মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে হবে ভেবে রহিম সাহেব খুব চিন্তিত। একমাত্র মেয়ের বিয়ে। দিন-ক্ষণ ঠিক হওয়ার পরেই ছেলেপক্ষের বায়না। পাত্রের বাবা তার সিদ্ধান্তে অটল। মাস্টার্স পাশ ছেলে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভাল পদে চাকরি করে এমন ছেলের জন্য শুধু একটা মোটর সাইকেল দাবী। দিতেই হবে নয়ত বিয়ে হবে না।
অন্যদিকে রহিম সাহেব একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। মাসিক সামান্য বেতনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন প্রাইভেট পড়ার জন্যে। তার কাছে কোচিং না করলে দরিদ্র ছাত্র -ছাত্রীদেরও তিনি নানাভাবে শ্রেণিকক্ষে ও বাইরে তিরস্কার করেন। এইতো গত বছর বার্ষিক পরীক্ষায় ক্লাশ সেভেনের এক ছাত্র প্রাইভেট না পড়ার কারণে তাকে ইচ্ছাকৃত ফেল করিয়ে দেন।
আবার তার কাছে পড়া মেধাহীনদের তিনি ভাল সুবিধা দেন। এভাবে জোরপূর্বক তিনি অর্থ আদায় করেন। গত বছর প্রাইভেট পড়ানোর এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকা এখনও তার কাছে জমা আছে। তার স্ত্রী মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দেয়ার জন্য স্বামীকে পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। স্ত্রীর কথা না শুনলে রহিম সাহেবের খাওয়া, ঘুম, শান্তি সব নষ্ট হয়ে যায়। খুব একরোখা স্বভাবের। অবশেষে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করে মোটর সাইকেল কিনে দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিলেন।
ছেলের বিয়েতে বাহারি মোটর সাইকেল পেয়ে বাবা ওসমান সাহেব বেশ খুশি। অনেক দিনের শখ ছিল ছেলেটার। বাবার ইচ্ছা থাকলেও সাধ্য ছিল না। এবার ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ আনা হলো, মোটর সাইকেলও পাওয়া গেল ভাবতেই ওসমান সাহেবের চোখ-মুখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে যায়।
বিয়ের এক মাস না যেতেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। মোটর সাইকেলের সাথে বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছেলে গুরুতর আহত। খবর পেয়েই ওসমান সাহেব পরিবারসহ ছুটে যান হাসপাতালে। তার ছেলের হাতে, পায়ে, মাথায় ব্যান্ডেজ। অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে। হাসপাতালের ডাক্তার ওসমান সাহেবকে অস্থির ভঙ্গিতে বললেন, “আপনার ছেলের জরুরি অপারেশন করতে হবে, এক্ষুণি পাঁচ লক্ষ টাকা জমা করে দিন।”
ছেলেকে বাঁচানোর জন্য টাকা যোগাড় করে ডাক্তারের হাতে তুলে দিলেন। ছেলে সুস্থ হয়ে উঠল। ব্যান্ডেজ আর ঔষধপত্রসহ যেখানে পাঁচ হাজার টাকা নেয়ার কথা, সেখানে মিথ্যে অপারেশনের কথা বলে পাঁচ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার আনন্দে ডাক্তার সাহেব নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে থাকেন।
এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে বিশাল সম্পত্তি অর্জন করা কোনো ব্যাপার না। কিছুদিন পর ডাক্তার সাহেবের স্ত্রীর আবার শখ হলো শপিং করবে, শাড়ি, গয়না কিনবে। এটা তার নিয়মিত বিষয়। ধনীর আদরের মেয়ে সৌখিনতা, বিলাসিতা ছাড়া চলে না। তার কথার কোনো ব্যতিক্রম হলে সংসারে অশান্তির শেষ নেই।
উপায় না পেয়ে ডাক্তার সাহেব ব্যাংকে গেলেন টাকা তুলতে। দশ লক্ষ টাকা তুলে ব্যাংক থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসতেই দুজন ব্যক্তি দুদিক হতে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতে চাইল। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে একটি বুলেট ডাক্তার সাহেবের মাথা ভেদ করল। ব্যাগটি আর রক্ষা করা গেল না। পেছনে পড়ে রইল তার রক্তাক্ত নিথর দেহটি।
অবৈধ পথে উপার্জন করা অর্থের দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ নিজেকেই দিতে হবে আর ভোগ করতে হবে ভোগান্তি, যন্ত্রণা।
এ বি এম ফয়েজুর রহমান
শিক্ষক, কবি, লেখক
Some text
[sharethis-inline-buttons]