রবিবার রাত ৮:৩৪, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

এক ছাগলের দুই কান, তুই আমার জানের জান

৬৮৪ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

আহারে, মনে পড়ে নব্বইয়ে আমাদের সেই সোনালী দিনের কথা! স্বৈরাচার বিরোধী মিছিলে উত্তাল রাজপথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি, জেলা ও মফস্বলের স্কুল থেকে মিছিল করে বেরিয়ে যাওয়া৷ সে কি মিছিল, এই মাথা থেকে ওই মাথা দেখা যায়না! সন্ধ্যা হতেই রেডিও নিয়ে হামলে পড়া, সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় বিবিসি লন্ডন সাতটায় ভয়েজ অফ আমেরিকা।

নব্বই দশকের গানগুলোর কথা কি বলব “অলটাইম ফেভারেট” মাইলস, সোলস, এল আর বি, আর ফীডব্যাকের স্বর্ণযুগ। স্পেশালি সোলসের “মন শুধু মন ছুঁয়েছে” আর মাইলসের “চাঁদ তাঁরা সূর্য নও তুমি” আর “মাঝরাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়”। দুইটাকার চিরুনি দিয়ে চুল আচঁড়াতে আচঁড়াতে আজম খানের ওরে সালেকা, ওরে মালেকা, বাচ্চুর “সেই তুমি সেই আমি নেই তো আগের মত”, জেমসের ঝাকড়া চুলে ভরাট গলায় ওহে পাগলী… ব্যান্ড সঙ্গীতের সে কি সমৃদ্ধ সময়! কুমার বিশ্বজিৎ এর গান “তুমি রোজ বিকালে আমার বাগানে” যেইটা সোর্ড ব্লেডের এ্যাডে দেখাইতো।

শুক্রবার বিকেল মানেই থান্ডারক্যাটস। সঙ্গে ছিলো উডি উডপেকার আরো ছিল টম এন্ড জেরি। শুক্রবার মানেই মুভি অব দ্য উইক আর নাটক মনের মুকুরে, রাত সাড়ে ১০টায় দ্য এক্সফাইল। রবিবার রাত মানেই নাইট রাইডার, ম্যাকগাইভার! বাংলা নাটকের সে কি উজ্জ্বল সময়! ঢাকা থাকি, এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি। সংশপ্তক নাটকের হুরমতি আর কান কাটা রমজান! আহা!

রমজানের ঈদের আগে ঈদ কার্ড কিনে শুভেচ্ছা বিনিময় তখনকার ঈদের সময় মার্কেটের বড় বড় দোকানগুলোতে জামা-কাপড়সহ ঈদ কার্ডও বিক্রি হতো। ঈদ আসলেই আনন্দমেলা, যদি কিছু মনে না করেন আর ইত্যাদি।

স্কুলের টিফিন মানে ছিলো মধ্যেখানে বাটার দেওয়া বাটারবন নামে একটা লম্বা রুটি, আর ক্রীমরোল ছিলো বিস্কুটের মতো মুচমুচে একটা নলের অনেক ভেতরে ক্রিম দিয়ে পোরা, টিফিন খরচ দুই টাকা। দুই টাকায় হট পেটিস অথবা এক টাকা দামের দুটি সিঙ্গারা। মনে পড়ে সনপাপড়ি, টিকটিকির ডিম, রিং চিপস আর সিভিট এর কথা। মিমি আর বেবি লজেন্সও ছিলো৷ নাবিস্কো গ্লুকোজ বিস্কুট ছিল… চায়ের সাথে আমজনতা খাইতো।

খেলা মানেই ফুটবল। কাদা পানিতে মাখামাখি। খেলা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ হোস্টেলের দিঘীতে ডুব সাতার। চোখ লাল করে বাড়ি ফেরা। আহা আমার নব্বই! শীত আসলেই জায়গায় জায়গায় কোট বানিয়ে বেডমিন্টন খেলা। মনে পড়ে যায় ঘুড়ি ওড়ানো দিনগুলো৷ ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দিতে দিতে হাত কেটেছি কতবার! ফুটবল খেলতে পনের কিলোমিটার হেঁটে তালশহর যাওয়া। আহারে আমার নব্বই দশক! আর আমার একটা ভীষণ বাতিক ছিলো হাঁটার। একা একা আমি রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতাম… ঘন্টার পর ঘন্টা  কোথায় কোথায় চলে যেতাম জানি না।

প্রথম দেখা ভিসিআরে অমিতাভের কুলি, হাওয়া হাওয়া গানের সাথে মাতাল হওয়া। বন্ধুদের সাথে প্রথম মৌকলি ক্লাবে ভিসিআর অশ্লীল মুভি দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়া। আহা আমার নব্বই! শিল্পীর কাছ থেকে ধার করে রোমেনা আফাজের দস্যু বনহুর সিরিজ বই রাত জেগে পড়া! স্কুল পালিয়ে রুবেলের সিনেমা লড়াকু দেখতে যাওয়া, হরলাল রায়ের বাংলা ব্যাকরন ‘একের ভেতর পাঁচ’মনে পড়ে ফাকা শহরে বেড়ে উঠার কথা অনেক কিছু মনে পড়ে গেল আমার প্রথম ক্যাসিও ঘড়ি, প্রথম কেনা (TDK)টিডিকে অডিও ক্যাসেট, স্ট্যামপ আর স্টিকার জমানোর এলবাম কথা! আহা এইভাবে হঠাৎ একদিন বড় হয়ে যাওয়া ।

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী, গল্প, মতামত, সাহিত্য, স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি