রবিবার বিকাল ৩:০২, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

মুহাররমের ফজিলত ও করণীয়

৮০৪ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

মুহাররম ( محرم‎‎) হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। মু্হাররম শব্দটি আরবী যার অর্থ পবিত্র, সম্মানিত। সম্মানিত চার মাসের তৃতীয় মাস। হাদীস শরীফে এ মাসের অনেক ফযীলতের কথা উল্লেখিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে মুহাররম মাস পবিত্র হিসাবে গন্য। কুরআনে পাকে সূরা তওবার ৩৬ নং আয়াতে বর্ণিত যে চারটি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে মহররম অন্যতম। এই মাসে রোজারপ্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرّمُ، وَأَفْضَلُ الصَلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ.

অর্থাৎ, রমযানের পর সবচেয়ে উত্তম রোযা হল আল্লাহর মাসের (মুহাররম) রোযা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম নামে চেন। আর ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম নামায হল রাতের নামায (তাহাজ্জুদের নামাজ)।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩,
কিতাবুস সওম, ফাযলু সওমি মুহাররম

এই হাদীসে লক্ষণীয় বিষয় হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাররম মাসকে বলছেন ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস।
জানা কথা, সকল মাসই আল্লাহর মাস। এর পরও কেনো এই মাসকে আল্লাহর মাস বলা হল, এর
রহস্য কী? রহস্য হল, এই মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সেজন্যই তাকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যেমন দুনিয়ার সব ঘরই আল্লাহর ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) বলা হয় না।

মুহাররমের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফযীলত হল, এর সঙ্গে তাওবা কবুলের ইতিহাস যুক্ত। মুসনাদে আহমাদ ও জামে তিরমিযীতে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে- এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল,

يَا رَسُولَ اللهِ، أَيّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ رَمَضَانَ؟

হে আল্লাহর রাসূল সাঃ ! রমযানের পর আপনি আমাকে কোন মাসে রোযা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصُم المُحَرّمَ، فَإِنّهُ شَهْرُ اللهِ، فِيهِ يَوْمٌ تَابَ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ، وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ.

তুমি যদি রমযানের পর আরও কোনো মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোযা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তাওবা কবুল করবেন।
জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৫১ (ইমাম তিরমিযী বলেন- هذا حديث حسن غريب )
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩২২, খ. ১ পৃ. ১৫৪

এই হাদীসে যেই দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে সেটি আশুরার দিন। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতিটি দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি ইসতিগফার করা।

ইসতিগফারের জন্য সবচে’ উত্তম হল কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত ইসতিগফার বিষয়ক দুআ গুলো বুঝে বুঝে মুখস্থ করা। সেই দুআগুলোর মাধ্যমে রাব্বে কারীমের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তবে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে ইসতিগফার করলেও ঠিক আছে। কারণ আল্লাহ সকল ভাষারই স্রষ্টা। তিনি সবার কথা বুঝেন। সকলের আরজি কবুল করেন।

সবার সুবিধার্থে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসতিগফারের কয়েকটি দুআ এখানে উল্লেখ করা হল-

১.

رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ .

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও আমাদের প্রতি রহম না করেন তাহলে অবশ্যই আমরা অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। সূরা আরাফ (৭) : ২৩

২.

وَ اِلَّا تَغْفِرْ لِیْ وَ تَرْحَمْنِیْۤ اَكُنْ مِّنَ الْخٰسِرِیْنَ.

(হে আমার প্রতিপালক!) আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন ও আমার প্রতি দয়া না করেন তাহলে আমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
সূরা হুদ (১১) : ৪৭

৩.

رَبِّ اِنِّیْ ظَلَمْتُ نَفْسِیْ فَاغْفِرْ لِیْ

হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
সূরা কাসাস (২৮) : ১৬

৪.

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ ، اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ.

হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৭

৫.

رَبَّنَا اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ یَوْمَ یَقُوْمُ الْحِسَابُ .

হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।
সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৪১

৬.

رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنْ دَخَلَ بَیْتِیَ مُؤْمِنًا وَّ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ.

হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকেও, যে মুমিন অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। সূরা নূহ (৭১) : ২৮

৭.

رَبِّ اغْفِرْ وَ ارْحَمْ وَ اَنْتَ خَیْرُ الرّٰحِمِیْنَ .

হে আমার প্রতিপালক! আমার ত্রæটিসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন। আপনি তো দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
সূরা মুমিনূন (২৩) : ১১৮

৮.

رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَ ارْحَمْنَا وَ اَنْتَ خَیْرُ الرّٰحِمِیْنَ.

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনি দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
সূরা মুমিনূন (২৩) : ১০৯

৯.

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ كَفِّرْ عَنَّا سَیِّاٰتِنَا وَ تَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ، رَبَّنَا وَ اٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰی رُسُلِكَ وَ لَا تُخْزِنَا یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ، اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِیْعَادَ.

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। আমাদের মন্দসমূহ মিটিয়ে দিন এবং আমাদেরকে পুণ্যবানদের মধ্যে শামিল করে নিজের কাছে তুলে নিন।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে সেই সবকিছু দান করুন, যার প্রতিশ্রæতি আপনি নিজ রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়েছেন। আমাদেরকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত করবেন না। নিশ্চয়ই আপনি কখনও প্রতিশ্রæতির বিপরীত করেন না।
সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯৩-১৯৪

১০.

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَا، رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَا، رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖ، وَ اعْفُ عَنَّا، وَ اغْفِرْ لَنَا، وَ ارْحَمْنَا، اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَی الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ.

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দ্বারা যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, সেজন্য আমাদের পাকড়াও করবেন না।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি সেই রকমের দায়িত্বভার অর্পণ করবেন না, যেমন অর্পণ করেছিলেন আমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন ভার চাপিয়ে দিবেন না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।

আপনি আমাদের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করুন। আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।
সূরা বাকারা (২) : ২৮৬

১১.

رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ.

হে আমাদের রব! আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬

১২.

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ اِسْرَافَنَا فِیْۤ اَمْرِنَا، وَ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَی الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ.

হে আমাদের রব! আমাদের গোনাহসমূহ এবং আমাদের দ্বারা আমাদের কার্যাবলিতে যে সীমালঙ্ঘন ঘটে গেছে তা ক্ষমা করে দিন। আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে বিজয় দান করুন।
সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৪৭

১৩.

اللهُمّ أَنْتَ الْمَلِكُ، لَا إِلهَ إِلّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّي، وَأَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي، وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا، إِنّهُ لَا يَغْفِرُ الذّنُوبَ إِلّا أَنْتَ.

হে আল্লাহ! আপনিই মালিক। আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি আমার প্রতিপালক। আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি। আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। সুতরাং আমার সকল পাপ ক্ষমা করে দিন। আপনি ছাড়া পাপ ক্ষমাকারী কেউ নেই।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭১,
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৬০

১৪.

اللّهُمّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلاَ يَغْفِرُ الذّنُوبَ إِلّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِيْ إِنّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرّحِيمُ.

হে আল্লাহ! আমি নিজের ওপর অনেক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া আমার পাপরাশি ক্ষমা করার কেউ নেই। আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পূর্ণ মাগফিরাত নসীব করুন। আর আমার প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, চিরদয়াময়।
সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৩৪,
সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭০৫

১৫.

أَسْتَغْفِرُ اللهَ الّذِي لَا إِلهَ إِلّا هُوَ الْحَيّ الْقَيّوم، وَأَتُوبُ إِلَيْهِ.

আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব, সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক। আমি তার কাছে তাওবা করছি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫১৭, জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৮৯৪

১৬.

رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَتُبْ عَلَيّ، إِنّكَ أَنْتَ التّوّابُ الرّحِيمُ.

হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা কবুলকারী, চিরদয়াময়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৭২৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫১৬

১৭.

اللّهُمّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنّهُ لاَ يَغْفِرُ الذّنُوبَ إِلّا أَنْتَ.

হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া কোনও মাবুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি যথাসাধ্য আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকার ও আপনার প্রতিশ্রæতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি। আমার প্রতি আপনার নিআমতের কথা স্বীকার করছি। আপনার কাছে আমি আমার গোনাহের কথা স্বীকার করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩০৬

১৮.

أَسْتَغْفِرُ اللهَ رَبِّيْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وّأَتُوْبُ إِلَيْهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوّةَ إِلّا بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ.

আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহর কাছে সকল গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি। সুমহান আল্লাহ ছাড়া আমাদের কোনো সাধ্য নেই, শক্তি নেই। [আল্লাহর কোনো বুযুর্গ বান্দার শেখানো ইসতিগফারের বাক্য। যার অর্থ ঠিক আছে।]

মনে রাখতে হবে, ইসতিগফারের প্রাণ হল তাওবা। আর তাওবার হাকীকত হল, মানুষ আল্লাহ তাআলার নাফরমানী ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। পিছনের অন্যায়গুলোর কাফফারা আদায় করবে। যেখানে যে কাফফারার কথা বলা হয়েছে সেখানে তা-ই আদায় করবে। বিশেষ করে মানুষের কোনো হক নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে।

একথাও মনে রাখবে, ইসতিগফারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরত হল, কুরআনে কারীমে কিংবা হাদীস শরীফে যে আমল ও ইবাদাতের প্রসঙ্গে মাগফিরাতের ওয়াদা করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিবে।

প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে ই সেই আমলগুলোর একটা তালিকা থাকা উচিত।
এই তালিকায় সর্বপ্রথম রয়েছে ফরয নামায ও অন্যান্য ফরয ইবাদাত।
এরপর মাগফিরাত পাওয়ার আমলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। তাছাড়া দান-সদকা, যিকির-আযকার ও অন্যান্য নফল ইবাদতগুলো তো রয়েছেই।

যিকির ও দুআর মধ্যে সবচে বরকতপূর্ণ আমল হল দরূদ শরীফ। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফাআত এবং আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

মা’ছূর দরূদ শরীফের মধ্যে সংক্ষিপ্ত একটি দরূদ হল-

اللّهُمّ صَلِّ عَلَى مُحَمّدٍ النّبِيِّ الْأُمِّيِّ.

এখানে আরও দুটি শব্দ বাড়িয়ে এভাবেও পড়া যায়-

اللّهُمّ صَلِّ عَلَى مُحَمّدٍ النّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَآلِه وَسَلِّمْ.

দৈনিক কমপক্ষে দুই বেলা দরূদ শরীফের আমল জারি রাখা উচিত। সেটা দশবার দশবার করেও হতে পারে। একেবারে না হওয়ার চেয়ে এটাও ভালো।

মুহাররমের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা মুকাররমায় ছিলেন তখনও আশুরার দিন রোযা রাখতেন। এরপর যখন মদীনা মুনাওয়ারায় গেলেন তখন নিজেও রোযা রাখতেন অন্যদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। তাছাড়া রমযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে এই রোযা ফরয ছিল।

যখন রমযানের রোযা ফরয হল তখন আশুরার রোযা কেবল নফল রোযা হিসাবে নির্ধারিত হল। তবে সাধারণ নফল রোযার চেয়ে তার গুরুত্ব বেশি। হযরত আবু কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আশুরার রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السّنَةَ الّتِي قَبْلَهُ.

অর্থাৎ আল্লাহর কাছে আমার আশা, তিনি এই রোযার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২,
জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৫২

হাদীস শরীফ থেকে আশুরা সম্পর্কে আমরা এই হেদায়েতও পাই যে, আশুরার সঙ্গে ৯ মুহাররমের রোযা রাখাও ভালো। বরং আশুরার সঙ্গে যদি ৯ বা ১১ মুহাররমে রোযা রাখা যায় তাহলে আরও ভালো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরীর ১০ মুহাররমে কারবালায় হযরত হুসাইন রাযি.-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। নিঃসন্দেহে তাঁর শাহাদাত তাঁর উঁচু মাকাম ও উচ্চ মর্যাদার বিষয়। কিন্তু উম্মতের জন্য তা হয়ে গেছে অনেক বড় ইমতিহান ও মুসিবতের বিষয়। সে ঘটনা মানুষ ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারে না।

