নারায়ণগঞ্জ সদরের পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে গতকাল শুক্রবার এশার নামাজের সময় এসি বিস্ফোরিত হয়ে অন্তত অর্ধশত মানুষ দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিস্ফোরণে দগ্ধ রুগিদের স্থানীয় সরকারি হাস্পাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়েছে। আর আশঙ্কাজনকদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৬ রোগীর মধ্যে সাত বছরের শিশু জুবায়ের মারা গেছে। এ তথ্য জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি জানান, ৪০ থেকে ৫০ মিনিট আগে জুবায়ের মারা যায়। তার ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
বার্ন ইউনিটের সহকারী পরিচালক ডা. হুসেইন ইমাম জানান, দগ্ধদের সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। রোগীদের সবরাই শরীরের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আহত রোগীদের সবারই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের জন্য একটা ডেডিকেটেড ওয়ার্ড করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এসেছিলেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সবারই চিকিৎসা চলবে। রোগীদের কার কী অবস্থা এটি কাল নাগাদ সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে। তবে কেউ শঙ্কামুক্ত নন।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ওই মসজিদের যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা তিতাস গ্যাস লিকেজ থেকেই হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ঘটনার পর মসজিদে গ্যাস ডিটেক্টর দিয়ে পরিমাপ করেছেন। মসজিদের ভেতরে প্রায় ৭০ ভাগ মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
নারায়ণগঞ্জের তল্লা বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ৩৬ জন মুসল্লি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে এশার নামাজের সময় এ বিস্ফোরণ ঘটে। তাদের উদ্ধার করে ঢামেকের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। পরে ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘৩৬ জনের মধ্যে বেশির ভাগেরই মেজর বার্ন। প্রাথমিকভাবে অ্যাসেসমেন্ট চলছে, তবে কারও অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। দগ্ধদের অনেককে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। সবকিছু শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে কতজনকে কোথায় নেওয়া হলো, সেটা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এক কথায় বলতে গেলে, বেশির ভাগেরই পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি।’
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন গণমাধ্যমকে জানান, আমরা এখানে এসে প্রথমেই ধারণা করি, এসিগুলো বিস্ফোরণের সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংশ্লিষ্টতা কম। পরে মেঝেতে থাকা পানিতে গ্যাসের বুদবুদ ওঠায় সন্দেহ হয়। এরপর দেখা যায়, মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের অনেকগুলো লাইন গেছে। লাইনের পাইপগুলোর প্রতিটিতে একাধিক লিকেজ রয়েছে। সেই লিকেজের গ্যাস সব সময় মসজিদে উঠত। নামাজের আগে থেকেই মসজিদ বন্ধ করে এসিগুলো চালু করার ফলে পুরো রুমেই এসির গ্যাস ও লাইনের গ্যাস মিশে যায়। আর গ্যাসের ধর্মই হলো বিস্ফোরণের অবস্থা তৈরি হলে বা কোনো আগুনের সংস্পর্শ পেলে বিস্ফোরিত হওয়া বা জ্বলে ওঠা। সেই সূত্র মতেই কোনো একটি বিস্ফোরণের কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে। আমরা ধারণা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তারা দ্রুত এখানে এসে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, গ্যাসের লাইন থেকেই এ বিস্ফোরণ হয়েছে।
আমরা কীভাবে এ লিকেজ বন্ধ করা যায় এবং আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে কাজ করছি। পাশাপাশি বিস্ফোরণের সঙ্গে গ্যাস ছাড়া অন্য কোনো কিছুর সূত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসের পাইপগুলো সারানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষ প্রতিনিধি: আশরাফুল সুমন
Some text
ক্যাটাগরি: খবর
[sharethis-inline-buttons]