ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কৃষক শমশের আলী একসময় দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ১৫০ লাখ টাকা। পাকা বাড়ি করেছেন। বাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করছেন দুধেল গাভি। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে বেশ সচ্ছলভাবেই দিন যাচ্ছে তাঁর। সাজ্জাদের এ অবিশ্বাস্য উত্থানের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে উন্নত জাতের ঘাস চাষ। এক বিঘা দিয়ে শুরু করে এখন তিনি ছয় বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেন।
তাঁর মতোই এ গ্রামের পজিরুল, সোহরাব, দেলোয়ার, হামিদুর, রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় থেকে হাইব্রিড নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ জেলায় অনেক সংখ্যক দরিদ্র মানুষ ঘাস চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছে। ঘাসের পাশাপাশি গরুর খামার করে তারা এখন প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ঠাকুরগাঁও প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের হিবেবে জেলার পাঁচ উপজেলায় তালিকাভুক্ত ঘাস চাষের পরিমাণ হচ্ছে- সদর উপজেলায় ১৫০ বিঘা, বালিয়াডাঙ্গীতে ১০০ বিঘা, পীরগঞ্জে ৮০ বিঘা, হরিপুরে ৩০ বিঘা ও রাণীশংকৈলে ৪০ বিঘা। এসব জমিতে পাকচং, নেপিয়ার ও জার্মান ঘাস চাষ হচ্ছে। অবশ্য কৃষি অফিসের হিসেবের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ঘাসচাষি।
রাণীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁ গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই জানান, এ গ্রামেই ২০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার কাঠালডাঙ্গী, হরিনারায়নপুর, যাদুরানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ঘাসের চাষ দিনদিন বাড়ছে। স্বল্প পরিসরে ঘাস চাষ করে আজ গরুর বড় খামারি হওয়ার মতো সফলতার গল্পও আছে।
সদর উপজেলার ঢোলার হাঁর ইউনিয়নের খায়রুল। বাবা ভ্যানচালক। অর্থাভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। দাখিল পরীক্ষার পর শুরু করেন গরুপালন। নিজের খামারের জন্যই ২০১৪ সালের দিকে অল্প পরিসরে ঘাস চাষ করেন। এখন অন্যের সাত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ঘাস চাষ করছেন। বছরে তাঁর মুনাফা হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। এ আয় থেকে গরুর শেড তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করছেন তিনি। বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজে বিএ (সম্মান) শেষ বর্ষে পড়ছেন খায়রুল। সংসারের ব্যয় বহনের পাশাপাশি দুই ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
পীরগঞ্জ উপজেলার উজ্জলকোঠা ইউনিয়নের প্রদিব জানান, সারাদিন খেটে দুই থেকে তিনশ’ টাকা রোজগার করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তখন এনজিও থেকে ঋণ নেই আমি। এখন ঘাস চাষ করে সব ঋণ শোধ করেছি। সংসার চলছে বেশ সচ্ছলভাবে।
সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রহিম জানান, গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাসের চাহিদা রয়েছে। এ কারণে খামারিরা ছাড়াও ভ্যান-রিকশা শ্রমিক ও দিনমজুররা ঘাস চাষে দিনদিন আগ্রহী হচ্ছেন।
জেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলতাফ হোসেন জানান, ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত ও পুষ্টিগুণ সৃমদ্ধ এ ঘাসটি শুধু মাত্র গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হলেও দুগ্ধবতী গাভিকে খাওয়ালে অধিক দুধ পাওয়া যায়। কারণ এর হজম প্রক্রিয়া প্রায় ৭০ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ দ্বিগুণ।
মোঃজাহিরুল ইসলামঃ ঠাকুরগাঁও থেকে
Some text
ক্যাটাগরি: খবর
[sharethis-inline-buttons]