বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা আমাকে পীড়া দিচ্ছিল অনেক দিন থেকে। বয়স বেড়ে যাচ্ছে। অথচ ঘরের কেউই আমার বিয়ের কথা ভাবছে না। দুই বছর হলো চাকরি করছি। বেতন ও পাচ্ছি ‘বলার’ মতো। সংসারে দিচ্ছি, নিজে খরচ করছি হাত ছেড়ে। এরপর কিছু টাকা জমা থাকছে। বৌয়ের ব্যয় বহনের সামর্থ্য আমার হয়েছে। তাহলে কেন পরিবার বিয়ের কথা ভাবছে না?
অনেক ভেবেও কারণ খুঁজে পেলাম না। অবশেষে লজ্জা শরম রেখে নিজেই বিয়ের আলাপ তুললাম ঘরে। বড় এবং একমাত্র ভাই মন্তব্য করল, ‘আমি দীর্ঘদিন সংসার দেখে আসছি। এবার তোমাকে দেখতে হবে। বিয়ের জন্য এতো তাড়া কেন?’ ভাই দুই সন্তানের বাবা। উনার থেকে এমন মন্তব্য অপ্রত্যাশিত। কিছু লজ্জা এখনও আছে। তাই মন্তব্য এড়িয়ে গেলাম। বোনদের বললাম, ‘মেয়ে দেখো। আমি বিয়ে করব।’
বোনেরা সাথে মামিদের নিয়ে মেয়ে খোঁজায় নামলো। দুয়েকটা দেখলো। আমাকেও দেখালো। পছন্দ হচ্ছে না। তারা বিরক্ত হয়ে দেখা কমিয়ে দিল। আমিও ভেবে রেখেছি, তোদের লাগবে না। আমার বউ আমিই দেখে নেব। বন্ধুদের মাঠে নামালাম। তারা নতুন নতুন মেয়েদের সন্ধান নিয়ে আসতে শুরু করল।
এরমধ্যে একদিন মামিরা আমাকে সাথে নিয়ে একটা মেয়ে দেখতে বের হলো। পথেই সতর্ক করলো, ‘আমাদের মান ইজ্জত যেন রক্ষা হয়’। মানে, মেয়ে যেন পছন্দ করি। চেষ্টা করলাম। পারলাম না। মামিদের মান ইজ্জত রয়ে গেল মেয়ের বাড়িতে। ২য় বার মান ইজ্জত হারানোর ভয়ে তারা আর মেয়ে দেখতে রাজি হলো না।
বন্ধুরা মেয়েদের ছবি দেখাচ্ছে, মেয়েদের বাবাদের এনে হাজির করছে। আমার পছন্দই হচ্ছে না। বন্ধুরাও হাল ছেড়ে দিলো। আমিও ব্যর্থতার ক্লান্তি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ বাড়ালাম। সংকল্প করলাম, আগামী ছয় মাস বিশ্রাম করব। এরপর আবার মেয়ে দেখায় নামবো। বিয়ে এবছর ই করতে হবে। বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে।
একদিন এক আত্মীয় কাম ঠাকুর ফোন দিলো। একটা মেয়ের সংবাদ দিলো। বিস্তারিত শুনে বুঝলাম, আমার সাথে যাবে। এখন মেয়ে পছন্দ হলেই হলো। যথাসময়ে বাড়িতে পৌঁছলাম। মেয়ে দেখতে গেলাম। প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে গেল। মেয়ের সাড়ে পনেরো আনা পূর্ণ। আধা আনা কমতি। বয়স। আমার অর্ধেক। সবার উৎসাহে আধা আনা কমতি মেনে নিয়ে রাজি হলাম।
তাদের বাড়িতে আড়ম্বরে, আমাদের বাড়িতে ছিমছামে বিয়ে সম্পন্ন হলো। যাক! জীবনের একটা বড় ঝামেলা কাটলো। বিয়েটা শেষ পর্যন্ত করেই ফেললাম। এর মধ্যে অনেক সময় কেটে গেল। বিয়ের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ‘নতুন বস্তু’র মোহ কাটতেই আমার জীবনে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ালো মেনে নেওয়া আধা আনা কমতি। বয়স।
সকাল দশটা । তিনি ঘুমে। কেউ ডাকে না। বয়স কম। বুঝে না শ্বশুর বাড়িতে এতো বেলা ঘুমানো শোভা পায় না। মা রান্না করছেন। সহযোগিতা দরকার। ডাকছেন, ‘সাইদা! মা, একটু এদিকে আয়। ভাতের পাতিলটা নামা। আমি পারছিনা।’ বৌমা আসে না। মা আঁচলে ঘাম মুছে নিজেই নামান। মনকে স্বান্তনা দেন, বয়স কম। কর্তব্য বুঝে না।
স্বামী স্ত্রীর মধুর আলাপ হচ্ছে। হঠাৎ কি এক কথায় রেগে গেল। আমি ভড়কে যাই। পরক্ষণে নিজেকে স্বাভাবিক করি। বয়স কম। তাই এমন করে। হঠাৎ ঢেউ উঠে। বাবার বাড়িতে যাবে। বলি, দু,দিন পরে যাও। না, এক্ষুনি। দিয়ে আসি। বয়স কম। মন টিকে না।
কিছু কথা বলতে চাই। কিছু অনুভূতি শেয়ার করতে চাই। সুখস্বপ্ন সাজাতে চাই। কাছে যাই। মাঝখানে দেয়াল উঠে। বয়স। গভীর কথা বুঝবে না সে। বয়স হয় নি।
মাঝে মধ্যে হীনমন্যতা ভর করে। একটা ছোট্ট মেয়ে। এখনো আঠারোতেও পড়ে নি। আমার মতো ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া, যৌবন ক্ষয়ে যাওয়া ব্যাক্তির বৌ। ছিঃ।
এক বছর পূর্ণ হতে আর কিছু দিন। ইচ্ছে করে, তাকে কিছু উপহার দেই। ভালাবাসা চাঙ্গা করি। একসাথে জীবন সফরের দৃঢ় সংকল্প করি। মন দ্বিধায় পড়ে। সে কি আমার আবেগ বুঝবে? না উপহার পছন্দ হয়নি বলে মুখ আঁধার করে বসে থাকবে! বয়স তো কম।
২৭/০৮/২১ইং
Some text
ক্যাটাগরি: সাহিত্য
[sharethis-inline-buttons]