পুরো পৃথিবীর একমাত্র আদর্শ বিদ্যাপীঠ হচ্ছে কওমী মাদ্রাসা। যেখানে তালিম ও তারবিয়াত তথা শিক্ষা ও দীক্ষা এক সাথে দেওয়া হয়। একমাত্র কওমী মাদরাসাই যোগ্য নাগরিক তৈরি করে। সৎ ও নিষ্ঠাবান আদর্শ মানুষ তৈরি করে। আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনে বদ্ধপরিকর। ধর্ম, দেশ ও জাতির কাছে দায়বদ্ধ মানব তৈরি করে। যার বিকল্প এই পৃথিবীতে নেই। কওমি মাদরাসার প্রতিটি ছাত্র উস্তাদকে কল্যাণকামী মনে করে। আপন মনে করে। উস্তাদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করে। নিজের কল্যাণ আর ভালো নিজে নির্ণয় করেনা। উস্তাদের উপর ছেড়ে দেয়। নিজেকে উস্তাদের কাছে অর্পণ করে দেয়।
উস্তাদের কথা নতশিরে মেনে নেয়।উস্তাদকে ভালোবাসে মনের গহীন থেকে। মহব্বত করে হৃদয়ের গভীর থেকে। সদা যোগাযোগ রাখে উস্তাদের সাথে। উস্তাদকে হৃদয়ের মনিকোঠায় স্থান দেয়।উস্তাদকে যথাযথ মর্যাদা দেয়। সম্মান দেয়। উস্তাদ ও ছাত্রকে নিজ সন্তানের মত দেখাশোনা করে।মহব্বত করে। আদর – স্নেহ করে।
এজন্যই তো ইমাম গাজালী রহিমাহুল্লাহ বলেন, যেহেতু উস্তাদ ছাত্রের মাঝে এক অলিখিত ও অঘোষিত নাড়ির সম্পর্ক থাকে,যা কোনো দিনই ছিন্ন হওয়ার নয়।তাই সঙ্গত কারণেই পিতা মাতার হকের তুলনায় ছাত্রের প্রতি উস্তাদের হক অনেকগুণ বেশি। কারণ মাতা- পিতা কেবল এই নশ্বর জগতের অসিলা। এর বিপরীতে উস্তাদ হলেন অনন্ত জীবনের সফলতার মাধ্যম।
আদীব হুজুর অাবু তাহের মিসবাহ হাফিযাহুল্লাহ বলেন, উস্তাদের সাথে তাআল্লুক পয়দা করা আর উস্তাদের তাওয়াজ্জুহ অর্জন করা, এটিই একজন তালিবে ইলমের দুনিয়া -আখিরাতের সফলতার কারণ। ইলম ও আমলের উন্নতির জন্য এটির বিকল্প নেই।
নিজের অজান্তেই একটি স্মৃতি এসে তাড়া দিচ্ছে কাগজের পাতায় সাক্ষ্য হয়ে থাকতে।
খুব মনে পড়ে ২০১৮ সালের ঘটনাটি। তখন বেফাক পরিক্ষা অতি সন্নিকটে। দরজায় করাঘাত করছে।ছাত্ররা পড়ায় বেশ মনোযোগী। এশার নামাজের পর খবার খেয়ে নাহবেমীর (সপ্তম শ্রেণীর) ছাত্রদেরকে রওযাতুল আদব কিতাবের কিছু আরবী প্রশ্নোত্তর তামরীন (অনুশীলন) করাচ্ছি।
তামরীন করার সময় একটি প্রশ্ন এমন ছিল من أحب الناس إليك؟ অর্থাৎ তোমার সবচে’ প্রিয় ব্যক্তি কে? মনে মনে ভাবছি হয়ত তারা মা বাবার কথা বলবে!
এমনিতেই একজন তালিবুল ইলম (ছাত্র) উত্তর দিল أحب الناس إلي أستاذي তথা আমার সবচে’ প্রিয় ব্যক্তি হচ্ছে আমার উস্তাদ।
উত্তর শুনে যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি। সীমাহীন পুলকিত হয়েছি যা ভাষা ব্যক্ত করতে ব্যর্থ। আমি প্রকাশ করতে অক্ষম। জীবনের অতি খুশী হওয়া মুহূর্তের অন্যতম একটি মুহূর্ত ছিলো। অটুট থাকুক উস্তাদ ছাত্রের সম্পর্ক আমরণ। আরও গভীর নিবিড় হউক।
উত্তরোত্তর আরও বৃদ্ধি হউক। কারণ উস্তাদের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক না থাকলে ছাত্র জীবনে সফলতার সঠিক খোরাক পাবেনা।
তাবলিগের মুরুব্বি হাফেয মাওলানা যোবায়ের হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন “ইলম তো কিতাবে নেই,ইলম হচ্ছে উস্তাদের সিনায় (অন্তরে)” পাহাড়পুড়ী হুজুর রহিমাহুল্লাহ বলেন একজন তালিবে ইলমের সফলতার জন্য মেহনত ও পরিশ্রমের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উস্তাদের নেক নযর, মুরুব্বির দোয়া ও মাতা পিতার সন্তুষ্টি। আলি মিয়া নদবী রহিমাহুল্লাহ যথার্থ বলেছেন “জীবনযুদ্ধে সফলতার জন্য তালিমী মুরুব্বী আবশ্যক।”
আব্দুল্লাহ ইদরীস: শিক্ষক, কওমি মাদরাসা
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]