল হাসানের বাইক দিয়ে। তিনি ড্রাইভ করেছেন, মাঝখানে ছিলাম আমি আর পিছনে ছিলেন মাও.মামদুদুল্লাহ আল মাহমুদী।
আমাদের সামনে একটি সিএনজি ছিল। তার পিছনে লেখা ছিল
১.”বাবা চাইলে ভাংতি নাই, শ্বশুর চাইলে অভাব নাই ”
২. “ফুলের মত মন যার সেই তো মানুষ ”
প্রথমে প্রথম উক্তিটি নিয়ে কথা বলি।
মা বাবাকে তাদের স্থানে রাখতে হবে।
শ্বশুর শ্বাশুড়িকে তাদের স্থানে রাখতে হবে।
একজনকে অপর জনের স্থানে বসানো জুলুম।
উভয়ের মাঝে সমতা রক্ষা করতে হবে।
শ্বশুর শ্বাশুড়ি আত্নীয় হিসেবে তাদেরও একটা অধিকার আছে, তবে সে অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেনো মা বাবার উপর জুলুম না করা হয়।নচেৎ দুনিয়া আখেরাত উভয় হারাতে হবে।
কারণ পবিত্র কুরআনুল কারিমে রব্বে কারীম নিজের হকের পরই মাতা পিতার হকের কথা বলেছেন।
রাসূল সা.কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিহাদের চেও মা বাবার খেদমতের গুরুত্ব বেশি দিয়েছেন।
এ মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে
أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ . قَالَ ” فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَىٌّ ” . قَالَ نَعَمْ بَلْ كِلاَهُمَا . قَالَ ” فَتَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ ” . قَالَ نَعَمْ . قَالَ ” فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا ”
সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুুূল আস (রাঃ) খেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। এরপর সে বলল, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়আত গ্রহণ করব। এতে আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি।
তিনি বললেনঃ তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে বিনিময় আকাঙ্খা করছ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দু’জনের সঙ্গে সদাচরণপূর্ণ জীবন যাপন কর। সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৬২৭৬
রাসূল সা. মা বাবাকে সন্তানের জান্নাত সাব্যস্ত করেছেন।
، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ “ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ ” .
আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের উপর মাতা-পিতার কী অধিকার আছে? তিনি বলেনঃ তারা তোমার জান্নাত এবং তোমার জাহান্নাম।
সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস ৩৬৬২
মা বাবাকে জীবিত পেয়ে তাদের খেদমত করে জান্নাত কামাই না করতে পারলে হাদিসের কঠিন হুশিয়ারীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে হবে।
، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ” . قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ ”
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলীন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলীন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলীন হোক! বলা হল ইয়া রাসুলুল্লাহ! কার? যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ লাভ করল না।
সহীহ মুসলিম ৬২৭৯
ভাদুঘর এসে দেখি এক বাসের পিছনে লেখা
মা আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। মোটকথা হলো যাদের প্রতি মাতা পিতা খুশী তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল।
এবার দ্বিতীয় উক্তির পালা।
“ফুলের মত মন যার সেই তো মানুষ ”
কথাটি আমার নিকট অনেক ভালো লেগেছে।
কারণ ফুল শুধু মানুষকে সুবাস দেয়। বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।পরিবেশকে নজরকাড়া করে।
দর্শকের ভীড় জমায়। মন ও নয়ন জুড়ায়।বাতাসকে সুগন্ধিময় করে।
মানুষকে তার রুপ আর সুঘ্রাণ দিয়ে কাছে টেনে নেয়।
কখনো দূরে ঠেলে দেয়না। মানুষকে সহজেই তার প্রতি দূর্বল করে ফেলে।আপন করে নেয়।কষ্ট দেয়না।
শুধু উপকারই করে। কখনো ক্ষতি করেনা।ক্ষতি করা তার ধর্মও না।আসুন ফুল হয়ে ফুটি। ফুল হয়ে বেঁচে থাকি।ফুলের মত পরিবেশকে মুখরিত করে রাখি।
———————
আব্দুল্লাহ ইদরীস
জামিয়া দারুল উলুম মুহিউস সুন্নাহ, আখাউড়া,ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]