ঢাকার রাজধানী মালিবাগের একটি ফাঁকা বাসায় প্রায় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে নির্যাতন করে পালিয়ে যাওয়া সেই ভয়ঙ্কর গৃহকর্মীকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) গভীর রাতে শাহজাহানপুর থানার একটি দল ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর ইউনিয়নের চিকনমাটি গ্রামের কফিলউদ্দিনের বাড়ি থেকে ওই গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। কফিলউদ্দিন ওই গৃহকর্মীর সম্পর্কে মামা হন। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বুধবার গভীর রাতে বিশেষ টেকনোলজির মাধ্যমে ঢাকা থেকে আগত একটি পুলিশের টিম বালিয়াডাঙ্গী থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর এলাকায় অভিযানে যায়।পরে রানীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গী থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর প্রথমে ডেমরায় আশ্রয় নেন গৃহকর্মী রেখা। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যান ঠাকুরগাঁওয়ে মামার বাসায়।
রাণীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ জানান, রেখাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
তিনি জানান, চুরি করা টাকার মধ্যে এক লাখেরও বেশি খরচ করে ফেলেছেন তিনি। উদ্ধার করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন।
এর আগে সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর মালিবাগের একটি ফাঁকা বাসায় ভয়ঙ্কর এক গৃহকর্মীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। গৃহকর্মীর পাশবিকতা দেখে আঁতকে উঠেছেন মানুষ। বৃদ্ধা মাকে দেখভালের জন্য রাখা হয়েছিল গৃহকর্মীকে। সেই গৃহকর্মীর নির্মম নির্যাতনেই এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেই বৃদ্ধা।
ভাইরাল হওয়া এক সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেল, ওই বৃদ্ধাকে নগ্ন করে চরম নির্যাতন চালিয়েছে সেই গৃহকর্মী।
জানা যায়, বছর তিনেক ধরে কিডনিসহ নানা সমস্যায় ভোগা বৃদ্ধা শুয়ে আছেন বিছানায়। পরম যত্নে তার সেবা করছেন রেখা নামের এক গৃহকর্মী। এর পরই দেখা গেল ভয়ঙ্কর গৃহকর্মীর কাণ্ড। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজটি প্রকাশ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। এর পরই ইন্টারনেটে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
পুলিশ বলছে, মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা হওয়ার পর থেকেই অভিযুক্ত গৃহকর্মীকে ধরতে অভিযান শুরু করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, বৃদ্ধার গায়ের কাপড়-চোপড় খুলে তাকে জোর করে বাথরুমে ঢোকায় রেখা। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ঢালা হয় ঠাণ্ডা পানি। কিন্তু ভেতরে গৃহকত্রীকে আটকাতে না পেরে বেরিয়ে আসে রেখার আসল চেহারা।
বৃদ্ধার লাঠি দিয়েই শুরু হয় মারধর। একের পর এক আঘাতে বৃদ্ধা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে থামেনি রেখা। করা হয় মাথায় আঘাত।
একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বুকের ওপর চেপে বসে। বঁটি হাতেও তেড়ে আসে রেখা। একসময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা। গলা থেকে চেইন খুলে নেয় রেখা। হাতের বালাও পরেন।
চাবি দিয়ে আলমারি খুলতে ব্যর্থ হন। তার পরেই অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা ও মোবাইল নিজের কব্জায় নেয় রেখা।সব কিছু ব্যাগে ভরে বৃদ্ধাকে বাসায় তালা মেরে দেয় রেখা। পরে বাসার গেট খুলে ব্যাগসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে ওই ভয়ঙ্কর গৃহকর্মী।ব্যবসায়িক কাজে ছেলে ঢাকার বাইরে গেলে এ ঘটনা ঘটায় গৃহকর্মী।
শাহজাহানপুর থানা পুলিশ বলছে, গৃহকর্মীদের নামে ছদ্মবেশে পেশাদার অপরাধীরা ঢুকে যাচ্ছে মানুষের বাসাবাড়িতে।নির্যাতিত বৃদ্ধার ছেলে গণমাধ্যমকে বলেন, এক বছর আগে মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনে মেয়েটিকে বাসায় কাজে রাখা হয়েছিল। তার দায়িত্ব ছিল আমার বৃদ্ধ মাকে সেবাযত্ন করা।
তাদের একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে মেয়েটি এসেছিল। সেখান থেকে পরিচয়ের সূত্রে তাকে বাসার কাজে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন বৃদ্ধার ছেলে।
ঠাকুরগাঁও থেকেঃ জাহিরুল ইসলাম
Some text
ক্যাটাগরি: খবর
[sharethis-inline-buttons]