আমার ভালো হচ্ছে না এই চিন্তাটা না করে আমার ভালো আমি করছি না এই চিন্তাটা করতে হবে। আমার ভালো হচ্ছে না এই চিন্তায় যে আমরা সবসময় নিজেদের ক্ষতি করি তা কিন্তু নয়, আমাদের এই চিন্তা থেকে জন্ম নেয় ক্ষোভ, হিংসা এবং এক প্রকারে হীন্যমানুসিকতা। যা শুধু আমাকে নয় আমার চারপাশের মানুষদের জীবন অতিষ্ঠ করে দিতে পারে। যে সন্মান পাইনা বলে চেচাচ্ছি, ঠিক সেই সন্মানটা আমি নিজেই নষ্ট করছি আমার আচরন এর দ্বারা। কারন আমার খিটমিট মেজাজ, অহেতুক সন্দেহ, কারো ভালো দেখতে না পারা অথবা কোন ভালো কাজ যাতে পুরোপুরি ভালো না হতে পারে সেই চেষ্টা যখন আমার চারপাশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে তখন একটা সময় কেউ আমাকে পছন্দ করবে না এবং আল্টিমেটলি একটা সময় তাদের কাছে আমি বোঝা হয়ে উঠবো, আমার সত্য এবং মুল্যবান কথা গুলোও তাদের কাছে মুল্যহীন হয়ে উঠবে। আমার একটা সমস্যা আরেকটা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না বরং একসময় আমার কোন সঠিক সিদ্ধান্ত ও অগ্রহনযোগ্য হয়ে উঠবে।
অতএব আমাদের উচিত চিন্তা করা আমি ভালো থাকবো কিভাবে? আমি তখনই ভালো থাকবো যখন আমার মন সুস্থ্য থাকবে, আমার চারপাশের প্রিয় মানুষ গুলো ভালো থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের করনীয় জীবনটাকে অর্থবহ করে তোলা।
১. বই পড়ার অভ্যাস থাকলে ভালো বই পড়তে হবে না হলে চেষ্টা করতে হবে এই অভ্যাসটা গড়ে তুলতে। বই এবং সেখান থেকে নতুন কিছু শেখা আমার আপনার জীবনের অনেক নেগেটিভ চিন্তা দূর করতে কাজে লাগবে। অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে জীবনি, ঐতিহাসিক, জীবনের ধারা পরিবর্তন করার মতো বই গুলো পড়তে।
২. এবাদত করতে হবে, আমরা যে যেই ধর্মের, সেই ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থনা করবো, প্রার্থনা আপনার আমার মনে প্রশান্তি দান করবে এবং সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসতেও পারবো।
৩. সবসময় ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে হবে, জীবনে ভালো সাজার থেকে ভালো হবার চেষ্টা করতে হবে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করবো কিন্তু সবার কাছে ভালো সাজতে যাবো না। যে ব্যাক্তি সবার কাছে ভালো সাজতে যায় সে ব্যাক্তি নিজের কাছে ভালো থাকতে পারে না।
৪. সাধারণ মানুষ হবার চেষ্টা করতে হবে, কারন সাধারণ মানুষেরাই অসাধারণ কাজগুলো করে। অতিরিক্ত অসাধারণ হওয়ার চেষ্টা নিজের ভেতরের গুন গুলো নষ্ট করে দেয়, একসময় হতাশা এনে দেয় জীবনে।
৫. ভালো বক্তা হবার থেকে ভালো শ্রোতা হতে হবে। কথা বলার সময় খেয়াল করতে হবে আমার আপনার অতিরিক্ত কথা সামনের ব্যাক্তির বিরক্তির কারন না হয়।
৬. সবসময় সঠিক সত্যটা বলতে চেষ্টা করতে হবে। অসত্য বলে সাময়িক জিতে যাওয়া পরে অনেক বড় ক্ষতি অথবা পরাজয় এর কারণ হতে পারে।
