রবিবার বিকাল ৪:৫৫, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

এস এম শাহনূর এর ইসলামিক রচনাবলী

১২৮২ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

সাদকাতুল ফিতর, গরীবের প্রতি অনুগ্রহ ও ধনীর আমল বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটঃ এস এম শাহনূর

| ০৩ জুন ২০১৯ | ১:৩৬ অপরাহ্ণ

সাদকাতুল ফিতর, গরীবের প্রতি অনুগ্রহ ও ধনীর আমল বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটঃ এস এম শাহনূর

গত ১৬ মে ২০১৯ তারিখ বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে চলতি বছর জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ৭০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৯৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসলামি শরিয়া মতে, আটা, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যবের মূল্য অনুযায়ী ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। এবার ৪২ টাকা দরে আটার বাজার মূল্য অনুযায়ী ফিতরার সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বনিম্ন ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম ও সর্বোচ্চ ৩ কেজি ৩শ গ্রাম পরিমাণের বাজার মূল্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় ফিতরার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন হার।

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-১
************************
মহা মহিয়ান সর্বশক্তিমান অাল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় জেনে পরম মায়া মমতা জড়িত সেবার নামই সাদাকা। ‘সাদাকা’ শব্দটির সাধারণ বাংলা অর্থ হল ‘দান’। জুরজানী বলেন: পারিভাষিক অর্থে সাদাকা বলা হয়, এমন দানকে যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সওয়াব আশা করা হয়। [আত্ তা’রীফাত/১৩৭]
ফিতরাকে শরীয়তে ‘ যাকাতুল ফিতর এবং সাদাকাতুল ফিতর ’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফিতরের যাকাত বা ফিতরের সাদকা । ফিতর বা ফাতূর বলা হয় সেই আহারকে যা দ্বারা রোযাদার রোযা ভঙ্গ করে। [আল মুজাম আল ওয়াসীত/৬৯৪]
আর যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঐ জরুরী দানকে যা, রোযাদারেরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভাবীদের দিয়ে থাকে। [প্রাগুক্ত]
যেহেতু দীর্ঘ দিন রোযা অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতার বা আহার শুরু করা হয় সে কারণে এটাকে ফিতরের তথা আহারের যাকাত বলা হয়। [ ফাতহুল বারী ৩/৪৬৩]

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-২
************************
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘সাদকাতুল ফিতর হচ্ছে রোযাদারের জন্য পবিত্রতা এবং মিসকিনদের জন্য খাদ্য। আর যে তা ঈদের নামাজ পড়ার পূর্বে আদায় করে তা কবুল করা হয়। আর যে তা ঈদের নামাজ আদায় করার পর আদায় করে, তা সাদকাতুল ফিতর না হয়ে সাধারণ সদকাহ হিসাবে আদায় হয়ে যাবে।’ (সুনানে আবু দাউদ ১/২২৭ ও ইবনে মাজাহ্)
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সদকাতুল ফিতর দ্বারা রোজা পালনের সকল দোষ-ত্রুটি দূরীভূত হয়, গরিবের পানাহারের ব্যবস্থা হয়।’ (আবু দাউদ) অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। সুতরাং খুশিমনেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
কেননা তাতে রয়েছে ফকিরদের জন্য দয়া এবং তাদেরকে ঈদের দিনে অন্যের নিকট চাওয়া হতে বিরত রাখা। ঈদের দিনে তারা যেন ধনীদের মত আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং ঈদ যেন সবার জন্য সমান হয় সেটাই সাদকাতুল ফিতরের মুখ্য উদ্দেশ্য। আর এর মধ্যে আরও রয়েছে সাম্য ও সহমর্মিতা, সৃষ্টিজীবের জন্য ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আমাদের ওপর অপরিহার্য করেছেন তা মানা আমাদের জন্য জরুরি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
• ﴿ ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪۡ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﻭَﻣَﻦ ﺗَﻮَﻟَّﻰٰ ﻓَﻤَﺎٓ ﺃَﺭۡﺳَﻠۡﻨَٰﻚَ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﺣَﻔِﻴﻆ ﺍ ٨٠﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٠ ]
যে রাসূলকে অনুসরণ করল, সে আল্লাহ তাআলাকে অনুসরণ করল। আর যে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, তবে আপনাকে তো আমরা তাদের উপর রক্ষক (প্রহরী) করে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা, আয়াত ৮০)
আর আল্লাহ বলেন-
• ﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﺸَﺎﻗِﻖِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻣِﻦۢ ﺑَﻌۡﺪِ ﻣَﺎ ﺗَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﻳَﺘَّﺒِﻊۡ ﻏَﻴۡﺮَ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻧُﻮَﻟِّﻪِۦ ﻣَﺎ ﺗَﻮَﻟَّﻰٰ ﻭَﻧُﺼۡﻠِﻪِۦ ﺟَﻬَﻨَّﻢَۖ ﻭَﺳَﺎٓﺀَﺕۡ ﻣَﺼِﻴﺮًﺍ ١١٥﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١١٥ ]
আর যারা তাদের নিকট হিদায়াত পৌঁছার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের ব্যতীত অন্যদের পথের অনুসরণ করে, তারা যেভাবে ফিরে যায়, আমরাও তাদেরকে সেদিকে ফিরিয়ে রাখব এবং জাহান্নামে দগ্ধ করাব। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১১৫)
আর আল্লাহ তাআলা বলেন, যাকাতুল ফিতর
• ﴿ ﻭَﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻯٰﻜُﻢُ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﻯٰﻜُﻢۡ ﻋَﻨۡﻪُ ﻓَﭑﻧﺘَﻬُﻮﺍْۚ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﭐﻟۡﻌِﻘَﺎﺏِ ٧﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٧ ]
তোমাদের রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা আল হাশর, আয়াত ৭)

সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেন দেবেন?
প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ‘সামর্থ্যবান’ শব্দের ব্যাখ্যা হলো, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হওয়া। অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে, অতিরিক্ত বলতে কতটুকু?

সোজা উত্তর হচ্ছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের (৫২.৫ ভরি রূপা অথবা ৭.৫ ভরি সোনা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) মালিক হওয়া।
সুতরাং বলা যায়, যেসব নারী-পুরুষ ঈদুল ফিতরের চাঁদ উঠার পর থেকে সেদিনের সূর্য অস্ত যাওয়া পযর্ন্ত সময়ে একদিনের আবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যতিত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা তার সমমূল্যের মালিক হয় তাদের উপর সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
• ﻓﻲ ﺗﻨﻮﻳﺮ ﺍﻟﺒﺼﺎﺋﺮ ‏( ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ‏) ﺣﺮ ‏( ﻣﺴﻠﻢ ‏) ﻭﻟﻮ ﺻﻐﻴﺮﺍ ﻣﺠﻨﻮﻧﺎ ﺣﺘﻰ ﻟﻮ ﻟﻢ ﻳﺨﺮﺟﻬﺎ ﻭﻟﻴﻬﻤﺎ ﻭﺟﺐ ﺍﻷﺩﺍﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺒﻠﻮﻍ ‏( ﺫﻱ ﻧﺼﺎﺏ ﻓﺎﺿﻞ ﻋﻦ ﺣﺎﺟﺘﻪ ﺍﻷﺻﻠﻴﺔ ‏) ﻛﺪﻳﻨﻪ ﻭﺣﻮﺍﺋﺞ ﻋﻴﺎﻟﻪ ‏( ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﺨﺘﺎﺭ – ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ ﺑﺎﺏ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ – 2/99 ‏)
• ﻭﻓﻰ ﺍﻷﺷﺒﺎﻩ ﻭﺍﻟﻨﻈﺎﺋﺮ – ﻭﺟﺒﺖ ﺑﻘﺪﺭﺓ ﻣﻤﻜﻨﺔ ﻓﻠﻮ ﺍﻓﺘﻘﺮ ﺑﻌﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻟﻢ ﺗﺴﻘﻂ – ‏( ﺍﻷﺷﺒﺎﻩ ﻭﺍﻟﻨﻈﺎﺋﺮ – 2/225 ﺍﻟﻔﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻰ ‏)
আমরা জানি, কোন ব্যক্তির যদি উপরোক্ত সম্পত্তি সঞ্চিত থাকা অবস্থায় এক বৎসর অতিক্রান্ত হয় তবে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। তবে ফেতরা দাতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিয়ম হলো, যাকাতের ন্যায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। কেউ যদি ঈদের আগের দিনও এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তাকেও ফেতরা আদায় করতে হবে। সামর্থ্যবান না হলে অর্থাৎ উপরোল্লিখিত নিসাব পরিমান সম্পদ কারো না থাকলে তার উপর সাদকাতুল ফিতর ওয়াজীব হবে না। সহীহ বুখারী শরীফে এসেছে, রাসূল সা. বলেছেন,
ﺧﻴﺮ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻋﻦ ﻇﻬﺮ ﻏﻨﻲ
“সর্বোত্তম সাদকা সেটাই, যেটা সামর্থ্যবান কেউ আদায় করে।”

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-৩
************************
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (প্রায় সাড়ে তিন কেজি) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪)। তিনি আরও বলেন: আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু বা (১) এক সা যব বা (২) এক সা খেজুর বা (৩) এক সা পনির অথবা (৪) এক সা কিশমিশ। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৫)।
সাহাবায়ে কিরামদের (রা.) অধিকাংশই খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন।

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-৪
************************
সাদকাতুল ফিতরের হকদার হচ্ছেন,
(১) হত দরিদ্র
(২) ঋণ আদায়ে অক্ষম ব্যক্তি ও
(৩) ঋণগ্রস্ত, তাকে প্রয়োজন পরিমাণ দেয়া যাবে।
“এক সাদকাতুল ফিতর “অনেক ফকীরকে দেয়া যাবে এবং অনেক সাদকাতুল ফিতর এক মিসকিনকেও দেয়া যাবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু হকদারকে কি পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করেননি।

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-৫
************************
“এক সাদকাতুল ফিতর” এর পরিমাণ কি হবে তা জানতে প্রথমে তিনটা হাদীস উল্লেখ করছি।
১.
ﻓﺮﺽ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ، ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺷﻌﻴﺮ ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ، ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﻭﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ، ﻭﺍﻟﺤﺮ ﻭﺍﻟﻤﻤﻠﻮﻙ
ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল স. সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বুখারী : ১৫১২)
২.
ﻛﻨﺎ ﻧﺨﺮﺝ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ، ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﻃﻌﺎﻡ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺷﻌﻴﺮ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺃﻗﻂ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺯﺑﻴﺐ
আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য দিয়ে। তা এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনীর বা এক সা কিসমিস দিয়ে হত। (বুখারী : ১৫০৬)
৩.
ﺧﻄﺐ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺁﺧﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻣﻨﺒﺮ ﺍﻟﺒﺼﺮﺓ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺧﺮﺟﻮﺍ ﺻﺪﻗﺔ ﺻﻮﻣﻜﻢ ﻓﻜﺄﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻟﻢ ﻳﻌﻠﻤﻮﺍ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻦ ﻫﺎﻫﻨﺎ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻗﻮﻣﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺇﺧﻮﺍﻧﻜﻢ ﻓﻌﻠﻤﻮﻫﻢ ﻓﺈﻧﻬﻢ ﻻ ﻳﻌﻠﻤﻮﻥ ﻓﺮﺽ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ﺃﻭ ﺷﻌﻴﺮ ﺃﻭ ﻧﺼﻒ ﺻﺎﻉ ﻣﻦ ﻗﻤﺢ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺣﺮ ﺃﻭ ﻣﻤﻠﻮﻙ ﺫﻛﺮ ﺃﻭ ﺃﻧﺜﻰ ﺻﻐﻴﺮ ﺃﻭ ﻛﺒﻴﺮ
ইবনে আব্বাস রা. একবার রমজানের শেষ দিকে বসরায় খুতবা প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, তোমাদের রোজার সদকা আদায় করো। লোকেরা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, এখানে মদীনার কে আছে দাঁড়াও। তোমাদের ভাইদেরকে বলো, তারা তো জানে না। বলো যে, রাসূল সা. এই সদকা আবশ্যক করেছেন। এক সা খেজুর বা যব অথবা আধা সা গম প্রত্যেক স্বাধীন-দাস, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার ওপর ওয়াজীব। (আবু দাউদ : ১৬২২)
উপরোক্ত হাদীস তিনটির ভাষ্য অনুযায়ী নিম্নের শস্যগুলো দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। নাম ও পরিমাণ নিম্নে দেয়া হলো :
যব :এক সা
খেজুর : এক সা
কিসমিস : এক সা
পনির : এক সা
গম : আধা সা (যা তিন নং হাদীস থেকে বোঝা যায়)
এই পাঁচ প্রকার শস্যের কথা হাদীসে এসেছে। এই পাঁচ প্রকার শস্যের যে কোন একটি সরাসরি দিলেও হবে, আবার এসবের মূল্য দিলেও হবে। তবে অন্য কোনো শস্য দিতে চাইলে এই পাঁচ প্রকারের কোনো এক প্রকারের মূল্য হিসাব করে দিতে হবে।

“সা” সম্পর্কে কিছু কথাঃ

সদকাতুল ফিতর আদায়ের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিসে দু’টি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তা হচ্ছে, ★”সা’’ ও
★নিসফে সা’।
খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে এক ‘সা’= ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। আর গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’= ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়), অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে।( -আওযানে শরইয়্যাহ পৃ. ১৮)

বাংলা সের হিসেবে ১ সা’-এর পরিমাণ ৩ সের ৬ ছটাক এবং আধা সা’-এর পরিমাণ ১.৫ সের ৩ ছটাক।
-কিতাবুন নাওয়াযেল ৭/২৪৩
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন যেন মক্কার পথে পথে সে যেন এ ঘোষণা করে যে, জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপর সদকায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু।
( -জামে তিরমিজি: ১/৮৫)

আধুনিক হিসাবে সা ও নিসফে সা
১ সা = ২৮০.৫০ তোলা
১ তোলা = ১১.৬৬ গ্রাম (প্রায়)
অতএব
১ সা = ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়)
অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি।
এবং আধা সা = ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়)
অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি।
[সূত্র : আওযানে শরইয়্যাহ, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. পৃ. ১৮; মেট্রিক/আন্তর্জাতিক পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত বিবরণ (জনসাধারণের জন্য) ১৯৮২; বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স ইনস্টিটিউশন পৃ. ৩]

সা –এর বর্তমান পরিমাপ :
১ সা = ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম
.:. ১/২ সা = এক কেজি ৬৫০ গ্রাম
কাজেই যব, খেজুর, কিসমিস বা পনীর হিসাব করে দিলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে। আর গম হিসাবে দিলে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে।
অতএব রাসূলের যুগের “সা’ জানতে ইচ্ছা করলে, তাকে তিন কেজি তিনশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। অতঃপর তা পরিমাপ করতে হবে।

ফিতরা সম্বন্ধে আলোচনা হলেই একটি শব্দ উঠে আসে আর তা হল, সা। সা হচ্ছে ওজন করার বা মাপার একটি পাত্র। যেমন গ্রামাঞ্চলে কাঠা দ্বারা ধান মাপা হয়। আধুনিক যুগে কিলো গ্রামের প্রচলন হওয়ায় সেই সা’র ওজন আরবেও বিলুপ্ত প্রায়। তবুও মক্কা মদীনায় ঈদের প্রাক্কালে ফিতরার চাল বিক্রয়কারীদের কাছে এই সা’ দেখা যায়। শুষ্ক খেজুর ভরে ওজন করলে আড়াই কিলো থেকে সামান্য বেশী হয়। আর তাতে চাল ভরে ওজন করলে প্রায় তিন কিলো হয়। দ্রব্য যত ভারী হবে সা’ তে তার ওজনও ভিন্ন হবে। যেমন এক কাঠাতে চাল দিলে তার ওজন একরকম হবে আর ধান বা সরিষা দিলে আর এক রকম হবে। মোট কথা সা’ র পরিমাণকে সূক্ষ্ম কিলোগ্রামের এক ওজনে নির্ধারণ করা অসম্ভব। কারণ এটি একটি পরিমাপ পাত্র, কোন ওজনের নাম নয়। এই সা’র ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের বিভিন্ন মতের পর একটি সুন্দর, সহজ ও নির্ভরযোগ্য ওজন প্রমাণিত হয় যা, সর্বকাল ও সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হল: একজন সাধারণ শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং বেঁটেও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ঐরকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা। [ফাতাওয়া মাসায়েল/ ১৭২-১৭৩, সউদী ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি, ফতোয়া নং ৫৭৩৩ খণ্ড ৯য় পৃ: ৩৬৫ ]
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সকলকে সাদকাতুল ফিতর এর সঠিক বিধানের প্রতি আমল করার তৌফিক দান কর।অামীন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,লেখক ও গবেষক)

আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী যুবকদের কথাঃ এস এম শাহনূর

| ১১ জুন ২০১৯ | ৯:৩৭ অপরাহ্ণ

আসহাবে কাহাফ বা গুহাবাসী যুবকদের কথাঃ এস এম শাহনূর

আসহাবে কাহাফ (Cave of the Seven Sleepers)। সুরা কাহাফে বর্ণিত সেই গুহা যার অভ্যন্তরে সাতজন একেশ্বরবাদী লোক এক অত্যাচারী পলিথিস্ট শাসকের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য আল্লার ইচ্ছায় এক ঘুমে ৩০০ বছর আর চন্দ্রমাসের হিসাবে ৩০৯ বছর পার করে দিয়েছিলেন (সুরা কাহাফ, আয়াত নং ২৫)। মহান আল্লাহ্‌ পাকের বিশেষ দয়ায় সৌভাগ্য হয়েছে তুরস্কে অবস্থিত সেই শান্তিময় গুহাভ্যন্তরে কিছু সময় কাটানো এবং জিয়ারত করার।আলহামদুলিল্লাহ।

সকলের সদয় জ্ঞাতার্থে, গুহার এই ঘটনাটি নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যেহেতু এটি মহাগ্রন্থ কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। তবে এই গুহার প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

‘আসহাবে কাহাফ’ অর্থ ‘গুহাবাসী’। এ ঘটনা ঘটেছিল প্রাচীন গ্রিক শহর আনাতোলিয়া বা এফিসাসে (Ephesus)। কাছেই ছিল গ্রিক দেবী আরটেমিসের বিখ্যাত মন্দির।সে সময় এশিয়া মাইনর (বর্তমান তুরস্ক ) এলাকায় এফিসাস/আফসুস (Ephesus) নগরী ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান শহর ও বানিজ্যকেন্দ্র।অধিকাংশ খ্রীস্টান ইতিহাসবিদদের মতে আফসুস নগরীকেই আসহাবে কাহাফের শহর বলে গ্রহণ করা হয়েছে। মুসলিম গবেষক এবং তাফসীরবিদগণের মধ্যে অনেকেই মনে করেন ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী তুরস্কের মেরসিন (Mersin) এলাকার অন্তর্গত টারসুস (Tarsus) {যার খ্রিস্টান নাম Ephesus}শহরের অদূরে যে বিখ্যাত গুহা রয়েছে সেটিই আসহাবে কাহাফ, যার ছবি এখানে দেয়া হল। মুসলিম এবং খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায় এই আসহাবে কাহাফের ঘটনা বিশ্বাস করেন। জানা যায়, এই এলাকার খ্রিস্টান লোকজন বহু কাল ধরে জুলাই মাসের একটি নির্দিষ্ট দিন এখানে আসহাবে কাহাফ দিবস হিসাবে পালন করে আসছেন।

তবে ১৯৭৬ সালে জর্ডানের এক মুসলিম গবেষক অনেক গবেষণার পর দাবি করেন আসহাবে কাহাফ জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত। একই ভাবে কেউ বলেছেন এটি স্পেনের গ্রানাডা আবার কেউবা বলেছেন সিরিয়া কিংবা ইয়েমেনে এর অবস্থান।

কুরআনের ১৮ নম্বর সুরা ‘সুরা কাহাফ’ মক্কাতে অবতীর্ণ হয়, অর্থাৎ তখনও নবী হযরত মুহাম্মাদ সাঃ ও তাঁর অনুসারীরা মদিনায় চলে যাননি। কিন্তু মক্কাতে তখন তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে দেখে কুরাইশরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। যেহেতু নবী সাঃ এমন ধর্ম প্রচার করে চলেছিলেন, যেখানে আগের নবীদের সাথে ইহুদি-খ্রিস্টানদের নবীরা মিলে যায়, তাই কুরাইশ নেতারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তাঁরা ইহুদি র‍্যাবাইদের (আলেম) সাথে পরামর্শ করবে। নাযার ইবনে হারিস এবং উকবা ইবনে মুয়িত নামের দুজনকে তাঁরা মদিনার ইহুদি র‍্যাবাইদের কাছে প্রেরণ করে এই বলে যে, তাঁরা যেন মুহাম্মাদ সাঃ এর ব্যাপারে তাদের মতামত জানায়।

তারা মদিনা পৌঁছালে ইহুদি আলেমরা তাদের কথা শুনে মীমাংসা করার জন্য একটি উপায় বাতলে দেন,

দেখো, আমরা তোমাদের মীমাংসা করার জন্য একটি কথা বলছি। তোমরা ফিরে গিয়ে তাঁকে তিনটি প্রশ্ন করবে। তিনি যদি উত্তর দিতে পারেন, তবে তিনি যে সত্য নবী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর না দিতে পারলে তিনি মিথ্যেবাদী।
প্রথম প্রশ্ন: পূর্বযুগে যে যুবকেরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাদের ঘটনা বর্ণনা করুন তো?এ এক বিস্ময়কর ঘটনা

এরকম আরো দুটি প্রশ্ন তাঁরা করতে বলেন। বাকি ঘটনা এখানে লিখছি না, তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হিসেবেই অবতীর্ণ হয় সুরা কাহাফ (‘গুহা’)।চলবে….

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,লেখক ও গবেষক)

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় কেমন হওয়া চাই?-এস এম শাহনূর

| ০৪ জুন ২০১৯ | ২:৫৫ অপরাহ্ণ

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় কেমন হওয়া চাই?-এস এম শাহনূর

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশেই আজ মহা সারম্ভে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আজ দিন শেষে আকাশে বাঁকা চাঁদের হাসি দেখতে পেলে আগামীকাল রোজ বুধবার বাংলাদেশেও উদযাপিত হবে প্রতীক্ষিত মহা আনন্দের ঈদ।চাঁদ দেখার সাথে সাথেই রেডিও সহ সকল টিভি চ্যানেলগুলোতে গাইতে শোনা যাবে কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত সেই সংগীত।

“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে,
শোন আসমানী তাগিদ।”

ঈদের নামাজ পড়ার পর সবাই একে অপরকে অভিনন্দন জানাবেন। একে অপরকে নিজ বুকে টেনে নেবেন। এটাই স্বাভাবিক।ব্যক্তিগত জীবনে পৃথিবীর নানান দেশে বেশ কয়েকটি ঈদ উদযাপন করেছি।কিন্তু বাংলাদেশের মত উৎসব মুখর আর প্রাণের ছোয়া কোথাও দেখিনি।এখানকার অভিবাদন পদ্ধতিও মন কাড়ে।তাই তো ইসলামী বিধান মতে অভিবাদনের পর্যায়ক্রমিক সঠিক পদ্ধতি গুলো তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি।সেই সাথে মহান আল্লাহর নিকট সামর্থ্য কামনা করছি।”ইয়া কানাবুূুদু ওয়া ইয়া কানাস তাঈন”।সাথে সাথে আমার সকল বন্ধু,নিকটাত্মীয় ও মুসলিম জাতির প্রতি অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছাও জ্ঞাপন করছি।ঈদ মোবারক।

♦মুসলিম জাতির প্রাণের উৎসব হলো দুই ঈদ। ঈদে অভিবাদন বা শুভেচ্ছা বিনিময়েরও রয়েছে অনেক সুন্দর শিষ্টাচার। ইসলামের শিষ্টাচার অন্যান্য জাতি থেকে অনেক অর্থবহ, সমৃদ্ধ, প্রাণসম্পন্ন ও কল্যাণমুখী। আমাদের দেশে ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রচলন রয়েছে। ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় জায়েজ। কিন্তু সশরীরে সাক্ষাতে কিংবা ফোনে সালামের আগেই ঈদ মোবারক বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা বৈধ নয়।

♦ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ বলা। এর অর্থ হলো, আল্লাহ আমাদের এবং আপনার পক্ষ থেকে সৎকর্মগুলো কবুল করুন। হজরত ওয়াসিলা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাত করলাম। আমি বললাম, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ আর তিনিও বললেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। (বায়হাকি: ৩/৪৪৬)।

ঈদের নামাজের পর সালাম, মুসাফাহা ও মুয়ানাকা :
===============================
মুসলমানদের পরস্পরে সালাম বিনিময় হলো একটি ইবাদত এবং পরস্পরিক অভিবাদন, সৌহার্দ-সম্প্রীতি ও ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম। মুসাফাহা বা করমর্দন হলো সালামের পরিপূরক। আর দীর্ঘদিন পর একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে পরস্পরে মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা হলো আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ।

সালামঃ-সালাম ইসলামি অভিবাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সুন্নত। সালামের মাধ্যমে আল্লাহ পারস্পরিক মুহব্বত বৃদ্ধি করে দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর একে অন্যকে ভালো না বাসলে ইমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দেব না, যা কারলে তোমরা পরস্পরে ভালোবাসতে পারবে? তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন করো।’ (মুসলিম: ১/৪৭)।

মুসাফাহাঃ-পারস্পরিক সাক্ষাতে মুসাফাহা বা হাত মেলানোর অনেক ফজিলত রয়েছে। হজরত বারা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি দুজন মুসলিম সাক্ষাত করে পরস্পরে হাত মেলানো বা মুসাফাহা করেন তাহলে তাদের উভয়ের পৃথক হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (তিরমিজি: ৫/৭৪; ইবনে মাজা: ২/১২২০)।
মুসাফাহার নিয়ম হলো দুই হাতে মুসাফাহা করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন (মাসাফাহার সময়) আমার হাতটি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দু হাতের মধ্যে ছিল। (বুখারি: ৫/২৩১১)। অন্যের ডান হাতকে নিজের দুহাতের মধ্যে এবং নিজের ডান হাতকে অন্যের দুহাতের মধ্যে রেখে এই দুআ পাড়া,
মুসাফাহা বা করমর্দন করার দু’আ—-
ﻳَﻐْﻔِﺮُﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﻟَﻜُﻢ
উচ্চারণঃ- ইয়াগফিরুল্লাহু-লানা ওয়ালাকুম।

মুসাফাহার পর হাতে চুমু খাওয়া, হাত
বুকে লাগানো বিদআত। তাই এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। [রদ্দুল মুহতার : ৯/৫৫০; রহীমীয়া:১০/১২১; অাদাবুল মুঅাশারাত:৩২;]

মুয়ানাকা বা কোলাকুলির পদ্ধতিঃ- মুয়ানাকা বা কোলাকুলি হলো দুই ব্যক্তির প্রত্যেকে নিজ নিজ থুতনি অন্যের কাঁধের ওপর রাখা এবং গলা অন্যের গলার ওপর রাখা এবং উভয় হাত দ্বারা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরা। (মুহাম্মদ কালজায়ি, মুজামু লুগাতিল ফুকাহা : ৪৩৮)।

মুয়ানাকা ( কোলাকুলি) করা সুন্নাত। [আবু দাউদ : ২/৭০৮; তিরমিবী : ২/১০২]
পরিচিত কারও সাথে কিছুদিন বা অনেকদিন পর দেখা হলে তার সাথে মুহাব্বতের সাথে কোলাকুলি করা সুন্নত।
উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে একবার মুয়ানাকা করবে। তিনবার জরুরী নয়। [তিরমিবী : ২/১০২; লিসানুল আরব : ১০/২৭২; মাহমুদিয়া : ২৮/২১১; জামিউস সুনান : ১৫৯]
ঈদের দিন ঈদের নামাযের পর জরুরী মনে করে মুয়ানাকা/কোলাকুলি করা বিদআত। জরুরি মনে না করলে বিদআত হবে না। [ইসলাহি খুতুবাত : ১/১৮৬-১৮৭]

