শনিবার রাত ১১:০৬, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

পিলখানা ট্রাজেডিতে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৪ সেনা কর্মকর্তার পরিচিতি

১১৯৯ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহে আমরা হারিয়েছি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর মেধাবী ও চৌকশ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসেও এত সামরিক কর্মকর্তা জীবন দেন নাই। একটি সামরিক বিদ্রোহে কখনো এমন ম্যাসাকার ঘটে না। অত্যন্ত কষ্টের বিষয় এই যে, ঘটনার মাত্র ১১/১২ বছরেই আমরা আমাদের এই বীর শহীদদের ভুলে যেতে বসেছি।

শহীদ মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ: এনডিসি, পিএসসি ১৯৫৬ সালের ১৮ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ৩০ নভেম্বর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। চাকরি জীবনে তিনি ১, ২, ৩, ৯ ও ২০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি; আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন নিযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বিডিআরে সেক্টর কমান্ডার (রংপুর), ৬৬ আর্টিলারি ব্রিগেডে কমান্ডার, সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক সচিব ও ৬৬ পদাতিক ডিভিশনে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদেও নিয়োজিত ছিলেন। সবশেষে তিনি বিডিআরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর স্ত্রী নাজনীন হোসেন শাকিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়েছেন। তিনি কন্যা আকীলা রাইদা আহমেদ ও পুত্র রাকীন আহমেদকে রেখে গেছেন।

শহীদ কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ: পিএসসি ১৯৬৪ সালের ২১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর পদাতিক রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন।চাকরি জীবনে তিনি ২, ৮, ৩৪, ৪৪ ইস্ট বেঙ্গল (৯ বীর), ৬৬ পদাতিক ডিভিশন, বিএমএ, এনসিওস একাডেমি ও সেনা সদর এমও পরিদপ্তরে বিভিন্ন নিযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি র‌্যাব-৩-এ অধিনায়ক এবং র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরে পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কম্বোডিয়ায় জাতিসংঘ অন্তর্বর্তীকালীন সহায়তা মিশনে সামরিক পর্যবেক্ষক এবং সিয়েরা লিওনে জাতিসংঘ সহায়তা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষে তিনি বিডিআরের সেক্টর কমান্ডার (সিলেট) পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী ফাতেমা সুলতানা এবং দুই কন্যা জাহীন তাসনিয়া ও লামিয়া সাইয়ারা।

শহীদ কর্নেল মোঃ এমদাদুল ইসলাম: পিএসসি ১৯৬২ সালের ১৫ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালের ২১ ডিসেম্বর পদাতিক রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। চাকরি জীবনে তিনি ৮, ৩৯, ৪৩ (৮ বীর) ও ৪৪ (৯ বীর) ইস্ট বেঙ্গল, বিডিআর, বিএমএ এসআইঅ্যান্ডটি, পিজিআর ও ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডে বিভিন্ন নিযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাজিকিস্তানে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মিশনে পর্যবেক্ষক এবং লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘ মিশনের ফোর্স সদর দপ্তরে ডেপুটি চিফ অপারেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষে তিনি বিডিআরের সেক্টর কমান্ডার (খুলনা) পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার (লুনা) এবং পুত্র মো. আকিফ আল ইসলাম ও কন্যা নৌশিন নাওয়ার নূরজাহান।

 

