ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় প্রথম করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন সম্পন্ন করেন ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন। জানাযার পরিচালনা করেন ঠাকুরগাঁও জেলা টিমের মাওলানা আব্দুল মুকিত জেলা টিমপ্রধান। আরো উপস্থিত ছিলেন সহযোগী টিমপ্রধান আনাস মাদানী ও সালন্দর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার কামিলের ছাত্র হাফেজ মোঃ আবরারুল হক রোহান, সহযোগী ছিলেন গাজী হাবিব,মোতাবেরুল, ক্যামেরা সহযোগিতা করেছেন হাফেজ মোঃ: মোতাহার ও হাফেজ মোঃ রফিকুল ইসলাম।
এ সময় পুরো ঘটনাটা তুলে ধরেন, পুলিশ লাইনের পিছনে স্থাপিত বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ:আবরারুল হক রোহান। আউলিয়াপুর কচুবাড়ী গ্রামের আকবরের স্ত্রী রানী বেগম( ২৩) করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণ করেন গত পরশু রাতে ৷ এর পরেই ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার তৎক্ষনাৎ রাত ১টা ২৬ মিনিটে কল দিয়ে সকাল ৯ টায় হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে বলেন ৷ যথা সময়ে আমরা উপস্থিত হই কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে ভালো দেরী হয়ে যায় জুম্মার নামাজের পরে দাফনের সিদ্ধান্ত হয় ৷
যার কথা না বললেই নয়,সেনেটারী ইনসপেক্টর ফারুক হোসেন আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক লাশ রিসিভ করা থেকে শুরু করে পিপিইসহ সেচ্ছাসেবক টিমের যাতায়াতের জন্যে আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদও জানান হাফেজ মোঃ আবরারুল হক রোহান। আমরা অত্যন্ত খুশি ইউএনও স্যারের কর্ম তৎপরতায় উনি একটু পর পর খোঁজ নিচ্ছিলেন৷ প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিতে দেরি হওয়ায় বার বার দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন তিনি ৷ যেহেতু এটা আমাদের প্রথম করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন কিছু প্রশাসনিক দূর্বলতা খুঁজে পেয়েছি যেটা ইউএনও স্যারেকে অবগত করেছি৷
এছাড়া আবরারুল হক রোহান জানান যে প্রচন্ড ক্লান্ত বহুবার মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। আজকে সম্ভবত মিনি কিয়ামত দেখতে পেয়েছিলাম।ময়মনসিংহ এর গৌরিপুরের সোচ্ছাসেবক টিমের মত তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছি। রাস্তায় বেরিকেট দিয়েছিল আমাদের যেতে দিবে না ৷ অনেক বুঝিয়ে গেলাম তারপরে খাটিয়া ব্যবহার করতে দিবেনা ৷ ঈদগাহে জানাযা আদায় করতে দিবেনা একেরপর এক বাধার স্বীকার হয়েছিলাম৷ বহু দুর থেকে মসজিদের খাটিয়া নিয়ে আসতে হয়েছিল। আমাদের মত ক্লান্ত মনে হয়না কোন দাফন কাফন টিমের হয়েছে ৷ লাশ মৃতের নিজস্ব মাটিতে দাফন করতে হয়েছে ৷ কবরে পানি ছিল।
কবরের পাশে লাশ রেখে দুরে গিয়ে আগে কেউ বসে কেউ শুয়ে রেস্ট নেই। সেদিন প্রখর রোদ্র ছিল সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় পর্যন্ত। সে সময় রোদের তাপমাত্রা অনেক বেশী ছিল লাশ দাফন করার স্থানে যাওয়ার কোন রাস্তা ছিল না ৷
আমাদের একটা আইল দিয়ে যেতে হয়েছে একটু পর পর খাটিয়াটা নামিয়ে রেখেছিলাম। আইলের দুই পাশে ধান খেত এবং পানি। সকল সদস্য যুবক হওয়া সত্তেও এতো বেশী ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম যে কয়েকবার গোরস্থানে শুয়ে পড়েছিলাম ৷ মেয়ের চার ভাই লাশ কবরস্থ করার সময় দূর থেকে দেখে ছিল কেউ কাছে আসেনি ৷
বাঁশ দেওয়ার পরে কলা পাতা দিয়ে দিলাম তারপরে মাটিটা পর্যন্ত দেয়নি দৌরে পালাইয়াছে। সে সময় কারো অবস্থা ভালো ছিল না প্রচন্ড ক্লান্ত আর ক্ষুদার্থ ছিলাম।যদিও পুরো হিস্টোরিটা লিখতে পারিনি। আমি আমার ২৭ বছরের জীবনে এতো পরিশ্রম কখনো করিনি।সত্যি কিয়ামতের ময়দানে কি হতে পারে তার কিছুটা অনুমান করতে পারলাম ৷
এছাড়া এ যুবক বলেন,মানুষ কতটা অমানবিক হতে পারে ভাবাও যায় না। পরিশেষে এ ধরনের করোনা মৃত মানুষের দাফনে আমাদের টিম সদা প্রস্তুত থাকবে বলে জানান এ টীমের সদস্যরা । সকলে আমাদের টিমের জন্যে খাস করে দুআ করবেন।
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা
[sharethis-inline-buttons]