মু’য়ানাকা বা কোলাকুলি করার দু’আ—-
মুআনাকা করার সময় এই দুআ পড়বে- ﺍَﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺯِﺩْ ﻣَﺤَﺒَّﺘِﻲْ ﻟِﻠّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟِﻪ
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা যিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী। অর্থ- হে আল্লাহ! আমার মহব্বত বৃদ্ধি কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের খাতিরে। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,লেখক ও গবেষক)

লাইলাতুল কদর ও আমাদের করণীয়ঃ এস এম শাহনূর

| ০১ জুন ২০১৯ | ৮:২৪ অপরাহ্ণ

লাইলাতুল কদর ও আমাদের করণীয়ঃ এস এম শাহনূর

লাইলাতুল কদর আরবি শব্দ।আরবি : ﻟﯿﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।শবেকদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা।পবিত্র মাহে রমজানের কোন রাত্রিতে ‘লাইলাতুল কদর’ তা নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাত গুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো” (বুখারী)।
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তা হল রমজানের ২৭ তম রাত” (মুসলিম)।
অন্যদিকে হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমজানের ২৭ তম রজনীতে অনুসন্ধান করে” (আহমাদ)।
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম আ‘যম আবু হানিফা নোমান বিন সাবেত রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সহ প্রাজ্ঞ ইসলামিক স্কলারগণ বলেন, সূরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় ৩বার এসেছে, আর ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি আরবিতে লিখতে ৯টি অক্ষর ব্যবহার হয়। তাই ৩×৯=২৭, তথা ‘লাইলাতুল কদর’ রমজানের ২৭ তম রমজান (২৬তম রমজান দিবাগত রাত্রি)।
মুসলিম বিশ্বের সকলেই ঐক্যমত যে, রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রজনীগুলোতে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করতে হবে ও এ উদ্দেশ্যে বিশেষ ইবাদত করতে হবে (তাফসীরে মাযহারী, আনওয়ারুল মিশকাত)।

মোট কথা এ মহামান্বিত ‘লাইলাতুল কদর’ এর পরিপূর্ণ নেয়ামত আমাদের অর্জন করতে হবে। কোনো ক্রমেই এ রজনী তে হেলায়-খেলায় আর খোশগল্পে কাটানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

এ রাত্রিতে বেশি বেশি নফল নামায, ইস্তিগফার, সালাতুস তাসবিহ, সালাতুল হাজত, জিকির-আজকার, কুরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ পাঠ, কবর জিয়ারত ও দান-সদকা গুরুত্বপূণ আমল। হাদিসে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থাকাকে সুন্নাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহতাআলা বলেছেন:
১. নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে।
২. তোমাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল ক্দর কি?
৩. লাইলাতুল ক্দর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
৪. সে রাতে ফেরেশতারাও রূহ (জিবরাইল) তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন।
৫. শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।” [সূরা আল কদর, ৯৭: ১-৫]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্দরে নামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”[সহীহ বুখারী (১৯০১) ও মুসলিম (৭৬০)]
হাদিসে“ঈমান সহকারে”কথাটির অর্থ হচ্ছে- এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর “প্রতিদানের আশায়” কথাটির অর্থ হচ্ছে- নিয়্যতকে আল্লাহ তাআলার জন্য একনিষ্ঠ করা।

এ রাতে আমাদের করণীয়ঃ
কুরআন অধ্যয়ন :
সমগ্র মানব জতির মহা মুক্তির সনদ পবিত্র কুরআন এ রাতেই নাজিল হয়েছে। এ বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এ কুরআনকে ধারণ করলেই মানুষ সম্মানিত হবে, দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে।

কিয়ামুল লাইল :
‘কিয়ামুল লাইল’ অর্থ হলো রাত্রী জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে’ (সূরা-ফুরকান-৬৪)।
‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা (গজবের) ভয়ে এবং (রহমতের ) আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে’ সূরা-সিজদা-১৬-১৭)

নফল নামাজ :
ন্যূনতম ১২ রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এ জন্য সাধারণ সুন্নতের নিয়মে দুই রাকাত নফল পড়ছি। এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে। এ জন্য সূরা ফাতেহার সাথে আপনার জানা যেকোনো সূরা মিলাইলেই চলবে। এ ছাড়া সালাতুল তওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। রাতের শেষভাগে কমপে আট রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। আর রাতের এ অংশে দোয়া কবুল হয়।

জিকির ও দোয়া :
হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বার বার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (মা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋُﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

আত্ম সমালোচনা :
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য (পরকাল) সে কী প্রেরণ করেছে তা চিন্তা করা’(সূরা হাশর-১৮)।
রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের জন্য আত্মমূল্যায়নসহ লাইলাতুল কদরে জাগ্রত হয়ে ইবাদত করবে, তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে” (বুখারী)।জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে আল্লাহর কতগুলো হুকুম অমান্য করেছেন, আল্লাহর ফরজ ও ওয়াজিবগুলো কতটা পালন করেছেন, ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় কী কী বড় গুনাহ আপনি করে ফেলেছেন, আল্লাহর গোলাম হিসেবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আপনি কতটুকু ভূমিকা রেখেছেন- এগুলো ভাবুন, যা কিছু ভালো করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, আর যা হয়নি তার জন্য আল্লাহর ভয় মনে পয়দা করুন, সত্যিকার তওবা করুন।

মুনাজাত :
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তাঁর কাছে না চাইলে অসন্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন।’ (তিরমিজি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল’- (আল-হাদিস)। ‘যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিজি)। কাজেই আমরা কায়েমনোবাক্যে আল্লাহর দারবারে মুনাজাত করব, মা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব। মনের আবেগ নিয়ে চাইব। চোখের পানি ফেলে চাইব। আল্লাহ আমাদের খালি হাতে ফেরাবেন না ইনশাআল্লাহ। রাসূল সা:-এর বাণী আশার আলো জ্বেলেছে হৃদয়ে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমাদের পরোয়ারদিগার লজ্জাশীল ও দাতা; লজ্জাবোধ করেন যখন তাঁর বান্দা তার কাছে দুই হাত ওঠায় তখন তা খালি ফিরিয়ে দিতে’- (তিরমিজি, আবু দাউদ, বায়হাকি- দাওয়াতে কবির)।

হে আল্লাহ আমাদের সকলকে লাইলাতুলকদর নসীব করুন।আমিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,লেখক ও গবেষক)

দোয়া কবুল ও মুসলিম জাগরণের দিন

আজ জুমাতুল বিদা ও পবিত্র কুদস দিবসঃ এস এম শাহনূর

| ৩১ মে ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

আজ জুমাতুল বিদা ও পবিত্র কুদস দিবসঃ এস এম শাহনূর

বিদায় বা প্রস্থানের আরবি হলো ‘আল বিদা’;জুমাতুল বিদা আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সমাপনী সম্মিলন।সিয়াম সাধনার মাস রমজানের শেষ শুক্রবারকে ‘জুমাতুল বিদা’ বলা হয়ে থাকে।জুমাতুল বিদার মাহাত্ম্য অত্যধিক। রমজান মাসের সর্বোত্তম দিবস হল জুমাতুল বিদা’।প্রতি সপ্তাহের জুমা দিবসে মুসলিম মনে এক নয়া জাগরণ সৃষ্টি হয়।এ দিবসকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে জুমা নামে স্বতন্ত্র একটি সূরা রয়েছে। এক হাদিসে জুমা দিবসকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে। জুমাতুল বিদাকে সব জুমার শ্রেষ্ঠ জুমা বলা হয়।পবিত্র কোরআনে জুমার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে,
‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সূরা আল-জুমুআ, আয়াত-৯)

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার দিন সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃত্বস্থানীয় দিন। এ পুণ্যময় দিনে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। এদিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন এবং এদিন তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন। এদিন তাঁর ইন্তেকাল হয়। এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (মিশকাত শরিফ)।

রমজানের জুমাগুলো অন্যান্য জুমার দিবস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। রমজানের প্রতিটি দিন তার আগের দিন অপেক্ষা শ্রেয়তর এবং অধিক ফজিলতপূর্ণ। তাই রমজানের শেষ জুমা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত।
রমজানের শেষ দশকে নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির সময়ে শেষ শুক্রবারে মুক্তিকামী ধর্মপ্রাণ জনসাধারণ আশা ও উৎসাহের সঙ্গে মসজিদে আসেন।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহখাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই।’
জুমাতুল বিদা স্মরণ করিয়ে দেয় যে রোজার শেষ প্রান্তে এর চেয়ে ভালো দিবস আর পাওয়া যাবে না। রোজার শুরু থেকে যেসব ইবাদত ব্যস্ততাবশত ফেলে রাখা হয়েছে, যে গুনাহখাতা মাফের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে ভুল হয়েছে, জুমাতুল বিদার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময়ে এর বরকত হাসিল করে নিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন উজাড় করে আল্লাহর এবাদতে মনোনিবেশ করেন।ধর্মে জুমাতুল বিদার সরাসরি গুরুত্ব বহনকারী কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও এমনও বর্ণনা পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমাতুল বিদার খুতবায় ‘আল-বিদা-আল বিদা’ শব্দ উচ্চারণ করতেন। এ শব্দ শোনার পর সাহাবায়ে কিরাম বিলাপ করে কান্না শুরু করতেন। তারা সবাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী রমজানকে জুমাতুল বিদায় বিদায় জানাতেন। পরবর্তী রমজান ভাগ্যে জুটে কিনা ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস ভাগ্যে জুটে কিনা- এসব ভেবে সাহাবায়ে কিরাম কান্না করতেন।

তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনা মতে, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, তখন যে দোয়াই করা হয়, তাই কবুল করা হয়। সহিহ হাদিসে এ কথা প্রমাণিত রয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, কোনো ধর্মীয় মজলিসে যদি অন্তত চল্লিশজন লোক একত্রিত হয়ে কোনো দোয়া করে, তা হলে আল্লাহতায়ালা তাদের মধ্যে যে কোনো একজনকে অলির মর্যাদা দিয়ে তার সঙ্গে সবার দোয়া কবুল করে নেন। জুমাতুল বিদার বিশাল জামাতে আমাদের দেশের বিভিন্ন মসজিদে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই ওই দিনের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার খুবই সম্ভাবনা থাকে।এ দিনের জুমায় সারা দেশের সব জামে মসজিদে বছরের সবচেয়ে বেশি মুসল্লির সমাগম হয়।গ্রাম,মফস্বল কিংবা শহর এলাকার বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ বড় বড় জামে মসজিদে জুমাতুল বিদার জামাতে শরিক হন। আতর-গোলাপের সুঘ্রাণ, সাদা পোশাক, মাথায় টুপি- এসব মিলে যেন এক বেহেশতি দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ঈদের আগে এ যেন এক ভিন্ন রকমের ঈদ।সবাই নামাজ শেষে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে সকরুণ মোনাজাত করে, আমিন! আমিন! ধ্বনির সঙ্গে মুহুর্মুহু উচ্চারিত হয়: ‘আল বিদা ইয়া মাহে রমাদান! আল বিদা;’ ‘আল বিদা আয় মাহে রহমাত! আল বিদা;’ ‘আল বিদা হে মাহে মাগফিরাত! আল বিদা;’ ‘আল বিদা ওহঃ মাহে নাজাত! আল বিদা।’

“ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্যে এলো ধৈর্যের রমাযান
মুসলিম জাতির প্রতি এ যেন খোদার সেরা দান।
সিয়াম সাধনার এটি হলো প্রশিক্ষণের মাস
নিশ্চিত করে অাখেরাতে জান্নাতে বসবাস।
রহমতের প্রথম দশক চলে গেলো হায়!
জানি না রাহমান রাহীম কি দিলেন অামায়।
পাপে ভরা জীবন অামার ভরসা গাফির,
গফুর গাফ্ফার নামের গুণে অাশা করি মুক্তির।
ধনের গৌরবে,যৌবনের মিছে তাপে ভুলেছি অাপণ জাত
অাত তাউত্তয়াবু নামের কারণে দান কর নাজাত।
যদি নাহি পাই তব রহমত মাগফিরাত নাজাত
বৃথা এ জীবন বৃথা দুনিয়াবি হায়াত।
নসীব কর হে প্রভু লাইলাতুল ক্বদর,খুশীর ঈদ,খুশবু অাতর,
কবুল কর সাহরী ইফতার তারাবীন সাদাকাতুল ফিতর।”(রমযানুল সাবরী)

★এবার জেনে নিই আল কুদস দিবস কি ও কেন পালন করা হয়?
আল-কুদস দিবস বা আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস (ফার্সি ভাষায়- ﺭﻭﺯ ﺟﻬﺎﻧﯽ ﻗﺪﺱ ) প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার পালিত হয়ে থাকে, যা ১৯৭৯ সালে ইরানে শুরু হয়েছিল।এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনী জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ, জায়নবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ইসরাইল কর্তৃক জেরুযালেম দখলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ। জেরুযালেম শহরের অপর নাম ‘কুদস’ বা ‘আল-কুদস’ (আরবী ভাষায়)।
কুদস অর্থ পবিত্র। ‘আল কুদস’ বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ, যার তাঁর ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
আদিতে ‘কাবা’ কিবলা থাকলেও মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস স্থাপনের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ওহি লাভ ও নবুওয়াত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসই কিবলা ছিল। মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তন হয়ে পুনরায় কাবা কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। মদিনা থেকে মক্কা দক্ষিণ দিকে এবং বায়তুল মুকাদ্দাস উত্তর দিকে। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামসহ জামাতে জোহরের নামাজে আদায়রত অবস্থায় কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ হয়। তখন নামাজ অবস্থায় নবীজি (সা.) ও সাহাবাগণ উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ঘুরে গিয়ে কাবামুখী হয়ে কিবলা পরিবর্তন করে নামাজ সম্পন্ন করলেন। মদিনা শরিফে মসজিদুল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদও রয়েছে। ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ‘তাহবিলে কিবলা’ বা কিবলা পরিবর্তন বলা হয়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪২-১৫১)। এই সূত্রে
ইসলামের দ্বিতীয় কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত হয়। হাদিসে আছে: ‘কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজে এক লক্ষ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববীতে নামাজে পঞ্চাশ হাজার গুণ
সওয়াব, বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজে পঁচিশ হাজার
গুণ সওয়াব।’

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ, ইসরাইল কর্তৃক পবিত্র জেরুযালেম শহর জবরদখলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ; ফিলিস্তিনী জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইবরাহীম ইয়াজদি সর্বপ্রথম আল-কুদস দিবস রেলীর আয়োজনের ধারণা দেন। তারপর আয়াতুল্লাহ খোমেইনী ১৯৭৯ সালে ইরানে এর প্রবর্তন করেন।সেই থেকে সারা বিশ্বময় রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস পালিত হচ্ছে। জুমাতুল বিদার বিশেষ তাৎপর্য এই যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র মহামতি হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনর্নির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদে আল-আকসা’। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদে আল-আকসা’।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এর অন্যতম হচ্ছে ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’। ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মসজিদ আল-আকসা এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। এ মসজিদকে কেন্দ্র করে অসংখ্য নবী-রাসুলের দাওয়াতি মিশন পরিচালিত হয়েছে। এটি সব মুসলমানের ইমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসুলের মাজার। ওহি ও ইসলামের অবতরণস্থল, আম্বিয়া কিরামের দ্বীন প্রচারের কেন্দ্রভূমি, তাই এ পবিত্র নগরের প্রতি ভালোবাসা প্রত্যেক মুমিনের অন্তরের গভীরে প্রোথিত। মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে মুসলমানদের দ্বারা বায়তুল মোকাদ্দাস পবিত্র স্থান রূপে গণ্য হতে থাকে। কোরআন শরিফে বায়তুল মোকাদ্দাসকে পবিত্র ভূমি উল্লেখ করা হয়েছে, ‘(স্মরণ করো, মুসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল) হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন, এতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২১)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজের নৈশভ্রমণের প্রথম পর্ব সংঘটিত হয়েছিল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ছিল মসজিদুল আকসা থেকে ঊর্ধ্বলোক। মিরাজে এ মসজিদেই রাসুলুল্লাহ (সা.) সমস্ত নবী-রাসুলের ইমামতি করেছিলেন। এ পরিভ্রমণে বায়তুল মোকাদ্দাসকে মাধ্যম রূপে মর্যাদা প্রদানের পেছনে এর পবিত্রতার স্বাক্ষর বহন করে। পবিত্র কোরআনে এ ভূখণ্ডের পবিত্রতা বা বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমান্বিত তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে এক রজনীতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় পরিভ্রমণ করিয়েছিলেন, যার চতুর্পারশ্ব আমি বরকতময় করেছিলাম তাঁকে আমার নিদর্শন পরিদর্শন করার জন্য, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ১)

মহান আল্লাহ সকল মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির ফায়সালা করে দিন।আমিন। ছুম্মামিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,লেখক ও গবেষক)

ঈদে বাড়ি ফেরা ও সাবধানতা: এস এম শাহনূর

| ৩০ মে ২০১৯ | ১:০৮ অপরাহ্ণ

ঈদে বাড়ি ফেরা ও সাবধানতা: এস এম শাহনূর

সকলকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।
বাসে,ট্রেনে ও লঞ্চে চড়ার সময়ে সাবধান। হতে পারে আপনার পাশে দাঁড়ানো স্মার্ট কলেজ পড়ুয়া যুবতী বা সুন্দরী তরুণী অথবা কোলে বাচ্চা নিয়ে মহিলা অথবা হ্যান্ডসাম যুবক আদতে পেশাদার পকেটমারও হতে পারে।
চলন্ত সিড়ির স্থান, বিনোদন পার্ক, ক্যাশ মেশিন, বাস স্টপ, ব্যস্ত সড়ক, রেস্টুরেন্ট টেবিল এবং ফটোগ্রাফির স্থানে দলবদ্ধ পকেটমাররা কৌশলে অাপনার পকেট খালি করে ঈদে বাড়ী ফেরার অানন্দটুকু মাটি করে দিতে পারেন।
রাস্তায়, ফুটওভার ব্রীজে,যানবাহনে,বাসে,ট্রেনে বাজারে, মেলায় একটা সাধারণ আতঙ্ক হচ্ছে ‘পকেটমার’। এই হাতচালানি পেশাদারদের কবলে পড়েননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বলা যায়, হাত সাফাই তো আছেই, সাথে মানবমস্তিষ্কের দুর্বলতাকেই মূলত কাজে লাগায় পকেটমাররা। রাস্তায় হাঁটছেন। হঠাৎ এক ভদ্রলোক উপহার দেয়ার জন্য পিড়াপীড়ি অথবা মনোহারির দোকানদার সস্তায় আকর্ষণীয় জিনিস কম দামে গছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। কিছু দূর গিয়ে হাতিয়ে দেখলেন পার্স বা পকেটে টাকা নেই। অথবা কোনো ভিখারিকে দেখে দয়া করে ২০ টাকা দিতে গেলেন কিন্তু সে অবাক করে দিয়ে ওতো টাকা না নিয়ে পাঁচ টাকার জন্য জিদ ধরলো। পার্স খুলে খুচরা টাকা বের করছেন আর ওই ফাঁকে সে দেখে নেবে কতো টাকা আপনার পকেটে। এরপর জায়গামতো সময় বুঝে হাত চালাবে। অথবা মসজিদ মাদরাসা এতিমখানার জন্য টাকা চাইতে এসেও আপনার মানিব্যাগটা চেক করে যেতে পারে।

এই ট্রিকসগুলোর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। মানুষ বা অন্য যেকোনো প্রাণীকে বোকা বানানোর মতো কিছু কৌশল আছে। এই দুর্বলতা মানুষের মস্তিষ্কের গঠনেই রয়ে গেছে। একে বলে ‘লুপহোল’ বা চোরাগলি। পকেটমার হওয়ার জন্য শুধু চতুর আঙ্গুল থাকলেই চলে না এই চোরাগলি সম্পর্কেও জানতে হয়।
মানুষের মস্তিষ্ক এক সাথে একাধিক কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। সেই সক্ষমতা তার নেই। আর এটাই জাদুকর বা পকেটমারদের মোক্ষম অস্ত্র! মঞ্চে যারা জাদু দেখান তারা এটাই করেন। হাত সাফাই মানে আসলে তা-ই। রঙিন পোশাক আর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দর্শকদের ব্যস্ত রাখে আর সুযোগ বুঝে হাত সাফাই করে জাদুকর। একে বলে ইলিউশন অব চয়েস। যেমন দ্রুত হাত চালানো। মানুষের মস্তিষ্ক .০১ সেকেন্ডের কম স্থায়ীত্ব সম্পন্ন কোনো চিত্র আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে না। ফলে একটা ইলিউশন তৈরি হয়।
সাধারণত নির্জন রাস্তায় যেটা হয়: হঠাৎ এক ভদ্রলোক হনহন করে এসে আপনার সামনে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছন থেকে আরেক ভদ্রলোক আপনাকে ক্রস করতে গিয়ে তার সাথে ধাক্কা লাগলো। ব্যস শুরু হয়ে গেল বাকবিতণ্ডা। আপনি তো হতভম্ব। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একটু পরেই দু’জন দু’দিকে চলে গেল পরস্পরকে গালাগাল করতে করতে। আপনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু বাঁচলেন না! বাস ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলেন পকেট ফাঁকা। ক্যামনে হলো? ওই দুই লোকের গোণ্ডগোলের ফাঁকে তৃতীয় একজন আপনার পকেট মেরে দিয়েছে। সে আসলে ছিল তাদেরই লোক।
শিকার মাঝখানের জন, ‍দুই পাশে শিকারি
বাজারে, ফুটওভারব্রিজে, মেলা, গণপরিবহনে হঠাৎ অতিরিক্ত জনসমাগম হলে পকেট সাবধান! এখানে পকেটমার সিন্ডিকেট এ ধরনের জটলা তৈরি করে পকেট হাতিয়ে নিরাপদে সটকে পড়ে। অনেক সময় ধরা পড়লেও হঠাৎ এক ভদ্রলোক অতি উৎসাহী হয়ে আগ বাড়িয়ে ব্যাপারটা সমাধানের চেষ্টা করে। হয়ত পকেটমারকে চড় থাপ্পরও মারতে মারতে সরিয়ে নিয়ে যায়। সে কিন্তু ভদ্রলোক নয়, তাদেরই লোক। অথবা মেলায় বা পার্কে বা পার্টিতে অপরিচিত সুন্দরী ললনার সাথে গল্পে মজলে পকেট সাবধানে রাখবেন। পেছন থেকে কেউ মেরে দিয়ে যাবে। সেই ললনা কিন্তু একটা টোপ।
পকেট সাবধান! লেখা স্টিকার বা সাইনবোর্ডের নিচে পকেটমারদের সবসময় তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকে। কারণ এসব সাইনবোর্ড দেখলে মানুষ অবচেতন মনেই পকেট হাতড়ে দেখে মানিব্যাগ, মোবাইল ঠিকঠাক আছে কি না।

এস এম শাহনূর(লেখক ও গবেষক)

আজ মহান মে দিবস: শ্রম অধিকারের দিন

ঘাম ঝরানো শ্রম উপার্জনের চেয়ে উত্তম দ্বিতীয়টি আর নেই: এস এম শাহনূর

| ০১ মে ২০২০ | ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

ঘাম ঝরানো শ্রম উপার্জনের চেয়ে উত্তম দ্বিতীয়টি আর নেই: এস এম শাহনূর

পরিশ্রমে ধন আনে,পুণ্য আনে সুখ”।‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি’। কাজেই পরিশ্রম কোন ছোট কাজ নয়।সমাজ সংসার ও পার্থিব জগতে কোনো উন্নতি শ্রম ব্যতিরেকে সম্ভব হয়নি।

হজরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে সর্বশেষ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল নিজ হাতে কাজ করতেন। স্বহস্তে কাজ সম্পাদন করা অতিশয় উত্তম। রসূলুল্লাহ (সঃ) শ্রমের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ ও শ্রমিকের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বাণী প্রদান করে বলেছেন, ‘উত্তম উপার্জন হলো (পেশাজীবী) কর্মীর হাতের (শ্রমের) উপার্জন, যখন সে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে।’
নবী করিম (সঃ) নিজে শ্রম ব্যয় করে জীবিকা অর্জন করতেন। একদা তিনি তাঁর ফোস্কা পড়া পবিত্র হাত দেখিয়ে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘এটি এমন একটি হাত, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নিজের হাতের কাজ ও শ্রম দ্বারা উপার্জিত খাদ্য খাওয়া অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কেউ খেতে পারে না। হজরত দাউদ (আঃ) নিজের হাতের শ্রমের উপার্জিত খাবার খেতেন’ (বুখারী)।
মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রধান উপায় হচ্ছে শ্রম। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর এই যে মানুষ তা-ই পায় যা সে করে। আর তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে; অতঃপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান’ (সূরা নাজম: ৩৯-৪১)।
ইসলামী বিধানে শ্রমিক, চাষি এবং অন্যান্য শ্রমজীবীকে কেউ বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে পারবে না। তাদের ন্যায়সঙ্গত যথার্থ পারিশ্রমিক তাদের দিতেই হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কাজ অনুযায়ী, এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কর্মেও পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’ (সূরা আহ্কাফ: ১৯)।
মানুষের শ্রম করার অধিকার অত্যন্ত পবিত্র ঈমানী দায়িত্ব।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে’ (সূরা যিলযাল:৭-৮)।
ইসলাম প্রতিটি মানুষের শ্রমের ফলভোগ করার অধিকার স্বীকার করে। মহান অাল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম! ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না’ (সূরা আল ইমরান: ১৩৬ ও ১৭১)।
রসূলুল্লাহ (স) শ্রমিককে মজুরি দান করার পরও তাকে লাভের অংশ দেয়ার জন্য উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘কর্মচারীদের তাদের কাজের লভ্যাংশ দাও। কেননা আল্লাহর শ্রমিকদের বঞ্চিত করা যায় না।’ (মুসনাদে আহমদ)
নবী করিম (স) শ্রমিকদের প্রতি মালিকের কর্তব্য ও শ্রমজীবীদের যেসব অধিকার নির্ধারণ করেছেন তন্মধ্যে গুত্বপূর্ণ অধিকার এই যে, তাকে শুধু পরিপূর্ণ মজুরি প্রদান করা যথেষ্ট নয়, বরং যতটা সম্ভব ত্বরিত মজুরি পরিশোধের কথাও বলা হয়েছে। মহানবী (স) বাণী প্রদান করেছেন, ‘শ্রমিককে শ্রমজনিত ঘাম শুকানোর আগেই অবিলম্বে তার মজুরি দাও’ (মুসনাদে আহমাদ)।
মজুরি না দেয়া বা কাজ অনুপাতে মজুরি কম দেয়াও ইসলামে নিষিদ্ধ।
রসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ কিয়ামতের দিন অসন্তুষ্ট হবেন। তাদের একজন হচ্ছে যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিক নিযুক্ত করে তার দ্বারা পূর্ণ কাজ করিয়ে নেয়ার পর তার মজুরি দেয়নি’ (বুখারী)।
ইসলামী বিধান মতে, অন্যত্র নবী করিম (স) নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, ‘কাজের পারিতোষিক নির্ধারণ ব্যতিরেকে কোনো শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করবে না’ (বায়হাকী)।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী মালিক স্বকীয় শক্তিবলে শ্রমিকের ওপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপাতে পারবে না। শ্রম করার অধিকারের পাশাপাশি শ্রমিকের কাজে অবকাশ বা ছুটি তথা বিশ্রাম পাওয়ার অধিকার আছে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সাধ্যাতীত কোনো কাজ করার দায়িত্ব চাপিয়ে দেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।’ (সূরা ইনশিরাহ: ৫)
আল্লাহ পাক মালিক ও শ্রমিক সকলকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করুন।আমিন।

💻লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক)

এস এম শাহনূর প্রণীত

হাদিসের আমল থেকে যেভাবে করোনা মুক্ত হল চীন?

| ১১ এপ্রিল ২০২০ | ৪:০৫ অপরাহ্ণ

পুরো পৃথিবী আজ করোনা নামক মহামারিতে নিমজ্জিত।
আল্লাহ অতীতের কোনো কোনো গোত্রকে মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার অবশিষ্টাংশই মহামারি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)

এরশাদ হয়েছে,’মহামারী এমন একটি শাস্তি যা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর পাঠিয়েছিলেন। সুতরাং যখন তোমরা শুনবে যে, কোথাও তা বিদ্যমান তখন তোমরা সেখানে যেও না। আর যদি মহামারি এলাকায় তোমরা থাক, তবে সেখান থেকে পালানোর জন্য বের হয়ো না’’ (বুখারীঃ ৬৯৭৪, মুসলিমঃ ২২১৮)।

বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন।এ সময় মুমিনগণ ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে।

হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল( সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়োনা। আর যদি কোন এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে এবং তোমরা সেখানে থাক, তাহলে পলায়ন করে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।(সহিহ বুখারীঃ৫৭২৯)।

চীন করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার সাধারণ যে উপায় অবলম্বন করেছে, দেড় হাজার বছর আগে প্রিয়নবী (সা.) সে উপদেশ দিয়ে গেছেন। তাহলে কি চীন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর হাদিসের সেই আমলকে অনুসরণ করেছে?।হ্যা,চীন তাই করেছে।
এ রোগের সয়লাব ঠেকাতে চীন সরকার হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে রোগীসহ কোনো মানুষকে অন্য শহরে পাঠায়নি। আবার অন্য শহর থেকে কোনো মানুষকেও এ শহরে প্রবেশ করতে দেয়নি। যাতে এ রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।চীনের এ হুবেই প্রদেশেই বসবাস করে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। চীন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে এ শহর থেকে দেশি কিংবা বিদেশি কোনো মানুষকেই স্থান ত্যাগ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ ।সহিহ বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায় শামে মহামারি দেখা দিলে ওমর (রা.) তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (হাদিস : ৫৭২৯)।

শুধু চীন কেন আজ পৃথিবীর অনেক দেশই কোয়ারেনটিন পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এটি সরাসরি হাদিসের আমল, যা দেড় হাজার বছর আগেই ঘোষণা করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।তাই আমাদের উচিত, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা।

💻এস এম শাহনূর
(কবি ও গবেষক)

শবে বরাত কোন উৎসবের রাত নয়: এস এম শাহনূর

| ০৯ এপ্রিল ২০২০ | ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

শবে বরাত কোন উৎসবের রাত নয়: এস এম শাহনূর

“আতংকিত আদম সন্তান নিস্তব্ধ পৃথিবীতে
বছর ঘুরে ফিরে এলো সেই প্রতিশ্রুত রাত,
নিজের শাপমুক্তি দুর্ভাগাদের ভাগ্য গড়তে
জাহানে এলো আল্লাহর উপহার শবে বরাত।”

শবে বরাত কোন উৎসবের রাত নয়,এটি ইবাদত বন্দেগির রাত।কেউ কেউ বলে থাকে সহীহ হাদিস দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত না। তারা অন্য রাতের মতই মনে করেন। তবে হাদিসে এ রাতের মহিমা ও ফজিলত বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে।


শবে বরাতের নামকরণ : হাদিস শরীফে এ রাতের বিশেষ কোন নাম বর্ণিত হয়নি। বরং ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ অর্থাৎ ‘শাবানের ১৫তম রজনী’- শব্দে উল্লেখিত হয়ে এ রাতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। শবে বরাত ফারসি শব্দ, যা ‘শব’ এবং ‘বারাআত’ দুটি শব্দে মিলে গঠিত হয়েছে। শব শব্দের অর্থ হলো রাত এবং বারাআত শব্দের অর্থ হলো নাজাত, মুক্তি, রক্ষা, রেহাই ইত্যাদি। এ রাতে যেহেতু গোনাহ মাফ হয় এবং অসংখ্য অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করা হয়, সেহেতু এ রাত মুসলমানদের মাঝে ‘শবে বরাত’ বলে প্রসিদ্ধ হয়েছে।

শবে বরাত সম্পর্কিত সকল হাদিস সমূহ অধ্যয়ন করে মনে হয়েছে শবে বরাতের পক্ষে বিপক্ষে নয় আমি শবে বরাতের পক্ষে।
হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলিল

➤দলিল নং-১
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যবর্তী রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ্ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)। হজরত আওফ ইবনে মালিক (রা.) থেকে ইবনে খুজাইমা হজরত আবু বকর (রা.) থেকে এবং আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে এ রকম বর্ণনা করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজীন: ২০৪৮; সহিহ্ ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬)।

➤দলিল নং-২
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: আল্লাহ তাআলা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকি সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমদ, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৭৬)।

➤দলিল নং-৩
হজরত আবু সালাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন শাবানের মধ্যরাত আসে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদিগকে ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সুন্নাহ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।
হাদিস শরিফে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনী কালবের ভেড়া বকরির পশমের পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ: ৭৩৯)।

➤দলিল নং-৪
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন: ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন: কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছো কি? আমি রিজিক দেব; আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।

➤দলিল নং-৫
হজরত উসমান ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, এ রাতে আল্লাহ তাআলা মুশরিক ও ব্যভিচারিণী ছাড়া সবার ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন। (শুআবুল ইমান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮৩)।

আমাদের সমাজে কিছু কিছুলোক আছেন যারা বুখারী ও মুসলিমের হাদিস ছাড়া মানতে চান না। আবার কেউ কেউ আছেন সিহাসিত্তার হাদিস ছাড়া মানতে চান না। তাদেরকে বলছি- এই কিতাবের বাহিরেও বহু হাদিসের কিতাব আছে। সেগুলোও দেখতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। (আমিন)

💻এস এম শাহনূর
(কবি ও গবেষক)

হাদিস শরীফে বর্ণিত বালা মসিবত থেকে বাঁচার দোয়া সমূহ

এস এম শাহনূর প্রণীত | ৩১ মার্চ ২০২০ | ১০:৩৩ অপরাহ্ণ

হাদিস শরীফে বর্ণিত বালা মসিবত থেকে বাঁচার দোয়া সমূহ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ইসলামের অন্যান্য ফরজ গুলোও পালন করতে হবে।তবেই আল্লাহ আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন।

করোনা ভাইরাস সহ সব ধরণের জটিল ও দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ কয়েকটি দুআ:

এই সংক্রামক ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে হাদিসে বর্ণিত নিম্নোক্ত দুআগুলো পাঠ করুন:

১ নং দুআ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই, কঠিন বালা-মুসিবত, দুর্ভাগ্য ও শত্রুদের বিদ্বেষ থেকে।” (বুখারী, হাদীস নং ৬৩৪৭)

২ নং দুআ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الأَسْقَامِ “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট শ্বেত রোগ, পাগলামি ও কুষ্ঠ রোগসহ সকল জটিল রোগ থেকে আশ্রয় চাই।” (সুনানে আবু দাউদ, হা/ ১৫৫৪)

৩ নং দুআ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ “হে আল্লাহ, তোমার কাছে আমি দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করছি।”(সুনানে তিরমিযী, হা/ ৩৫১৪)

৪ নং দুআ: بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِىْ لَا يَضُرُّ مَعَ اِسْمِه شَىْءٌ فِى الْأَرْضِ وَلَا فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَيَضُرَّه شَىْءٌ ‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আইস্‌মিহী শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্‌সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন।” (তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, সহিহুল জামে, হা/ ৫৭৪৫) (এ দুআটি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করতে হবে।)

৫ নং দুআ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ “আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের ওসিলায় তাঁর নিকট আমি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।” (সাহিহ মুসলিম: ৪/২০৮১)

৬ নং দুআ: «أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ، مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ»“আমি আল্লাহর ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই, যা কোনো সৎব্যক্তি বা অসৎ ব্যক্তি অতিক্রম করতে পারে না, — আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরী করেছেন তার অনিষ্ট থেকে। আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবীতে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে, তার অনিষ্ট থেকে, দিনে রাতে সংঘটিত ফেতনার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের বেলায় হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে। তবে রাতে আগত কল্যাণকর আগমনকারী ব্যতীত, হে দয়াময়।” (হিসনুল মুসলিম : ২/১৪১)।

এছাড়া সূরা ফাতিহা, তিন কুল- যেমন সূরা নাস, সূরা ফালাক,সূরা ইখলাস পড়তে পারেন।
এছাড়াও আরও অনেক সহি দোয়া আছে আপনারা সেগুলিও আপনারা নিয়মিত পড়তে পারেন। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের মঙ্গল করুন। আমিন।

💻এস এম শাহনূর
কবি ও গবেষক

বড়দিন বা ক্রিসমাস হযরত ঈসা (আঃ)এর জন্মদিন নয়: এস এম শাহনূর

| ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

বড়দিন বা ক্রিসমাস হযরত ঈসা (আঃ)এর জন্মদিন নয়: এস এম শাহনূর

সকল প্রশংসা সমগ্র পৃথিবীর স্রষ্টা -যিনি দয়াবান, করুণাময়, সঠিক পথের পথপ্রদর্শক, যিনি বিচার দিবসের মালিক।শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত যীশু ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর; তার সঙ্গী-সাথী ও উম্মতের ওপর এবং সকল মানুষের ওপর।

আজ ২৫ শে ডিসেম্বর বা বড় দিন বা ক্রিসমাস (Christmas)
খ্রীষ্টানদের এক সম্প্রদায়ের নিকট এই দিনটি স্রষ্টার জন্ম দিন আবার অপর সম্প্রদায়ের নিকট রবের সন্তানের জন্ম দিন হিসেবে পরিচিত।এই দিনটিতে তারা বিভিন্ন রকম উপহার আদান প্রদান, আলোক সজ্জা,বিভিন্ন রকমের খাবার, বিশেষ চা পান,চার্চে গমন ইত্যাদির মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকে।
ইংরেজী Christmas শব্দটির দুটি অংশ একটি Christ অপরটি mas,
Christ এটি ঈসা (আঃ) এর একটি উপাধি, আর mas অর্থ জন্ম দিন বা জন্মোৎসব। তাহলে Christmas এর মাধ্যমে ঈসা (আঃ) এর জন্মোৎসব বোঝানো হয়ে থাকে।
অর্থগত দিক থেকে ক্রীসমাস শব্দটিই একটি শিরকী শব্দ কারণ শব্দটির অর্থ “রবের জন্মদিন বা রবের পুত্রের জন্ম দিন” নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক, মহান আল্লাহ এথেকে পুত পবিত্র। আল্লাহর বাণীঃ
ﻟَﻢْ ﻳَﻠِﺪْ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻮﻟَﺪْ
অর্থঃ“তিন কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি“ (সূরা এখলাস -৩)
অতএব একজন মুসলমানের জন্য এই কথাটি মুখে উচ্চারণ করাই হারাম।

ইংরেজি খ্রিস্টমাস (Christmas ) শব্দটি ” খ্রিস্টের মাস (উৎসব)” শব্দবন্ধটির যুগ্ম অর্থ থেকে উৎসারিত। শব্দটির বুৎপত্তি ঘটে মধ্য ইংরেজি Christemasse ও আদি ইংরেজি Cristes maesse শব্দ থেকে। শেষোক্ত শব্দটির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ১০৩৮ সালের একটি রচনায়। “Cristes” শব্দটি আবার গ্রিক Christos এবং “mæsse” শব্দটি লাতিন missa (পবিত্র উৎসব) শব্দ থেকে উদগত। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Χ (চি) হল Christ বা খ্রিষ্ট শব্দের প্রথম অক্ষর। এই অক্ষরটি লাতিন অক্ষর X -এর সমরূপ। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে তাই এই অক্ষরটি খ্রিষ্ট শব্দের নামসংক্ষেপ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়।
[২] এই কারণে খ্রিষ্টমাসের নামসংক্ষেপ হিসেবে এক্সমাস কথাটি চালু হয়।
আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে যিশু খ্রিষ্টের জন্মোৎসব উৎসবটিকে বাংলায় বড়দিন আখ্যা দেওয়ার কারণটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে: “২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশ বড়ো এবং রাত ছোটো হতে আরম্ভ করে”। [৩]

➤হযরত ঈসা আঃ এর বিভিন্ন নাম ও উপাধি
মসীহ্‌ বলতে কি বোঝায়?

প্রথমে ‘মসীহ্‌’ শব্দটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেটা আসলে কোন নাম না বরং একটা উপাধি। যেটা ইঞ্জিল, কোরআন এবং আগেকার কিতাবে পাওয়া যায়। ইঞ্জিলে অনেক জায়গায় এটা ঈসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং কোরআনে সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৪৫ এবং আন-নিসা ৪:১৭১ আয়াতে তার এই উপাধি দেখা যায়। “মসীহ্‌” শব্দের অর্থ “মনোনীত” বা “অভিষিক্ত”। আগেকার কিতাবে আল্লাহ্‌ ওয়াদা করেছিলেন যে শয়তানকে পরাজিত করার জন্য এবং শয়তানের কাজকর্ম বন্ধ করে আল্লাহ্‌র রহমত মানব জাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য একজনকে পাঠানো হবে। এই ওয়াদাকৃত ব্যক্তিকে বলা হয়েছে ‘মসীহ্‌’, বা আল্লাহ্‌ মনোনীত ব্যক্তি।

‘ঈসা’ নামের অর্থ
তার দ্বিতীয় নাম “ঈসা” তার মা এবং বিপিতা তাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আসলে সেটা তাদের পছন্দ কর নামও নয় বরং ঈসার জন্মের আগে একজন ফেরেশতা বিবি মরিয়মের কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে পাক-রূহের কুদরতীতে যে সন্তান হবে তার নাম “ঈসা” রাখা হবে। এই নাম দেওয়ার কারণ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই, কারণ ফেরেশতা এইভাবে বলেছিলেন—

“তুমি তাঁর নাম ঈসা রাখবে, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের গুনাহ্ থেকে নাজাত করবেন।” (মথি ১:২১)

আল্লাহ্‌র কালামে নবীদের নামের অর্থ খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ে আল্লাহ্‌ মানুষকে ডাক দেওয়ার সময়ে তাদের একটি নতুন নাম দিয়েছিলেন – যেমন হযরত ইবরাহিম বা হযরত ইয়াকুব। তাদের নামে তাদের ভূমিকা বা কাজ জানা যায়। যেমন ‘আদম’ মানে ‘মানুষ’, ‘ইবরাহিম’ মানে ‘অনেক জাতির পিতা’, ‘মূসা’ মানে ‘বের করে আনা’ (মিসরের গোলামি থেকে তিনি বনি-ইসরাইল বের করে এনেছিলেন), ইত্যাদি। হযরত ঈসার ক্ষেত্রে, তার নামে তার জীবনের কাজ জানা যায়, কারণ ‘ঈসা’ শব্দ হিব্রু থেকে এসেছে এবং হিব্রুতে এর অর্থ ‘নাজাত করা’ বা ‘নাজাতদাতা’। তাই ‘ঈসা’ এবং ‘মসীহ্‌’ এই দুই নাম যোগ করলে অর্থ হয় “মনোনীত নাজাতদাতা”।

আল্লাহ্‌র কালাম
উপরোক্ত দুই নাম যথেষ্ট আশ্চর্যজনক। কিন্তু ঈসার তৃতীয় নাম আরও বেশী বিস্ময়কর। সেটা “কালিমাতুল্লাহ্‌” বা “আল্লাহ্‌র বাণী”। এই ক্ষেত্রেও ইঞ্জিল এবং কোরআন উভয় কিতাবে এই উপাধি ঈসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কোরআনে সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৩৯,৪৫; সূরা নিসা ৪:১৭১, এবং সূরা মার্‌ইয়াম ১৯:৩৪ আয়াতে এই উপাধি পাওয়া যায়।

➤২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন যীশুর জন্ম তারিখ। তারিখটি শুধু খ্রিস্টান বিশ্বেই নয়, পৃথিবীর যে কোনো দেশের, যে কোনো ধর্মমতে মানুষের কাছেই যীশু খ্রিস্টের জন্মদিনের বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে আছে। কিন্তু সত্যসন্ধানী ঐতিহাসিক কিংবা গবেষকদের মধ্যে অথবা বাইবেলের নতুন নিয়মের ইতিহাসে এর কোনো সমর্থন নেই।

বড় দিনের ইতিহাস সম্বন্ধে merit students encyclopaedia (vol.4,p477-478) বলে:
“খ্রিস্টান ধর্মের প্রথম দিকে সাধুসন্ত, সহীন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তাদের জন্মবার্ষিকীর পরিবর্তে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার একটি প্রথা চালু ছিল। জন্মতিথি প্রতিপালন ছিল নীচুজাতের প্রথা। তাই প্রাথমিক যুগের খ্রিস্টান ধর্মবেত্তারা এর প্রতি চরম বিরোধিতা পোষণ করতেন। কিন্তু এরূপ বিরোধিতা সত্বেও ২০০খ্রিস্টাব্দের দিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই খ্রিস্টের জন্মদিন উদযাপন করতে শুরু করে।
যেহেতু যীশুর জন্মের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানা নেই এবং ২০০খ্রিস্টাব্দেও জানা ছিল না, তাই বিভিন্ন খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে যীশুর জন্ম উপলক্ষে ভোজের আয়োজন করতো। ৩৫০ খ্রিস্টাব্দে পোপ প্রথম জুলিয়াস ঘোষণা করলেন যে, যীশুর জন্মের আসল তারিখ হলো ২৫শে ডিসেম্বর। চতুর্থ শতাব্দীর শেষ নাগাদ পশ্চিমের প্রায় সব সম্প্রদায়ই দিনটিকে স্বীকার করে নেয়। পূর্বদেশে জেরুজালেম এবং আর্মেনিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায় তবুও যীশুর জন্মদিন হিসেবে ৬ জানুয়ারীকে উদযাপনের প্রথা চালু রাখে। বস্তুত ৬ই জানুয়ারী যীশুর অভিসিঞ্চন তিথি। আর্মেনীয় সম্প্রদায়ের কাছে আজও ঐ দিনটিই হল বড় দিন। পূর্ব দেশীয় আরও কিছু সম্প্রদায়ের মাঝে ৬ জানুয়ারী উদযাপনের প্রথা চালু আছে।

খ্রিস্টধর্মের উদ্ভবের বহু পূর্বেও ২৫শে ডিসেম্বর একটি বিশেষ ছুটির দিন ছিল। রোমানরা একে অজেয় সূর্যের জন্মদিন বলে জানতো। এই দিনে তারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দিনের আলোর জন্য ধন্যবাদ জানাত এবাং একে সূর্যের পূনর্জন্ম বলে চিহ্নিত করত। অজেয় সূর্যের জন্মদিনের এই উৎসবটি রোমানদের শীতকালীন মহান উৎসব স্যাটারনালিয়ার অন্তুর্ভূক্ত ছিল। এটি ছিল আদি খ্রিস্টানদের প্রধান শত্র“-মিত্ররা ধর্মের অনুসারীদের বিশিষ্ট ভোজন উৎসবের দিন।

গোড়ার দিকের খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলো স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ২৫শে ডিসেম্বরকে সম্ভাব্য দিন বলে গ্রহণ করে এই জন্য যে, এতে খ্রিস্টানদের উৎসবকে বর্বরদের উৎসবের স্থলাভিষিক্ত করা যাবে এবং নীচুজাতের বিধর্মীদের দেবতাদের স্থলে পূজোর ধারাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন না করেও যীশুকে স্থাপন করা যাবে।

আধুনিক ইউরোপে টিউটোনিক গোত্রের লোকেরাও ডিসেম্বরের শেষে শীতের উৎসব পালন করে। পরবর্তীতে ঐ গোত্র খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পরে তাদের অনেকগুলো আচার-পদ্ধতি খ্রিস্টানদের উৎসববের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। ”

Merit students Encyclopaedia Gi gZ the Macmillan family Encyclopaedia (vol.4,p415)

খ্রিস্টমাস সম্বদ্ধে বলেন:
“যীশুর জন্মবৃত্তান্তের প্রতি আস্থাবান থাকা সত্বেও চতুর্থ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা এই ঘটনাকে উৎসবের মাধ্যমে উদযাপন করতো না। সম্্রাট আরেলিনের আমলে ২৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে নীচুজাতের লোকদের শীতকালীন অয়নান্ত উৎসবের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানের জন্য ঐ দিনটিকে নির্ধারিত করা হয়। রোমানরা ‘অজেয় সূর্যের দিন’ হিসাবে ২৫শে ডিসেম্বরকে উদযাপন করতো এবং ভোজের আয়োজন করতো পূর্বদেশীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মাঝে ৬ই জানুয়ারী দিনটিকে অয়নান্ত দিন হিসেবে ধরা হতো এবং উৎসবের জন্য প্রাথমিকভাবে ভাল মনে করা হতো। যাহোক, কালক্রমে পশ্চিমারা পূর্বদেশীয়দের ঐ দিনটিকে ‘প্রাচ্যদেশীয় জ্ঞানীদের আগমনের দিন’ হিসেবে ধরে নেয় এবং ভোজের আয়োজন করে উদযাপন করে আর পূবদেশীয়রা পশ্চিমাদের বড়দিনকে উদযাপন করতে শুরু করে। এভাবে পশ্চিমারা বড়দিনের উৎসবকে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়ে ২৫শে ডিসেম্বর (যীশুর জন্ম এবং মেষপালকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন) এবং ৬ই জানুয়ারী (প্রাচ্যদেশীয় জ্ঞানীদের প্রতি সম্মান উদযাপন করে।

মধ্যযুগে এসে ইউরোপে শীতকালীন অয়নান্ত উৎসব খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উৎসবগুলোর মাঝে চিরস্থায়ী আসন লাভ করে। ইংল্যাণ্ড এবং নিউ ইংল্যাণ্ডের পিউরিটানরা বড়দিন উদযাপন প্রথার বিলোপ সাধনের চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা গণসমর্থন না পাওয়ায় বড়দিনের উৎসব টিকে যায়, আর শিল্প-বিপ্লবের সময় থেকে এর ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে বড় দিনের উৎসবটি সত্যিকার বড়দিন থেকে পিছিয়ে নিয়ে যায়। চিরাচরিত খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে খ্রিস্টের আবির্ভাব-পূর্ব বড় দিন আসলে বার দিন ধরে (২৫শে ডিসেম্বর থেকে ৬ই জানুয়ারী পর্যন্ত) উৎসব পালনের পথ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করে। ”

যীশুর জন্ম সম্বন্ধে বাইবেলের নতুন নিয়েমে (লুক লিখিত সুসমাচারে ) বর্ণিত হয়েছে যে “যীশু যেদিন ভুমিষ্ঠ হন, সেদিন ঐ অঞ্চলে (বেৎলেহেমে )মেষ পালকেরা মাঠে অবস্থান করছিল এবং নিজ-নিজ মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল” (২:৮)। কিন্তু বেৎলেহেম নগর যে রাজ্যের অন্তর্গত সেই শুষ্ক মরুময় জুডিয়া রাজ্যে ডিসেম্বর মাসের প্রচণ্ড শীতের রাতে রাখালদের পক্ষে মেষপালা পাহারা দেওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। কারণ তখন তাপমাত্রা এত নীচে নেমে যায় যে বরফ না পড়ে পারে না। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ঐ অঞ্চলে গরমের মৌসুমেই রাতের বেলায় মেষ চরানো হয়ে থাকে। কারণ, দিনের বেলায় প্রচণ্ড রৌদ্র উত্তপ্ত মরুভূমিতে মেষ চরানো কখনও সম্ভব নয়।

উপরোল্লেখিত লুকের বর্ণনার উপর আলোচনা করতে গিয়ে বিশপ বার্ণস তার Rise of Christianity’ পুস্তকের ৭৯ পৃষ্ঠায় বলেন:…অর্থ, “এমন কোনো সূত্র নেই যার মাধ্যমে ২৫শে ডিসেম্বরকে যীশুর আসল জন্মদিন বলে বিশ্বাস করা যায়। যদি আমরা লূক বর্ণিত জন্ম বৃত্তান্তের প্রতি কোনোরূপ বিশ্বাস স্থাপন করি এবং সেই সূত্রে রাতের বেলায় বেৎলেহেমের নিকট মাঠে মেষপালকদের মেষচারণের কথাকে বিশ্বাস করি, তাহলে অবশ্যই শীতকালে যীশুর জন্ম হয় নি, কারণ পার্বত্য এলাকা জুডিয়ায় রাতের বেলায় তাপমাত্রা এত নিচে নেমে যায় যে, তখন বরফ না পড়ে পারে না। এখানে বিশপ বার্ণস লূকের বর্ণনানুসারে যীশুর জন্ম ২৫শে ডিেিসম্বর তথা শীতকালে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ লুকের বর্ণনায় আছে যে, যীশুর জন্মকালে মেষপালকেরা রাতের বেলায় তাদের মেষপাল চরাচ্ছিল। কিন্তু জেরুজালেমের পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে রাতের বেলায় এমন শীত নামে যে তখন বরফ পড়ে থাকে এবং বরফ পড়া ওই শীতের রাতে রাখালদের পক্ষে মেষ চরানো কোনোমতেই সম্ভব নয়। এই অভিমত শুধু সাধারণ মানুষদের দ্বারাই নয়, বিশ্বাবিখ্যাত এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকা এবং চেম্নারস এসাইক্লোপিডিয়া’র খ্রিস্টমাস শীষক প্রবন্ধ লেখকদের দ্বারাও সমর্থিত।

যীশুর জন্ম তারিখ সম্বন্ধে ব্রিটেনিকা বিশ্বকোষ বলে. … অর্থ, খ্রিস্টের জন্মদিন ও বছর সন্তোষজনকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি; কিন্তু গীর্জাধিকাররা ৩৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন এই ঘটনার স্মৃতি-তর্পন উদযাপনের স্থির করলেন তখন তারা অতি বিজ্ঞানোচিতভাবে মকরক্রান্তিতে সূর্যের অবস্থান দিনকে নির্ধারণ করে ছিলেন যে, দিনটি তাদের অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ আনন্দোৎসবের দিন হিসেবে জনসাধারণের মাধ্যে পুর্বাহ্নে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। মানব প্রণীত পঞ্জিকার পরিবর্তনের কারণে নক্ষত্র থেকে সূর্যের দূরতম স্থানে অপস্থঅনকালে এবং খ্রিস্টমাসের মধ্যে অল্প কদিনের তফাত হয়।

(Encyclopaedia 15th edition,vol.5.p.p-642&642A)

