ধার্মিকদের অহংকারের ধরনটা আবার কিছুটা ভিন্ন। তারা করবে অহংকার, কিন্তু প্রচার হবে তা জাতির জন্য শিক্ষা। একজন ‘সনদধারী’ আলেম হয়েছে, তো তার মাটিতে পা পড়ে না। ধর্ম-কর্ম সব হবে তার ঘরে। তার কাছে আসতে হবে বা বিনিময় (অর্থ) দিয়ে তাকে নিতে হবে। সে হচ্ছে আলেম, চাট্টিখানি কথা! বড় বড় অর্থ-কর্তারা তার সান্নিধ্যে অতি তুচ্চতর।
সমাজে আমাদের পারস্পরিক যত সমস্যা রয়েছে, এর মধ্যে মূল কারণগুলোর একটা হচ্ছে- অহংকারী মনোভাব পোষণ করা। যার ক্ষতি বা ফলাফল সমাজে কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা একটু চিন্তা করলেই সুস্পষ্ট হওয়া যায়৷ সাধারণ-অসাধারণ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গরিব-ধনী এমনকি ধার্মিক উচ্চমানসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গরাও এই ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
যারা নিজেদের সুশীল বলে দাবি করে, তারাও নিজেদের ভিতরেই একে অন্যকে ছোট করার প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে প্রচণ্ডরকমে। ওনার তিনটা বাড়ি তো কি, আগামী বছর আমারও চারটা বাড়বে। আর এই অসীম চাহিদার বাড়াবাড়িতে কত নিরীহ মানুষ নিপিড়ীত; তাদের পায়ের তলায় পিষ্ট, সে হিসাব তারা রাখে? শিক্ষিত যারা, তারা যত উচ্চতর শিক্ষায় উন্নীত হতে থাকে ততই পূর্বের শিক্ষা ভুলে যায়। সমাজের সাথে তাদের দূরত্ব-বৈষম্য বাড়তে থাকে।
সদা সত্য কথা বলব, অসৎ পথে চলব না, অন্যায় যুলুম করবো না, সকলের তরে সকলে মোরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে- এসব তখন তাদের কাছে ‘অবাস্তব নীতিকথা’ হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবে মাটিতে তাদের পা পড়ে না। গরিব-অসহায়কে মনে করে নোংরা, সমাজের অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রাণী। মূখে সততার জন্য শিক্ষা আর বাস্তবে অর্থের জন্য সব। যে অর্থ তার অহংকারের প্রধান উপকরণ। তাদের কলমের কাছে গোটা জাতি জিম্মী।
ধার্মিকদের অহংকারের ধরনটা আবার কিছুটা ভিন্ন। তারা করবে অহংকার, কিন্তু প্রচার হবে তা জাতির জন্য শিক্ষা। একজন ‘সনদধারী’ আলেম হয়েছে, তো তার মাটিতে পা পড়ে না। ধর্ম-কর্ম সব হবে তার ঘরে। তার কাছে আসতে হবে বা বিনিময় (অর্থ) দিয়ে তাকে নিতে হবে। সে হচ্ছে আলেম, চাট্টিখানি কথা! বড় বড় অর্থ-কর্তারা তার সান্নিধ্যে অতি তুচ্চতর। আর কিছু আলেম যদি পাশাপাশি আসে, শুরু হয় সনদের গর্ব। শিক্ষা, স্বনামের প্রতিযোগিতা। যে কারণে আজ তাদের মধ্যে এত বিভেদ, বিচ্ছিন্নতা, উগ্রতা।
এখানে কোনো সমালোচনার উদ্দেশ্য নেই। সমাজের চোখে পড়া বাস্তবতা তুলে ধরছি মাত্র। যেখানে ধর্ম বলছে, সামান্য পরিমাণ অহংকার নিয়েও কেউ তার সান্নিধ্যে যেতে পারবে না, দুনিয়ায় সবাই ফকির, কিছু নিয়ে আসেনি, কিছু থাকবে না, রাখতেও পারবে না। সেখানে আমাদের অবস্থান কী? চিন্তা কী? ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী?
সমস্যা জাতিগত, কিন্তু সমাধান আশা করি ব্যক্তিগত। সমস্যাপূর্ণ এ মানসিকতা পরিবর্তনে প্রয়োজন বিশেষ সদিচ্ছা। প্রতিদিন যে কোনো সময় একটু চিন্তা, বিশুদ্ধ জ্ঞান অন্বেষণের চেষ্টা ও নিজের ভালো আশা করার আত্মবিশ্বাসই পারে প্রকৃত শান্তি ও জাতি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে।
সরকার জুম্মান: যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
ক্যাটাগরি: পাঠকের মত, মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]