শহীদ কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বাদল) পিএসসি ।

১৯৬০ সালে ১৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আশুগঞ্জ উপজেলার ইতিহাস খ্যাত শিক্ষার রাজধানী নাওঘাট গ্রামে এক মুসলিম সম্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন তিনি । বাবা কাজী জসিম উদ্দিন ছিলেন বিমান বাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার । পেশাগত জীবনের প্রথম দিক তার কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্থানে পেশোরায় হওয়া সেখানে তিনি স্বপরিবার নিয়ে চলে যান । বাবা-মার আদরে সন্তান কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন কে পেশোরায় ক্যান্টারমেন্টে একটি নামি স্কুলে ভূর্তি করে দেয়া হয় । ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বাবা কাজী জসিম উদ্দিনসহ দেশ প্রেমিক বাঙালী অফিসারা পাকিস্তান সরকারের কঁড়া নজর বন্দিতে আঁতকে পড়েন । ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এই পরিবারটি বাংলাদেশে চলে আসে । ১৯৭৫ সালে কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বাদল) পশ্চিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালশহর এ এ আই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন । ১৯৮০ সালে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ থেকে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম বিভাগে উর্ত্তীন হন । ১৯৮৩ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি কৃতিত্বের সাথে পাস করেন এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যাল থেকে এম.ডি.এস বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন । শহীদ কর্ণেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বাদল) পিএসসি ১৯৮২ সালের ২ ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন । ১৯৮৩ সালে ২৩শে ডিসেম্বরে তিনি ৯ম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে সাফল্যের সাথে কোর অব সিগন্যালস এ কমিশন লাভ করেন । ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলস-এ যোগদান করেন এবং ৩৭ রাইফেলস ব্যাটালিয়নে অধিনায়ক হিসেবে বলিপাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত হন । ১৬ই আগস্ট ২০০৮ সালে কর্ণেল পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং এইদিন  থেকেই সেক্টর কমান্ডার, রাঙ্গামাটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন । শহীদ কর্ণেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বাদল) পিএসসি ‘র চাকুরি জীবনে তিনি ১, ২, ৩ ও ১০ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন; এস টি এস, আর্মি সিগন্যাল ব্রিগেড, ডিজিএফআই ও সেনাসদর পিএস পরিদপ্তর ও বিডিআর -এর ৩৭ রাইফেল ব্যাটালিয়নে বিভিন্ন নিযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি রুয়ান্ডায় জাতিসংঘ সহায়তা মিশন (UNAMIR)-এ সামরিক পর্যবেক্ষক এবং কঙ্গোতে জাতিসংঘ মিশন (MONUC)-এ অধিনায়ক, ফোর্স ব্যানএমপি -১ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । সর্বশেষ তিনি বিডিআর-এর সেক্টর কমান্ডার, (রাঙ্গামাটি) পদে নিয়োজিত ছিলেন । রুয়ান্ডা ও কঙ্গো ছাড়াও তিনি কেনিয়া, সৌদী আরব, থাইল্যান্ড, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে, উগান্ডা ও জাম্বিয়া সফর করেন ।  একজন আত্মপ্রত্যায়ী সৎ দক্ষ, পরিশ্রমী, কর্মনিষ্ঠা সাহসি ও বিচক্ষণ সেনা অফিসার হিসেবে শহীদ কর্ণেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (বাদল) পিএসসি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজ কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অসংখ্য পুরষ্কারে ভূষিত হন। বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব জন্য দুই দু বার পুরষ্কার অর্জন করেন । এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে বহু পদক ও সম্মাননা গ্রহন করেন । কর্মক্ষেত্রে একজন সফল মানুুুুষকে শুধু পদক সম্মাননা দিয়েই মূূল্যায়ন নয়, তাদের সব ক্ষেত্রে সম্মানের স্থানে রাখতে হবে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ।  ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনা বিধুর একটি দিন । সেদিন পিলখানার দরবার হলে বিডিআর-এ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ততাকথিত দাবি আদায়ের অজুহাতে কিছু সংখ্যক বিপদগামী বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহে নিহত হন জাতির এই সূর্য্য সন্তান । ঐদিন তিনি সহ প্রায় ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। দেশের সর্বাক্ষণিক অতন্দ্র প্রহরী মহান আত্মত্যাগী এই সেনা নায়েকের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সদর দফতর থেকে যশোর ক্যান্টারমেন্ট প্রবেশ পথে ঢাকা-যশোর মহসড়কের পাশে “শহীদ কর্ণেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন (পিএসসি) -এর নামে তরুন নির্মাণ করা হয় । একই সাথে কাঁঁচের গ্রাসের মধ্যে কালো কালি দিয়ে রং তুুুলিতে খুঁচিয়ে লেখা হয়, তাঁর কর্মজীবনের একটি সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত । উদ্দেশ্য দেশের প্রয়োজনে  দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আত্মদানকারী একজন বীর সৈনিক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান কে যেন জাতি শ্রদ্ধা-ভালবাসার সাথে সব সময় স্মরণ রাখে।

প্রিয়তমা জীবন সঙ্গীনীর নাম বদরুন্নেছা খানম।
বড় ছেলে কাজী সামির আসাফ আস্ট্রোলিয়ায়  U.T.S ইউনিভার্সিটিতে একাউন্টিং এ মাস্টার্স করছে। ছোট ছেলে কাজী সাদির আসাফ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৪ তম বিএম দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে সাফল্যের সাথে কোর অব ইনফেন্ট্রি (পদাতিক বাহিনী )তে কমিশন লাভের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে লেফটেনেন্ট হিসেবে কর্মরত আছে ।

মহান আল্লাহ তাঁদের বিদেহী আত্মাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সুশীতল ছায়া দান করুন।

#তথ্য_ঋণ:
[১] http://colmojibtrust.com/index.html
[২] তরিকুল ইসলাম সেলিম:
লোক-সাহিত্যনুরাগী, রাজনীতিক কর্মী ও সংগঠক।)
[৩] উইকিপিডিয়া

Some text

ক্যাটাগরি: বিবিধ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি