শুক্রবার ভোর ৫:৫৩, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জুনায়েদ আহমেদ এর পাঁচটি প্রতিবেদন

দেশ দর্শন ডেস্ক

 এক : আমার রিকশায় মটার নাই, এর লাইগা অনেকেই উঠতে চায় না

 

রাতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। চারদিকে আলো ঝলমল করছে। সারাদিনের বিক্রি শেষে দোকান গোছাতে ব্যস্ত কর্মচারীরা। মালিকরা ব্যস্ত লাভ-লোকসানের হিসাব নিয়ে।

রাত যত গভীর হচ্ছে, মানুষের হাঁকডাকও তত কমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষেরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। আমি দেশ দর্শন অফিস থেকে বের হয়েছি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

কিছুটা পথ হেঁটে কালিবাড়ির মোড়ে এসেছি। এখান থেকে রিকশা বা অটোতে যেতে হবে। রিকশায় ভাড়া বেশি। অটোর ভাড়া কম। তাই অটোর জন্য অপেক্ষা করছি।

নাহ, অটো নেই। ভাড়া বেশি হলেও রিকশা দিয়েই যেতে হবে। দু’কদম এগুতেই এক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা হাঁক ছাড়লো- হুযূর! উঠুইন, কয় যাইবেন? আমি লক্ষ করলাম, লোকটার হত-পা কাঁপছে, চোখ- মুখে বিষণ্নতার ছাপ। এই বয়সে মানুষ রিকশা চালানো তো দূরের কথা, সাধারণ কোনো কাজ করতেই বেগ পেতে হয়। আর উনি রিকশা চালাচ্ছেন!

আমি রিকশায় উঠে বসলাম। উনি চালাতে শুরু করলেন পা’ দিয়ে! রিকশায় মটর নেই। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার রিকশায় মটর নেই কেন? “বাবারে! একটা মটার লাগাইতে পচিশ- ছাব্বিশ হাজার টাহা লাগে। এতো টাহা কোইত্থে পামো?” কিন্তু এভাবে তো আপনার অনেক কষ্ট হয়। তাছাড়া আপনি একজন বৃদ্ধ মানুষ। “অইলেই আর কী করবাম, না চালায়লে চলবাম কীবা?”

এসব কথাবার্তা বলতে বলতে রিকশা চললো শিমরাইলকান্দির দিকে। আমার খুব খারাপ লাগছে, এমন বৃদ্ধলোকের রিকশায় উঠে। আবার যদি নেমে যায়, তাহলেও তো লোকটা কষ্ট পাবে। আমি লক্ষ করলাম, রাস্তার উঁচু জায়গাগুলোতে এসে সর্বশক্তি দিয়েও উপরে উঠতে লোকটার খুব কষ্ট হয়। আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, আপনার ছেলে-মেয়ে কয়জন? তিন মাইয়া।

ছেলে নাই? নাহ। আপনি দৈনিক কত টাকা ইনকাম করেন? এইতো দেশশে-দুইশো। এতো কম কেনো? আমি বুড়া মানুষ, আর আমার রিকশায় মটার নাই। এর লাইগা অনেকেই উঠতে চায় না। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে? বাবারে এই টাকা দিয়া ডালভাত খায়লেই তো শেষ হয়া যায়। দৈনিক  দেশশো-দুইশো টাহা দিয়া  আর সংসার চলে?। বৃদ্ধ রিকশাওয়ালয়ার এই সীমাহীন কষ্টের কথা শোনে আমি বাকরুদ্ধ।

আমাদের সমাজে অনেক দানশীল ব্যক্তি আছেন- যারা তেলের মাথায় তেল ঢালেন। এই সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে থাকা মানুষগুলোকে তারা দেখে না। দেখতে পান না। অথচ দানখয়রাত এদেরই করা দরকার। এই বৃদ্ধকে যদি একটা মটারওয়ালা রিকশা কিনে দেওয়া যায়- বৃদ্ধের কষ্ট লাঘব হবে, সুখে থাকবে বৃদ্ধের পুরো পরিবার।

 

দুই : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে নিজেদের ইমামতিতে নামাজ পড়ছে স্কুলছাত্ররা

যোহরেরে নামাজ শেষে মসজিদ প্রায় খালি। বারান্দার এক কোনে কয়েকজন স্কুলছাত্র তাদের মধ্যে একজনকে ইমাম বানিয়ে নামাজ পড়ছে।

ইমাম সাহেব আল্লাহু আকবার বলে রুকু-সিজদায় যাচ্ছে, সাথে সাথে অন্যরাও আল্লাহু আকবার বলে রুকু-সিজদায় যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে (২৬ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কলেজ পাড়া জামে মসজিদে গিয়ে এমন মুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে।

নামাজ শেষে স্কুলছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মসজিদ সংলগ্ন একটি সরকারি স্কুলে লেখাপড়া করে। নামাজের সময় হলে তারা প্রতিদিন এভাবে নামাজ পড়ে। নামাজ পড়তে তাদের খুব ভালোলাগে।

তবে স্কুলছাত্র রবিউল জানায় সে নিয়মিত নামাজ পড়তে পারে না। কেনো, স্কুল থেকে কি বাধা দেওয়া হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল জানায়- না, কোনো  বাধা দেয়া হয় না। কখনো কখনো সময় পায় না। এজন্য পড়া হয় না। এখন থেকে নিয়মিত পড়বো ইনশাআল্লাহ।

