দিনশেষে সবাই মত ও পক্ষপাতদুষ্ট। নিজের মত এবং পক্ষের বাহিরে কেউ কিছুই করে না, এটা এখন প্রমাণিত । জনৈক উসামা মুহাম্মদ এবং তৎপরবর্তী আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা সব সংস্কারবাদিরা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তাঁদের উত্থাপিত সিংহভাগ দাবিগুলোর সাথে আমি একমত থাকলেও আন্দোলনের প্রক্রিয়ার সাথে একমত ছিলাম না শুরু থেকেই।
বেফাকের দুর্নীতি নিয়ে যখন একজন মুখ খুললেন, আমরা সরাসরি তাঁর আওয়াজ শুনিনি; শুনেছি প্রতিধ্বনি। আড়াল থেকে ভেসে আসে যে আওয়াজ, তাঁকে প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কিই বা বলা যায়? নিজেকে আড়াল করে কারোর কিছু বলা, ভেসে আসা আওয়াজের মতোই। কিন্তু মজবুত তথ্যের কারণে সেগুলো গ্রহণ করে না নেওয়ার কোনো কারণ ছিল না।
বেফাকের দুর্নীতির বিষয়গুলো ‘আকাশ থেকে পড়া’ তেমন কিছুই ছিল না। বরং এগুলো বেফাক সংশ্লিষ্ট কমবেশি সবার কানে কানেই ছিল। কেউ মুখে হয়তো আনেনি। হাটহাজারীর ছাত্র বিক্ষোভ, এটাও ‘সহসাই ঘটে যাওয়া’ কিছু নয়। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভে জনৈক উসামা মুহাম্মদ আড়াল থেকে ফুঁ দিয়েছেন আর অমনি বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে হাতেগোনা গুটিকয়েক দালাল বাদে দেশের সিংহভাগ ছাত্র ও আলেম সমাজ সমর্থন এবং সাহস যুগিয়েছেন বলে আন্দোলন সফল হয়েছে।
ইনশাআল্লাহ বেফাকের সংস্কারও সফল হবে। কিন্তু জনৈক উসামা মুহাম্মদ কওমি অঙ্গনে আন্দোলনের যে প্রক্রিয়ার দ্বার উন্মোচিত করেছেন, তাঁর কুফল ইতোমধ্যেই আমরা উপভোগ করতে শুরু করেছি। এখন নতুন করে আরেক দল উসামা মুহাম্মদ সেজে ওলামায়ে কেরামদের সমালোচনা করে মুখে খৈ ফুটাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে নিজেদের ইমেজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাঁরা কি তা কখনও ভেবেছেন? এভাবে দিন দিন উসামা মুহাম্মদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে কওমির কোন সাধু আছেন যে সমালোচনার বাহিরে থাকবেন?
এখনতো আমরা প্রতিদিন অপেক্ষা করি যে, আগামীকাল ফেসবুকে কার কুকীর্তির কথা জানতে পারবো। কেউ একজন একটা ফেক আইডি খুলে অমনি শুরু করে দেয় কারোর চরিত্র হনন। আজ এর, তো কাল ওর। কেউ কি বলবেন, আসলে ধোয়া তুলসী পাতাটা কে? এভাবে আলেমদের চরিত্র হনন চলতে থাকলে, কয়জনের চরিত্র হালে টিকবে ? বিশৃঙ্খলা উস্কে দেওয়া সহজ কিন্তু সমাধান তো সহজে আসে না।
জনৈক উসামা মুহাম্মদ যা করেছেন বা করছেন (যদিও তাঁর সবগুলোর সাথে আমি একমত নই, তবুও) তাঁর তো নির্দিষ্ট একটা লক্ষবস্ত আছে। তথ্যগত দুর্বলতা তেমন না থাকায় মোটামুটি গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। তিনি বেফাকের দুর্নীতির সমাধানের জন্য যথাযত কর্তৃপক্ষকে বরাবরই আহবান করেছেন। হাটহাজারীর আন্দোলনে (যদিও সেখানে তাঁর কিছুটা বাড়াবাড়ি ছিল) নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানিয়েছেন ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য। কিন্তু এখন যারা নতুন করে উসামা মুহাম্মদ সেজে লাফালাফি করছেন তাঁরা কী চান? তাঁদের লক্ষবস্ত কী? তারা কার কাছে সমাধান চান, নাকি নিজেরাই সমাধান করবেন?
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এখন যা হচ্ছে সবটাই প্রতিহিংসা। ভেবেছেন আপনাদের প্রতিহিংসায় কওমি অঙ্গন জ্বলে উঠবে? এতটা বোকা ভাবলেন কীভাবে? আপনাদের লাফালাফির নির্দিষ্ট কোনো লক্ষবস্ত নেই। নেই তথ্য ও তাত্ত্বিক কোনো গ্রহণযোগ্যতাও। এসব আলগা লাফানি লাফিয়ে কওমিকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন আপনারা?
কওমির বন্ধুত্বের কোনো রং আপনাদের চেহারায় নেই, যা আছে তা পুরোটাই শত্রুতার। আপনারা কওমির কেউ না। দিনে দিনে সব উসামা মুহাম্মদের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে আসছে। পরিচয় আড়াল রেখে কারো চরিত্র হনন করা ধুর্তামী ছাড়া কিছুই না। নির্দিষ্ট কোনো সুযোগ সন্ধানীগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে আপনাদের মাঠে নামিয়েছে। আপনারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। এটা বুঝার এখন কারোরই বাকি নাই।
লেখক: ইহসান এইচ
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা, মতামত, সমকালীন ভাবনা, সাহিত্য
[sharethis-inline-buttons]