একসময় যারা কওমী মাদ্রাসাকে অপছন্দ করে বলতো- মাদ্রাসার ছাত্ররা মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কুরবানির চামড়া ভিক্ষা করে, আজ তারাই এখন খুঁজে খুঁজে মাদ্রাসায় কুরবানির চামড়া দিয়ে যাচ্ছে। শতরকম চেষ্টা করে মাদ্রাসার কোনো দায়িত্বশীলের মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফোন করে বলছেন- হুজুর! আমার বাড়ি ও আশেপাশের বাড়িগুলোতে প্রায় এতো এতো চামড়া আছে, দয়া করে যদি কাউকে পাঠাতেন; না হয় আমিই নিয়ে আসি।
এ হচ্ছে এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার অবস্থা। এ চিত্র দেখে আমার যা উপলব্ধি হলো- ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে মাদ্রাসা যেন চামড়ার টাকা না পায়, যেন মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর হেকমত পুরোটাই তাদের উল্টো। তা হলো- যদিও বর্তমানে চামড়ার তেমন মূল্য নেই, কিন্তু এই চামড়ার মাধ্যমেই কওমি মাদরাসার সাথে মানুষের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা, নিবিড় করা। তাই মানুষ নিজ ইচ্ছায় নিজেরা এসে চামড়া দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে সহানুভূতিও প্রকাশ করে যাচ্ছেন। চামড়া দিতে পেরে যেনো তারা মহা খুশি।
দ্বিতীয় উপলব্ধি হলো- এ বছর চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মানুষ আগ্রহ ও দরদমাখা দিল নিয়ে মাদ্রাসায় চামড়া দিয়ে গেছে। ঠিক যদি কওমি মাদ্রাসাগুলো একমত হয়ে হিম্মত করে যে, আর কারো বাড়িতে আমরা চামড়ার জন্য যাবো না, তাহলে মানুষ স্বেচ্ছায় মাদ্রাসায় এসে চামড়া দিয়ে যাবে। সেই দেওয়াটা চাই সওয়াবের জন্য হোক, অথবা নিজ বাড়িকে কোরবানির পশুর বর্জ্য থেকে পরিস্কার রাখার জন্যই হোক।
এদিকে অনেকেই মাদ্রাসাগুলোকে ট্যানারি করার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন- যা সত্যিই প্রয়োজনীয় প্রস্তাব। কিন্তু ট্যানারি করে আপনি যতই বাজারজাত করার পক্রিয়া করেন না কেন, সেসব ষড়যন্ত্রকারীরা তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা ট্যানারি মালিক সমিতির মাধ্যমেই প্রমাণ করবে যে আপনার এই চামড়া বাজারজাতকরণের পক্রিয়ায় গলদ রয়েছে, যা বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প ধংষ হয়ে যাবে। যেমন দেশের কোনো পণ্য আমদানি রপ্তানিতে বিএসটিআই কিংবা বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তরের অনুমতি না মিললে বাজারজাত করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করে দেয়।
হয়তো তেমনভাবেই একসময় এই ট্যানারিরও এ অবস্থা হতে পারে। ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাকে সফল হতে দিবে না। অতএব খুব ভেবেচিন্তে পা ফেলা উচিত। প্রতিবাদ শুধু একভাবেই হতে পারে, আর তা হলো শুধুমাত্র একটা হিম্মত যে, আমরা কওমি মাদরাসার কেউ আর কোরবানির সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া কালেকশন করবো না।
কওমী মাদ্রাসাগুলো কুরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেলেও পেয়েছে সাধারণ মানুষদের ভালবাসা আর সহানুভূতি। যা-কিছুই লিখেছি তা একান্তই শুধুমাত্র আমার উপলব্ধি থেকে লিখেছি মাত্র। জ্ঞানের স্বেল্পতায় এই উপলব্ধি ত্রুটিপূর্ণ হওয়া ই স্বাভাবিক।
মোহাম্মদ এনামুল হাসান: ইসলামি রাজনীতিক ও বিশ্লেষক
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]