করোনার থাবায় থমকে আছে গোটা বিশ্ব। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিলে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রাণ। আর এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যেন থেমে না যায় সে জন্য উন্নত দেশে চলছে ভার্চুয়াল ক্লাস। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও চালু হলেও গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নানান সমস্যায় জর্জরিত। অনেক শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ নেই।
কিছু পরিবারের একটি স্মার্ট ফোন থাকলেও অনেক পরিবারের তা নেই। আর করোনায় এ কর্মহীন অবস্থায় পিতার ল্যাপটপ ডেস্কটপ এবং ডাটা কিনে ক্লাস করা যেন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে কেমন করে তার ব্যবহার করা হবে তা অনেকেই জানে না। তার সাথে তো গ্রাম অঞ্চলের অন্যতম সমস্যা লেগে আছে নেটওয়ার্ক। এ জন্য প্রতিনিয়ত পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি দেশে করোনা সংক্রমণ শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গ্রামের দিকে এই করোনাভাইরাস ধাবিত হলেও গ্রামবাসীর মধ্যে দেখা যায় না কোনো সচেতনতা। নানা কুসংস্কার ও অসচেতনতায় তারা যেন এখনো বিভোর হয়ে দিন পার করছে। এ জন্য আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের সচেতন মানুষ।
গ্রামের অধিকাংশই সাদাসিধে মনের অধিকারী। সাদাসিধে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে। তন্মধ্যে কৃষিকাজ, দিন আনে দিন খায় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি। বৈশ্বিক এই মহামারী রোগের জন্য তাদের জীবিকা নির্বাহেও যেন নানা বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যয়ের শত দিক থাকলেও আয়ের জন্য যেন একটি পন্থাও পাচ্ছে না অনেকে। কষ্টে দিনযাপন করছেন এমন অনেকেরই।
আবার অনেক সৌখিন একটু বিত্তশালী গ্রামবাসী, যাদের খাওয়া-পরনের মতো প্রয়োজন মাফিক অর্থ না থাকলেও ঘুড়ি কেনা-বেচা কিংবা উড়ানোর মতো মহাআনন্দে উৎসব যেন লেগেই আছে। কেউ বা আছেন, এই করোনার ক্রান্তিলগ্নে কাজ নেই, হাতে টাকা আছে, পাকা দেয়াল গাঁথছে, ছাদ ঢালাই দিচ্ছে। কিন্তু তাদের জানা নেই, কবে এই করোনা যাবে? টাকাগুলো জমিয়ে না রেখে এমনই অপব্যয়ে নিমজ্জিত আছে তারা।
আবার কেউবা এমনটা মনে করছেন, ছুটি চলছে, মোটরসাইকেল কিনি বা বেড়াতে যায় মামাবাড়ি, খালাবাড়ি, অবসরে ঘুরাঘুরি করা যাবে। কিন্তু তাদের করোবা ভাইরাসের প্রতি ধারণা তেমন নেই, ফলে তাদের মনে হচ্ছে ছুটি দিয়েছে, ক’দিন পড়ে আবার ঠিক হয়ে যাবে।
গ্রামের মানুষের সবচেয়ে অসচেতনতার কথা যদি বলা যায়, তাহলে দেখা যাবে তাদের বাজারে গেলে। এখনো যেন চায়ের দোকানে, ক্যারামের দোকানে বাজার ভর্তি লোকজনের আড্ডা চলছে। তাদের মনে নেই কোনো ভয়, নেই কোনো চিন্তা-চেতনা। এই খোলা বাজারের জন্যেই হয়তো এক সময় পুরো গ্রামবাসীদের ভোগান্তির শিকার হতে হবে।
এবারে ঝড় ও বৃষ্টিতে যেন ফসলাদি অর্ধেক পা পানিতে থই থই করেছিল। ছিলনা পানি বেরোনোর সুযোগ। অনেকে খরায় হয়তো ফসলাদি ঘরে আনলোও । আবার অনেকে ফসল তুলে নিলেও এই সমসাময়িক বৃষ্টির ফলে গবাদিপশুর জন্য খড় বা ফসলাদির অবশিষ্ট অংশ শুকাতে পারেননি, এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছে খামারিরা। গ্রামের মানুষ অধিকাংশই এখন কর্মহীন হওয়ায় প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ভ্যানে করে কাঁচামালের ব্যবসা, সবজি চাষ, দোকানদারি করা। এখন যেন প্রতিটি বাড়ি বাড়ি দোকান এমনি বলতে হয়।
তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য অনেকে বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামের নিম্ন আয়ের বা কর্মহীন মানুষ। গ্রামের মানুষের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছে যেন এখন। এমন আতঙ্কে যেন তারা খুব দীর্ঘ সময়ই পার করেছে জীবনে বৈকি। কিন্তু করোনার চেয়ে বড় আতঙ্ক যেন কিস্তি বা সমিতিওয়ালারা তৈরি করছে। এ বিষয়ে নানা সংবাদ পত্র কিংবা সরকারের দৃষ্টিগোচর হলেও যেন আবার এ সমস্যা এখন মাথা নাড়া দিয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ।
গ্রামের মানুষ বর্তমানে খুব কম সংখ্যকই করোনা ভাইরাসে সম্পর্কে সচেতন। এ মুহূর্তে গ্রামে কম সংখ্যকই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সচেতন মহলের মতে, সচেতনাই এ মুহূর্তে করোনা থেকে রক্ষার মূলমন্ত্র, নয়তো যে কোন মুহূর্তে গ্রাম হতে পারে ভয়াবহ রুপ।
গৌতম চন্দ্র বর্মন : ঠাকুরগাঁও থেকে
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]