ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া নামক এলাকায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ব্যবহার করে আসা কয়েকটি পরিবারের চলাচলের একমাত্র পথটিতে গায়ের জোরে ইটের দেওয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে মোশারফ হোসেন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী।
এতে করে সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা ৬টি পরিবার গত ১২ দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারা না পারছে দৈনন্দিন কাজে বাইরে যেতে, না পারছে বাজার-ঘাট করতে। ফলে চরম দূর্ভোগে দিনাতিপাত করছে সেই পরিবারগুলো। এমনকি বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় চাড়োল ইউনিয়নে সালিস বৈঠক করার কথা থাকলে তাতে বসতে রাজি নয় সেই প্রভাবশালী। এছাড়াও বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্তে গেলে সেই প্রভাবশালীর রোষানলে পড়েন। পরে উপায় না পেয়ে সুষ্ঠ সমাধানের আশায় অবরুদ্ধ পরিবারগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, প্রভাবশালী মোশারফ হোসেন ও আল-মামুনের পাশাপাশি বাসা। আল-মামুনের বাড়ীর লিচু গাছের ডালগুলো বড় হয়ে মোশারফের বাসার টিনের উপর যায়। এজন্য মোশারফ হোসেন আল-মামুনকে লিচুর ডাল দ্রুত কেটে ফেলতে বলে। এসময় আল-মামুন বর্ষার জন্য দু-একদিন সময় চাইলে তিনি রাজি না হয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা ধাক্কাধাক্কিতে রূপ নেয়। পরে গত ২৭ জুন মোশারফ হোসেন আক্রোশমুলক আল-মামুনকে দূর্ভোগে ফেলতে তাদের চলাচলের একমাত্র পথটি ইট গেঁথে বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা ফেওয়াজ সাদেক, নেওয়াজ সাদেক, সিদ্দিক হোসেন, আ: রশিদ, মোশারফ হোসেন, আল-মামুনসহ ৬টি পরিবারের যাতায়াত বন্ধ হয়ে তারা গত ১২ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিনযাপন করছেন।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূক্তভোগি পরিবারগুলোর যাতায়াতের একমাত্র পথটি দুইদিক থেকে ইটের গাথুনী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভূক্তভোগি আল-মামুন জানান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোশারফ হোসেন আমাদের যাতায়াতে একমাত্র পথটি বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ বন্ধ করা জমিটুকুও তার নিজের নয়। তিনি আইন বিচার-শালিস কিছু মানেন না। একতরফা গায়ের জোরে সবকিছু করছেন। আমরা কয়েকটি পরিবার আজ ১২ দিন থেকে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। আমরা এ অমানবিক ঘটনার দ্রুত বিচারসহ অবরুদ্ধ রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিষয়টি জানতে চাড়োল ইউপি চেয়ারম্যান দিলীপ চ্যাটার্জীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানুষ যে এতো নিষ্ঠুর ও অমানবিক হতে পারে তা সেই ঘটনা স¦চোক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে আসা ৬ টি পরিবারের একমাত্র চলাচলের পথটি হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে চরম অমানবিকার পরিচয় দিয়েছেন মোশারফ হোসেন। বহুবার বিষয়টি সমাধানের জন্য তাকে পরিষদে আসতে বলা হয়েছে। তিনি কারোও কথা শোনেন না।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও জমিতে ব্যারিকেড দেইনি, আমার কেনা জমির উপর দিয়ে তারা যাতায়াত করতো, আমি আরসিসি পিলার দিয়ে বাড়ী করবো তাই জমিটি ঘিরে নিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম জুয়েল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন এর বিরুদ্ধে লাহিড়ী হাটের সরকারি জমি জবরদখলের অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার জবরদখলকৃত প্রায় ২০ শতাংশ জমি উদ্ধার করেছেন।
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা
[sharethis-inline-buttons]