চেম্বার্স এনসাইক্লোপিডিয়া বলে, ……অর্থ. দ্বিতীয় স্থানে মকর-ক্রান্তি সূর্যেও জন্মদিন হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল এবং রোমে ২৪শে ডিসেম্বর সূর্যদেবের জন্মতিথি উপলক্ষে পৌত্তলিক উৎসব পালিত হয়। (খ্রিস্টান ) চার্চ এই জনপ্রিয় প্রচলিত আনন্দোৎসবকে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে এক আধ্যাত্মিকতার অভিষেক দিয়ে ন্যায়পরায়ণ সূর্যদেবের উৎসব হিসেবে পালন করতে শুরু করে।
১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে বড় দিন সংখ্যা ‘নবযুগ’ পত্রিকায় ঢাকার বিশপ জমস লিখেন, চতুর্থ শতাব্দীর আগে ২৫শে ডিসেম্বর প্রভুর জন্মদিন বলে উল্লেখিত হয়নি। … তবে ২৫শে ডিসেম্বার কেন ধার্য করা হলো তা আমরা কেবল অনুমান করতে পারি। আমাদের পূর্বের তারিখগুলো আসল তারিখ নয় পুনরুত্থান দিন নিস্তার পর্বের তারিখের সাতে মিলে না। ”
(যীশু খ্রিস্টের অজানা জীবন-৩৫-৩৮)
মোটকথা কোনোভাবেই প্রমাণ করা যায় না যে ২৫শে ডিসেম্বর যীশু জন্ম দিন। আসুন আমরা জন্ম দিন ছেড়ে যীশুর শিক্ষার উপর আমল করি।
বাইবেলে এমন কোনো বাক্য নেই যেখানে আপনি পাবেন যে,২৫ ডিসেম্বর যিশু খৃষ্টের জন্ম হয়েছে।”ক্রিসমাস” বা “সান্তা” সম্পর্কে এমনকিছু বাইবেলের কোথাও কোনো আয়াত নেই।বাইবেলে এমন কোনো আয়াত নেই যেখানে লেখা আছে ঈসা মসিহ হলেন ঈশ্বর।
ঈশ্বরের খাওয়াদাওয়ার প্রয়োজন হয়না,যিশু খাওয়াদাওয়া করেছে।ঈশ্বরের ঘুমানোর প্রয়োজন নেই,যিশু ঘুমিয়েছে।ঈশ্বরের ইবাদতের প্রয়োজন নেই,যিশু ইবাদত করতেন।ঈশ্বর ইবাদত থেকে স্বাধীন কিন্তু যিশু ইবাদত করতেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে!স্বয়ং ঈশ্বর কিভাবে নিজেই নিজের ইবাদত করতেন!
যিশু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ইবাদত করতেন,মুসলমানরাও তা-ই করে।যিশু রোযা রাখতেন,মুসলমানরাও তা-ই করে।যিশু দাড়ি রাখতেন,মুসলিমরাও দাড়ি রাখে।যিশুর মাতা যাকে খৃষ্টানরা মাতা মেরি বলে মুসলমানরা তাকেও সম্মান করে এবং মরিয়ম তিনিও মুসলমান নারীদের ন্যায় মাথা ঢেকে রাখতেন,ঢোলাঢালা পোশাক পড়তেন।অপরদিকে তথাকথিত খৃষ্টানরা যিশুর কোনো কিছুকেই অনুসরন করেনা!
আমরা মুসলিমরা প্রত্যেক খৃষ্টান ভাইকে ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে আমন্ত্রন জানাচ্ছি।ইসলাম অন্যকোনো ধর্ম নয়,বরং আপনার আমার প্রভুর মনোনীত একমাত্র গ্রহনযোগ্য ধর্ম।ইসলাম আপনাকে সেই একই বার্তা পৌছায় যা পৌঁছেছেন মুসা (আঃ),যিশু/ঈসা (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ)।ইসলামের আক্ষরিক অর্থ হলো ‘ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পন করে দেওয়া’ এবং এটি আমাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সরাসরি সম্পর্ক বজায় রাখতে শেখায়। এটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন, কেবলমাত্র ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা উচিত নয়। এটি এমন একটি শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বর মানুষের মতো নয় অথবা এমন কিছু যা আমরা কল্পনা করতে পারি।
আল্লাহর ধারণাটি কুরআনে যেমন সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে: বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক। আল্লাহ, পরম নির্ভরস্থল।তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই। {সূরা ইখলাস: ১-৪}

আর স্মরন করো! মরিয়ম্পুত্র ঈসা বলেছিলেন,-হে ইসরাঈলের বংশধরগণ! আমি নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল,আমার সম্পর্কে তাওরাতে যা রয়েছে আমি তার সমর্থনকারী,আর সুসংবাদ দাতা এমন এক রাসূল সম্পর্কে যিনি আমার পরে আসবেন ,তার নাম আহমদ।তারপর যখন তিনি তাদের কাছে এলেন স্পষ্ট প্রমানাবলীসহ,তারা বললো- এ তো স্পষ্ট জাদু!
আর তার চাইতে কে বেশি অন্যায়কারী যে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করে,অথচ তাকে আহ্বান করা হচ্ছে ইসলামের দিকে?আর আল্লাহ অন্যাকারী জাতিকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।{সূরা আস সাফঃ ৬-৭}

➤ঈসা (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ :
(১) তিনি ছিলেন বিনা বাপে পয়দা বিশ্বের একমাত্র নবী (আলে ইমরান ৩/৪৬ প্রভৃতি)।
(২) আল্লাহ স্বয়ং যার নাম রাখেন মসীহ ঈসা রূপে (আলে ইমরান ৩/৪৫)।
(৩) তিনি শয়তানের অনিষ্টকারিতা হ’তে মুক্ত ছিলেন (ঐ, ৩/৩৬-৩৭)।
(৪) দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি ছিলেন মহা সম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর একান্ত প্রিয়জনদের অন্যতম (আলে ইমরান ৩/৪৫)।
(৫) তিনি মাতৃক্রোড়ে থেকেই সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন (মারিয়াম ১৯/২৭-৩৩; আলে ইমরান ৩/৪৬)।
(৬) তিনি বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন (আলে ইমরান ৩/৪৯) এবং শেষনবী ‘আহমাদ’-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন (ছফ ৬১/৬)।
(৭) তাঁর মো‘জেযা সমূহের মধ্যে ছিল- (ক) তিনি মাটির তৈরী পাখিতে ফুঁক দিলেই তা জীবন্ত হয়ে উড়ে যেত (খ) তিনি জন্মান্ধকে চক্ষুষ্মান ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে পারতেন (গ) তিনি মৃতকে জীবিত করতে পারতেন (ঘ) তিনি বলে দিতে পারতেন মানুষ বাড়ী থেকে যা খেয়ে আসে এবং যা সে ঘরে সঞ্চিত রেখে আসে (আলে ইমরান ৩/৪৯; মায়েদাহ ৫/১১০)।
(৮) তিনি আল্লাহর কিতাব ইনজীল প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। তবে তওরাতে হারামকৃত অনেক বিষয়কে তিনি হালাল করেন (আলে ইমরান ৩/৫০)।
(৯) তিনি ইহুদী চক্রান্তের শিকার হয়ে সরকারী নির্যাতনের সম্মুখীন হন। ফলে আল্লাহ তাঁকে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন (আলে ইমরান ৩/৫২, ৫৪-৫৫; নিসা ৪/১৫৮)। শত্রুরা তাঁরই মত আরেকজনকে সন্দেহ বশে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে এবং তারা নিশ্চিতভাবেই ঈসাকে হত্যা করেনি’ (নিসা ৪/১৫৭)। (১০) তিনিই একমাত্র নবী, যাকে আল্লাহ জীবিত অবস্থায় দুনিয়া থেকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে তিনি পুনরায় সশরীরে দুনিয়াতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জাল, ক্রুশ, শূকর প্রভৃতি ধ্বংস করবেন। অতঃপর ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী শান্তির রাজ্য কায়েম করবেন।

➤তথ্যসূত্রঃ
১. ↑পবিত্র কোরআন
২. ↑ Oxford English Dictionary
৩. ↑ আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, ২০০৯, পৃ. ৫৬৪
৪. ↑ উইকিপিডিয়া

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

আগামীকাল বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহ. এর ওফাত দিবস

সংকলক ও লেখক: এস এম শাহনূর | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১:০৬ অপরাহ্ণ

আগামীকাল বড় পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহ. এর ওফাত দিবস

আগামীকাল ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ রোজ সোমবার বাংলাদেশ সহ মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই পালিত হবে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম।ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম হলো বড় পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানী রহ. এর ওফাত দিবস। হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউস সানি তিনি ইন্তিকাল করেন।

‘ইয়াজদাহম’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ এগারো। ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম বলতে এগারো তম দিনকে বোঝায়। এই ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম আবদুল কাদের জিলানী রহ: এর স্মরণে পালিত হয়।

ফাতেহার অর্থ মহান ওলী আউলিয়া তথা মনীষীগণের জন্য দোয়া। এদিন ওলীকুল শিরমণি তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ, দার্শনিক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, সুবক্তা, কাদেরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাত গাউসুল আজম হযরত শেখ মুহিউদ্দীন বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) ইন্তেকালবার্ষিকী। এইদিনে বিশ্বের সকল সূফীমতবাদে বিশ্বাসী মুসলমানদের নয়নমণি; কাদেরিয়া তরিকার অনুসারীদের মুকুটমণি, বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) তাঁর অগণিত ভক্তকুলকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ৫৬১ হিজরি পরম প্রভু পরওয়ার দেগারের সান্নিধ্যে চলে যান। দিবসটি সেই কারণে বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত।এ দিবসটি সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে এ উপমহাদেশের মুসলিমদের কাছে অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহর রাসূলের (সা.) পর্দা করার পর সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনে ইমামদের সোনালী যুগে কোরআন-হাদিসের আলোকে দুনিয়া ছিল ঝলমল। পরবর্তীতে ভোগবাদী স্বার্থাম্বেষী ও বিজাতীয় ষড়যন্ত্রের ফলে উম্মতের ঐক্য নষ্ট হয়ে বিভিন্ন ফেরকার সৃষ্টি হয়। যার ফলে মুসলমানদের বিজয়ের ধারা মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু মহান ওলীগণ জিহাদের ময়দান থেকে সামান্য সময়ের জন্যও পিছু হটেননি। তাঁরা শরিয়ত, তরিকত, হাক্কিকত ও মারিফাতের ঝান্ডা নিয়ে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছুটে চলতে শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন লাখ লাখ দ্বীনি মারকাজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও খানকা। এরূপ প্রতিটি খানকাই ছিল তৎকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। অপরদিকে ছিল শাসনকার্যের দফতর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্বরূপ। এসব খানকা থেকেই এলমি রুহানি যোগ্যতা নিয়ে বের হয়েছিলেন হাজার হাজার মর্ধে মুজাহিদ। যারা ঘর ছেড়ে দুনিয়ার আনাচে-কানাচে দ্বীনের প্রচার প্রসারে বের হয়ে কাজ সম্পন্ন করে ইন্তেকাল করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছিলেন হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)। বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) সাপ্তাহিক মাহফিলে তৎকালীন জামানায় ৬০-৭০ হাজার মানুষ হাজির থাকতেন। তার কণ্ঠের আওয়াজ এবং আহ্বান শুনে অনেকেই আর ঘরে ফেরেননি, ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্বের সর্বত্র। কোটি কোটি মানুষ তার নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন। পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের ওলীগণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বেশির ভাগই কাদেরিয়া, চিশতিয়া তরিকার শায়খ বা পীর। এ মহান ব্যক্তির ৫৪ জন সন্তানের পরবর্তী বংশধরগণ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখে গেছেন।

হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ৪৭০ হিজরিতে ইরাকের জিলান নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সায়্যেদ আবু সালেহ (রহ.) একজন বিখ্যাত বুজুর্গ ছিলেন। মাতা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রহ.) একজন বিদুষী রমণী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মায়ের কাছে পবিত্র কোরআনের আঠারো পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেন। অল্প বয়সেই সমস্ত কুরআন মুখস্থ করতে সক্ষম হন। পিতার নিকট সূফীবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। পিতার মৃত্যুর পর ১৮ বছর বয়সে তৎকালীন মুসলিম দর্শনের বিদ্যাপীঠ মাদরাসায়ে নিজামিয়াতে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ২৪ হতে ৯১ বছর অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত অবিরাম ইসলাম প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি কাদেরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ধর্মীয় সভা-সমাবেশে মানুষের আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নতির জন্য উপদেশ দান করেছেন। অনেক মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: গুনিয়াতুত ত্বলেবীন, সিররুল আসরার, আল ফাতহুর রব্বানী, ফাতহুল গুয়ুব এবং আল-কাসিদা নামে একটি কাব্যগ্রন্থ। এই সমস্ত গ্রন্থ পৃথিবীর ২৩টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমে আমরা এই মহান সাধকের জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত কামনা করছি।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

পবিত্র হাদিসে পেঁয়াজ খেতে নিরুৎসাহিত করেছেন

সংকলক ও লেখক: এস এম শাহনূর | ২১ নভেম্বর ২০১৯ | ১:৩০ অপরাহ্ণ

পবিত্র হাদিসে পেঁয়াজ খেতে নিরুৎসাহিত করেছেন

পেঁয়াজে ভাল কিছু নাই,বেশী করে সবজী খাই
অভ্যাস মানুষের দাস,মন বলে এত কেন খাস?

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ–

‘হে বনু আদম! তোমরা প্রতি ছালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে ধারণ কর’ (আ‘রাফ ৩১)। অর্থাৎ তোমরা পোশাক পরিধান কর ও শালীন পরিবেশ বজায় রাখ। কিন্তু দুর্গন্ধ পরিবেশকে কলুষিত করে তোলে।

হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ أَكَلَ ثُومًا أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلْنَا، أَوْ قَالَ: فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا ، وَلْيَقْعُدْ فِى بَيْتِهِ–

‘যে ব্যক্তি রসুন কিংবা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং নিজ বাড়ীতে বসে থাকে’।[1]

মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে, مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ، فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا فَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ ‘যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন ও কুর্রাছ[2] খাবে, সে যেন কখনই আমাদের মসজিদ পানে না আসে। কেননা বনী আদম যাতে কষ্ট পায় ফিরিশতারাও তাতে কষ্ট পায়’।[3]

হযরত ওমর (রাঃ) একদা জুম‘আর খুৎবায় বলেছিলেন, হে লোক সকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাক। আমি ঐ দু’টিকে কদর্য ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। সে দু’টি হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, إِذَا وَجَدَ رِيحَهُمَا مِنَ الرَّجُلِ فِى الْمَسْجِدِ أَمَرَ بِهِ فَأُخْرِجَ إِلَى الْبَقِيعِ ‘কারো মুখ থেকে তিনি এ দু’টির গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। ফলে তাকে বাক্বী গোরস্থানের দিকে বের করে দেওয়া হ’ত। সুতরাং কাউকে তা খেতে হলে সে যেন পাকিয়ে খায়’।[4]

উপরোক্ত হাদিস সমূহের মর্মবাণী অনুধাবন করতে পারলে পেঁয়াজের সৌন্দর্য আমাদেরকে বিমোহিত করবে না,পেঁয়াজের ঝাঁঝে দু’চোঁখ ঝাপসা হবে না ইনশাআল্লাহ।

➤পাদটীকাঃ
[1]. বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪১৭৯।

[2]. কুর্রাছ এক প্রকার গন্ধযুক্ত সব্জি। এর কতক পেঁয়াজ ও কতক রসুনের মত দেখায়। উর্দূতে একে ‘গন্দনা’ বলে-অনুবাদক।

[3]. মুসলিম হা/৫৬৪।

[4]. মুসলিম হা/৫৬৭।

 

💻এস এম শাহনূর

(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

প্রসঙ্গ: ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)

সংকলক: এস এম শাহনূর | ১০ নভেম্বর ২০১৯ | ৪:৫৬ অপরাহ্ণ

প্রসঙ্গ: ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)

হাবীবে খোদা রাহমাতুলল্লিল আলামীন হুজুর আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হচ্ছেন সর্বযুগের সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। আল্লাহ পাক তাঁকে “সিরাজাম-মুনিরা”বা উজ্জ্বল প্রদীপরূপে প্রেরণ করতঃ’ওয়া রাফানা লাকা যিকরাকা'(আমি আপনার স্তুতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি) এর সুমহান তাজ পরিধান করিয়েছেন।তাই কারো পক্ষেই নবীজির সামান্যতম শানও বর্ননা করা সম্ভব নয়।বস্ততঃস্বয়ং আল্লাহ তাঅালা প্রতিনিয়তই তাঁর মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত পাঠ করছেন।

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। [ সুরা আহযাব ৩৩:৫৬ ]
জ্বিন ইনসান ফেরেশতা তথা গোটা সৃষ্টিই তাঁর উপর দরূদ পেশ করছে অহরহ, সর্বত্রই তাঁর স্তুতি-তাঁর গীত।কুরআনুল কারীমের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি হরফ আল্লাহর পিয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর মহান শানের জীবন্ত দলিল।আর তাই তো মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদি আল্লাহু অানহা ইরশাদ করেছেন,”কুরঅানই আল্লাহর নবীর চরিত্র”।মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এবং এ সুবিশাল মর্যাদার বিস্তৃতি ও ব্যাপকতার অনুভূতি যারা স্বীয় আকিদা এর বিশ্বাসে গেঁথে নিতে পারেনি,তারা ঈমান এবং ইসলামের মজা পায়নি।পেতে পারেনা।এরা ঈমানের ক্ষেত্রে এতই বিপর্যস্ত যে,অনেক সময় তারা নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কে সাধারন মানুষের কাতারে এনে অবমূল্যায়ন করতেও দ্বিধাবোধ করেনা।অথচ হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু অালাইহে ওয়াসাল্লাম এর খাটি মুহাব্বত ও তাঁর মহান শানের উপলব্দিই হচ্ছে ঈমানের মূল কথা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,”আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতি রহমত রূপে প্রেরন করেছি।”(পারা-১৭,সুরা আম্বিয়া,রুকু-৭)নবীগণ,রাসূলগণ ফেরেশতা এবং মুকাররাবিন প্রত্যেকেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হতে রহমত প্রাপ্ত হয়েছেন। কাফিররাও সর্বোতভাবে তাঁর থেকে রহমত পেয়েছে।কিয়ামতে হাশরের ময়দানে হিসাব নিকাশ শুরু করা এবং নাজাত দেয়াও নবীজির ওসীলাতেই হবে।হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর আগমনে আনন্দ প্রকাশের কারণেই আবু লাহাবের জন্য সোমবার দিন আযাব সহজ করে দেয়া হয়েছে।নবীজির বরকতেই আবু তালিবের উপর আযাব কমিয়ে দেয়া হয়েছে।(হাদীস) এই নশ্বর জগতে তিনি রহমত।কিয়ামতে,মিযানে,হাউজে কাউছার,জান্নাতে,গুনাহগার উম্মতের জন্য জাহান্নামে বস্ততঃ সর্বত্রই তাঁর রহমত ব্যাপৃত।
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণেের জন্য যুগে যুগে সমস্ত নবী ও রাসূলগণ প্রার্থনা করেছেন।তাঁর ওসীলায় আদম আলাইহিস সালাম এর তওবা গৃহীত হয়।যাঁর আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য এবং খোদা প্রাপ্তির পূর্বশর্ত বলে বিবেচিত হয়।যাঁকে আল্লাহ পাক সতর্ককারী ও সুসংবাদ দাতা রূপে প্রেরণ করেছেন।যাঁর আগমনে তামাম মাখলুক আনন্দে মাতোয়ারা সেই নবীজির উম্মত হয়ে আমরা কেন আনন্দিত হবোনা।আমরা কেন খুশি প্রকাশ করবোনা।তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত।তাই অবশ্যই ইসলামী নিয়ম নীতির মধ্যে থেকে আমাদের কে তা উদযাপন করতে হবে।

➤ঈদ ও মীলাদ শব্দের অর্থ আসলে কি?
• “ ঈদ বলা হয় কোন দুশ্চিন্তা বা কোন রোগ অথবা কোন আকাংখা বা এ ধরনের অন্যান্য বিষয়, যা বারবার ফিরে আসে এবং এমন প্রত্যেক দিনকে ঈদের দিন বলা হয়, যে দিন কোন সম্মানিত অথবা প্রিয়তম ব্যাক্তির স্মরণে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।”
((আরবী অভিধানের অন্যতম কিতাব “আল মুজামুল ওয়াসিত” এর ৬৩৫ পৃষ্ঠা )) ।



• “ ঈদ বলতে এমন প্রত্যেক দিনকে বুঝায়, যে দিনে সম্মেলন হয় অথবা সম্মানিত মহান ব্যাক্তির স্মরণে অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনার স্মরণে কোন অনুষ্ঠান হয়।”
(( “আল মুনজিদ”এর ৫৩৬ পৃষ্ঠায় ))।



• আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী (রহ.) তাঁর ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থের ৩৫২ নং পৃষ্ঠায় লিখেন,- “ঐ দিন (ঈদের দিন) হল খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ-উতসব করার দিন। সুতরাং ঈদ শব্দটি এমন প্রত্যেক দিনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে যে দিন কোন আনন্দ-উতসব করা হয়। এ দিকে ইশারা করেই আল্লাহ্‌ তা’আলার এ বানী, যা হযরত ঈসা (আলায়হিস সালাম) বলেছেন, “হে আল্লাহ্‌! আমাদের উপর আকাশ থেকে একটি খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাজিল করুন।তা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্য ঈদ হিসেবে গণ্য হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন।” (সূরা মায়েদাঃ১১৪)
উল্লেখ্য যে, পবিত্র আল কোরআনে এই একটি মাত্র আয়াতে ‘ঈদ’এর কথা বলা হয়েছে।



• “ ঈদ হল মুসলমানদের আনন্দের দিন, খুশির দিন, খুশির কোন অনুষ্ঠান ও খুবী আনন্দিত হওয়া।” ((“ফিরুজুল লুগাত” এর ১২৭ নং পৃষ্ঠায় ))।



• “ ঈদ এমন প্রত্যেক দিনকে বলা হয়, যে দিন কোন সম্মানিত মহান ব্যাক্তির অথবা কোন গুরুত্বপূর্ণ বড় ঘটনা স্মরণে কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়।” ((“মেসবাহুল লুগাত” ৫৮৩ পৃষ্ঠায় )) ।

মীলাদ শব্দের অর্থ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীন,খাতামুন্নব্যিয়িন,নূরে মোজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত করা ও তাঁর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ
করা। অতএব, তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ সবারই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুগণের যামানাতেই ছিল।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা তাঁর নিজ গৃহে
সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত(জন্ম) শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে
শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করেছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাছবীহ তাহলীল পাঠ
করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর উপর (ছলাত- সালাম) দুরূদ
শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তথায় উউপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন, সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে অর্থাৎ
ক্বিয়াম শরীফ করে ছলাত ও সালাম পেশ
করতঃ আসনে বসালেন) তিনি লোকজনের
মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে
তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত
ওয়াজিব। (সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদে মোস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও
মীলাদে আহমদী, পৃষ্ঠা ৩৫৫)
আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবূ আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয়- স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত(জন্ম) শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন
এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন।
(তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে কিয়াম শরীফ করে
ছলাত ও সালাম পেশ করতঃ আসনে বসালেন।)তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ
তায়ালা তাঁর রহমতের দরজা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফিরিস্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের মত এরূপ
করবেন। তোমার মত সেও নাজাত ও ফযীলত লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর
ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযির,
ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মোস্তফা
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মিলাদ-ক্বিয়ামের অসংখ্য দলিলের
মধ্যে সামান্য কিছু
নিম্নরূপ :
আল্লাহপাক বলেন ” নিশ্চয় আমি এবং
আমার ফেরেশতাগন আমার হাবিবের প্রতি দরুদ পেশ করে থাকি, সুতরাং মু’মিনগন তোমরাও বেশি করে তাঁর ওপরে দরুদ শরীফ পেশ করো ও আদবের সাথে( বার বার ) তাঁকে সালাম দাও।”( সূরা আহযাব-৫৬,) প্রকাশ থাকে যে মহান আল্লাহপাকের হুকুম মানা ফরজ বলেই পবিত্র কুরআন
শরীফে ” তোমরা ঈমান আনয়ন করো,নামাজ আদায় করো, যাকাত দাও, রোযা রাখ, সামর্থ থাকলে হজ্জ আদায়
করো ” ইত্যাদি হুকুমের কারনে উল্লেখিত বিষয়গুলো মুসলিমদের জন্য পালন করা যদি ফরজ হয়ে থাকে তাহলে সেই আল্লাহপাকেরই হুকুম ” হে ঈমানদারগন তোমরা আমার নবীর ওপরে ( বেশি করে )দরুদ শরীফ পেশ করো এবং আদবের সাথে
তাঁকে (বার বার) সালাম দাও।” (সূরা আহযাব ৫৬)। এই হুকুম পালন করাও মুমিনদের
জন্য কি হবে? বিবেক সম্পন্ন পাঠক গণ চিন্তা করুন।আসুন এই দিনে এবং সদা সর্বদা বেশী বেশী আল্লাহর জিকির ও দয়াল নবীজির প্রতি দরূদ পাঠ করি।
আমীন। আমীন।আমীন।

“সুবেহসাদেক বলছে কিরে?
সেই দিন আর নেইতো দূরে

ঈদে মিলাদুন্নবী(সাঃ) উদযাপিত হবে ঘরে ঘরে।।
মুল্ল্যা মৌলানাদের মাঝে রইবেনা গো আড়াআড়ি
ধরবে সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের গাড়ি।।”
“”””””””””’”””””””””””””””””””””””””””””””

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

মুসলিম জীবনে আখেরী চাহার শোম্বা’র গুরুত্ব: এস এম শাহনূর

| ২৩ অক্টোবর ২০১৯ | ৩:২১ অপরাহ্ণ

মুসলিম জীবনে আখেরী চাহার শোম্বা’র গুরুত্ব: এস এম শাহনূর

আখেরী চাহার শোম্বা হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পালিত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি স্মারক দিবস।আখেরী চাহার শোম্বা একটি আরবী ওফার্সি শব্দ-যুগল; এর আরবী অংশ আখেরী , যার অর্থ “শেষ” এবং ফার্সি অংশ চাহার শোম্বা , যার অর্থ “চতুর্থ বুধবার”। অর্থাৎ ছফর মাসের শেষ বুধবার। ইরান, ইরাক, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এটি দিবস হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। এর ভিত্তি হ’ল- মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে বুধবার রাসূল (ছাঃ)-এর দেহের উত্তাপ ও মাথাব্যথা খুব বৃদ্ধি পায়। তাতে তিনি বারবার বেহুঁশ হয়ে পড়তে থাকেন। অতঃপর তাঁর মাথার উপরে পানি ঢালা হ’লে তিনি একটু হালকা বোধ করলে মসজিদে গিয়ে যোহরের ছালাত আদায় করেন এবং মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন’ (বুখারী হা/৪৪৪২; ইবনু হিশাম ২/৬৪৯)। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত দিবস ঘটা করে পালন করা হয় এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়।

অন্যান্য বর্ণনায় বলা হয়, এই দিনে ভোর বেলায় উম্মুল মোমেনীন বিবি আয়শা সিদ্দীকা (রা.)-কে ডেকে বলেন, ‘বিবি আমার কাছে আসেন।’ তিনি দৌড়ে এসে বলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আমি হাজির আছি।’ মুহাম্মদ (সা.) বললেন, ‘হে আয়েশা সিদ্দিকা আমার মাথাব্যথা যেন দূর হয়ে গেছে শরীর হালকা মনে হচ্ছে। আমি আজকে সুস্থ্য বোধ করছি।’


বিবি আয়েশা (রা.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন ও হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে গোসল করিয়ে দেন। গোসলের ফলে হুজুর পাক (সা.)-র শরীর হতে বহুদিনের রোগজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ অনেকটা দূর হয়। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন ঘরে কোন খাবার আছে কিনা? তিনি জানান ঘরে রুটি বানানো আছে। রাসুল (সা.) বললেন, ‘এগুলো নিয়ে এসো এবং মা ফাতেমা (রা.)-কে খবর দাও যে, দুইপুত্র হাসান ও হোসেন (রা.)-কে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার কাছে যেন চলে আসে।’

বিবি আয়েশা (রা.) মা ফাতেমা (রা.)-কে খবর দিলেন। বিবি ফাতেমা (রা.) আসার পর মহানবী (স.) মেয়েকে আদর করলেন এবং নাতি দুই জনের কপালে চুমু খেয়ে তাদের নিয়ে খেতে বসলেন। খবর শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্যান্য বিবি ও ঘনিষ্ট সাহাবারা হাজির হন। তখন তিনি সকলের উদ্দেশ্য আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার প্রিয় সাহাবী ও প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ আমার মৃত্যুর পর, আমার বিয়োগে, তোমাদের অবস্থা কী রূপ হবে?’ এই কথা শোনার পর সাহাবাগণ ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে থাকেন। হুজুর পাক (সা.) সবাইকে বলেন, ‘সকলের আগে আল্লাহর দরবারে আমাকে যেতে হবে।‘

তারপর তিনি মসজিদে নববীতে গেলেন। হযরত (সা.)-র শরীরের উন্নতি দেখে সাহাবাগণ অতিশয় আনন্দিত হলেন। অনেকদিন পর তিনি সে দিন শেষবারের মতো মসজিদে নববীতে ইমামতি করেন। বলা হয়ে থাকে, আনন্দে সাহাবাগণ নিজ, নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান খয়রাত করতে থাকেন। অনেক বর্ণনায় বলা হয়, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ৭ হাজার দিনার, হযরত ওমর ফারুক (রা.) ৫ হাজার দিনার, হযরত ওসমান (রা.) ১০ হাজার দিনার, হযরত আলী (রা.) ৩ হাজার দিনার এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় দান করেন।

‘আর রাহীকুল মাখতূম’ থেকে জানা যায়, সেখানে নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করা ইহুদি নাসারাদের তিনি লানত দেন।(সহীহ বোখারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্টা ৫২)। আরও বলেন, তোমরা আমরা কবরকে মূর্তিতে পরিণত করো না। (মোয়াত্তা ইমাম মালেক, পৃ. ৬৫) তার ওপর কারো অভিযোগ থাকলে প্রতিশোধ নিতে বলেন। এছাড়া আনসারদের বিষয়ে তিনি অসিয়ত করেন।

অসুস্থ অবস্থাতেই, ইন্তিকালের কয়েকদিন আগে তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বোখারী শরীফে সংকলিত হাদীসে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল…; যেন আমি আরামবোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম…। এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুৎবা প্রদান করলেন বা ওয়াজ করলেন।’ (সহীহ বুখারী ১/৮৩, ৪/১৬১৪, ৫/২১৬০)

এদিবসকে কেন্দ্র করে কিছু ইবাদতের কথা বলা হলেও সেগুলো সহি মাধ্যম থেকে পাওয়া কিনা তা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে রাসূল (সা.)-র এইদিনটি মুসলমানদের জন্য নিসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সফর মাসের শেষ বুধবার কিনা এই বির্তক ততটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া ইসলামে এইদিনের দিবস পালন করা যায় কিনা- তা নিয়ে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। এইসব বিভেদের বদলে নবী করীম (সা.) এইদিন আল্লাহর বান্দাদের জন্য কী বাণী দিয়েছেন তা ও তার শিক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ আমাদের সৎ পথে পরিচালিত করুন। আমিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

আগামীকাল শায়খুল বাঙ্গাল স্মরণে পবিত্র বার্ষিক ওরশ মোবারক

আওয়ার কণ্ঠ নিউজ ডেস্ক: | ০২ অক্টোবর ২০১৯ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

আগামীকাল শায়খুল বাঙ্গাল স্মরণে পবিত্র বার্ষিক ওরশ মোবারক

কসবা উপজেলার বল্লভপুরে জন্ম নিলেন যিনি;

মহা সাধক তিনি,ওলী তিনি আমরা কি তা জানি?

নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার
নারায়ে রিছালাত ইয়া রাসুল আল্লাহ (সাঃ)
নারায়ে হায়দারী ইয়া আলী (আঃ)
নারায়ে গাউছিয়া ইয়া গাউসুল আজম।

আগামীকাল ৩রা অক্টোবর ২০১৯ইং ১৮ই আশ্বিন ১৪২৬ বাংলা রোজ বৃহস্পতিবার
হযরত কুতবুল আলম,আরিফে বিল্লাহ, শাইখুল বাঙ্গাল,আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ আবু মাছাকীন, মতিউন রহমান, গোলাম কাদির লাহিন্দী,সুন্নি,হানাফি,কাদিরি,চিশতি,

সোহরাওয়ার্দি,নকশেবন্দি,আবুল উলাই (রহঃ) এর ঐতিহাসিক পবিত্র ওরশ মোবারক।

স্থানঃ মহিষবেড় দরবার শরীফ, উপজেলাঃ নাসিরনগর। জেলাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আল্লামা শায়খুল বাঙ্গাল ছৈয়দ আবু মাছাকিন লাহিন্দী আল কাদেরী দুদু মিয়া পীর সাহেব (রাহ্)।

দু চোঁখে দেখিনি যাঁরে
বাস করে মনের ঘরে।
খুঁজে ফিরে পাগল মন,
এ কেমন রক্তের বাঁধন!

একসময় সাধারন জ্ঞানের বই বলতে গুরুগৃহ প্রকাশনীর “বিশ্বের ডায়েরী” নামক বইটি ছাড়া বাজারে আর কিছুই ছিলনা।সেই বইটিতে বাংলাদেশের সূফী সাধকদের নামের তালিকায় “শায়খুল বাঙাল” নামক একজন বুজুর্গ ব্যক্তির নাম ছিল।তিনিই বল্লভপুর গ্রামের জ্ঞান প্রদীপ -ডাক নাম দুদু মিয়া পীর।উনার মরহুম পিতা আলহাজ্ব মাকসাদ আলী মৌলানা সাহেবও আরবী,ফার্সি, উর্দু,হিন্দি ও সংস্কৃতে সুপন্ডিত ছিলেন।জানা যায়,ত্রিপুরা রাজদরবারে তিনি কিছুকাল কাজীর(বিচারক) দায়িত্বও পালন কররেন।বল্লভপুর করবস্থানে তাঁর সমাধী সৌধ রয়েছে।এছাড়া এ জনপদে আরো জ্ঞানী-গুণী রত্ন মানুষের জন্ম হওয়ায় বল্লভপুর হয়ে উঠে এক রত্নগর্ভা গ্রাম।

মহান আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর শানে দুদু মিয়া পীর সাহেবের লেখা মহামূল্যবান কাছিদাগুলো উনার সুযোগ্য সাহেবজাদা পীর ছিন মিম আশরাফ আলী আল কাদেরী সাহেব “কাছিদায়ে শায়খুল বাঙাল” শিরোনামে সংকলন করে পথহারা মানুষের মুক্তির জন্য তা বই আকারে প্রকাশ করেন।মহান আল্লাহ ছৈয়দ আশরাফ আলী আল কাদেরী হুজুরকে নেক হায়াত দান করুন।আমিন।

➤জন্মকালঃ
১২৭৯ বাংলা ৩ রা চৈত্র, মোতাবেক ১২৯০
হিজরী , মোতাবেক ১৮৭৩ ইংরেজী ।

➤চির বিদায়ঃ
হযরত শায়খুল বাঙ্গাল (রাহ্) ১৩৮৫ বাংলা
১৬ ই আশ্বিণ ( বাংলাদেশ পঞ্জিকা মতে
১৮ ই আশ্বিণ ), মোতাবেক ১৩৯৮ হিজরি ২৯
শে শওয়াল এবং ১৯৭৮ ইংরেজি ৩ রা
অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার সকাল ৮-২৫
মিনিটে ইন্তিকাল করেন । ইন্না
লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন ।
তখন উনার পবিত্র গৃহে এক মুঠো অন্নও
অবশিষ্ট ছিল না । আল্লাহু আকবার !
তিনি যে স্থানে ইন্তিকাল করেন সে
স্থানেই সমাহিত করা হয় ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জিলার নাছির নগর
থানা , মহিষবেড় গ্রামে পবিত্র মাজার
শরিফ অবস্থিত ।
হে রাব্বুল আলামিন,যুগযুগ ধরে তোমার
বন্ধু প্রদীপকে প্রজ্জ্বলিত রেখো ।

অনুষ্ঠান সূচিতে থাকছে:– পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত,,খতমে তাহলীল,, খতমে কাদিরী,
মিলাদ শরীফ পাঠ, বাদ এশা থেকে- ওয়াজ মাহফিল, শেষ রাতে হালকায়ে জিকির এবং ফজর বাদ- আখেরী মোনাজাত ও তাহারা বিতরণ।।

পবিত্র বার্ষিক ওরশ মোবারক ২০১৯ উপলক্ষে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে আওয়ার কন্ঠ ২৪.কম কে নিশ্চিত করেছেন মহিষবেড় দরবার শরীফের গদিনিশিন পীর সৈয়দ আশরাফ আলী আল কাদেরী( র:)।শূয়খুল বাঙ্গালের জন্মগ্রাম কসবা উপজেলার বল্লভপুর ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বহু আশেকান আগামীকালের পবিত্র ওরশে যোগদান করবে বলে জানা গেছে।

এতএব, উক্ত পবিএ ওরশ শরীফে সকলের উপস্থিত কামনা করছি।

➤যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পথ পরিচিতি:-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হয়ে আসতে হলে সিএনজি যোগে সরাসরি ধরন্তী খেয়া ঘাট তারপর নৌকা যোগে মহিষবেড় মাজার শরীফ।

➤ঢাকা/কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব হয়ে বাস যোগে বিশ্ব রোড মোড়ে নেমে সিএনজি যোগে ধরন্তী খেয়াঘাট তারপর নৌকা যোগে মহিষবেড় মাজার শরীফ ‌।

➤সিলেট থেকে বাস যোগে আসতে হলে কুট্টা পাড়া মোড়ে নেমে সিএনজি যোগে ধরন্তী খেয়াঘাট তারপর নৌকা দিয়ে মহিষবেড় মাজার শরীফ।

✪ বি:দ্র:- উক্ত অনুষ্ঠানে সর্ব প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবহার এবং নারী পুরুষের একত্রে জিকিরে নাচানাচি করা সস্পূন রুপে নিষিদ্ধ। তাছাড়া সব ধরনের খেলা ধুলা,রং তামাশা,টেপ রেকর্ডার বাজানো এবং কেন্দ্রীয় মাইক ছাড়া অন্য কোন মাইক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

শায়খুল বাঙ্গাল (রঃ)’র দুটো অলৌকিক কারামত: এস এম শাহনূর

| ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ১১:২০ অপরাহ্ণ

শায়খুল বাঙ্গাল (রঃ)’র দুটো অলৌকিক কারামত: এস এম শাহনূর

কসবার বল্লভপুরে জন্ম নিয়ে শুয়ে আছেন মহিষবেড়,
সময় থাকতে চিনলে না মন এযে বদ কপালের ফের!

আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য প্রাপ্ত ওলী কামেলগণকে মহান আল্লাহপাক গায়েবী বহু কারামত দান করে থাকেন। (কিরামাতি আওলিয়ায়ি হাক্বুন।)আমরা সাধারন মানুষ খালি চোঁখে যা দেখতে অক্ষম আল্লাহর ওলীগণ তা দেখে থাকেন।বিশেষ ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।বিশিষ্ট আলেমে দীন শায়খুল বাঙাল আল্লামা ছৈয়দ আবু মাছাকিন লাহিন্দী আল কাদেরী (রঃ)ছিলেন মহান আল্লাহ মনোনিত কালের শ্রেষ্ঠ সাধক ও ওলী।যাঁর জীবনী বৈচিত্র্যময়, বহু কারামতে ভরপুর।উনার জীবনের অসংখ্য অলৌকিক ঘটনাবলীর মধ্যে মাত্র দুটো সংক্ষিপ্ত সত্য তোলে ধরার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনো বাক্যে সাহায্য কামনা করছি।”ইয়্যাকানাবু ওয়া ইয়্যাকানাস তাঈন।”

✪সত্য কাহিনী (এক):
পৌষের শিশির স্নাত সকাল।বল্লভপুর গ্রামের খন্দকার বংশের( মরহুম) আনু খন্দকারের( মরহুমা) স্ত্রী উনার বড় ছেলে মোহাম্মদ তারু মিয়া খন্দকারকে নিয়ে হুজুরের দরবারের উদ্দেশ্যে মেহারীর দক্ষিণ কোণা দিয়েে, যমুনা গ্রামের বুক চিরে আকাঁবাকা ফসলী জমির আইল দিয়ে,পায়ে হেটে এগিয়ে যাচ্ছেন।গন্তব্য কসবা থানার মেহারী ইউনিয়নের খেওড়া গ্রামের আলফু মিয়ার(মরহুম) বাড়ি।যেখানে শায়খুল বাঙাল সপরিবারে জীবনের বেশটুকু সময় কাটিয়েছেন।
দূরদূরান্ত থেকে বহু আশেকান,ভক্ত ও মুরিদ এখানে এসে তাদের পীরের মহব্বত আর উপদেশের সাগর জলে সাঁতার কাটতেন।জানা যায় আলফু মিয়া হুজুরের একজন বড় মানের ভক্ত ছিলেন।প্রেমাষ্পদের প্রেমে বিগলিত হয়ে তিনি তার বসত ভিটা হূজুরের নামে লিখে দিয়েছিলেন বা দিতে চেয়েছিলেন। খেওড়া গ্রামের মানুষ হুজুরের শেষ আস্তানা আলফু মিয়ার বাড়িতে হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।কিন্তুু মুক্ত বিহঙ্গ কি আর দুধ কলায় পোষ মানে?
” বল্লভ পুরে জন্ম নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন মহিষবেড়,
সময় থাকতে চিনলেনা মন এযে কপালের ফের।”
হয়তোবা এই হিজরত কিংবা পরবাসে ঘুমিয়ে থাকার মাঝেও থাকতে পারে বিধাতার কোন এক নিগুঢ় রহস্য। যা আমাদের মত সাধারন মানুষের জ্ঞান সীমার বাহিরে।চিন্তার বাহিরে।অমোঘ রহস্যাবৃত।
তখনো কুয়াশা ভাল করে কাটেনি।পূর্বাকাশে মেলেনি সূর্যমামার দেখা।খেওড়া গ্রামের আলফু মিয়ার বাড়িতে এই ভোরে বল্লভপুর থেকে দুজন মেহমান আসছেন।
কিন্তু হুজুর কি করে জানলেন?
বল্লভপুরের মানুষজনকে তিনি নাকি খুবই ভালবাসতেন,মহব্বত করতেন।তাই
গৃহকর্ত্রীকে আদেশ করলেন,”বল্লভপুর থেকে দুজন মেহমান আসতেছে;তাদের জন্য নাস্তা/খাবার প্রস্তুত কর।”

অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মা ও ছেলে আলফু মিয়ার বাড়ির আঙিনায় এসে থামলো।হুজুর তাদেরকে হাত মুখ ধুয়ে এসে খাবার গ্রহণের তাগিদ দিলেন।মা -ছেলে দেখলেন,দুটো সানকিতে পান্তা ভাতের সাথে ভর্তা অথবা শাকজাতীয় কোন খাবার তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।গৃহকর্ত্রী তাদের সামনে খাবার পাত্র এগিয়ে দিয়ে বললেন,”আপনাদের আসার সংবাদ হুজুর দিয়েছেন তাই অাগে থেকেই খাবার বেড়ে(প্রস্তুত করে)রেখেছি।জলদি খেয়ে নিন।”এবার মা এবং ছেলে একে অপরের মুখপানে তাকায়।এত্ত ভোরে বল্লভপুর থেকে আমরা আসবো পীর সাহেব কি করে জানেন? মা এবং ছেলে মনে মনে তাই ভাবছে।মায়ের মুখে কথা নেই।ছেলেও নিরব।আসলে-

“এরই নাম সাধক জীবন
ওলী-কামেল পীরের ধরন।”

➤উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষাঃ
মহান আল্লাহ ইচ্ছে করলে ওলী কামেল পীরগণকে গায়েবের ক্ষমতা দান করতে পারেন।সুবহানাল্লাহ।

✪সত্য কাহিনী (দুই):
আজকের পঁচাত্তোর উর্ধ্ব খন্দকার মোহাম্মদ তারু মিয়া তখন ছিলেন একজন তরুণ। একজন বেকার।জনাব তারু মিয়া খন্দকার বলেন,”হুজুরের আদেশে মা খাবার গ্রহণ শুরু করলেন। কিন্তু অামি খানার প্লেটে হাত দিলাম না।কারণ,মা এবং আমি বাড়ি থেকে মাত্র এক ঘন্টা আগে গরম ভাত খেয়ে এসেছি।দাদা পীর সাব আমাকে আরো এক দুইবার সানকিতে রাখা খানা খাওয়ার জন্য কইলেন।আমি না খাওয়ায় উনা(সম্ভবত রাগের বশে) ভাত তরকারী ভরা সানকিটি হাতে নিয়ে দরজা দিয়ে ছুড়ে মারলেন।উঠোনে সানকির ভাত,শাক আর ভর্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল।চারদিগ থেকে মোরগ মুরগী আর কাক এসে অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুরেঘুরে ভাত, তরকারি গুলো খেয়ে নিলো।
ভাতের প্লেটখানা ছুড়ে ফেলার সময় পীর সাব কইলেন,”ঘরে বসে যখন খাইলেন না, যান এবার ঘুরেঘুরে খান।” উল্লেখ্য যে,শায়খুল বাঙ্গাল(রঃ) জীবদ্দশায় ছোট বড় সকলকেই আপনি বলে সম্বোধন করতেন।
পীর ওলীদের মুখের কথা সত্য,কর্ম সত্য, জীবন সত্য। বন্দুকের গুলির টার্গেট মিস হতে পারে কিন্তু ওলীদের মুখের ভবিষ্যৎ বানী মিস/ভুল হতে পারেনা।আসলে খন্দকার তারু মিয়ার বেলায় বাস্তবে তাই হয়েছে।
তিনি বলেন,”পীর সাহেরের নূরানি দরবার থেকে ফিরে আসার কিছুদিন পরেই আমার সরকারী চাকুরী হয়।আল্লাহ পাকের একী খেলা,দীর্ঘ ৩০ বছর এমন এক চাকুরীতে ছিলাম আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম,তো কাল রাঙামাটি, পরশু টেকনাফ। আরো কত দুর্গম এলাকায়,কত নির্জন- বিরান ভূমিতে দিন রাত কাটিয়েছি।তিনি আক্ষেপ করে বলেন,” যদি দাদা পীর সাহেবের কথায় সাথে সাথে সানকির ভাত খেয়ে নিতাম;তাহলে হয়তোবা রিজিকের পিছনে আমাকে এমন ছুটাছুটি করতে হতোনা। ”

➤উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষাঃ
অাল্লাহর ওলীদের কথা/দোয়া বা ভবিষ্যৎ বানী বিফলে যায়না।

“দু চোঁখে দেখিনি যাঁরে
বাস করে মনের ঘরে।
খুঁজে ফিরে পাগল মন,
এ কেমন রক্তের বাঁধন!”
“”””””‘””‘”””””””””””””””””””””””””””

★তথ্য সংগ্রাহক ও লেখকঃ
এস এম শাহনূর
বাংলাদেশ।

★আলোচনার মজলিসঃ
শায়খুল বাঙালের জন্ম ভিটা মরহুম জামশেদ খন্দকারের ঘর।

★আলোচনায়ঃ
এস এম শাহনূর
আইয়ূব আলী খন্দকার,
মোহাম্মদ তারু মিয়া খন্দকার ও
মরহুম জামশেদ খন্দকারের স্ত্রী।

★আলোচনার তারিখঃ
১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ইং
বল্লভপুর খন্দকার বাড়ী, কসবা,বি-বাড়ীয়া।
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””

মুরাকাবা-ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত।

সংকলন: এস এম শাহনূর | ০৩ অক্টোবর ২০১৯ | ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

মুরাকাবা-ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত।

মুরাকাবা অর্থ হল : এমনভাবে
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
ইবাদাত-বন্দেগী করা যেন
আপনি আল্লাহকে দেখতে
পাচ্ছেন। যদি এ অবস্থা
আপনার অর্জিত না হয়, তা
হলে এমন ভাব নিয়ে তাঁর
ইবাদত করা যে, তিনি অবশ্যই
আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وََ كَانَ اللهُ عَلٰى كُلِّ شَيْئٍ رَّقِيْبًا
আল্লাহ তা‘আলা সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন। সূরা আহযাব : ৫২
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
اَلْاِحْسَانُ اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاه فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاه فَاِنَّه يَرَاكَ
অর্থ- ইহসান হলো, তুমি আল্লাহপাকের ইবাদত এমনভাবে করো, যেমন কিনা তুমি তাঁকে দেখছো। তুমি যদিও তাঁকে দেখছো না, কিন্তু তিনি তো তোমাকে দেখছেন। -মিশকাত শরীফ
তিনি আরো ইরশাদ করেন- اِحْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ
তুমি আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ধ্যান রাখো, তাঁকে তোমার সামনে পাবে।-মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী

★★জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম
মানার নামই ইবাদত। পরিবারের বাবা-
মার সঙ্গে কুশল বিনিময়, একাধিক
সন্তানের মধ্যে সমতা বিধান, স্ত্রীর
সঙ্গে সুন্দর আচরন, গৃহকর্মীর ভাল-মন্দের
খোঁজ-খবর নেয়া এমনকি পোষা প্রাণীর
প্রতি সদয় হওয়াও ইবাদতের অন্তর্গত।
কারণ আল্লাহ তাআলা বান্দার
কার্যাবলী সদা-সর্বদা প্রত্যক্ষ করেন।
সুতরাং দুনিয়ার প্রত্যেক কাজে আল্লাহর
দৃষ্টি রয়েছে এ উপলব্দিই হচ্ছে
মুরাকাবার প্রাথমিক ধারণা।
★★মুরাকাবার অাভিধানিক অর্থ হলো পর্যবেক্ষণ করা।
ক্বুরআন শরীফে যাকে বলা হয়েছে ‘তাফাক্কুর’ যার পরিভাষা
মুরাকাবা।

মুরাকাবার গুরত্ব সম্পর্কে সূরা
আলে-ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “নিশ্চই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রীর আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নির্দশন রয়েছে। তারা দাড়িয়ে, বসে বা শায়িত
অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করে,তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে ধ্যানে(তাফাক্কুর) নিমগ্ন হন এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালন! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি কর নি”। উক্ত আয়াতে“তাফাক্কুর” মানে হল গভীর ধ্যান বা মুরাকাবা।

ইসলামি পরিভাষায় মুরাকাবা।
♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠

★★আল্লাহ তাআলা
বলেন-“তুমি যখন সালাতে দাঁড়াও তিনি
তোমাকে দেখেন। আর সিজদাকারীদের
মধ্যে আপনার নড়াচড়াও দেখেন।” (সূরা
আশ-শুআরা : আয়াত ২১৮-২১৯);

★★সৃষ্টির কোনো কিছুই আল্লাহর
দৃষ্টিসীমার বাইরে নয়। আল্লাহ সমগ্র
সৃষ্টিজগতের সব কিছুই প্রত্যক্ষ করেন। এ
ব্যাপারে কুরআনের অসংখ্য আয়াত
নাজিল হয়েছে।
★★আল্লাহ বলেন-
“আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কোন
কিছুই গোপন থাকে না।” (সূরা আলে
ইমরান : আয়াত ৫) অাল্লাহ অন্যত্র
বলেছেন- “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক
কড়া দৃষ্টি রাখছেন।” (সূরা আল ফাজর :
আয়াত ১৪);
পৃথিবীতে মানুষ তার চক্ষু কোন দিকে
ফিরায়, কি কি দেখে, এমনকি অন্তরে
কি সংকল্প করে তার খবরও আল্লাহ
রাখেন।
★★তিনি বলেন- “তিনি জানেন
চক্ষুসমূহের খেয়ানত ও অন্তরসমূহ যা
গোপন রাখে।” (সূরা আল মুমিন : আয়াত
১৯)
এমনকি মানুষ তার কাজ কর্মে কি করেন
সে বিষয়ও আল্লাহ জ্ঞানের বাইরে নয়।
জগতসমূহের কোথাও সামান্য অনু
পরিমাণ বস্তু তার পর্যবেক্ষণের বাহিরে
নয়। সমগ্র জগতের সব কিছুই তার জ্ঞান,
দর্শন শ্রবনের আওতাভুক্ত।
★★আল্লাহ আরো বলেন “তোমরা যেখানেই থাকো তিনি
তোমাদের সাথে আছেন।” (সূরা আল
হাদিদ : আয়াত ৪)
★★তাই ইমাম নববী
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ আয়াতটিকে
মুরাকাবা বা আল্লাহ তাআলার
পর্যবেক্ষণ বিষয়ে গ্রহণ করেছেন।

মুরাকাবার প্রচলিত ধারণাঃ
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
আমাদের সমাজে দেখা যায়, মানুষ
দুনিয়ার কাজ কর্ম ফেলে রেখে ঘরের এক
কোনে, নির্জন স্থানে একান্ত ধ্যানে
মগ্ন থেকে আল্লাহর জিকির-আজকার,
তাসবিহ-তাহলিলে রত থাকা এবং
এটাকেই মুরাকাবা হিসেবে জানা।
মুরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য
অর্জন করা। অথচ আল্লাহ তাআলা
কুরআনে কারিমের অনেক আয়াতে
বলেছেন, বান্দার কর্মই নয় শুধু, বান্দার
চোখের চাহনি কোন দিক যায়, মনে কি
সংকল্প করে তাও আল্লাহ জানে। এই
যদি হয় কুরআনে ঘোষণা. তবে ঘরের
কোনে বা নির্জণ স্থানে মুরাকাবা
করে আবার ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে
দুনিয়ার সাধারণ কাজ-কর্মে মিথ্যা,
গীবত, চোখলখুরী, বেহুদা কথা-বার্তা,
ফাহেশা কাজ কর্মে জড়িয়ে পড়ার মধ্যে
মুরাকাবার সার্থকতা কি?

