ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া পূর্ব আরাজি চন্ডিপুর ৬ নং ওয়ার্ডে গত রবিবার (৩০ আগষ্ট) যৌতুকের জন্য স্বামীর দেয়া বিষ মিশানো জুস পান করে এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নিহত গৃহবধূর নাম মনি আক্তার (২০)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের পূর্ব আরাজী চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুল আউয়ালের মেয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মনি আক্তারের সাথে দুই বছর পূর্বে সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কচুবাড়ী এলাকার আজহার আলীর ছেলে মমিনুল ইসলামের সাথে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয় এবং তারা সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করতে থাকে। কিন্তু বিয়ের আগে মনি আক্তার এর সাথে গড়েয়া ইউনিয়নের খামার ভোপলা গ্রামের ওহাব আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের (২৫) প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
মনি আক্তার এর বিয়ের পর নজরুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তার স্বামীকে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে এক পর্যায়ে তাদের সংসারে ফাটল সৃষ্টি করে গত ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাদের ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে এবং নজরুল ইসলাম মনি আক্তারকে বিয়ে করে। এদিকে বিয়ের তিন মাস যেতে না যেতেই মনি আক্তার এর উপর শুরু হয় যৌতুকের জন্য অমানবিক নির্যাতন। পরে যৌতুকের টাকা আনতে গত কুরবানি ঈদে মনি আক্তারকে তার বাবার বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং নজরুল তার স্ত্রী মনি আক্তার এর কোন খোঁজ খবর নেয় না। এমনকি মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রাখে।
প্রায় মাস খানেক মনি আক্তার বাবার বাসায় থাকার পর তার স্বামী নজরুল এর বাসায় গেলে যৌতুকের টাকা না নিয়ে আসায় তাকে পরিবারের সকলে মারধোর করে বাসা থেকে বের করে দেয়।
এ ঘটনায় মনি আক্তার ও তার পরিবার ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে এসআই পিযুষ তদন্ত করে দুই পক্ষকে সমঝোতার জন্য সদর থানার গোল ঘরে বসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সমঝোতা বৈঠকে মনি আক্তার ও তার বাবা-মা হাজির হলেও নজরুল ইসলাম সেদিন হাজির না হয়ে তার বাবা-মা কে পাঠান। এদিকে নজরুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বৈঠকে তারা এক সপ্তাহের সময় চান।
এদিকে থানা থেকে আসার পর দিন দুপুরে নজরুল ও তার বন্ধু আপোষ মিমাংসার কথা বলে মোবাইলের মাধ্যমে মনি আক্তারকে একা বাড়ির বাহিরে রাস্তায় ডেকে নিয়ে কথা বলতে বলতে জোর করে একটি জুস খেতে দেয়। জুস খেয়ে সে বাসায় এসে বার বার বমি করে, এসময় তার মা তাকে বমির কারণ জিজ্ঞেস করলে মনি বলে ওরা আমাকে জুস খাওয়াইছে এই কথা বলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় পরিবারের অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য গড়েয়া ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। মনিকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে নিহত মনি আক্তারের বাবা আব্দুল আউয়াল বাদি হয়ে গত সোমবার (৩১ আগষ্ট) ঠাকুরগাঁও সদর থানায় তার স্বামী নজরুল ইসলামসহ ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম।
মোঃ জাহিরুল ইসলাম: ঠাকুরগাঁও থেকে
Some text
ক্যাটাগরি: খবর
[sharethis-inline-buttons]