 

তিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রকাশ্যে চলছে শিরিকি তাবিজের রমরমা ব্যবসা

শুক্রবার সকালে (৪ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে মানুষের জটলা দেখা যায়। এতে কৌতূহলি হয়ে প্রতিবেদক এগিয়ে যান জটলার কারণ জানতে। গিয়ে দেখেন- এক ভণ্ড তান্ত্রিক বিভিন্ন পশুপাখির অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পসরা সাজিয়ে  তাবিজ বিক্রি করছে।  ক্রেতার হাতে দেয়ার আগে তান্ত্রিকের পাশে থাকা একটা পশুর  মরা হাতে তাবিজটাকে তিনবার লাগান। তারপর নিজ কপালে লাগিয়ে চুমু খান। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তান্ত্রিক জানান, তাবিজ কার্যকর হওয়ার পিছনে (পশুর মরা হাত) এর অবদান আছে! এভাবেই প্রকাশ্যে শিরিকি তাবিজের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই ভণ্ড তান্ত্রিক।

জটলায় থাকা এক হুযুরকে তান্ত্রিক তাবিজ নেয়ার কথা বলেন,  এর প্রতি উত্তরে হুযুর বলেন,  আপনার তাবিজ নিলে রোগতো ভালো হবে-ই না উল্টো আরো বাড়বে! বাড়বে কেনো? জানতে চান তান্ত্রিক। হুযুর উত্তর দেয়ার আগেই পাশে থাকা একজন বলে উঠেন, এটা যদি আপনি যানতেন তাহলে হয়তো এই ব্যবসা করতেন না। কারণ এটা একটা স্পষ্ট শিরিক। পরে তান্ত্রিক মাথা দোলানো ছাড়া আরকোনো মন্তব্য করে নি। এবিষয়ে তান্ত্রিকের সাথে প্রতিবেদক কথা বলতে চায়লে- আপনার সাথে পরে কথা বলবো বলে কেটে পড়ে তান্ত্রিক।

অনেককে দেখা যায়, বিশ্বাসের সাথে তাবিজ কিনছেন। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য। প্রতিটা তাবিজের মূল্য চল্লিশ টাকা বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জটলায় উপস্থিত থাকা সচেতন মানুষ আবির জানায়, এভাবে প্রকাশ্যে জঘন্য শিরিকি তাবিজের ব্যবসা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কিছু বলছে না। যা অবাক হওয়ার মত।  সাধারণ মানুষকে এই শিরিকি কর্মাকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে এই ভণ্ড তান্ত্রিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের  কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলেও মনে করেন তিনি।

তান্ত্রিকের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। তবে জানা যায়,  দুই’মাস ধরে  প্রতি শুক্রবারে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে বসে সকাল থেকে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত শিরিকি তাবিজ বিক্রি করেন তিনি।

 

চার  : ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ পাড়ায় ড্রেনের ঢাকনা নেই, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কলেজ পাড়ায় ড্রেনের ঢাকনা নেই, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কলেজ পাড়া গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। কলেজ পাড়ায় রয়েছে দু’টি সরকারি কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টার। ফলে সকাল থেকে রাত অবধি- শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে কলেজ পাড়া।

আজ বিকেলে(২৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু দূর পর পর ড্রেনের ঢাকনা নেই।  ঢাকনা না থাকায় ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্যতা।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দিনে কোনোভাবে চলাচল করলেও রাতে চলাচল করতে খুব ভয় লাগে।  সবার মনে আতঙ্ক থাকে না জানি কোন সময় ড্রেনে পড়ে যায়!

 

পাঁচ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে অটোরিকশার ভাড়া

আজ বিকেলে (বৃহস্পতিবার) ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হঠাৎ আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে। এতে ভোগান্তিতে  পড়েন কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরা যাত্রীরা। বৃষ্টিহলে  বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায় অটো-রিকশার ভাড়াও- অভিযোগ যাত্রীদের।

এসময় অনেক অটো-রিকশা চালককে পাঁচ টাকার ভাড়া দশ  এবং দশ টাকার ভাড়া পনেরো টাকা বলে ডাকতে শোনা যায়।

অটোতে ভাড়া ভোগান্তির শিকার মাদরাসা ছাত্র আবদুল্লাহ জানায়, আমি প্রতিদিন ব্রিজের গোড়া থেকে কলেজ পাড়া যায় পাঁচ টাকায়। আজকে বৃষ্টি হওয়ায় অটো ড্রাইভার দশ টাকা চায়।পরে আমি প্রতিবাদ করায় পাঁচ টাকায় মেনে নেয়। বৃষ্টি হলে আমরা এমনিতেই বেকায়দায় পড়ে যায়। আর এই বেকায়দাকে কায়দা করে তারা( ড্রাইভাররা) ডাবল ভাড়া চান। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি করা দরকার বলেও মনে করেন আবদুল্লাহ।

ভাড়া বেশি নেয়ার ব্যাপারে অটো ড্রাইভারের সাথে কথা বললে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জুনায়েদ আহমেদ : সংবাদকমী, প্রতিবেদক

 

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply