প্রয়াত অ্যাডভোকেট সৈয়দ এ.কে.এম এমদাদুল বারী ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন অন্যতম কীর্তিমান পুরুষ। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি যেসব পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন, সেসবের কোন একটিতে নিজের অবস্থান তৈরি করা অসংখ্য মানুষের সারা জীবনের অধরা স্বপ্ন। অকল্পনীয় যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা না থাকলে এ সমস্ত পদে আসীন হওয়া যায় না। তিনি সে সব পদে আসীন হতে পেরেছেন। কারণ সত্যিকার অর্থেই তিনি সে সকলের যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন।
জনাব এমদাদুল বারী চৌধুরী যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন, সৌভাগ্যক্রমে তখন আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন স্যারের প্রেসের দায়িত্বে ছিলাম। পাশাপাশি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। সে সময় ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ সহ প্রায় সকল অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছে। অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজনে সহযোগিতা করা, উপস্থাপনা করা, ছবি তোলা ও প্রেস রিলিজ করার দায়িত্ব পেয়ে ছিলাম।
সে সময় আমি জনাব এমদাদুল বারী সাহেবের সান্নিধ্য পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ, বড় মনের নিরহঙ্কারী মানুষ ছিলেন। সাজানো-গোছানো সুন্দরভাবে কথা বলতেন। জীবনের পৌঢ় বয়সে তিনি যে ভাবে আওয়ামী লীগের মিটিং-মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছিলেন তা সত্যিই অনুজদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণীয়। দেশ, রাজনীতি, দল বা মানুষের জন্য তাঁর কি পরিমাণ ভালোবাসা বা মায়া ছিল সেসব তাঁর কাছে থাকা মানুষগুলো সহজেই অনুধাবন করতে পারেন।
সাধারণত তিনি যে সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন সেগুলোর প্রধান অতিথি, সভাপতি বা উদ্বোধক হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন। সংঙ্গত তিনি কারণেই নিউজের শিরোনাম হতেন। কাজেই উনার বক্তব্য আমার মনোযোগ দিয়ে শুনতে হতো।যদিও সে বয়সে খুব বেশি বক্তব্য দিতেন না। বেশিরভাগ সময়ই মোনাজাতের মাধ্যমে তিনি তাঁর বক্তব্য প্রকাশ করতেন।
তাঁর বক্তব্যে যে বিষয়টি শুনে আমি আলোড়িত হতাম তা হচ্ছে, তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যখন উল্লেখ করতেন তখন বলতেন “মুজিব ভাই” অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সাথে উনার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তা তার বক্তব্য অতি সহজেই বোঝা যেত। জাতির পিতার সহচার্য পেয়েছিলেন বলেই তিনি হয়তো ব্রাহ্মণবাড়িয়া শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন হতে পেরেছিলেন।
এডভোকেট সৈয়দ এমদাদুল বারীর জীবনাদর্শ আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই কৃতী ব্যক্তিত্ব তার ইহকালীন জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর এই অন্তিম যাত্রায় ব্যক্তিগতভাবে আমি শোকাহত, মর্মাহত। আমার বিশ্বাস, জীবিত অবস্থায় তিনি দেশের মানুষের কল্যাণে যে সমস্ত কল্যাণকর ভূমিকা রেখেছেন তার প্রতিদান নিশ্চয়ই মহান আল্লাহতালা তাঁকে দান করবেন। আমি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং মহান আল্লাহতালার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। আমিন।
উল্লেখ্য: অ্যাডভোকেট সৈয়দ এ.কে.এম এমদাদুল বারী ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক গণপরিষদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বারের সাবেক সভাপতি।
তিনি গতকাল সন্ধ্যা ৬.৫০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। আজ সকাল ১০ টায় জেলা শহরে পিটি আই স্কুল ময়দানে তাঁর প্রথম জানাযা, সকাল ১১.৩০ মিনিটে জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাযা ও বাদ যোহর উনার গ্রামের বাড়ি আখাউড়া উপজেলার রানীখার গ্রামে তৃতীয় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ।
০৮ সেপ্টম্বর ২০২০
Some text
ক্যাটাগরি: স্মৃতিচারণ
[sharethis-inline-buttons]