ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বীরগড় গ্রামে স্বাস্থ্য বিধি মেনে, মাস্ক বিতরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, নারীর সুস্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে ‘নারীমুক্তি’র উঠান বৈঠক ও ভিডিও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর কোন সেমিনারে নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা খুব সহজ, সহজ শোনার এবং বুঝার মতো মানুষ পাওয়াই। চ্যালেঞ্জ তখনি সামনে আসে যখন নারী অধিকার প্রত্যন্ত কোন গ্রামে কথা ওঠে। তারুণ্যের শক্তিই বোধ হয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। এসব চ্যাঞ্জলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সীমান্ত ঘেঁষা ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরে তরুণীরা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন নারী অধিকার আন্দোলন ‘নারীমুক্তি’।
‘নারীমুক্তি’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহঃ
১. জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করা।
২. রাষ্ট্রীয়,সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৩. নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. নারীকে শিক্ষিত,দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করা।
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে নারীর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা।
৬. নারী পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা।
৭. নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন দূর করা।
৮. নারীর সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা।
৯. বাল্যবিবাহ, মেয়ে শিশু ধর্ষণ, নিপীড়ন, পাচার এবং পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা।
১০. নির্যাতিত নারীকে আইনগত সহায়তা দেয়া।
১১. নারীর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল প্রশিক্ষণে নারীকে সমান সুযোগ দেয়া।
১২. নারী শিক্ষা বৃদ্ধি, নারী পুরুষের মধ্যে শিক্ষার হার ও সুযোগের বৈষম্য দূর করা এবং উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সক্রিয় ও স্পষ্ট নীতি অনুসরণ করা।
১৩. টেকসই উন্নয়ন ও অব্যাহত অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে নারীর জন্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণ এবং শক্তিশালী করা।
১৪. শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী ও মেয়ে শিশুর সমান অধিকার নিশ্চিত করা, শিক্ষার সকল পর্যায়ে অসমতা দূর করা, শিক্ষাকে সর্বজনীন করা, ভর্তির হার বৃদ্ধিসহ নিরক্ষরতা দূর করা এবং মেয়ে শিশুকে বিদ্যালয়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উপরোক্ত ১৪ টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ‘নারীমুক্তি’ নামক সংগঠনটি।
এছাড়াও বাল্যবিবাহ,যৌন হয়রানি, নারীর স্বনির্ভর হওয়া এসব নিয়ে সোচ্চার হয়ে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। এবারের উঠান বৈঠকের বিষয় বস্তুতে থাকছে বাল্যবিবাহ, নারীর সুস্বাস্থ্য এবং প্রজেক্টর প্রদর্শনী। অনুষ্ঠিত হবে হরিপুর উপজেলার বীরগড় গ্রামে।
উক্ত উঠান বৈঠকে বাল্য বিবাহ নিয়ে আলোচনা করেন মোছাঃ সুমি কায়সার। তিনি বলেন,সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উঠান বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা অনেক। একটি পরিবারে একজন নারী না থাকলে বোঝা যায় সেই পরিবারের দূর্গতি,আর সেই নারীর বাল্যবিবাহ হতে থাকলে, অদূরেই আমাদের জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে।
মা ও শিশু স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগে এবং মায়ের অকালেই মৃত্যু হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতা অতিব জরুরি। এলাকার পাশে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকার পরও মানুষ সেইখানে যায় না। তাই একটি সুস্থ শিশু এবং সুস্থ্য মায়ের জন্য অবশ্যই গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের প্রয়োজন।
মাসিক সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করেন মোছাঃ শাহিনুর আক্তার এপি। তিনি বলেন, ‘নারীমুক্তি’ সদস্য সাহিনুর আক্তার এপি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। যার ৮০% কৃষক গ্রামে বসবাস করে। গ্রামীণ মহিলারা খুব কম শিক্ষিত হয় যার ফলে অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে সচেতন না। আর এর ফলে অনেক নারী অনেক সমস্যায় ভুগে। মাসিক তার মধ্যে অন্যতম।
তারা লজ্জায় এই সম্পর্কে কারো কাছে পরামর্শ নেয় না এবং পরবর্তীতে অনেক রোগের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু মাসিক একটি খুবই স্বাভাবিক জিনিস৷ গ্রামীণ সমাজে মাসিক নিয়ে লজ্জা না করে, কিছু গোপন না করে প্রয়োজনে অন্যের পরামর্শ নেওয়া ও নারী সচেতনতার জন্যে এমন উঠান বৈঠক প্রয়োজন৷
উল্লেখ্য: নারী মুক্তি সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন অক্সিজেনের একটি উদ্যোগ।
গৌতম চন্দ্র বর্মন: ঠাকুরগাঁও থেকে
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]