দীর্ঘ বছর দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে দেশের সকল,স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার দ্বার। এটি বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাসের দীর্ঘতম বন্ধ। এতে উল্লসিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসতে পারছে না। দেশের উত্তর ও মধ্যভাগে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে ১০ জেলার সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো এখনো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। তাছাড়া বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তাই এই অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরবর্তীকালে কিভাবে তাদের পাঠদান সরাসরিভাবে পাবে বা তাদের শিক্ষার ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া হবে, এব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে তেমন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করা হয়নি। এমতাবস্থায়-ই সরকার বাহাদুর দেশের সকল স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও সরাসরি পাঠদানের বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। উক্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে- শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সহ সবাইকে মুখে মাস্ক পরে থাকতে হবে।
২০২১ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিবে তাদের সবাইকে অবশ্যই প্রতিদিন ক্লাস করতে হবে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকেও প্রতিদিন ক্লাসে আসতে হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি ও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যার্থী বেশি সেখানে প্রয়োজনে দুই শিফট করে ক্লাস হবে। প্রথম শিফট সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে বিরতিহীনভাবে তিন ঘণ্টা চলবে। দুপুনে ৩০ মিনিট বিরতি হবে। তারপর পুনরায় ক্লাস শুরু হবে এবং শেষ হবে দুপুর ৩:৪৫ মিনিট পর্যন্ত। তবে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাইকে একরাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে ও অন্যরাস্তা দিয়ে বের হতে হবে। অর্থাৎ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু` টো পথ থাকতে হবে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্যিই যে, অবকাঠামোগতভাবে বাংলাদের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু`টো রাস্তা নেই! এক্ষেত্রে বিকল্প পন্থা কি? এব্যাপারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালেয়ের সুস্পষ্ট কোনো পরামর্শ নেই।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, দেশের উচ্চা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যায়গুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের তরফ এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।অথচ লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন! ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ৯১ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৯২ জন শিক্ষার্থী এবং ৩৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়,অধিভূক্ত ও অঙ্গীভূত কলেজ/মাদ্রাসায় মোট ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৪০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের ২০১৯ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সরকারি,বেসরকারি এবং আন্তজর্তিক মিলিয়ে মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১৫০ টি। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৫ টি, বেসরকারি ১০৩ এবং আন্তজার্তিক বিশ্ববিদ্যালয় ২টি। হতবাক হওয়ার বিষয়! এতোগুলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে সরাসরি পাঠদান থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। মহালজ্জার ব্যাপার।
করোনাকালীন সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই হলো বর্তমানে আমাদেরদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চলমানচিত্র। অথচ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যার্থীর স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার জন্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছেন। এই আন্দোলনে কিন্তু স্কুল/কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সক্রিয়ভাবে কখনো অংশগ্রহন করেনি। উচ্চশিক্ষার্থীদেরকে গুরুত্ব না দিয়ে, স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলো! অথচ সরকার বাহাদুরের তরফ থেকে ঘোষণাও করা হয়েছিল যে, চলিত বছরের ১৫ অক্টোবরের পর ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে, তারপর কলেজ, মাধ্যমিক স্কুল ও সবশেষে প্রাইমারি স্কুল। পরিতাপরে বিষয় ব্যাপারটি ঘটল উল্টো!
সরকারের এহেন আচরণে উচ্চাশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা খুবই হতাশ। তাদের অনেকের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, অনেকে মেসবাড়ি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান করছেন আবার অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। অনেকে লেখাপড়া বাদ দিয়ে ভিডিও ও মাদকে আসক্ত হয়ে পরেছেন। কিছু কিছু সামাজিক অপরাধেও লিপ্ত হয়ে পরেছেন।
গবেষকদের মতে, করোনা মহামারীর পরিবতির্ত পরিস্থিতি কালে উচ্চাশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে মাহ-বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব অটুট রেখে অতি দ্রুত দেশে সকল উচ্চাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা উচিত। এটা সময়ের দাবি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
Some text
ক্যাটাগরি: খবর, নিয়ম-কানুন
[sharethis-inline-buttons]