শুক্রবার ভোর ৫:১৮, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে কিছু স্মৃতি

৯১৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ক্ষনজন্মা কথাসাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ আমাদের ছেড়ে গেছেন ছয় বছর হয়ে গেল। সময়টা ২০১২ সালের১৯ জুলাই। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষক,নাট্যকার,চলচ্চিত্র নির্মাতা,গীতিকার। ছবিও ত্রঁকেছেন।  ২০০২সালে২১ শে বই মেলায় এক দিন সুযোগবুঝে জানতে চেছিলাম তিনি নিজেকে কী হিসেবে দেখতে ভালোবাসেন। তিনি বলেছিলেন তার এত পরিচয় ভালো লাগে না। তার ভাষায়-আমি একজন লেখক। নিজেকে আমি ‘ফিকশন রাইটার’ বলত্ইে পছন্দ করি। হুময়ুন আহমদের সাথে আমার প্রথম পরিচয়ও দেখা হয় ১৯৮২ সালের শেষের দিকে ‘ঢাকা কলেজের’প্রাক্তন ছাত্রদের এক পুনঃমিলন অনুষ্ঠানে। তখন  আমি এই কলেজে দ্বাদশ শ্রেনীতে  কলা বিভাগে অধ্যয়নরত  অবস্থায়  ছিলাম  ;উক্ত অনুষ্ঠানে প্রায় ২/৩ মিনিটের বক্তব্যে বলেছিলেন-জীবনে কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে যেও না। কারন, যাকেই তুমি বিশ্বাস করবে সেই তোমাকে ঠকাবে। সবাই তোমাকে কষ্ট দিবে,তোমাকে শুধু এমন একজনকে খুঁজে নিতে হবে যার দেওয়া কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে। অতঃপর দর্শকদের বিশেষ অনুরোধে ১/২ টি অদ্ভুত ম্যাজিক দেখিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন।

হুমায়ুন আহমেদের সাথে আমার আবার দেখা হয় ১৯৮৭সালের মাঝামাঝি সময়ে  ঢাকার ‘আহ্সান মঞ্জীলে’;তখন আমার সাথে ছিলেন বিখ্যাত সরোদ বাদক ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান।কুশল বিনিময়ের পর তিনি একটি হাঁসি-ঠাট্রার গল্প বলেছিলেন-তখনো আমি(হুমায়ুন আহমেদ) পাঠকের মাঝে তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠি নি,সবে মাত্র লিখতে শুরু করেছি। মাত্র পিএইচডি করে ১৯৮২ সালে দেশে ফিরেছি।এ সময় কবি হুময়ুন আজাদের সাথে গভীর বন্ধুত্ব হয়;আমরা দু’জন প্রায়ই নানারকম গুরুগম্ভীর আলোচনা ও সাহিত্যের উচ্চমার্গীয় সেমিনারে যেতাম। এরকম এক সেমিনার হচ্ছিল ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে। ইরেজি সাহিত্যের কঠিনতম বিষয় ইত্যাদি নিয়ে বক্তৃতা করবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর খান সারওয়ার মুরশিদ। হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে গিয়েছি।যথাসময়ে মুরশিদ স্যার বক্তৃতা করতে মঞ্চে উঠলেন। আমি তন্ময় হয়ে তার বক্তব্য শুনছিলাম।

স্যারের বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ুন আজাদ গেলেন ওয়াশরুমে,আমি একা বসে রইলাম। স্যার ষ্টেজ নামর পর অনেকেই গিয়ে স্যারের বক্তৃতার প্রশংস করছেন। তখন আমি নিজেও গেলাম স্যারের নিকট;বললাম,স্যার আপনার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজী আমার খুব ভাল লেগেছে। স্যারতো হতভম্ব। বলে কী এই ছেলে! তিনি তখনো আমাকে চিনেন না।কেননা, সবেমাত্র আমি লেখা -লেখী শুরু করেছি। স্যার কিছু একটা বলতে যাবেন তার আগেই দেবদূতের মতো কবি হুমায়ুন আজাদ ছুটে এলেন। ঘটনা তিনি কিছুই জানেন না। স্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এ আমাদের হুমায়ুন আহমেদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ও টুকটাক লেখা-লেখী করেন।‘নন্দিত নরকে’ তারই লেখা।

স্যার নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, ও আচ্ছা। আমি আপনার‘নন্দিত নরকে’ পড়েছি।খুবই ভাল লেখা।আপনার চেহারা চেনা ছিল না। আজ চিনলাম। আচ্ছা হুমায়ুন, আপনি যে বললেন আমার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজী আপনার ভালো লেগেছে, এর মধ্যকার শ্লেষটুকু আমি বুঝতে পেরেছি। যা হোক, আমি বক্তৃতায় যা বলেছি তার দু-চারটা বাক্য আপনি না চিবিয়ে বলুন তো! হুমায়ুন আজাদ ঘটনার কিছুই জানেন না। এই অবস্থায় আমি একবার স্যারের মুখের দিকে তাকাচ্ছিন আরেকবার হুমায়ুন আজাদের দিকে। সিগারেটে একটা সুখ টান দিয়ে বললেন ,ঠাট্রা করতে গিয়ে ওই দিন ভালো রকমের ফাঁপড়ে পড়েছিলাম আমি। গল্পটি শুনে ও আমি বাহাদুর হোসেন খান ভিষন হেসেঁ ছিলাম। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হুমায়ুন আহমেদ একটুও হাঁসেন নি। তারঁ এই ঠাট্রার গল্পটি মনে হলে এখনো আমার হাঁসি পায়। মহান আল্লাহ পাক বংলা সাহিত্যের এই কলম জাদুকরকে জান্নাতবাসী করোক-আমিন।

Some text

ক্যাটাগরি: সাহিত্য, স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি