জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের ফজিলত কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এতে প্রতিদিন রোযা রাখা একবছর নফল রোযা রাখার সমতুল্য।
তবে জিলহজ্বের নয় তারিখ রোযা রাখার আলাদাও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
“ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ ”
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন আরাফা দিবসের সিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছরের (গুনাহ) মাফ করে দিবেন।
সহীহ মুসলিম, হাদিস -২৬১৭
জামে তিরমিজি, হাদিস ৭৪৭
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস- ১৭৩০
মিশকাতুল মাসাবীহর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতুল মাফাতীহে মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন ” এর উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তায়ালা গুনাহ থেকে তাকে হেফাজত করবেন অথবা গুনাহ হয়ে গেলে মাফ করে দিবেন।
মিরকাত-৪.৪৭৪.হাদিস – ২০৪৪
এখন কথা হল রোযাটি কী আরাফা বা উকুফে আরাফার সাথে মিলিয়ে রাখবো নাকি জিলহজ্বের নয় তারিখ রাখবো?
এর সমাধান আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ تِسْعَ ذِي الْحِجَّةِ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ وَثَلاَثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوَّلَ اثْنَيْنِ مِنَ الشَّهْرِ وَالْخَمِيسَ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিল-হজ্জের নয় তারিখ ও আশুরার দিন রোযা রাখতেন। আর তিনি প্রতি মাসে তিনদিন, মাসের প্রথম সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস- ২৪২৯
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে রোযাটি জিলহজ্বের নয় তারিখের সাথে সম্পৃক্ত আমল, আরাফা বা উকুফে আরাফার সাথে নয়।
হজ্বের অন্যতম ফরয উকুফে আরাফা বা আরাফায় অবস্থান যেহেতু হাজী সাহেবগণ স্থানীয় জিলহজ্বের নয় তারিখে করে তাই নয় তারিখের সাথে সম্পৃক্ত আমলগুলোর ক্ষেত্রে ও ইয়াওমে আরাফা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
হাদিসে ইয়াওমে আরাফা বলতে আরাফা বা উকুফে আরাফা উদ্দেশ্য নয় বরং জিলহজ্বের নয় তারিখ উদ্দেশ্য।
এটাই সঠিক ব্যাখ্যা।
এর আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে তাকবীরে তাশরীক।
কারণ তাকবীরে তাশরীক যেই দলীল দ্বারা প্রমাণিত।তাতেও ইয়াওমে আরাফা শব্দটি এসেছে।
দেখুন
عن عليٍّ رَضِيَ اللهُ عنه: (أنَّه كان يُكبِّرُ من صلاةِ الفجرِ يومَ عَرفةَ، إلى صَلاةِ العَصرِ مِن آخِرِ أيَّامِ التَّشريقِ)
আলমুসান্নাফ,ইবনে আবী শাইবা, হাদিস-৫৬৭৭-৭৮
আমরা এই বর্ণনা দ্বারাও বুঝতে পেরেছি যে ইয়াওমে আরাফা দ্বারা জিলহজ্বের নয় তারিখ উদ্দেশ্য, আরাফা বা উকুফে আরাফা উদ্দেশ্য নয়।
কারণ তাকবীরে তাশরীক শুরু হয় নয় তারিখ ফজর থেকে।
এটাও আরাফা বা উকুফে আরাফার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
মজার ব্যাপার হলো,
আমাদের দেশের যে ভায়েরা সৌদির সাথে মিলিয়ে আরাফার রোজা রাখেন তারাও কিন্তু সেইদিন তাকবীরে তাশরীকের আমল করেননা।
আজ নয় জিলহজ্ব। আবার জুমুআর রাত।
দুটি ফজিলতপূর্ণ রাত একত্রিত হয়েছে।
যাকে বলা যেতে পারে “সোনায় সোহাগা ”
আসুন আজকের রজনী নফল ইবাদতে কাটায়।
আগামীকাল রোযা রাখি।
রব্বে কারীম আমাদেরকে সঠিক বুঝ ও ফাহম দান করুন। আমীন।
আব্দুল্লাহ ইদরীস
সহকারী শিক্ষা সচিব, জামিয়া দারুল উলুম মুহিউস সুন্নাহ, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]