তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন ডিজিটালাইজড হয়েছে। এরমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া অনলাইন করেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো পুরনো নিয়মে চলছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম অনলাইন করায় সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হয়েছে। তারা সরাসরি নিজেরা অনলাইনে কাজ করতে না পারলেও যে কোনো আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিতে পারছে। সরকারি ওয়েব সার্ভারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে টেলিটক ওয়েব সার্ভার। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের অনলাইন নিয়োগ প্রক্রিয়া টেলিটক সার্ভারের মাধ্যমেই করে। টেলিটক সার্ভারের অনলাইন অ্যাপলিকেশন সাবমিট করার পর অনলাইন ফি পরিশোধ করাও অনেক সহজ।
বর্তমানে অনলাইনে পাসপোর্ট অ্যাপলিকেশন করা যায়। অ্যাপলিকেশন সাবমিট করার পর ফি পরিশোধ করতে হয়। তবে ফি পরিশোধের সময় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ভোগান্তির কারণে অনলাইনে অ্যাপলিকেশনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট পেতে দালালদের সহায়তা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো নির্বাচন কমিশন সার্ভারের অবস্থা। নির্বাচন কমিশন ২ বছর আগে অনেক টাকা ব্যয় করে পাবলিক সার্ভার করেছে। যাতে জনগণ নিজেরা সরাসরি এ সার্ভার থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিতে পারে।
কিন্তু অতি দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, সে সার্ভারে কোনো কাজই সঠিক ভাবে করা যায় না। পাবলিক সার্ভারে রেজিস্ট্রেশন করে যে কোনো নাগরিকের এনআইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তনের সুবিধা রাখা হয়েছে। কিন্তু সে সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। কারণ পাবলিক সার্ভারে এনআইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তন করতে হলে সরকারি ফি পরিশোধ করতে হয়। শুধুমাত্র ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট)-এর মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো বার বার চেষ্টা করার পরও ফি পরিশোধ করা যায় না। রকেট অ্যাকাউন্টে ব্যালান্স থাকার পরও ব্যালান্সের ম্যাসেজ আসে এবং ফি পরিশোধ হয় না। বহুদিন যাবৎ এ সমস্যা চলছে। এ সমস্যা সমাধানের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এ যাবৎ নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র একটি মাত্র ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং-এ ফি পরিশোধের ব্যবস্থা রাখায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। রকেট মোবাইল ব্যাংকিং-এর গেটওয়ে ডেভেলপ না করলে এ সমস্যা কখনো সমাধান হবে না। এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা নিলে সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হবে। কয়েকটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা নিলে তখন একটি মোবাইল ব্যাংকিং-এর সার্ভার জ্যাম হলে আরেকটি মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যাবে। এতে সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হবে এবং তাদের মূল্যবান সময় বাঁচবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন সার্ভারের ২টি কাস্টমার কেয়ার নাম্বার আছে। সে নাম্বার গুলোতে কল ঢুকে না। বার বার চেষ্টার পর কোনো মতে কল ঢুকলেও কেউ রিসিভ করে না। অপেক্ষা করতে করতে অন্তত ২০ থেকে ২৫ মিনিট চলে যায়। অগত্য বাধ্য হয়ে লাইন কেটে দিতে হয়।
বহু জায়গায় যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সব জায়গা থেকেই একই জওয়াব- ভাই নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে কোনো কাজ করা যায় না। অনেক ঝামেলায় আছি। সরকারি ওয়েব সার্ভারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল সার্ভিস দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সার্ভার। এনবিআর-এর সার্ভারে যে কাস্টমার কেয়ার নাম্বার দেয়া আছে- সেটাতে কল করলেই যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া যায়। অন্য কোনো সার্ভারে এ সুবিধা নেই। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সার্ভারেরও একই অবস্থা। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সরকারি চিকিৎসা সহায়তা পাবার জন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অনলাইন অ্যাপলিকেশন সার্ভার চালু করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, বিগত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে এ সার্ভার থেকে কোনো অ্যাপলিকেশন সাবমিট করা যাচ্ছে না। নতুন যে কোনো ব্যক্তি চিকিৎসা সহায়তার জন্য অ্যাপলিকেশন করে প্রথম ধাপ সম্পন্ন করে দ্বিতীয় ধাপে গেলেই ম্যাসেজ আসে আবেদনকারী এর আগে আবেদন করেছে। কিন্তু সে আবেদনকারী এর আগে আদৌ আবেদন করেননি। এ সমস্যা সমাধানে সার্ভারের কোন হেল্পলাইন নাম্বার নেই। একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ওয়েব সার্ভারের এ দশা হলে মানুষ যাবে কোথায়? প্রত্যেক প্রাইভেট দেশী-বিদেশী ওয়েব সার্ভার গুলোতে হেল্পলাইন নাম্বার রয়েছে। কিন্তু সরকারি ওয়েব সার্ভারগুলোর মধ্যে কোনোটির হেল্পলাইন নাম্বার আছে আবার কোনোটির নেই। যেসব সার্ভারে হেল্পলাইন নাম্বার আছে-সেগুলো কার্যকর নয়। তথ্য-প্রযুক্তি দিন দিন আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে। অথচ সরকারি ওয়েব সার্ভারগুলো সাধারণ জনগণকে তাদের কাঙ্খিত সেবা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে চরম ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের কাজের চাপ দিন দিন বাড়ছে। পাবলিক সার্ভারটি ডেভেলপ করলে একদিনে কমিশনের অফিসিয়াল কাজের চাপ কমবে-অন্যদিকে এ খাতে সরকারের রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে। বিষয়টি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ টিম বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সাইয়েদ ইকরাম শাফী: লেখক, কলামিস্ট
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]
যেসব বন্ধু, বিজ্ঞ মহল এ লেখাটি পড়বেন-অনুগ্রহ পূর্বক শেয়ার করুন। আমি আমার কোনো লেখা শেয়ার করার অনুরোধ করি না। এটা অনেক জরুরি বিষয় বলে শেয়ার করার অনুরোধ করলাম। আশা করি সবাই শেয়ার করবেন। জাজাকাল্লাহু খায়রান।