তবে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের আগেই আমাদের শরীয়ত পূর্ণ হয়ে গেছে। কিয়ামত পর্যন্ত এই শরীয়ত পূর্ণাঙ্গরূপেই সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা নিজে এই শরীয়ত, শরীয়তের দলীল ও দলীলের উৎসসমূহ হেফাযত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের পর এখন আর এই শরীয়তের কোনো হুকুম মানসূখ (বাতিল)হওয়ার অবকাশ নেই। এই শরীয়ত যেভাবে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে আজ পর্যন্ত সেভাবেই সংরক্ষিত আছে। সে অনুযায়ীই সবার আমল করা জরুরি। তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ নেই। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের পরে সংঘটিত কোনো মুসিবত বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা কোনো মাসের নতুন কোনো ফযীলত বা নতুন কোনো বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। এমন করা হলে তা হবে পরিষ্কার বিদআত ও গোমরাহী, যার ঠিকানা জাহান্নাম।

দুঃখ ও আনন্দ উভয়টির বিধান শরীয়তে আছে। উম্মতের উপর ওয়াজিব হল সেই হুকুম অনুযায়ীই আমল করা। উদাহরণস্বরূপ- মুসিবতের সময় একজন বান্দার কী করণীয়, কী বর্জনীয় তার বর্ণনা আছে কুরআন মাজীদ ও সুন্নাতে নববীতে। বিস্তারিতভাবে বর্ণনা আছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَ لَا تَقُوْلُوْا لِمَنْ یُّقْتَلُ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ اَمْوَاتٌ، بَلْ اَحْیَآءٌ وَّ لٰكِنْ لَّا تَشْعُرُوْنَ، وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْاَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ، وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌ، قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ، اُولٰٓىِٕكَ عَلَیْهِمْ صَلَوٰتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رَحْمَةٌ، وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْن.

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা (তাদের জীবিত থাকার বিষয়টা) উপলব্ধি করতে পার না। আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়। যারা কোনো মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হিদায়াতের উপর। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৪-১৫৭

বুঝা গেল, শাহাদাতের মতো বিরাট মুসিবতেও শরীয়তের হুকুম হল, মুসিবতগ্রস্ত লোকেরা সবর করবে। ‘ইন্না লিল্লাহ..’ পড়বে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সওয়াবের আশা করবে।

কারো ইনতিকালে শরীয়তের হুকুম হল সবর করা। শরীয়ত সবরের দুআও শিখিয়ে দিয়েছে।

মুহররম মাসের দশম (আশুরা) দিন ইসলামে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন একটি দিন।

ঐতিহাসিক ভাবে এই দিনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।

: ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১/ এই দিনে প্রথম মানব আদি পিতা হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করেন আল্লাহ পাক।
২/ হযর‍ত আদম আঃ কে এদিনেই জান্নাতে স্থান দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে এই দিনেই পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ পাক তাকে প্রতিনিধি মনোনীত করেছেন।
৩/হযরত নূহ আঃ এর সময়কালে এই দিনে মহাপ্লাবন হয়।
৪/হযরত ইব্রাহীম আঃ জন্ম নেন এই দিনে
৫/ হযরত মূসা আঃ ও তার সাথীরা ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার পানও এই দিনে।
৬/হযরত মূসা আঃ এর সমসাময়িক ফেরাউন ও তার সৈন্যদেরকে আল্লাহ পাক এই দিনে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে মারেন।
৭/হযরত ইউনুছ আঃ মাছের পেট থেকে মুক্তি পান এই দিনে।
৮/ হযরত আইয়ূব আঃ রোগ মুক্তি পান এই দিনে।
৯/ হযরত ঈসা আঃ এই দিনে জন্ম নেন এবং পরবর্তিতে তাকে সশরীরে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় এই দিনে।
১০/ নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাঃ এই দিন কারবালার ময়দানে ইয়েজিদের সৈন্যদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন।

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্রতম এই মাসের রহমত বরকত নসীব করুন – আমিন।

Some text

ক্যাটাগরি: ধর্ম

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি