কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস বাংলা নাকী ইংরেজি তারিখ মতে? এমন প্রশ্ন আসার আগেই এর সমাধান হওয়া উচিত ছিল। এ আমাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা, সাংস্কৃতিক দৈন্যতা।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হবার পরও নজরুলের জনপ্রিয়তা দুই বাংলায় অটুট দেখে অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯৪৯ সালে লিখেন : ‘ভুল হয়ে গেছে/ বিলকুল/ আর সব কিছু/ ভাগ হয়ে গেছে/ ভাগ হয়নিকো/ নজরুল।’ কিন্তু, সে ঐতিহ্যটুকুও আমরা অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যর্থ হলে, তিনি ১৯৭৬ সালে আক্ষেপ করে লিখেন: ‘কেউ ভাবল না ইতিহাসে ফের/ ভুল হয়ে গেছে বিলকুল/ এতকাল পরে ধর্মের নামে/ ভাগ হয়ে গেল নজরুল।’ ধর্মের নামে শুধু আমাদের জাতীয়কবি নয়, পুরো দেশ-জাতি এমনকি গোটা বিশ্বই আজ দ্বিধা-বিভক্ত; যুদ্ধ-বিবাদে লিপ্ত হতে উদগ্রীব। অনেক প্রশ্ন, অনেক কথা। সব বাদ। নজরুলকে ভাগ করা নেহায়েত অবিচার, ভারী অন্যায়।
এক নজরে কাজী নজরুল ইসলাম:
➤জন্ম: ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ।
(২৪ মে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ।)
[অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া]
➤মৃত্যু: ১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ।
(২৯ আগস্ট,১৯৭৬ বঙ্গাব্দ।)
[বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক পিজির কেবিনে]
➤জীবনকাল: ৭৭ বছর।
➤সাহিত্য সাধনায় নিমগ্নকাল ২৩ বছর।
➤সমাধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ।
পড়ুন> লেখকের সব লেখা
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী ও মৃত্যুবার্ষিকী বাংলা সাল মতে নাকী ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী পালন করা হবে তা ঠিক করা হয়নি। তাই কেউ কেউ বাংলা সাল তারিখ অনুযায়ী আবার কেউবা ইংরেজি সাল তারিখ অনুসরণ করছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। পশ্চিমবঙ্গে ইংরেজি সাল তারিখ অনুসরণ করে কবির জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস উদযাপন করা হয়। তিনি তো বাংলাদেশের জাতীয় কবি। সেই হিসাবে কবির জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস পালনে বাংলা সাল তারিখ অনুসরণ করা সমীচীন বলে আমি মনে করি। উল্লেখ যে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী ও প্রয়াণ দিবস পালনে বাংলা সাল তারিখ অনুসরণ করা হয় বলে পাঠক আর ভক্তদের কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দে থাকতে হয়না।
গতকাল বাংলা ১২ ভাদ্র মোতাবেক বাংলাদেশের বহু সংগঠন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করেছে, বেশ কিছু সংবাদ পত্র শিরোনামও দিয়েছে এবং ক্রোড়পত্র ছেপেছে। আগামীকাল ইংরেজি ২৯ আগস্ট মোতাবেক বহু অনুষ্ঠানের কর্মসূচি রয়েছে। বিষয়টি মোটেও ভাল দেখাচ্ছে না। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টির আশু সুরাহা কামনা করছি।
লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও গবেষক
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]