৭. জীবনে পজেটিভ ঘটনা কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের জীবনে পজেটিভ নেগিটিভ দুই ধরনের যেকোন কিছুই হতে পারে কিন্তু নেগেটিভ ঘটনা শিক্ষা হিসেবে থাকলেও পজেটিভ ঘটনা গুলো বেশি মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাঁর সাথে ক্ষমা করার মানুসিকতা থাকতে হবে।
৮. অন্যের ভালোমন্দের দোষক্রটি কম আলোচনা করতে হবে। নিজের দোষ গুলো খুঁজে বের করে পরিবর্তন করতে হবে। এরকম নিজের দোষগুলো যেগুলো পরিবর্তন করতে থাকলে একসময় সুন্দর একটা পরিপূর্ণ না হলেও প্রায় সেরকম একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারা যাবে।
৯. জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক করতে হবে। নেতিবাচক চিন্তার প্রভাব নিজের ক্ষতি করে বেশি, বিশেষ করে নিজের অন্তর আত্নার বেশি ক্ষতিসাধন হয়।
১০. নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা গোপন সৃজনশীলতা কে খুঁজতে হবে। আমার মাঝে সুপ্ত সৃজনশীলতা আমার জীবনের সুন্দর একটা পরিবর্তন এবং অর্থবহ একটা জীবনের কারন হতে পারে।
১১. সার্টিফিকেটধারী শিক্ষাকেই সব শিক্ষা বা জ্ঞান ভাবা বোকামি, আমাদের সার্টিফিকেট অর্জন এর শিক্ষাগুলো বেশীরভাগ কর্ম বান্ধব কিন্তু জীবন বান্ধব নয়। যেই কারনে এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের মানুসিক বিকাশে যথেষ্ট সহায়ক নয়। এজন্য অন্যান্য জ্ঞান নির্ভর চিন্তা এবং যে কোন জায়গা থেকে নতুন কিছু শেখা কে গুরুত্ব দিতে হবে।
১২. আমি যা পারি সেটাকেই কাজে লাগাতে হবে, তাঁর সাথে সামাজিক ভাবে দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। আমার আপনার কাজ বা ইচ্ছা আশেপাশের মানুষ এর বিরক্তির কারন যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৩. কারো গোপন কথা যা কেউ আমাকে বিশ্বাস করে বলেছে তা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটা ভিষন খারাপ একটি কাজ যা সেই ব্যাক্তির সন্মান হানি অথবা তাঁর জীবনে সমস্যার কারন হতে পারে। যদি সেই ব্যাক্তির সাথে কোন কারনে আমার সম্পর্ক খারাপ হয় সেক্ষেত্রেও অসম্ভব বিপদজনক কিছু না হলে তাঁর কথার গোপনীয়তা রক্ষা করা মানবিক এবং নৈতিক দায়িত্ব এর মধ্যেই পরে। এই দায়িত্ববোধ না থাকলে আমি একজন অবিশ্বাসী মানুষ হয়ে উঠবো। একটা সময় নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হবে এবং কেউ আমাকে বিশ্বাস করতে চাইবে না।
সর্বোপরি নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টাই আমাদের ভালো রাখবে, কেউ আমাকে ভালো রাখতে পারবে না যদিনা আমি নিজেকে ভালো রাখি। অন্যেকে দোষারোপ না করে আমার নিজের দোষ বা ভুল কোনটা এটার পরিবর্তন আমার জীবনটাকে সুন্দর এবং গোছানো করে তুলতে পারে, সাথে চারপাশের মানুষের জীবনেও আমার উপলব্ধি সুন্দর একটা শিক্ষা হতে পারে। অন্যের ভালো থাকাটাই যে আমার ভালো থাকা হবে এমন কোন মানে নেই বরং আমার নিজের ভালো থাকা অনেকের ভালো থাকার কারন হতে পারে। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সুন্দর এবং সুস্থ্য রাখুন এই প্রার্থনা রইলো।
জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি
Comments
Some text
[sharethis-inline-buttons]