পরিবার হলো মানব সভ্যতার আদি ও প্রধান ভিত। এই পরিবারকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় যত ব্যবস্থা। পরিবার-ব্যবস্থার স্বীকৃতি ও সমৃদ্ধি ব্যতীত মানব সভ্যতা কল্পনা করাও অসম্ভব। পৃথিবীর সমস্ত কল্যাণচিন্তার উৎপত্তিকেন্দ্র এই পরিবার। মানব অস্তিত্বকে টিকেয়ে রাখার অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
মানুষ যখন তার অস্তিত্ব বিলীনের সম্ভাবনা দেখে তখনই সে নতুন কিছু ভাবে নতুন কিছু শেখে। প্রয়োজনে উদ্ভাবন করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কলাকৌশল। মানুষকে তাঁর খাদ্য গ্রহণ, বস্ত্র পরিধান এমনকি হাঁটা পর্যন্ত দীর্ঘ চর্চার দ্বারা শিখে আয়ত্বে আনতে হয়। প্রতিটি ক্ষণ প্রতিটি মুহূর্তে তাকে শেখার মধ্যে থাকতে হয়। অথচ সেই পরিবারব্যবস্থা আজ ভোগবাদিতা ও অজ্ঞতার কবলে বিলীন হতে চলেছে।
পরিবার কী? কেন প্রয়োজন সভ্যতার উন্নয়নে? রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে পরিবারের ভূমিকা কী? পরিববারের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ধারণার রূপরেখা কেমন? প্রতিটি ব্যক্তির মাঝে এমন চিন্তার উদ্ভব হওয়া জরুরি। যার ভিত্তিতে সে তার জীবনকে গড়ে তুলবে। অথচ আজ সকলেই উদাসীন জীবনের মৌলিক ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে। ব্যস্ত হয়ে আছে ভোগ এবং ক্ষমতার লড়াইয়ে। পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে প্রতিযোগিতার বাজার। পরিবার যখন ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী হয় তখন সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া স্বাভাবিক। পরিবার সঠিক উপায় ও পদ্ধতিতে গঠিত হলে তখন বিশ্ববাসী তার রাষ্ট্রের ‘রোল অব মডেল’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যায়।
আধুনিক এ বিশ্ব পরিস্থিতির পারিবারিক বিচ্ছেদ-ভঙ্গুর প্রথা আগামীর সুন্দর বিশ্বকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যখন সমাজ-জাতীয়-রাষ্ট্র ব্যবস্থা সামগ্রিক পরিবর্তনে ব্যর্থ হয় তখন ব্যক্তিকেই নিজের জ্ঞান ও যোগ্যতার বলে পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হয়। তাই বর্তমানে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিবার প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে জ্ঞানের চর্চায় নিয়োজিত হওয়া।
পরিবার মানে কী শুধু স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির একত্রে বসবাস বা তার চেয়ে কিছু সংখ্যক বেশি লোকের সম্পর্কজনিত একত্রে বসবাস? সংখ্যা দিয়ে পরিবার হয় না। পরিবার হয় সম্পর্ক, আস্থা, একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার দ্বারা। প্রকৃতার্থে পরিবার তখনই পরিবার হয় যখন প্রতিটি সদস্য নিরাপদে, নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে তার জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। আজ পরিবারের মধ্যে এর একটিও পরিলক্ষিত হয় না। প্রত্যেকে শুধু পরিবারের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত, পরিবার গঠনে নয়! পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের মাঝে রয়েছে পরিবার গঠনের শিক্ষার অভাব, পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব, নিরাপত্তার অভাব প্রভৃতি।
পুঁজিবাদী এ সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারে আজ সবাই শুধু একটি অভাবকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে তা হলো ‘অর্থাভাব’। অর্থকে কেন্দ্র করে নিজের ক্ষমতাকে জাহির করতে চায়। অর্থ ও ক্ষমতা দিয়ে বাস্তব অনেক কিছু প্রকাশ করলেও তা অনিয়ন্ত্রিত। পরিবারকে সুখের আবাস হিসেবে নিরূপণ করতে হলে তাকে জ্ঞানভিত্তিক পরিবার প্রথায় রূপান্তর করতে হবে। পরিবারই রাষ্ট্রের ভিত্তি। পরিবারের ভিত্তি ব্যক্তি ও তার জ্ঞানের বিকাশ। পরিবারে যখন শৃঙ্খলা-শান্তি বিরাজ করবে রাষ্ট্রও তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে শৃঙ্খলিত-শান্তপূর্ণ হবে। আধুনিক এ বিশ্ব পরিস্থিতির পারিবারিক বিচ্ছেদ-ভঙ্গুর প্রথা আগামীর সুন্দর বিশ্বকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যখন সমাজ-জাতীয়-রাষ্ট্র ব্যবস্থা সামগ্রিক পরিবর্তনে ব্যর্থ হয় তখন ব্যক্তিকেই নিজের জ্ঞান ও যোগ্যতার বলে পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হয়। তাই বর্তমানে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিবার প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে জ্ঞানের চর্চায় নিয়োজিত হওয়া।
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা, সমকালীন ভাবনা
[sharethis-inline-buttons]