“সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে”- কত গল্পের সূচনাবাক্য এ তিনটি শব্দবন্ধ। এদিকে সত্যিই সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। টিনশেড ঘর আমাদের। বেড়াও টিনের। ফলে আশপাশের তাবৎ শব্দ অনায়াসে ঘরে ঢুকে পড়ে। বিনা বাধায়। ভোর বেলায় কাঁথার নিচ থেকে কান বের করলে অনুমান করা যায়- হরতাল আছে কিনা। বৃষ্টির আওয়াজ তো আরো স্পষ্ট শুনা যায়। বৃষ্টিও ঢুকে হালকা বাতাসেই।
এমনি এক বৃষ্টি দিনের কথা মনে পড়ছে। আজ থেকে আট নয় বছর পূর্বের। বৃষ্টি পড়ছে মুষলধারে। ঘরের সামনের ক্ষেতে কোমরপ্রায় পানি। ক্ষেতের উপর আমঝাড়। বৃষ্টি দেখছি জানালার পাশে বসে। কতগুলো ছেলে মেয়ে আমার বয়সী। আম কুড়াতে এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু সবাই। আম খুঁজল কিছুক্ষণ। এরপর পানিতে দাপাদাপি, হৈ হুল্লোড়, কাদা ছোড়াছুড়ি।
সবার চোখে মুখে স্বাধীনভাবে বৃষ্টি ভেজা আর ছুটাছুটির আনন্দ। আমার নিজেকে তখন মনে হলো, খাঁচাবন্দি পাখি। বাস্তবেই বন্দি জীবন ছিল তখন। অবশ্য পরিবেশ বিবেচনায় এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। তাদের আনন্দ দেখে আমারও ভালো লাগছিল। কল্পনায় আমিও মেতে উঠলাম তাদের সাথে।
এখনো বর্ষা আসে। বৃষ্টি হয়। নীরব দাঁড়িয়ে আছে আমঝাড়। কিন্তু ফিরে আসে না বৃষ্টি ভেজার সেই স্মৃতিদৃশ্য। বদলে গেছে কৈশোর। উদ্দাম ছুটাছুটি আর পথ-ঘাট-প্রান্তরের বাঁধনহারা হৈ হুল্লোড়ের কৈশোর আজ ঘরমুখী। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে স্ক্রিনমুখী।
স্মার্টফোন-ইন্টারনেটের প্রাদুর্ভাবে কিশোর কিশোরীরা হারিয়ে ফেলেছে নির্মল আনন্দের কৈশোর আর গ্রাম বাংলা হারালো তার চিরাচরিত সৌন্দর্য আর যুগের পর যুগ চলে আসা ঐতিহ্যের।
আজ এই বৃষ্টিমুখর দিনে পুরোনো সেই জানালার পাশে বসে আছি, একদল কিশোর কিশোরীর অপেক্ষায়। যাদের উচ্ছলতার ঢেউয়ে ভেসে পৌঁছে যাবো আমার ফেলে আসা সোনালী কৈশোরে।
(১২/০৬/২০ । সকাল)
Some text
ক্যাটাগরি: স্মৃতিচারণ
[sharethis-inline-buttons]