মুরাকাবা কেমন হওয়া চাইঃ
♥♥♥♥♥♥♥♥♥

হয়রত ইব্রাহীম (আঃ) এর মনে যখন প্রশ্ন জাগল কে আমার স্রষ্টা? তখন তিনি ধ্যান-সাধনায় নিমগ্ন হলেন। অবশেষে তিনি আল্লাহ পরিচয় লাভ
করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হেরা গুহায় ১৫ বছর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।ধ্যানের মধ্যেই জিব্রাইল (আঃ) তার কাছে ওহী নিয়ে আসেন। হযরত মুসা (আ:) সিনাই উপত্যাকায় ধ্যানরত থাকতেন।
★★আল্লাহ বলেন, “কেন তোমরা ধ্যান বা গভীর মনোনিবেশ সহকারে চিন্তা-ভাবনা কর না?”,এমনকি নবীজী (সাঃ) কে আল্লাহপাক বলেছেন, “অতএব (তুমি দৃঢ়তার সাথে কাজ কর আর) যখনই অবসর
পাও প্রতিপালকের কাছে একান্ত
ভাবে নিমগ্ন হও” (কোরআন সূরাঃ ইনশিরাহঃ ৭-৮)
বান্দার মুরাকাবা হবে এমন যে,
মানুষের বিবেক বুদ্ধি সূচিত হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি কদমে প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর স্মরণ ও পর্যবেক্ষণ উপলব্দি করা। ব্যক্তি,
পরিবার, সমাজ, অফিস আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুনিয়ার প্রত্যেক কাজে আল্লাহর দৃষ্টি রয়েছে। আল্লাহর নিকট প্রত্যেক কাজের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে এই মানসিকতা তৈরি করা।তবেই হবে মানুষের প্রকৃত মুরাকাবা।লোক দেখানো মুরাকাবা কখনোও আল্লাহ তাআলা কামনা করেন না।

উল্লেখিত আয়াত ও আলোচনায় আমাদের শিক্ষা-
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
১. আল্লাহ এমন এক সত্তা যে বান্দা
নামাজ এবং সেজদা অবস্থায়
নড়াচড়াগুলোও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না।
২. আসমানসমূহ ও জমিনের কোন বস্তু ও
বিষয় তাঁর কাছে গোপন নয়।
৩. “তোমরা যেখানেই থাক তিনি
তোমাদের সাথে আছেন।” এর অর্থ হল-
তিনি সর্বক্ষণ, সর্বাবস্থায় ও সর্বত্র
তোমাদের পর্যবেক্ষণ করেন। তার
জ্ঞান, দর্শন, শ্রবন থেকে কেউই বাহিরে
নয়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, দর্শন, শ্রবন সর্বত্র
বিরাজমান।
৪. আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ
তাআলার দৃষ্টি সদা সর্বদা বান্দাকে
বেষ্টন করে আছে। যুদ্ধের ঘাঁটিতে
সৈনিক সতর্ক দৃষ্টিতে সব কিছু পর্যবেক্ষণ
করে। এমন অনেক বিষয় আছে যা মানুষ
সতর্ক থাকার পরেও তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে
যায়। আবার কোন কোন বিষয় আছে যা
পর্যবেক্ষণ করা তাদের সাধ্যের বাহিরে
থাকে। এমন সব বিষয়ও আল্লাহর
পর্যবেক্ষণের বাহিরে নয়। মানুষ কোথায়
লুকিয়ে তাকায়, সে কখন কি কল্পনা
করে, নিয়্যত করে ও গোপন রাখে এগুলো
অন্য মানুষ জানতে না পারলেও আল্লাহ
তাআলা ভালভাবে জানেন।
সুতরাং মানুষের মুরাকাবা হোক প্রতি
কাজে ও কর্মে। বান্দা যখন প্রতি
কাজকে ইবাদত মনে করে আল্লাহর
উপস্থিতি উপলব্দি করবে তবেই শান্তি,
সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠবে ব্যক্তি জীবন,
পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রতিটি
শাখা। আল্লাহ আমাদের কুরআন
অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তাআলার নিকট প্রতিটি কাজে
মুরাকাবার উপলব্দি কামনা করি।
আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।
“””””””””””””””””””””””””””””””””””

💻 এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান, কবি ও গবেষক)

নিয়ত অনুসারে নিয়তি ও পরিনতি

লেখক: এস এম শাহনূর | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৪:০৩ অপরাহ্ণ

নিয়ত অনুসারে নিয়তি ও পরিনতি

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া
আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় এবং
আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। উত্তম বাণী
হচ্ছে আল্লাহর বাণী।উওম পথ রাসূল(সাঃ) এর নির্দেশিত পথ।
♥♥সহি হাদীসঃ-আমীরুল মু’মিনীন আবু হাফসা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ইন্নামা আল আমালু বিন নিয়্যাত)
“সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।”
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

✪ তাখরীজুল হাদীসঃ
সহীহ বুখারী, হা/নং (১, ৬১৯৫, ৬৪৩৯) সহীহ
মুসলিম, (৩৫৩, ১৯০৭) সুনান তিরমিযী (১৫৭১)

✪ শব্দ-বিশ্লেষণ:
নিয়ত আরবী শব্দ ( ﻧﻴﺔ বা ﻧﻴَّﺔ ) অর্থ: ﺍَﻟْﻘَﺼْﺪُ ﻭَ
ﺍﻟْﺎِﺭَﺍﺩَﺓউদ্দেশ্য, অভিপ্রায় অভিলাষ,
মনোবাঞ্ছা, মনের ঝোঁক, কোনো কিছু করার ইচ্ছা, কোনো কাজের প্রতি মনকে ধাবিত করা ইত্যাদি।
♥♥ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, মনের মধ্যে কোনো ভাবের উদয় হলে, সে ভাব অনুযায়ী ‘আমল করা কিংবা না করার কোনো দিকেই মন ধাবিত না হলে,মনের ভেতরে ঘুরপাক খাওয়া সে ভাবকে বলা হয় হাদসুন-নাফস বা ওয়াস্ওয়াসা। আর সে ভাবকে বাস্তবে রূপদানের জন্য মনকে ধাবিত করার নাম ‘হাম্ম’ বা নিয়ত (অভিপ্রায়) এবং মজবুত নিয়তকে বলা হয় ‘আযম তথা সংকল্প।
আবার নিয়ত (অভিপ্রায়) এবং ইরাদাহ (ইচ্ছা) শব্দ দু’টি
বাহ্যত সমার্থক মনে হলেও এবং কখনো কখনো এক অর্থে ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে।যেমনঃ-
♣♣এক. ইরাদাহ (ইচ্ছা)-এর সম্পর্ক নিজের কাজের সাথেই নির্দিষ্ট নয়; বরং অন্যের কাজের সাথেও ইরাদাহ (ইচ্ছা)-এর সম্পর্ক হতে পারে।
পক্ষান্তরে নিয়তের সম্পর্ক শুধু নিয়তকারীর কাজের সাথেই হয়ে থাকে। যেমন, এটা বলা চলে যে,“আমি তোমার নিকট এ ধরণের আচরণের ইরাদাহ বা ইচ্ছা (কামনা) করি নি” কিন্তু এভাবে বলা যায় না যে, ‘‘আমি তোমার নিকট এ ধরণের আচরণের নিয়ত বা উদ্দেশ্য
করি নি।”
♣♣দুই. ইরাদাহ (ইচ্ছা) সম্ভাব্য কাজের
ব্যাপারেই কেবল ব্যবহৃত হয়। পক্ষান্তরে
নিয়ত শব্দটি সম্ভব-অসম্ভব সকল কাজের
ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর এজন্যই
আল্লাহর ব্যাপারে নিয়ত শব্দের ব্যবহার
করা যায় না। যেহেতু তাঁর নিকট সবকিছুই
সম্ভব তাই তিনি কোনো কাজ করার
ইরাদাহ বা ইচ্ছা করেন, নিয়ত নয়। তবে
যেহেতু কখনো কখনো উভয় শব্দ একই অর্থে
ব্যবহৃত হয় তাই কুরআন মাজীদে অনেক
স্থানে আল্লাহ তা‘আলা ইরাদাহ
শব্দটিকে নিয়ত অর্থে ব্যবহার করেছেন।

শরী‘আতের দৃষ্টিতে নিয়ত ও তার প্রকারভেদ:
♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦

♥♥আল্লামা মাওয়ারদী রহ. বলেন:
ﺍﻟﻨﻴﺔ ﻫﻲ ﻗﺼﺪ ﺍﻟﺸﻲﺀ ﻣﻘﺘﺮﻧًﺎ ﺑﻔﻌﻠﻪ
“কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট মনের
উদ্দেশ্য।”
♥♥আল্লামা কাযী বায়যাভী রহ. বলেন:
ﺍﻟﻨﻴﺔ ﻫﻲ ﻋﺒﺎﺭﺓ ﻋﻦ ﺍﻧﺒﻌﺎﺙ ﺍﻟﻘﻠﺐ ﻧﺤﻮ ﻣﺎ ﻳﺮﺍﻩ ﻣﻮﺍﻓﻘﺎ
ﻟﻐﺮﺽ ﻣﻦ ﺟﻠﺐ ﻧﻔﻊ ﺍﻭﺩﻓﻊ ﺿﺮﺭ ﺣﺎﻻ ﺍﻭﻣﺎﻻ
“বর্তমান বা ভবিষ্যতের ভালো কিংবা
খারাপ কোনো স্বার্থের জন্য কোনো
কাজের প্রতি মনের অভিনিবেশ।”
অর্থাৎ মানুষ কোনো কাজ করার সময় তার
মনের অভ্যন্তরে যে উদ্দেশ্য থাকে, যার
কারণে মানুষ কাজটি করার জন্য উদ্ভুদ্ধ হয়
সে উদ্দেশ্য বা কারণটিকেই শরী‘আতের
পরিভাষায় নিয়ত বলা হয়। কোনো ইবাদত
করার সময় সে ইবাদতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
সংক্রান্ত মনের ভাব বা অবস্থাই নিয়ত।
নিয়ত ভালো কিংবা খারাপ উভয়ই হতে
পারে।

✪ শরী‘আতের দৃষ্টিতে নিয়ত দু প্রকার।
★ইখলাস
★রিয়া
♦♦যখন কোনো মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে
সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত
করে তখন সে ইবাদত সংক্রান্ত মনের ঐ
অবস্থাকে ইখলাস বলা হয়।

♦♦আর কেউ লোক
দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে
ইবাদত করলে ইবাদতকালীন মনের সেই
অবস্থাকে বলা হয় রিয়া।

✪ শাব্দিক ব্যাখ্যাঃ

‘ইন্নামা’ শব্দটি আরবী ভাষায়
সীমাবদ্ধতা বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। ‘আল
আমাল’ বলতে যে কোন আমলকে বুঝায়।
সেটি যাহেরী তথা স্পষ্ট হোক বা
বাতেনী তথা অস্পষ্ট। ‘নিয়্যাত’ শব্দের
অর্থ হল,অন্তরের সংকল্প,ইচ্ছা বা ইরাদা।
সুতরাং নিয়ত একটি আন্তরিক কাজ মুখে
উচ্চারণ করা না করার সাথে তার কোন
সম্পর্ক নেই।
♥♥হাদীসের গুরুত্বঃ
এই হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
হাদীস। ওলামায়ে কেরাম বলেছেনঃ
ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারের অর্ধেক এই
হাদীসে নীহিত রয়েছে।
♥♥ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি
জ্ঞানের এক তৃতীয়াংশ এবং ফিকাহ
শাস্ত্রের সত্তুরটি বিষয় এর ভিতরে
রয়েছে।
♥♥ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) বলেনঃ
তিনটি হাদীসের উপর ইসলামের মৌল
ভিত্তি। তা হল, উমর (রা;) এর এই
হাদীস-‘সকল আমলের ভিত্তি নিয়্যাতের
উপর’।–
আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস -‘যে ব্যক্তি
আমাদের এই দ্বীনে নতুন বিষয় সংযোজন
করল তা পরিত্যাজ্য’।–
আর নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) এর
হাদীস-‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও
স্পষ্ট’।
আবার অনেকে বলেছেনঃ এই হাদীসটি
বাতেনী আমলের মাপকাঠি আর আয়েশা
(রাঃ) এর হাদীসটি যাহেরী আমলের
মাপকাঠি। হাদীসটির এরূপ গুরুত্বের
কারণে বড় বড় হাদীস বিশারদগণ তাদের
কিতাবসমূহ শুরু করেছেন এই হাদীস
দ্বারা।

✪ হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

হাদীসের শব্দ দ্বারা একথা ষ্পষ্ট হয় যে,
আমলের প্রতিফল পাওয়া না পাওয়া
এবং অনেক ক্ষেত্রে আমল সহীহ শুদ্ধ
হওয়া বা না হওয়া এসব কিছু নিয়্যাতের
উপর নির্ভর করে। সুতরাং নিয়্যাত ভাল
হলে কাজের প্রতিফল অনেক গুণ বেশী
পাওয়া যাবে। আর নিয়্যাত ভাল না হলে
তার ফল পাওয়া যাবেনা। নিয়্যাত ভাল
হওয়ার জন্য শর্ত হল, ইখলাছ সমৃদ্ধ হওয়া।
অর্থাৎ যা কিছু করবে শুধুমাত্র
আল্লাহকে রাজী খুশী করার উদ্দেশ্যে
করবে। অন্যথায় সৎকাজেও কোন
প্রতিদানের আশা করা যাবে না।
♥♥আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
‘তাদেরকে এছাড়া অন্য কোন আদেশ
দেয়া হয়নি যে,তারা শুধু আল্লাহর জন্যে
দ্বীনকে খালিছ করে তাঁরই ইবাদত করবে’।
(সুরা বাইয়িনাহঃ ৫।)
এখানে আমরা কাজ ও নিয়্যাতের
সমন্বয়কে চার ভাগে ভাগ করতে পারি।
(১) কাজও ভাল নিয়্যাতও ভাল। যেমন
কেউ ছলাত (নামায) আদায় করল আল্লাহ
কে রাজী করার উদ্দেশ্যে।
(২) কাজও খারাপ নিয়্যাতও খারাপ।
যেমন, কেউ ডাকাতি করল মানুষকে কষ্ট
দেয়ার উদ্দেশ্যে।
(৩) কাজ ভাল কিন্তু নিয়্যাত খারাপ।
যেমন, কাউকে দান করল লোক দেখানো
বা নাম কামানোর উদ্দেশ্যে।
(৪) কাজ খারাপ কিন্তু নিয়্যাত ভাল।
যেমন, কেউ চুরি করল মানুষকে দান করার
উদ্দেশ্যে।
এসবের মধ্যে শুধু প্রথম প্রকারকেই
আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
বলা বাহুল্য যে, নিয়্যাতের কারণেই
ইবাদত এবং আদত তথা অভ্যাসের মধ্যে
পার্থক্য সৃষ্টি হয়। যেমন নিজের স্ত্রী ও
সন্তানদের খোর-পোষের ব্যবস্থা করা
মানুষের স্বভাবগত অভ্যাস। কিন্তু কেউ
যদি তা আল্লাহর আদেশ পালন এবং
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণের
উদ্দেশ্যে করে, তাহলে তার এই কাজটি
ইবাদতে পরিণত হবে এবং সে বক্তি
প্রতিদানের অধিকারী হবে। একারণেই
♥♥নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাই
পাবে যা সে নিয়্যাত করবে’। তারপর
তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে কথাটি
বুঝিয়ে বলেছেন যে, ‘আল্লাহ ও রাসূলের
দিকে যে ব্যক্তি হিজরাত করবে তার
হিজরাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে
হবে। আর যে ব্যক্তি হিজরাত করবে
মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তাহলে
তার হিজরাত হবে সেই দিকে যেদিকে
সে হিজরাত করল’। অর্থাৎ পার্থিব
উদ্দেশ্য থাকলে হিজরাতের মত বড় একটি
ইবাদতের প্রতিফল থেকেও সে মাহরূম
হয়ে যাবে।
হিজরাত ইসলামে তিন প্রকারের ছিল।
(১) শিরকের স্থান থেকে ইসলামের
স্থানের দিকে হিজরাত।
যেমন মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফের
দিকে হিজরাত।
(২) ভয়ের স্থান থেকে নিরাপদ বা
নির্ভয়ের স্থানের দিকে হিজরাত। যেমন
মক্কা থেকে হাবশার দিকে হিজরাত।
(৩) আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা
ছেড়ে দেয়া। প্রথম দুটি বর্তমান না
থাকলেও শেষের বিষয়টি কিয়ামত
পর্যন্ত থাকবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহাজির সেই
ব্যক্তি, যে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ
বিষয়াদি ছেড়ে দেয়। (বুখারী)
হিজরাতের আর একটি স্তর হল,পাপের
স্থান ছেড়ে পুণ্যের স্থানে চলে যাওয়া।
যদি তা সম্ভব হয়। এরূপ হিজরাত করা
মুস্তাহাব।
মোট কথা,এখনো যারা হিজরাত করবে
তাদের নিয়্যাত যদি ভাল হয়, তাহলে
ভাল প্রতিদান পাবে। আর যদি নিয়্যাত
খারাপ হয়, তাহলে প্রতিদান থেকে
মাহরূম থাকবে।
নিয়্যাত যদি ভাল হয়,তাহলে কখনো কাজ
না করতে পারলেও শুধু নিয়্যাতের
কারণে ছাওয়াবের ভাগী হয়।
♥♥আবুদ্দরদা (রাঃ)
বর্ণনা করেছেন যে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
ঘুমাতে আসে এবং নিয়্যাত করে যে, সে
জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ পড়বে। কিন্তু তার
চোখ লেগে যায় এবং ফজর পর্যন্ত সে আর
জাগ্রত হয়না। তাহলে সে যা নিয়্যাত
করেছিল তার পরিপূর্ণ সওয়াব তাকে
দেয়া হয়। ( নাসায়ী,ইবনু মাজাহ তারগীব তারহীবঃ ২১।)
♥♥বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইবনু আব্বাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের
নিয়্যাত করে অথচ এখনো করেনি, তখন
আল্লাহ তাআলা তাকে পূর্ণ এক নেকী
দান করেন। (তারগীব তারহীবঃ ১৭।)
ইমাম আহমদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ
♥♥আবুকাবশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর মানুষ
(১) যাকে আল্লাহ
তাআলা সম্পদ এবং ইলম দুটিই দান করেন।
সে তার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে
এবং আত্বীয়তা রক্ষা করে, সে অনেক
উত্তম।
(২) যাকে আল্লাহ তাআলা ইলম
দান করেছেন কিন্তু সম্পদ দেন নি। সে
সত্য নিয়্যাতে বলে যে, যদি আল্লাহ
তাআলা আমাকেও সম্পদ দান করতেন,
তাহলে আমিও অমুকের মত আমল করতাম।
উভয় লোক সমান সমান সওয়াব পাবে।
(তারগীব তারহীবঃ ১৬।)
♥♥ইমাম মুসলিম সাহাল ইবনু হুনাইফ (রাঃ)থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খালিছ নিয়্যাতে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের মৃত্যুর আশা করবে,সে নিজের বিছানায় মারা গেলেও আল্লাহ তাআলা তাকে শহীদগণের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিবেন।
(মুসলিমঃ ৪৯০৭)।
★★হে আল্লাহ আমাদের কে পূর্ন ইখলাসের সহিত আপনার গোলামী ও নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।আমীন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

পবিত্র আশুরার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-অন্যায় অবিচারের কাছে মাথা নত না করা: এস এম শাহনূর

| ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ

পবিত্র আশুরার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা-অন্যায় অবিচারের কাছে মাথা নত না করা: এস এম শাহনূর

ফিরে এলো আজ সেই মুহাররম মাহিনা,
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা’
(কাজী নজরুল ইসলাম)।

হিজরি ৬১ সনের এই দিনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন।
আশুরা’ শব্দের অর্থ দশম বা দশমী। ‘আশুরা’ শব্দটির তাৎপর্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে ‘আশুরা’ শব্দটি ছিল ‘আশানুরা’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ মহান দিনের মর্যাদা রক্ষা করবে সে নূরানি জীবন লাভ করবে। অতঃপর ‘আশানুরা’র ‘নুন’ অক্ষরটি বাদ দিয়ে বাক্যটি সহজ করা হয় ‘আশারা’ বা ‘আশুরা’। মুহাররম মাসের দশম তারিখ ইতিহাসে ‘আশুরা’ নামে অভিহিত। প্রাচীন কালের নানা জনগোষ্ঠীর নিকট ‘আশুরা’ পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। কারো কারো মতে, এ দিনে আল্লাহ পাক ১০ জন পয়গম্বরকে তাঁর ১০টি অনুগ্রহ ও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন বলে এটিকে ‘আশুরা’ বলা হয়।অন্য কথায় বলতে গেলে—এ মাসের ১০ তারিখ ১০টি বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণেও এ তারিখকে আশুরা বলা হয়। সৃষ্টির পর থেকে আশুরার দিনে অনেক তাৎপর্যমণ্ডিত ঘটনা ঘটেছে বিধায় এই দিনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক বেশি। এ কারণে মহররম মাসও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কালামে পাকেও মহররম মাসকে অতি সম্মানিত মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ মাস, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।

➤আশুরার দিনের ঐতিহাসিক ১০টি ঘটনাঃ

১. হযরত ইকরামার (রা.) বর্ণনামতে হযরত আদম (আ.) এর দোয়া আল্লাহ তায়ালা আশুরার দিনে কবুল করেছেন এবং ঐদিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। ঐ দিনই তিনি দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছেন।

২. এই দিন হযরত ইবরাহিম (আ.) জন্ম লাভ করেন।

৩. হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে এদিন মুক্তি লাভ করেন।হযরত ইউসুফকে (আ.) কুপ থেকে বের করা হয় আশুরার দিনে।

৪. হযরত নূহ (আ.) এর কিস্তি (নৌকা) মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি লাভ করে জুদী পর্বতে এসে অবতরণ করে আশুরার দিনে।

৫. হযরত আইয়ুব (আ.) তার জটিল রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন পবিত্র আশুরার দিনে।

৬. হযরত মুসাকে (আ.) আল্লাহ তায়ালা এই দিনে ফেরআউনের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। নীলনদের বুকে তার জন্য রাস্তা করে দিয়েছেন এবং ফেরআউনের সেনাবাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছেন।

৭. হযরত দাউদ (আ.) এর তাওবা কবুল হয় এবং ইয়াকুব (আ.) কে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেয়া হয় পবিত্র আশুরার দিনে।

৮. হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর অসীম কুদরতে পিতার ঔরশ ব্যতীত মাতৃগর্ভ হতে জন্মলাভ করেন এবং এই দিনই তাকে বনি ইসরাইল এর হাত থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়।

৯. রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আগের-পরের সব ভুলত্রুটি মাফ করে দেওয়া হয় পবিত্র আশুরার দিনে। ঐ দিন হযরত সুলাইমান (আ.) সাম্রাজ্যের রাজত্ব লাভ করেন। হযরত ইদ্রিস (আ.) জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করেন

১০.নবী মুহাম্মদ -এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন এই দিন কারবালার ময়দানে ইয়েজিদের সৈন্যদের হাতে মৃত্যুবরণ করেন।

➤আশুরার ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
এপ্রিল ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ, মুয়াবিয়া কর্তৃক ইয়াজিদকে খলিফা ঘোষণা করা হয়।
ইয়াজিদ মদিনার গর্ভনরকে তাৎক্ষণিকভাবে হুসাইন ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনুগত্য ( বায়াত) আদয়ের জন্য নিদের্শ দেয়। কিন্তু
হুসাইন ইবনে আলী তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ, তিনি মনে করতেন যে, ইয়াজিদ ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে এবং মুহাম্মদের সুন্নাহকে পরিবর্তন করছে। অতঃপর হুসাইন ইবনে আলী তাঁর পরিবারের সদস্য, সন্তান, ভাই এবং হাসানের পুত্রদের নিয়ে মদিনা থেকে মক্কায় চলে যান।
অপরদিকে কুফাবাসী যারা মুয়াবিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে অবগত ছিল তারা চিঠির মাধ্যমে তাঁদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য হুসাইনকে অনুরোধ করেন এবং উমাইয়াদের বিপক্ষে তাঁকে সমর্থন প্রদান করে। প্রত্যুত্তরে হুসাইন চিঠির মাধ্যমে জানান যে অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য তিনি
মুসলিম ইবনে আকীল কে পাঠাবেন। যদি তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ দেখতে পান যেভাবে চিঠিতে বর্ণিত হয়েছে সেরুপ তবে খুবই দ্রুতই যোগ দিবেন, কারণ একজন ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে কুরআন বর্ণিত অনুসারে কাজের আঞ্জাম দেওয়া, ন্যায়বিচার সমুন্নত করা, সত্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজেকে স্রষ্টার নিকট সঁপে দেওয়া। মুসলিম ইবনে আকীলের প্রাথমিক মিশন খুবই সফল ছিল এবং ১৮০০ এর অধিক ব্যক্তি শপথ প্রদান করেছিল। কিন্তু অবস্থা ইতিমধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়।
উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ কুফার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেন এবং মুসলিম ইবনে আকীলকে হত্যার নির্দেশ জারি করেন। আকীলের মৃত্যু খবর পৌঁছার আগেই হুসাইন ইবনে আলী কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ করে দেন।
পথিমধ্যে হুসাইন খবর পান যে আকীলকে কুফায় হত্যা করা হয়েছে। তিনি খবরটি তাঁর সমর্থকদের জানালেন এবং তাদের বললেন যে জনগণ তাঁর সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি কোন সংশয় ছাড়াই তাঁর সাথীদের তাঁকে ছেড়ে চলে যেতে বললেন। অধিকাংশ সঙ্গী তাঁকে ছেড়ে চলে যায় নিকটাত্মীয়রা ছাড়া। যাই হোক কুফার যাত্রাপথে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের সাথে তাঁকে (হুসাইন) মোকাবেলা করতে হয়। কুফাবাসীগণ ইমামবিহীন থাকার কারণে তাঁকে (হুসাইন) আমন্ত্রণ করেছিল সে প্রতিশ্রুতির কথা কুফার সেনাবাহিনীকে স্মরণ করতে বললেন। তিনি বললেন যে, কুফাবাসী সমর্থন করেছিলো বলেই তিনি যাত্রা করেছেন। কিন্তু তারা যদি তাঁর (হুসাইন) আগমনকে অপছন্দ করে তবে তিনি (হুসাইন) যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যাবেন। তবে সেনাবাহিনী তাঁকে (হুসাইন) অন্য পথ অবলম্বন করতে বললেন। এতে করে, তিনি (হুসাইন) বাম দিকে যাত্রা করলেন এবং কারবালায় পৌঁছে গেলেন। সেনাবাহিনী তাঁকে (হুসাইন) এমন এক জায়গায় অবস্থান নিতে বাধ্য করল যে জায়গাটি ছিল পানিশূন্য।
সেনাপ্রধান উমার ইবনে সাদ হুসাইনের আগমনের উদ্দেশ্য বুঝার জন্য দূত প্রেরণ করলেন। হুসাইন জানালেন যে তিনি কুফাবাসীর আমন্ত্রণে এসেছেন কিন্তু তারা যদি অপছন্দ করে তবে তিনি ফিরে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। যখন এই প্রতিবেদন ইবনে জিয়াদের কাছে পৌছল তখন তিনি সাদকে হুসাইন ও তাঁর সমর্থকদের ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য আদয়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি এও নির্দেশ দিলেন যে, হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীরা যাতে কোন পানি না পায়। পরের দিন সকালে উমার বিন সাদ তার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। আল হুর ইবনে ইয়াজিদ আল তামিম সাদের দল ত্যাগ করে হুসাইনের সাথে যোগ দিলেন। তিনি কুফাবাসীদের বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে নবীর নাতীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ভৎসর্ণা করলেন। অতঃপর যুদ্ধে তিনি নিহত হন।

বাতিলের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামী সিপাহসালার লৌহমানব হকের স্বপক্ষে সিংহ পুরুষ ইমাম হুসাইন (রা.) সিংহের ন্যায় গর্জে ওঠে বললেন, সত্য যদি মিথ্যার কাছে মাথানত করে, তাহলে দুনিয়ার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কে? বাধ্য হয়ে তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন।
৬১ হিজরির ১০ই মুহাররম ফুরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে দু’দল সৈন্য বাহিনী মুখোমুখি। একদল ইমাম হুসাইনের সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৭০ জন। অপরপক্ষে ইয়াজিদ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৪ হাজার। শত্রুপক্ষ দ্বারা ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর বাহিনী চতুর্দিকে বেষ্টিত হয়ে পড়েন। ফুরাতে পানি থৈ থৈ করলেও শত্রুদের বাধার কারণে কারবালা মাঠে এক ফোঁটা পানিও নেই। যুদ্ধই যখন অনিবার্য তখন এর পূর্ব মুহূর্তে ইমাম হুসাইন (রা.) কুফাবাসীদের উদ্দেশ্যে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, হে কুফাবাসীরা! স্মরণ রেখো আমি আখেরি নবীর প্রিয় দৌহিত্র, হযরত আলী (রা.) এর আদরের দুলাল, বিশ্ব জননী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (রা.) আমার মা। আমাদের দুই ভাইকে রাসূল (সা.) জান্নাতি যুবকদের সর্দার ঘোষণা করেছেন। তোমরা সত্য করে বলো, তোমরা কি আমাকে পত্র দিয়ে আহবান করনি? তোমরা কোন সাহসে আজ আমাকে হত্যা করতে উদ্ধত হলে? তিনি আবেগের কণ্ঠে আরো বলেন, ‘তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে সুলিম বলে দাবি করছ। অথচ আমার একটি অপরাধ আমি ইয়াজিদের মতো একজন গোমরাহ জালিম ব্যক্তিকে মুসলিমদের আমীর বলে স্বীকার করতে পারছিনা। তাই সেই অপরাধে আজ তোমরা আমার রক্ত পান করতে যাচ্ছ।’ ইমামের এই ভাষণ ইয়াজিদ বাহিনীর মনে কোনো রেখাপাত করল না বরং যুদ্ধ শুরু হল।

