বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি হাই স্কুল, আখাউড়ায় আমার ও আমার সহপাঠিীদের শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার আখাউড়া উপজেলায় চট্রগ্রাম-সিলেট রেল লাইনের পশ্চিম পাশে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আমাদের প্রাণের স্কুলটি অবস্থিত। কালের বিবর্তনে অবকাঠামোভাবে এই স্কুলের অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। আমাদের প্রাণের স্কুলটি স্থাপিত হয়েছিল আজ থেকে ১০০ বছর আগে। মেধা-মননশীলতা ও খেলাধুলার দিক দিয়ে অত্র এলাকার মধ্যে এই স্কুল এখনো শীর্ষে।
এই স্কুল জন্ম দিয়েছে অগণিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। আমাদের সময় স্কুলে কোনো সীমানা প্রাচীর ছিলো না, ছিলো না বারান্দায় কোনো ধরনের গ্রিল। স্কুলের সামনে একটি মাঝারি ধরনের পুকুর ছিলো। এই স্কুলের অন্যান্য ছাত্রদের মতো আমরাও (সহপাঠীরা) দল বেঁধে এই পুকুরে স্নান করতাম, সাঁতার কাটঁতাম আর ডুব দিয়ে লাই খেলা খেলতাম। কিন্তু এখন সেই স্মৃতিময় পুকুটির কোনো অস্তিত্বই নেই! সেই শৈশবকালে আমরা যে কতবার স্কুল থেকে পালিয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। স্কুল পালানোর সময় জামা-কাপড় পরে ও বইপত্র সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে ঠিক মতোই বের হতাম কিন্তু স্কুলে যেতাম না। বইপত্রগুলো নিরাপদ কোনো জায়গায় চুপিসারে লুকিয়ে রেখে বন্ধুদেরকে নিয়ে সেটেল ট্রেনে চড়ে চলে যেতাম আজমপুর এলাকায় পেয়ারা-কাঠাল-লিচু বাগানে অথবা নৌকা নিয়ে চলে যেতাম বরিশল বিল এলাকায়।
সারা দিন বনেবাদারে-খালবিলে ঘুরে বেড়াতাম ও বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করতাম। আর বাসায় ফিরতাম স্কুল ছুটির সময় ঠিক বিকাল দিকে। বাসায় কেউই টের পেত না যে, আমরা স্কুল থেকে পলায়ন করেছি। তবে মাঝমধ্যে স্কুল শিক্ষকদের কাছে ধরা পরে গেলে বাসায় বাবা-মার নিকট অভিযোগ জানাতেন। আর তখন সবার বকুনি শুনতে হতো। তারপরও আমাদের স্কুল পালানো অব্যাহত থাকতো।
এমন অসংখ্য স্মৃতি জড়িত রয়েছে আমাদের স্কুলকে কেন্দ্র করে। জীবনে সবকিছু ভুলা গেলেও শৈশব-কৈশোরকালের স্মৃতি ও ওই সময়কার বন্ধুদেরকে কখনো ভুলা যায় না। শৈশবকালের বন্ধুরাই প্রকৃত বন্ধু। সেই শৈশব-কৈশোরকালের বন্ধুদের সাথে ফেসবুক এর বধৌলতে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দেখা হয় আমাদের প্রাণের স্কুল প্রাঙ্গনে। দিনটি ছিল চলতি বছরের ৯ মার্চ রোজ মঙ্গল বার। এই দিনটি আমাদের জন্য ছিল একটি স্মরণীয় ও বহুকাংখিত। এই শুভ দিনটির জন্য আমাদেরকে দীর্ঘ ৪৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ সময় ক্ষনিকের জন্যে আমার হারিয়ে গিয়ে ছিলাম সেই শৈশব-কৈশোরকালে!
(বামের ছবিতে বামদিক থেকে জাহাঙ্গীর আলম, তৌফিক আলম, এমদাদুল হক, আমি (মোঃ খায়রুল আকরাম খান),শওকত হোসেন বাদল ও মোহাম্মদ বেলাল।)
আমাদের সবার শৈশবকাল বহু আগেই অতিক্রান্ত হয়েছে। আজ আমারা এক এক জন এক এক জায়গায় অবস্থান করছি। পেশাগতভাবে বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছি। তবুও আমরা একে আপরকে হৃদয় দিয়ে অনূভব করি। আজও আমাদের মাঝে শৈশবকালের মতো সৌহার্দপুর্ণ মধুর সম্পর্ক অটুট আছে। সমাজের অন্যান্যদের মতো আজও আমাদের আত্মা বেচেঁ আছে শৈশবের স্মৃতিকে আকঁড়ে ধরে। পরিপূর্ণ জীবনেও আমরা শৈশবের স্মৃতির কাছে আজও ছোট খোকাটি হিসেবেই আছি!
প্রাণের স্কুলের আঙ্গিনায় আসার পর আমাদের শৈশবকালে অনেক জায়গা ও ঘটনার স্মৃতি কথা চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। অতঃপর আমরা সমবেতভাবে শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো দেখতে বের হয়ে পরি। ক্রমান্বয়ে আমরা ঘুরতে থাকি-স্টেশন কলোনী, পূর্ব কলোনী,কুমারপাড়া কলোনী,পশ্চিম কলোনী,খরমপুর স্কুল মাঠ,খরমপুর মাজার প্রাঙ্গন, দুর্গাপুর, শহিদ স্মৃতি কলেজ মাঠ, সড়ক বাজার,রাধা নগর, মসজিদ পাড়া, সহ আরো অনেক জায়গায়। এ সময় আমরা সবাই স্মৃতি কাতর হয়ে পরি। আমারা ফিরে যাই ৪৩ বছরের আগের সময়ে। স্মৃতির আয়নায় স্পষ্টভাবে ভেসে উঠতে থাকে প্রতিটি জায়গার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ঘটনারগুলো।
আমরা স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকি এবং সেই হারানো দিনগুলোর জন্য লালায়িত হতে থাকি!সত্যিই বড়ো মধুময়, বড়ো সুন্দর,বড়ো রঙ্গিন ছিলো আমাদের ফেলে আসা সেই সোনালী দিনগুলো। ইশ- ফিরে পেতাম যদি সেই দিনগুলো! দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য আমরা কিছু ছবি তুলি। আর এই ছবিগুলো আমাদের স্মৃতির ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করবে। এগুলোও আমাদের নিকট এক সময় নস্টালজি হয়ে থাকবে।
লেখক: খায়রুল আকরাম খান
Some text
ক্যাটাগরি: স্মৃতিচারণ
[sharethis-inline-buttons]