কারবালার যুদ্ধ সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দিনটি ছিল ১০ ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রিস্টাব্দ (মুহাররম ১০, ৬১ হিজরি) এই যুদ্ধে প্রায় ৭২ জন নিহত হন যাদের সকলেই পানি বঞ্চনার শিকার হন। অর্থাৎ সকল পুরুষ সদস্যই নিহত হন কেবলমাত্র রোগা ও দুর্বল জয়নুল আবেদিন ছাড়া।
এটি এক অসম যুদ্ধ ছিল। যেখানে হুসাইন ও তাঁর পরিবার বিশাল এক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীন হন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু রায়হান আল বিন্নী এর মতে, “তাবুগুলোতে আঙুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং মৃতদেহগুলোকে ঘোড়ার খুড় দ্বারা ক্ষতবিক্ষত ও পদদলিত করা হয়; মানব ইতিহাসে কেউ এমন নৃশংসতা দেখেনি। হত্যার আগমুহূর্তে হুসাইন বলেন, “ আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যদি মুহাম্মদের দ্বীন জীবন্ত হয়, তবে আমাকে তরবারি দ্বারা টুকরো টুকরো করে ফেল।”
উমাইয়া সৈন্যরা হুসাইন ও তাঁর পুরুষ সঙ্গীদের হত্যা করার পর সম্পদ লুট করে, মহিলাদে গয়না কেড়ে নেয়। শিমার জয়নাল আবেদীনকে হত্যা করতে চাইলে
জয়নাব বিনতে আলী এর প্রচেষ্টায় কমান্ডার উমার ইবনে সাদ তাঁকে জীবিত রাখেন। তাঁকেও (জয়নাল আবেদীন) বন্দী নারীদের সাথে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। [মূল নিবন্ধ: কারবালার যুদ্ধ]

➤আশুরার শিক্ষা:
১. আশুরার দিনটি মূলত বাতিলের পরাজয় এবং সত্যপন্থী, হকপন্থীদের বিজয় ও মুক্তির দিবস।
২. নবী ও তাঁদের অনুসারীগণের ইতিহাস স্মরণপূর্বক আল্লাহর বিধান পালন ও বাস্তবায়নে অবিচলতা, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা যথার্থমানের হতে হবে। তাহলে এখনো আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব বাতিল শক্তির মোকাবেলায় মুসলিমদের বিজয়ী করবেন।
৩. ঈমান-আকিদাবিরোধী সব কার্যকলাপ বন্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে।
৪. মুসলিম নামধারী হয়েও যারা ইয়াজিদ, ইবনে জিয়াদ ও শিমারের ভূমিকা পালন করছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
৫. ইসলাম সম্পর্কে যারা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে তাদেরকে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে এবং ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে সবাইকে আহ্বান জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিজেদের কুরআন-হাদিস ও ইসলামি সাহিত্য নিয়মিত অধ্যয়ন ও চর্চার দ্বারা ইসলামের যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
৬. সুস্থ ও মননশীল সংস্কৃতিচর্চা ও প্রচারের মাধ্যমে অপসংস্কৃতির বিভীষিকা রোধ করতে হবে।
৭. সত্য ও ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বাতিলের মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কাজে ত্যাগ এবং কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৯. সুযোগ থাকার পরও যেমন হুসাইন রা:-এর সাথীরা তাকে ছেড়ে না গিয়ে তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সাথে থেকেছেন তেমনি আমাদেরও উচিত সত্যপন্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সাথে থাকা।
১০. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সার্বিক সফলতা অর্জনের জন্য নিজেরা নেক আমল করা, সর্বপর্যায়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন এবং খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

দৈনিক ৩৬০ বার যাঁর কলিজায় আঘাত করেছি তিনি-মা: এস এম শাহনূর

| ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩:১৪ অপরাহ্ণ

দৈনিক ৩৬০ বার যাঁর কলিজায় আঘাত করেছি তিনি-মা: এস এম শাহনূর

“মা গো! আমায় বলতে পারিস কোথায়
ছিলাম আমি-
কোন্ না-জানা দেশ থেকে তোর
কোলে এলাম নামি?”
(কোথায় ছিলাম আমি/কাজী নজরুল ইসলাম)

[জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
“মা, তোমারে কত ভালোবাসি!”
“কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।
“এ-ত।” বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।]
(কত ভালবাসি/ কামিনী রায়)

মা’শব্দটি এক অক্ষরের হলেও এর তাৎপর্য অতুলনীয়। তাই মা হওয়ার স্বপ্নটা প্রায় সব মেয়েরই থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ নারী মা হওয়ার পর এক অনন্য অনুভূতি পান।যে অনুভূতি নারীকে অসাধারণ করে তোলে।একজন নারীর জীবনে মা হওয়ার প্রতিটি মুহূর্তই ভীষণ সুন্দর। দীর্ঘ নয় মাস শরীরের ভেতরে নানা শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তবুও সে যন্ত্রণা তাঁর কাছে সুখের অনুভূতি দেয়।

শিশু মায়ের গর্ভে আসার পরপর মায়ের মনে কাজ করে এক দারুন অনুভব। মা বুঝতে পারেন যে,আরেকটি নতুন প্রাণ তার শরীরে তরতর করে বেড়ে উঠছে। শিশু মুলত নড়াচড়া শুরু করে ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়স থেকে। প্রথমে এগুলি “বুদবুদ” “কম্পন” বা “রূদ্ধ বাতাস” বলে মনে হতে পারে।কিন্তু শিশুর শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তখন পর্যন্ত ঠিকভাবে গঠিত হয় না বলেই মা তা সেইভাবে বুঝতে পারেন না। সাধারণত শিশুর বয়স ১৬ সপ্তাহ থেকে ২২ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে শিশু তার দেহের নড়াচড়া এমনভাবে করতে শুরু করে যে মা তা টের পেতে শুরু করে। এই সময় আল্ট্রাস্নোগ্রাফীর মাধ্যমেও মা শিশুর এই নড়াচড়া দেখতে পারেন এবং অনুভব করতে পারেন।
এই সময় হঠাৎ পেটে লাথি, ঘুষি অনুভব করা কিংবা হঠাৎ হঠাৎ পেট ব্যথা শিশুর নড়াচড়ার ফলে মা অনুভব করতে পারেন।
চিকিৎসকেরা এই নড়াচড়াকে মাছের সাঁতার কাটার সময়ের নড়াচড়া, প্রজাপতির উড়ে বেড়ানোর সময়ের নড়াচড়ার সাথে তুলনা করেছেন। মাঝে মাঝে এই ব্যথা গ্যাস্ট্রিক বা ক্ষুধার জন্য পেটে ব্যথার মত অনুভূত হয়।

➤২৪ থেকে ৩৬ সপ্তাহঃ
এই সময় মহিলারা প্রায়শইঃ তাদের শিশুদের নড়াচড়াগুলিকে বর্ণনা করেন এইভাবে – “গড়াচ্ছে”, “লাথি মারছে”,”খোঁচা মারছে”, “কনুই মারছে”, এবং “টান টান হচ্ছে ”।

মানবসমাজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য এবং সবচে’ বড় কথা, আল্লাহর পক্ষ হতে অর্পিত খেলাফতের দায়িত্ব বহন করার জন্য সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ, সবচে’ কঠিন ও কষ্টকর যে দায়িত্ব তা হলো সন্তান ধারণ ও সন্তান প্রসব। কে পালন করবে এ মহা-দায়িত্ব? মহান আল্লাহ এতদ্ বিষয়ে নারীকে নির্বাচন করেছেন এবং নারীর দেহসত্তা ও মানসসত্তাকে সেভাবেই তৈরী করেছেন।
তারপর সবচে’গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক প্রতিপালন, তার শিক্ষা, দীক্ষা, নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন। আজকের শিশু হলো আগামী দিনের আদর্শ মা, আদর্শ বাবা এবং আলিমে দ্বীন, দাঈ ইলাল্লাহ ও মুজাহিদ ফী সাবীলিল্লাহ। তো কে পালন করবে শিশুকে গড়ে তোলার এ মহাদায়িত্ব? এখানেও নারীর ভূমিকাই বড়। মাতৃত্ব দিয়ে নারীকে আল্লাহ গৌরবান্বিত করেছেন, আর পিতৃত্ব দিয়ে পুরুষকে আল্লাহ মুক্তি দান করেছেন। মাতৃত্বের গৌরব অর্জন করার জন্য পৃথিবীর প্রতিটি নারীকে প্রতিবার জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে হয় এবং দীর্ঘ নয় মাস ব্যথার সাগর পাড়ি দিতে হয়। পক্ষান্তরে পুরুষকে শুধু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ব্যয়ভার বহন করতে হয়।নারীদেরকে আল্লাহ তায়ালা মাতৃত্বের জন্যই বিশেষ করে সৃষ্টি করেছেন। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একজন উত্তম মা দাও আমি তোমাদেরকে একটি উন্নত জাতি উপহার দেবো’। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সন্তানের প্রথম শিক্ষক হচ্ছে, ‘মা’। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত’।আল্লাহ তো নারী ও পুরুষ উভয়ের স্রষ্টা। তিনি জানেন, মাতৃত্ব কীভাবে অর্জিত হয়, আর পিতৃত্ব লাভ হয় কার কষ্টের সুফলরূপে। আল্লাহ বলেছেন-
ﻭﻭﺻﻴﻨﺎ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﺑﻮﺍﻟﺪﻳﻪ ﺍﺣﺴﺎﻧﺎ ﺣﻤﺘﻠﻪ ﺍﻣﻪ ﻛﺮﻫﺎ ﻭﻭﺿﻌﺘﻪ ﻛﺮﻫﺎ
(আর মানুষকে আমি উপদেশ দিয়েছি তার মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার। তার মা তাকে বহন করেছে কষ্ট করে এবং প্রসব করেছে কষ্ট করে।)
আল্লাহ তাআলা পিতামাতা উভয়ের প্রতি সদাচারের আদেশ করার পর বিশেষভাবে মায়ের কষ্টের কথা বলেছেন। এভাবে আল্লাহ নারীর মাতৃত্বকে মহিমান্বিত করেছেন এবং সম্ভবত এ বিষয়েও তাম্বীহ করেছেন যে, পুরুষের পিতৃত্বের পিছনেও নারীর গর্ভযন্ত্রণা ও প্রসববেদনার অবদান।

★আসুন চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে জেনে নেই।

➤চিকিৎসকেরা বলছেন, গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহ হলে মা বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। অনেক ক্ষেত্রে এটা ২৫ সপ্তাহ থেকেও শুরু হয়। বাচ্চা প্রতি ঘণ্টায় ৩০ মিনিট নড়াচড়া করে। মায়ের বসা বা শোয়া অবস্থায় বাচ্চা নড়াচড়া বেশি করে। সাধারণত রাত ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বাচ্চা বেশি নড়াচড়া করে।

➤চিকিৎসকদের মতে, দু ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার লাথি মারলে বাচ্চাকে সুস্থ বলে মনে করা যায়। তবে এর কম-বেশিও হতে পারে। তবে ১০ বারের কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।

➤চিকিৎসকদের গবেষণায় দেখা গেছে, তৃতীয় ট্রিমেস্টারে(৭ মাস-জন্মের আগে পর্যন্ত )-মাতৃগর্ভে শিশু ঘন্টায় প্রায় ৩০ বার পর্যন্ত মুভ করে থাকে।
দিনের একেক সময়ে বাচ্চা একেক হারে নড়তে পারে যেমন- ঠিক মায়ের ঘুমোনোর সময়ে অর্থাৎ রাত ৯টা থেকে ১টার মধ্যে এটা খুব বেশি সক্রিয় থাকবে এবং এই সময় মা বেশি লাথি অনুভব করবেন। শব্দে এবং সংস্পর্শেও অনেক সময় বাচ্চা নড়তে পারে, এমন কি পেটের স্পর্শে থাকা যে কেউ বাচ্চার লাথি টের পেতে সক্ষম হবে।

➤ বাচ্চারা ঘুমের সময় কোনো মুভমেন্ট করে না। এই স্লিপিং ফেজ সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

★আসুন জেনে নেই মায়ের কলিজায় কতবার আঘাত করেছি!!

➤ মাতৃগর্ভে শিশু যদি দৈনিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ ঘন্টাও জেগে থাকে,উপরোক্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে তাহলে সে মায়ের পেটে দৈনিক ১২ঘন্টা×৩০বার = ৩৬০ বার নড়াচড়া বা মোভ করে।

♦একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্ণ সময়কাল হচ্ছে ৪০ সপ্তাহ।

➤উপরোক্ত ডাক্তারী তথ্যমতে,গর্ভধারনের ১৬ সপ্তাহ থেকে বাকী ২৪ সপ্তাহ জুড়ে শিশু মাতৃগর্ভে পা ছুড়ে তার সুস্থতার অস্তিত্বের জানান দেন।

জীবনে অনেক হিসেব আর অংক করেছেন।আসুন এবার আমার কিংবা আপনার পৃথিবীতে আসার পূর্বে মায়ের পেটে কতটি লাথি,গুতা,কিল,ঘুষি মেরেছি তার একটি অংক করি।

➤প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভে প্রতি ১ দিনে লাথি মারেন=৩৬০ বার।
➤প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভে প্রতি ১ সপ্তাহ বা ৭দিনে লাথি মারেন ৩৬০×৭=২৫২০ বার।
সুতরাং প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভে ২৪ সপ্তাহে লাথি মারেন ২৫২০×২৪=৬০৪৮০ বার।

প্রতিটি মানব শিশু মায়ের কলিজায় কমপক্ষে ষাট হাজার,চার শ, আশিটি লাথি বা আঘাত করে নাড়ীর বাঁধন কেটে এই মর্ত্যের পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের জানানা দেন।

খোকা মাকে শুধায় ডেকে–
“এলেম আমি কোথা থেকে,
কোন্‌খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে।’
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
খোকারে তার বুক বেঁধে–
“ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে।
(জন্মকথা/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

পৃথিবীতে একমাত্র মায়ের ভালোবাসা স্বার্থহীন ও শর্তহীন। মায়ের যে ভালোবাসা সন্তানের প্রতি তা অতুলনীয়,নির্ভেজাল ও চির সজীব।আমার মা সহ পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

♥ রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ঈয়ানী সাগিরা।
(সূরা বণী ইসরাইল, আয়াতঃ ২৩-২৫)
[ অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি সেই ভাবে সদয় হউন, তাঁরা শৈশবে আমাকে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছেন।] আমীন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

কন্যার মুখে প্রথম আব্বু ডাক ও ভাষার জন্ম রহস্য: এস এম শাহনূর

| ২৬ আগস্ট ২০১৯ | ৬:২৩ অপরাহ্ণ

কন্যার মুখে প্রথম আব্বু ডাক ও ভাষার জন্ম রহস্য: এস এম শাহনূর

আমার একমাত্র তনয়া প্রিন্সেস সামীহা নূর জারা’র জন্ম হলে আমি কল্পনা করতাম,মেয়ে আমাকে বাবা বলে ডাকবে আর ওর গর্ভধারিনীকে ডাকবে মা।তাই সারাক্ষণ বাবা.বা বা….. বলে ওর মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতাম।ভাবতাম পুরো শব্দটি প্রথম দিকে উচ্চারণ না করতে পারলেও বা…… বা….তো উচ্চারণ করতে পারবে।আমি একজন সুদক্ষ প্রশিক্ষকের মত ওর প্রতি সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করলাম।মহান আল্লাহ পাক গত বছর(২০১৭খ্রী:) ২৫ শে অক্টোবর আমাদের দাম্পত্যজীবনে আর্শীবাদ স্বরূপ এ কন্যা সন্তান দান করেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম চলতি বছরের (২০১৮খ্রী)১৭ মার্চ কোন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মেয়ে আমার কোন প্রকার জড়তা ছাড়াই নিজ ভঙ্গিতে ছোট্ট করে ডেকে উঠলেন-আ ব্বু……আব্বু।

ঠিক একই দিনে ওর মাকে ডাকলো,আমমা..আম মা।

আমাদের শেখানো “বাবা” “মা”বুলিগুলো সে গ্রহন করেনি।বরং আমার চিন্তা জগতের সামনে উন্মোচন করেছে ভাষার উদ্ভব সংক্রান্ত এক মহাজাগতিক রহস্য।

বর্তমান পৃথিবীতে মোট সাত হাজার ৯৯টি ভাষা চলমান।[ভাষার জরিপ প্রকাশকারী সংস্থা অ্যাথনোলোগের (ethnologue) তথ্য মতে]
অনেক ভাষাবিজ্ঞানী এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে ইন্দো-ইউরোপীয় আদি ভাষা থেকে সব ভাষার উৎপত্তি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ থেকে ৩৫০০ অব্দের মাঝামাঝি সময়ে এ আদি ভাষার জন্ম হয়।
আমি ওনাদের মত জ্ঞান তাপসদের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারছিনা বলে দুঃখ প্রকাশ করছি।

সত্যিকার অর্থে,ভাষার শুরুটা কিভাবে হয়েছে,এ নিয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের বিরোধের অন্ত নেই!চার্লস ডারউইন বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শব্দের ইঙ্গিত, প্রাণীদের আওয়াজ ও মানুষের স্বভাবগত উচ্চারিত ধ্বনির অনুসরণ ও সংশোধন করে। ’ (The Descent of Man, and Selection in Relation to Sex, 2 vols. London : Murray, p. 56.)

কিন্তু আমি তাঁর যুক্তির সাথে পুরোপুরিভাবে একমত নয়।

একদল ভাষাবিজ্ঞানী ভাষার উৎপত্তি নিয়ে দুটি তত্ত্ব দিয়েছেন,

★(এক) অবিচ্ছিন্নতাতত্ত্ব বা Continuity theories. সেটি হলো, ‘ভাষার বিষয়টি এত জটিল যে তার চূড়ান্ত প্রকৃতি বিষয়ে কল্পনা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এটি পূর্বপুরুষদের থেকে পরম্পরাগতভাবে চলে আসছে। ’

★(দুই) বিচ্ছিন্নতাতত্ত্ব বা Discontinuity theories. এ তত্ত্ব আগেরটির বিপরীত। অর্থাৎ ‘ভাষা এমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যে মানুষ ছাড়া অন্য কারো মধ্যে ভাষার ব্যবহার পাওয়া যায় না। মানবীয় বিবর্তনপ্রক্রিয়ার কোনো একসময়ে একবারেই হঠাৎ ভাষার প্রকাশ ও বিকাশ ঘটেছে।

★ওউ-ভৌ’ (wow-Bow) তত্ত্বঃ
ঊনবিংশ শতাব্দীতে মনে করা হতো, প্রাকৃতিক ধ্বনি থেকে ভাষা সৃষ্টি হয়েছে।বলা হয়ে থাকে, সর্বপ্রথম প্রাণী ও পাখির আওয়াজ থেকে ধ্বনি তৈরি হয়েছে। এ তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন জার্মান লেখক ও দার্শনিক জুহান গটপ্রেড হার্ডার (Johann Gottfried Herder.)

★‘পুঃ পুঃ’ (Phoo-phoo) তত্ত্বঃ
মানুষের আনন্দ, বেদনা ও আবেগ অনুসৃত ধ্বনি থেকে ভাষার জন্ম। এটা

★‘ডিঙ-ডঙ’ (Ding-dong) তত্ত্বঃ
মুইলরের মতে, বস্তুর প্রাকৃতিক বুদ্বুদ বা আওয়াজ থেকে পাওয়া ধ্বনি থেকে ভাষার জন্ম।

★‘ইউ হে হু’ (Yo-he-ho) তত্ত্বঃ
মানুষের যৌথ কায়িক কসরতের পরিণতিতে ভাষার উদ্ভব হয়েছে। কায়িক প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন করার সময় যে আওয়াজ বের হয়, তা থেকে ভাষার জন্ম। (The Origin of Language. pp. 7-41.)

ভাষার উৎপত্তি বিষয়ে এত জটিলতা থাকার কারণে ১৮৬৬ সালে প্যারিসের ভাষাতাত্ত্বিক সমিতি (Linguistic Society of Paris) ভাষার উৎস সংক্রান্ত যেকোনো গবেষণাপত্র পাঠে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

আজ আমি বিনয়ের সাথে ওনাদের এমন সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করছিন।এবং এতদ্ বিষয়ে জটিলতার অবসান সংক্রান্ত প্রেসক্রিপশন দিচ্ছি। কারণ,ভাষা কোন কালেই মানুষ সৃষ্টি করেনি।ভাষার সৃষ্টিকাল এবং এর নিগুঢ় রহস্য উন্মোচন করতে হলে মানব সৃষ্টির মহা রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা জরুরী বলে আমি মনে করি।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে এমনভাবে বের করেছেন যে তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৭৮)
মহান আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) মানুষকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। ’ (সুরা : আর-রাহমান, আয়াত : ৪)
ভাব প্রকাশের মৌখিক পদ্ধতি ছাড়াও রয়েছে লিখিত পদ্ধতি। সে পদ্ধতিও আল্লাহর শেখানো। আল্লাহ বলেন, ‘পড়ো, তোমার প্রভু মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। ’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ৩-৪)

বলা হয়ে থাকে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা যেসব জায়গায় অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, ভাষার উৎপত্তি বিষয়ক গবেষণা তেমনই একটি স্পর্শকাতর জায়গা। আসলে কি তাই? মোটেও না।এ বিষয়ে কোরআন তো বহু আগেই মীমাংসা করে দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘‘আর আল্লাহ শেখালেন আদমকে (আদি মানব) সব বস্তুর নাম। তারপর সেসব বস্তু ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করেন। অতঃপর বলেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা (শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে) সত্য হয়ে থাকো। তারা বলল, আপনি পবিত্র! আমরা তো কোনো কিছুই জানি না, তবে আপনি যা আমাদের শিখিয়েছেন (সেগুলো ছাড়া)। নিশ্চয়ই আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, প্রজ্ঞাময়। ‘’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩১-৩২)

কাজেই ভাষার ইতিহাস মানব ইতিহাসের সমসাময়িক। ভাষাজ্ঞান নিয়েই মানুষের জন্ম হয়েছে, এটা আল কুরআনের অকাট্য, সুনির্দিষ্ট ও শাশ্বত বক্তব্য। সুতরাং আদি মানব আদম (আ:) ভাষাজ্ঞান লাভ করেছেন মহান আল্লাহর কাছ থেকে। অতঃপর বংশপরম্পরায় তাঁর সন্তানদের মধ্যে ভাষার বিকাশ হতে থাকে। বলা যায়, একসময় পৃথিবীর মানুষ অভিন্ন ভাষায় কথা বলত। তখন ভাষা ছিল মাত্র একটি। কালক্রমে মানুষের চিন্তা ও রঙের বৈচিত্র্যের মতো ভাষাবৈচিত্র্যের উদ্ভব হয়। সেই উদ্ভাবনী ক্ষমতাও মহান আল্লাহ দান করেছেন। ভাষাবৈচিত্র্য মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে। ’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২২)

★তথ্যসূত্রঃ
[1] (H. Christiansen, Language evolution. Oxford University Press. pp. 7-41)

♦Copyright @ এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

যাব কেল্লা বাবার বাড়ি,মাঝি ভাসাও তরী: এস এম শাহনূর

| ১৫ আগস্ট ২০১৯ | ৯:০৩ অপরাহ্ণ

যাব কেল্লা বাবার বাড়ি,মাঝি ভাসাও তরী: এস এম শাহনূর

“যাব কেল্লা বাবার বাড়ি,মাঝি ভাসাও তরী”।
“খড়মপুরে গেলে পাবি সোনার মানুষ একজনা,
আশেকের নয়নমণি কেল্লা বাবা মাওলানা”।
আরো কত গানের কলি এখনও কানে বাজে আমার! ছোট বেলায় দেখতাম আমাদের গ্রামের পাশের অদের খাল দিয়ে অসংখ্য মানুষ নেচে গেয়ে,ডোল বাদ্য বাজিয়ে নৌকায় করে খড়মপুর ওরসে যেতো।এখন এ পথে আর দূরপাল্লার পাল তুলা,দাড়টানা নৌকা চলেনা।তবে এখনও ভক্তকুল যায়।আমি শৈশবে আপনজনদের সাথে বেশ কয়েকবার খড়মপুর দরগাহে গিয়েছি।সেই স্মৃতি চোঁখে ভাসে। কিন্তু ইট পাথরের নগরীতে থাকি বলে এখন আমার আর যাওয়া হয়না।দেখা হয়ে উঠেনা ওরসের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ।

হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ(র:) ওরফে কল্লা শহীদ এর মাজার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার খড়মপুরে পুরনো তিতাস নদীর তীরে অবস্থিত।কল্লা শাহ নিয়ে কয়েকটি কাহিনি প্রচলিত আছে—
খড়মপুরের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরত। একদিন জেলে চৈতন দাস ও তার সঙ্গীরা নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে একটি খণ্ডিত শির আটকা পড়ে যায়। তখন জেলেরা ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে এবং খণ্ডিত শিরটি উঠাতে গেলে আল্লাহর কুদরতে খণ্ডিত শির বলতে থাকে—‘একজন আস্তিকের সাথে একজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত কলেমা পাঠ করে মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না।’ খণ্ডিত মস্তকের এ কথা শুনে মস্তকের কাছ থেকে কলেমা পাঠ করে চৈতন দাস ও সঙ্গীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যায়। মস্তকের নির্দেশ মোতাবেক ইসলামি মতে খড়মপুর কবরস্থানে মস্তক দাফন করে। ধর্মান্তরিত জেলেদের নাম হয় শাহ বলা, শাহ লো, শাহ জাদা, শাহ গোরা ও শাহ রওশন। তাঁরাই এ দরগাহের আদি বংশধর। এই দরগাহের খ্যতি ধীরে ধীরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকেই শাহ পীর সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ওরফে কেল্লাশহীদের পবিত্র মাজার শরিফ নামে পরিচিতি লাভ করে।
কাহিনীর স্বরূপসন্ধানে—
প্রচলিত আছে, আউলিয়া হজরত শাহ জালাল (র)-এর সঙ্গে সিলেটে যে ৩ শ ৬০ জন শিষ্য এসেছিলেন হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। ইয়েমেনের গেজুদারাজ ছিলেন হজরত শাহজালালের ভাগিনা। আরব থেকে যে আউলিয়া ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে এসেছিলেন তাঁদের একজন গেজুদারাজ। গেছুদারাজ শব্দের অর্থ লম্বা চুলওয়ালা। অত্যাচারের কারণে তৎকালীন শ্রীহট্টের রাজা আচক নারায়ণের বিরুদ্ধে আউলিয়াদের ওই দলটি যুদ্ধ ঘোষণা করে। সেই যুদ্ধে আউলিয়ারা জয়ী হলেও আচক নারায়ণের সেনাপ্রধান নীলকমলের তরবারির আঘাতে গেছুদারাজের শিরশ্ছেদ হয়। আর সেই শির গিয়ে পড়ে কুশিয়ারা নদীতে। যা ভাসতে ভাসতে তিতাসের মোহনায় এসে জেলেদের জালে ওঠে। এই কাহিনির সঙ্গে কোনো প্রামাণ্য যুক্তি পাওয়া যায় না।

আখাউড়ার খড়মপুরে অবস্থিত হযরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ (র)-এর দরগাহ যা কল্লা শহীদের দরগাহ নামে সমগ্র দেশে পরিচিত। ২৬০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দরগাহ শরিফের জায়গা তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দান করেছিলেন।
অনেক খাদেম বলে থাকেন,এই নদীর এক তীর এখানে আর এক তীর ভৈরব। এই পাশে কৈলাশপুর, মাঝে কালিদাস সাগর। সেই সময়ে এই তিন নদীর মোহনায় খুব মাছ ধরা পড়ত। তাই জেলেদের মাছধরার মোক্ষম জায়গা ছিল এই মোহনা। একদিন মোহনায় জেলেদের জালে একটা শরীর বিহীন কল্লা উঠল। প্রথমে জেলেরা ফেলে দিল। আবার জাল ফেলার পর সেই কল্লা আবারও উঠল জালে। এবার কল্লা কথা বলে উঠল, জেলেদের কলমা পড়তে বলল। জেলেরা জানাল, তারা কলেমা জানে না। পরে কাটা শির (কল্লা) জেলেদের কলেমা শিখিয়ে দিল। জেলেরা কলেমা পড়ল এবং কল্লার কথামতো কল্লাটাকে, তিন নদীর মোহনার স্থলভাগে কবর দিল। পরে সেখানে অলৌকিকভাবে মাজার গড়ে উঠেছে।’
প্রচলিত কাহিনির সত্যতা—
হজরত শাহজালাল (র) সঙ্গীদের একজনের নাম সৈয়দ আহম্মদ। যাঁর কারণে অনেকে সৈয়দ আহম্মদ ওরফে গেজুদারাজ বা কল্লা শাহকে শাহজালালের সঙ্গীর শির বলে থাকেন, এটা ঠিক না। শাহজালালের ইতিহাস ৬০০ বছরের। আর কল্লা শাহর (র) ইতিহাস প্রায় ১১ শ বছরের। এর প্রমাণ আছে কমপ্লেক্সের মসজিদে। লোকমুখে জানা যায় ২২০ সালে কল্লা শাহর জন্ম। তিনি ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন। ৩২৩ সালে এই মসজিদটি তৈরি করেন। মসজিদের গায়ে লেখা আছে ৩শ ২৩ ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় পুরনো বাংলা সন অনুসরণ করা হয়। কাজেই এই মসজিদের বয়স ১১ শ বছরের মতো। মসজিদ হয়েছে মুসলমানদের জন্য। তার মানে এখানে মুসলমানদের আগমনে মসজিদ হয়েছে। কাজেই কল্লা শাহর ইতিহাস প্রায় ১১ শ বছর বা এর কাছাকাছি।
প্রথম থেকেই কল্লা শাহর উরস ২৬ শে শ্রাবণ থেকে তিন দিনব্যাপী হতো। পরে তা সাত দিনে দাঁড়ায়। আগে এত লোক সমাগম হতো না। এখন লোক সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে মাজারের আয়ও বেড়েছে। খড়মপুর শুধু মুসলমনাদের পুণ্যস্থান, তা নয়। সান্দিয়ারা আর কালিদাস গিয়ে যেখানে তিতাসের সঙ্গে মিলেছে সেখানে ফাল্গুনি চাঁদের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে এই ত্রিবেণীতে পুণ্যস্নান হয়। স্নানে ভারত থেকেও পুণ্যস্নানার্থীরা আসেন।

অনেক ভক্ত মনে করেন এই কল্লা আসলে হোসেনের কল্লা। এভাবে ভক্তের বিশ্বাসে পাখা গজিয়েছে গল্পের। অনেকটা রূপকথার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে কল্লা শহীদের মাজার।চলতি মাসের ১০ আগষ্ট থেকে ৭ দিন ব্যাপী খড়মপুরে চলছে কল্লা শহীদের স্মরণে ওরশ।আজ দিন শেষে মাঝরাতে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ২০১৯ সালের ওরশ।হাজার নয়,প্রতিদিন লাখো ভক্ত দরগাহে গিয়ে তাদের মনের আর্তি নিবেদন করছে নানান ভঙ্গিতে।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

আগামী ১২ আগস্ট ত্যাগের উৎসব-পবিত্র ঈদুল আজহা: এস এম শাহনূর

| ০২ আগস্ট ২০১৯ | ১০:০৬ অপরাহ্ণ

আগামী ১২ আগস্ট ত্যাগের উৎসব-পবিত্র ঈদুল আজহা: এস এম শাহনূর

১৪৪০ হিজরি সনের পবিত্র ঈদুল আজহার জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১২ আগস্ট ঈদুল আজহা।
গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের আকাশে জিলহজের চাঁদ দেখা যাওয়ায় এবার মুসলমানদের পবিত্র হজ ৯ আগস্ট শুক্রবার শুরু হবে। পরদিন শনিবার হাজীরা লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। আর আরব বিশ্বে ১১ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়-
‘তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে,
ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’।
মানুষ আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবে, এই শিক্ষাই ইবরাহীম (আঃ) আমাদের জন্য রেখে গেছেন।ঈদুল আযহা ইবরাহীম (আঃ), বিবি হাজেরা ও ইসমাঈলের পরম ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। ইবরাহীম (আঃ)-কে আল-কুরআনে মুসলিম জাতির পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে (হজ্জ ৭৮)। এ পরিবারটি বিশ্ব মুসলিমের জন্য ত্যাগের মহত্তম আদর্শ। তাই ঈদুল আযহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতি ইবরাহীমী সুন্নাত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে। কুরবানীর স্মৃতিবাহী যিলহজ্জ মাসে হজ্জ উপলক্ষে সমগ্র পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হয় ইবরাহীম (আঃ)-এর স্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদীনায়। তাঁরা ইবরাহীমী আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন। হজ্জ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ। যা প্রতি বছরই আমাদেরকে তাওহীদী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। আমরা নিবিড়ভাবে অনুভব করি বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। ঈদের উৎসব একটি সামাজিক উৎসব, সমষ্টিগতভাবে আনন্দের অধিকারগত উৎসব। ঈদুল আযহা উৎসবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কুরবানী। কুরবানী হ’ল চিত্তশুদ্ধির এবং পবিত্রতার মাধ্যম। এটি সামাজিক রীতি হ’লেও আল্লাহর জন্যই এ রীতি প্রবর্তিত হয়েছে। তিনিই একমাত্র বিধাতা প্রতিমুহূর্তেই যার করুণা লাভের জন্য মানুষ প্রত্যাশী। আমাদের বিত্ত, সংসার এবং সমাজ তাঁর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত এবং কুরবানী হচ্ছে সেই নিবেদনের একটি প্রতীক।

কুরআন-হাদীছে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তাকীদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّنْ شَعَائِرِ اللهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌ- ‘আর কুরবানীর পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ্জ ৩৬)। আল্লাহ আরও বলেন, وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ- وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِيْنَ- ‘আর আমরা তাঁর (ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী। আমরা এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ১০৭-১০৮)। আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’ (কাওছার ২)। কাফির-মুশরিকরা তাদের দেব-দেবী ও বিভিন্ন কবর ও বেদীতে পূজা দেয় এবং মূর্তির উদ্দেশ্যে কুরবানী করে থাকে। তার প্রতিবাদ স্বরূপ মুসলমানকে আল্লাহর জন্য ছালাত আদায়ের ও তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةً وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرِبَنَّ مُصَلاَّنَا ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’।এটি ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ যা ‘সুন্নাতে ইবরাহীম’ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন। অতঃপর অবিরত ধারায় মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের মধ্যে এটি চালু আছে। এটি কিতাব ও সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুপ্রমাণিত।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

কুরআন সুন্নাহর আলোকে নেক সন্তান লাভের আমল: এস এম শাহনূর

| ২০ জুলাই ২০১৯ | ১:০৬ অপরাহ্ণ

কুরআন সুন্নাহর আলোকে নেক সন্তান লাভের আমল: এস এম শাহনূর

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
সমস্ত প্রসংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য এবং অগণিত দরুদ রাসূলে আরাবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
শিরোনামে বর্ণিত লেখাটি আপনার জন্য উৎসর্গিত, যিনি পরম আকাঙ্খিত দাম্পত্য জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।শিরোনামে বর্ণিত লেখাটি আপনার জন্যও উৎসর্গিত,যিনি হাসি খুশী ভরা একটি সংসারের জন্য নেক সন্তান কামনা করছেন।এবং এই লেখাটি বিশেষ প্রার্থনা সহ সেই সকল পেরেশানি দম্পতির জন্য উৎসর্গিত যাদের সংসারে ইয়া মুতাকাব্বিরু গুণবাচক নামের আল্লাহ এখনো সন্তান নামক সুখ ও স্নেহাসম্পদ দান করেন নি।আমার স্বচ্ছল ও মধুময় দাম্পত্য জীবনের প্রথম ১২টি বছর মহান আল্লাহ পাক কোন সন্তান দান করেননি।ব্যস্ততম জীবনের মাঝে সংসারে সুখ,শান্তি,আনন্দ,পারস্পরিক আন্তরিক সমঝোতা সবই ছিল।তবু মাঝেমধ্যে কিসের যেন একটা অভাব বোধ করতাম।তবে আমাদের দাম্পত্য জীবনের অটুট বন্ধনের কারণে কেউ কাউকে কিছুই বলতাম না। বাংলাদেশের সামরিক ও অসামরিক নামকরা সকল ডাক্তারের কাছে ছুটে গেছি।তাঁদের পরামর্শ,প্রেসক্রিপশন নিয়েছি।রুটিন বাঁধা জীবনের ফাকেও বহু মূল্যবান সময়,কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করেছি। ইন ফার্টিলিটি কেয়ার সেন্টার /চেম্বার গুলোতে দেখেছি সন্তান প্রত্যাশী হাজারো দম্পতির অসহায় মুখাবয়ব।নিজেদের সমস্যার সমাধান খুঁজতে গাইনোকলজি বিদ্যার উপরও যথেষ্ট পড়াশোনা করেছি। সমস্যার কোন সমাধান হয়নি।শেষ পর্যন্ত যেখানে সমস্যার সমাধান খোঁজে পেয়েছি তা হলো আল কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনা এবং আল কুরআনে বর্ণিত নবী ও রাসূলগনের করা কিছু আমল অনুশীলন।
যদি কেহ দাম্পত্য জীবনে নেক সন্তানের পিতা মাতা হতে চান তাহলে স্বামী এবং স্ত্রী প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর নিন্মলিখিত আমলগুলো করুন।

জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে সকল প্রকার ভুলের জন্য খালেছ নিয়্যাতে তওবা করুন।নিরবে,নিভৃতে আল্লাহর কাছে একটি নেক সন্তানের আবদার করুন।আপনার চাওয়া যেদিন পরম চাওয়ায় পরিনত হবে,বুক ফুপিয়ে কান্না আসবে আপনার,চোঁখে বইবে লোনা জল।সেই দিন আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না।কারণ,তিনিই একমাত্র আল্লাহ, যিনি বান্দা কিছু চাইলে খুশী হন।এবং দিয়েও থাকেন।বারবার চাইতে থাকবেন।ঠিক এমনি করে তিনি একদিন আমার চাওয়ার ভঙ্গিতে রাজি হয়ে যান।আর আমাদের দাম্পত্য জীবনে দান করেন এক কন্যা সন্তান।আমরা তার নাম রেখেছি সামীহা নূর জারা।আমাদের সন্তানকে যেন মহান আল্লাহ আবেদা,সালেহা ও কামেলা বানিয়ে দেন,শারীরিক সুস্থতা ও নেক হায়াত দান করেন পাঠকুলের নিকট এ দোয়ার দরখাস্ত রাখলাম।আপনার সংসারও একদিন কচি কাঁচা খোকা খুকীর চেচামেচিতে মুখরিত হোক আল্লাহর নিকট কায়মনো বাক্যে এ প্রার্থনা করছি।আমিন।ছুম্মামিন।

“খোদা তোমায় ডাকতে জানি না
ডাকার মত ডাকলে খোদা কেমনে শোন না!”

★সন্তান দান করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরঃ
————————————————————-

নেক ও সৎ সন্তান বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর সব থেকে বড় নিয়ামত। ইরশাদ হয়েছে, ‘ধনৈশ্বর্য ও সন্তান পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। আর স্থায়ী সৎ কর্মগুলো তোমার রবের কাছে প্রতিদানপ্রাপ্তি এবং আশা পূরণের উত্তম উপায়।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৬)
মানুষ পৃথিবীতে মহান স্রষ্টার খলিফা। তাই তাকে সুসন্তান জন্ম দিয়ে খোদার খেলাফতের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।পুরুষের পৌরুষ সার্থক হয় সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে। নারীর নারীসত্তা পরিপূর্ণতা পায় সন্তান ধারণ ও জন্মদানের মধ্য দিয়ে। তাবৎ পৃথিবীর সব দম্পতিই চায় তাদের ঔরস সংরক্ষিত হোক, বংশধারা প্রলম্বিত হোক। কিন্তু চাইলেই তো আর সন্তান পাওয়া যায় না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘‘নভোমণ্ডল আর ভূমণ্ডলের আধিপত্য একমাত্র আল্লাহর। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন কন্যাসন্তান আর যাকে ইচ্ছা দেন পুত্রসন্তান। অথবা তাদের কাউকে দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।’’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৪৯-৫০)

★অাল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়াঃ
———————————————————
ইরশাদ হচ্ছে,”আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।”
[সূরা ইউসুফ – ৮৭]
নিরাশ হওয়া শয়তানের কাজ।আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আল্লাহকে ভয় ও আশা সহকারে ডাক, নিশ্চয়ই আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী”। (সুরা: আল্ আ’রাফ, ৫৬।)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছে দুয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন-
“আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের দোয়া/প্রার্থনা কবুল করব”। (সূরা মুমিন আয়াত-৬০)

★কার নিকট সন্তান চাইবেন?
—————————————
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-
“আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডাকবে না”। (আল-জিন : ১৮)
“আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের আহ্বান করো তারা তো তোমাদেরই মতো বান্দা”। (আল-আরাফ : ১৯৪)
তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডেকে থাকো তারা তোমাদের ও সাহায্য করতে পারে না এবং নিজেরাও নিজেদের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না৷ (আল-আরাফ : ১৯৭)

আল্লাহর কাছে সরাসরি দোয়া করতে হবে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাইলে তা নিশ্চিত শির্ক হবে।শির্কে লিপ্ত অবস্থায় দোয়া কবুল হয়না।
মহান আল্লাহ বলেন:
( ﻭﻗﺎﻝ ﺭﺑﻜﻢ ﺍﺩﻋﻮﻧﻲ ﺃﺳﺘﺠﺐ ﻟﻜﻢ )
“আর তোমাদের রব বলেছেন,তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”
[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
( ﻭﺇﺫﺍ ﺳﺄﻟﻚ ﻋﺒﺎﺩﻱ ﻋﻨﻲ ﻓﺈﻧﻲ ﻗﺮﻳﺐ ﺃﺟﻴﺐ ﺩﻋﻮﺓ ﺍﻟﺪﺍﻉ ﺇﺫﺍ ﺩﻋﺎﻥ ﻓﻠﻴﺴﺘﺠﻴﺒﻮﺍ ﻟﻲ ﻭﻟﻴﺆﻣﻨﻮﺍ ﺑﻲ ﻟﻌﻠﻬﻢ ﻳﺮﺷﺪﻭﻥ )
“আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।”
[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৬]
[ এখানে বলা হয়েছে -আহবানকারী যখন আহবান করে, তার মানে যার সমস্যা সেই নিজে দোয়া করবে, দোয়া করার জন্য পীর, হজুর, আলেম ভাড়া করা লাগবেনা]

মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখতে হবে,
(১) তিনি ই ত আল্লাহ, সেই মহান কারিগর যিনি তাঁর কুদরত দ্বারা হযরত আদম (আ:) কে পিতা মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। আবার তাঁর সঙ্গীনি হযরত হাওয়া(আ:) কে তাঁর(আদম আ:) পাঁজরের একটি হাড় থেকে সৃজন করেছেন।
(২) তিনি ই আল্লাহ যিনি কোন মানুষের স্পর্শ ছাড়াই মরিয়ম( আ:) কে সন্তান দান করেছেন।
(৩) তিনি ই ত একমাত্র সন্তান দাতা যিনি জাকারিয়া (আ:) কে বুড়ো বয়সে বন্ধ্যা স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দান করেছেন।
(৪) তিনি ই ত মহান আল্লাহ যিনি “হও” বললেই সন্তান হয়ে যায় ।তাহলে আপনি হতাশ কেন ?
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরানে বর্ণনা করেনঃ
আলি ‘ইমরান ৩:৪০
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺍَﻧّٰﻰ ﻳَﻜُﻮْﻥُ ﻟِﻰْ ﻏُﻠٰﻢٌ ﻭَّﻗَﺪْ ﺑَﻠَﻐَﻨِﻰَ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮُ ﻭَﺍﻣْﺮَﺍَﺗِﻰْ ﻋَﺎﻗِﺮٌؕ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺬٰﻟِﻚَ ﺍﻟﻠّٰﻪُ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎٓﺀُ
তিনি বললেন হে পালনকর্তা! কেমন করে আমার পুত্র সন্তান হবে, আমার যে বার্ধক্য এসে গেছে, আমার স্ত্রীও যে বন্ধ্যা। বললেন, আল্লাহ এমনি ভাবেই যা ইচ্ছা করে থাকেন।
আলি ‘ইমরান ৩:৪৭
ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺭَﺏِّ ﺍَﻧّٰﻰ ﻳَﻜُﻮْﻥُ ﻟِﻰْ ﻭَﻟَﺪٌ ﻭَّﻟَﻢْ ﻳَﻤْﺴَﺴْﻨِﻰْ ﺑَﺸَﺮٌؕ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺬٰﻟِﻚِ ﺍﻟﻠّٰﻪُ ﻳَﺨْﻠُﻖُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎٓﺀُؕ ﺍِﺫَﺍ ﻗَﻀٰٓﻰ ﺍَﻣْﺮًﺍ ﻓَﺎِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻟَﻪٗ ﻛُﻦْ ﻓَﻴَﻜُﻮْﻥُ
তিনি বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন এ ভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোন কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায়।
তাই নিরাশ হবেন না।

★অাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের শেষ কথাঃ
———————————————————-
“দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য,বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার সময়েও মাতৃগর্ভে সন্তান সঞ্চারিত হওয়ার কাল/বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞান নির্ণয় করতে ব্যর্থ। এটি মহা মহীয়ান অাল্লাহ পাকের কুদরতি ছাড়া অার কিছুই নয়।”

বিস্তারিত তথ্য সহ সূরা হজ্জের ৫ আয়াতে মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ،
‘হে লোক সকল আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি, এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে’।
গর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণতঃ দীর্ঘ ২৮০ দিন যাবৎ চলতে থাকে। যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট ৭ টি চক্রে বিভক্ত। নারী-পুরুষের যৌন মিলনের সময় নারীর ডিম্বনালীর ফানেলের মত অংশে ডিম্বাণু নেমে আসে এবং ঐ সময় পুরুষের নিক্ষিপ্ত বীর্যের শুক্রাণু জরায়ু বেয়ে উপরে উঠে আসে ও তা ডিম্বনালীতে প্রবেশ করে। প্রথমে একটি শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বাণুটির দেহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অন্য কোন শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে নারীর ডিম্বাণুটি নিষিক্ত (Fertilization) হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে নেমে প্রোথিত (Embedded) হয়।[গাইনিকলজি শিক্ষা, পৃঃ ২২।]তাছাড়া নারীর ডিম্বাণুর বহিরাবরণে প্রচুর সিয়ালাইল-লুইস-এক্সসিকোয়েন্স্ নামের চিনির অণুর আঠালো শিকল শুক্রাণুকে যুক্ত করে পরস্পর মিলিত হয়।[মাসিক আত-তাহরীক, ১৫তম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, অক্টোবর ২০১১, বিজ্ঞান ও বিস্ময়, পৃঃ ৪৩।] আর এই শুক্রাণু দেখতে ঠিক মাথা মোটা ঝুলে থাকা জোঁকের মত। জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে খায়, শুক্রাণু ঠিক তেমনি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে মায়ের রক্তে থাকা প্রোটিন চুষে বেড়ে উঠে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি সন্তান জন্মের রূপ নিলে সাধারণতঃ নিম্নে ২১০ দিন ও উর্ধ্বে ২৮০ দিন জরায়ুতে অবস্থান করে এবং ঐ সময়ের মধ্যে ডিম্বাশয়ে নতুন করে আর কোন ডিম্বাণু প্রস্ত্তত হয় না। [গাইনিকলজি শিক্ষা, পৃঃ ১৫]।এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِيْنٍ ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِيْ قَرَارٍ مَكِيْنٍ، ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ- ‘আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্র বিন্দুকে জমাট রক্ত রূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করেছি’ (মুমিন ২৩/১২-১৪)।

তিনি আরো বলেন, إِلَى قَدَرٍ مَعْلُوْمٍ، فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ الْقَادِرُوْنَ ‘এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত, অতঃপর আমরা একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমরা কত সুনিপুণ স্রষ্টা’ (মুরসালাত ৭৭/২২-২৩)। ‘অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রূহ সঞ্চার করেন’ (সাজদাহ ৩২/৯)।
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ সৃষ্টিতে আল্লাহ পরম সন্তুষ্টির বাণী হচ্ছে, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ- ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে’ (ত্বীন ৪)।

★কিভাবে দোয়া করবেন?
———————————–
মনে রাখা উচিত যে,আল্লাহ মহা ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন।পবিত্র কুরআনে তাই নির্দেশ দেয়া হয়েছে-

“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে কাকুতি-মিনতি সহকারে এবং সংগোপনে ডাক।”(সুরা: আল্ আ’রাফ, ৫৫।)
“আর স্মরণ কর স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে, ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং উচ্চস্বর ব্যতিরেকে, নিম্নস্বরের সাথে, সকালে ও সন্ধ্যায়”।(সুরা: আল্ আ’রাফ, ২০৫।)

হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) বলেন: রসুলুল্লাহ (সাঃ) দোয়ার সময় এমনভাবে দু’হাত উত্তলোন করতেন, যেভাবে একজন মিসকিন খাদ্যের জন্যে আবেদন করে থাকে।(বিহারুল আনওয়ার, খঃ ১৬, পৃঃ ৩৭৮।)

সূরা মারিয়াম; আয়াত ১-৫ পড়ি
ঈমান ও মনকে তাজা করি।
—————————————-
সূরা মারিয়াম পবিত্র কুরআনের উনিশতম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এই সূরার এক থেকে তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
ﻛﻬﻴﻌﺺ ‏( 1 ‏) ﺫِﻛْﺮُ ﺭَﺣْﻤَﺔِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻋَﺒْﺪَﻩُ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ‏( 2 ‏) ﺇِﺫْ ﻧَﺎﺩَﻯ ﺭَﺑَّﻪُ ﻧِﺪَﺍﺀً ﺧَﻔِﻴًّﺎ ‏( 3 )
“কাফ- হা-ইয়া-আইন-সাদ।” (১৯:১)
“এটি তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ,যা তিনি তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি করেছিলেন।” (১৯:২)
যখন সে চুপে চুপে রবকে ডাকল।” (১৯:৩)

এ আয়াতে হযরত যাকারিয়া (আ.) এর ওপর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের বিষয়টিকে স্মরণ করা হয়েছে। যাকারিয়া (আ.) জনগণের দৃষ্টির আড়ালে গিয়ে আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন। সম্ভবত জনগণ থেকে দূরে গিয়ে এই দোয়া করার কারণ হল যাকারিয়া (আ.) ছিলেন বৃদ্ধ এবং পাকা চুলের অধিকারী। এই বয়সে তিনি যদি সন্তান কামনা করেন তাহলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টা নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে পারে-এই আশঙ্কা থেকেই তিনি জনগণের কাছ থেকে দূরে গিয়ে দোয়া করেছিলেন। অবশ্য বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে দোয়া করার সবোর্ত্তম উপায়টি হল নীরবে, চুপিচুপি, হৈ হুল্লুড় করে সবাইকে জানান দিয়ে নয়।

সূরা মারিয়ামের ৪ এবং ৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻭَﻫَﻦَ ﺍﻟْﻌَﻈْﻢُ ﻣِﻨِّﻲ ﻭَﺍﺷْﺘَﻌَﻞَ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱُ ﺷَﻴْﺒًﺎ ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﻛُﻦْ ﺑِﺪُﻋَﺎﺋِﻚَ ﺭَﺏِّ ﺷَﻘِﻴًّﺎ ‏( 4 ‏) ﻭَﺇِﻧِّﻲ ﺧِﻔْﺖُ ﺍﻟْﻤَﻮَﺍﻟِﻲَ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻲ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻲ ﻋَﺎﻗِﺮًﺍ ﻓَﻬَﺐْ ﻟِﻲ ﻣِﻦْ ﻟَﺪُﻧْﻚَ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ‏( 5 )
“সে বলল, হে আমার রব! আমার হাড়গুলো পর্যন্ত নরম হয়ে গেছে, মাথা বার্ধক্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে; হে পরোয়ারদিগার! আমি কখনো তোমার কাছে দোয়া চেয়ে ব্যর্থ হইনি৷” (১৯:৪)
“আমি আমার পর নিজের স্বভাব-স্বগোত্রীয়দের অসদাচরণের আশঙ্কা করি এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা৷ (তথাপি) তুমি নিজের বিশেষ অনুগ্রহ বলে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান কর।” (১৯:৫)

★নেক সন্তান লাভের প্রথম পদক্ষেপঃ
—————————————————
প্রথমেই উত্তম স্ত্রী ও নেক সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। কারণ উত্তম স্ত্রীও আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত।
চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তানাদি লাভ আর মুত্তাকীদের নেতা হতে প্রার্থনা [২৫:৭৪]
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ

[রব্বানা-হাব্লানা-মিন্ আয্ওয়া-জ্বিনা-অ র্যুরিয়্যা-তিনা-কুররাতা আ’ইয়ুনিঁও অজ্ব্‘আল্না-লিল্মুত্তাকীনা ইমা-মা]-।সূরা আল-ফুরকান – ২৫:৭৪
হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।

★অত:পর
স্ত্রী-সহবাসের পূর্বে নিয়ত ঠিক করুনঃ
————————————————–
আল্লাহ তাআলা বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের যৌন সম্ভোগ তথা বংশ বৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজে পরিণত করেছেন। হযরত আলী (রা.) তাঁর অসিয়ত নামায় লিখেছেন যে, “সহবাসের ইচ্ছে হলে এই নিয়তে সহবাস করতে হবে যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবেনা আর জন্ম নেবে নেককার ও ভালো সন্তান। এই নিয়তে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সাথে সাথে উদ্দেশ্যও পূরণ হবে, ইনশাআল্লাহ।”
পবিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে স্ত্রী সহবাসের দোয়া।তা তুলে ধরা হলো-
দোয়টি এই – ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻭَ ﺟَﻨِّﺐِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ

বাংলা উচ্চারণ :বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
(বুখারী ৬/১৪১, নং ১৪১; মুসলিম ২/১০২৮, নং ১৪৩৪।)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখ।

ফজিলতঃ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের কিসমতে কোনো সন্তান আসে, সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
(বুখারি ৬৩৮৮,মুসলিম,মিশকাত)

★নেক সন্তান লাভের আমলঃ

*নেক সন্তান লাভের দোয়া নং ১
——————————————
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যত চাহিদা ও আকর্ষণ দান করেছেন,তার মধ্যে সন্তান-সন্তুতির আকর্ষণ সবচেয়ে
বেশি।আর যাদের সন্তান হয়না তাদের উচিত আল্লাহর শেখানো ভাষায় আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ’ করা।অার এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দু”অা হলো :

ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻲ ﻣِﻦْ ﻟَﺪُﻧْﻚَ ﺫُﺭِّﻳَّﺔً ﻃَﻴِّﺒَﺔً ۖ ﺇِﻧَّﻚَ ﺳَﻤِﻴﻊُ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
“রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাতান, ইন্নাকা সামিউ’দ দুআ’ই।”
(সূরা আল-ইমরান : আয়াত ৩৮)

অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আপনার নিকট
থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন।
নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা কবুলকারী।

*দুআ’র উৎসঃ
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম বার্ধক্য
পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি দেখতে
পেলেন আল্লাহ তাআলা ফলের মৌসুম ছাড়াই
হজরত মারইয়াম আলাইহিস সালামকে ফল দান
করে রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তখন তাঁর
মনে সন্তানের জন্য সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে
উঠল। তিনি সাহস পেলেন যে, আল্লাহ বৃদ্ধ
দম্পতিকেও সন্তান দান করতে পারেন। তাই
তিনি আল্লাহর দরবারে উক্ত দুআ’টি করেন।

*পুত্র সন্তান লাভের দোয়া নং ২
—————————————–
সুরা সফফাতে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার জন্য হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পুত্রসন্তান লাভের এ আবেদনটি তুলে ধরেছেন। যাতে বান্দা এ দোয়ার মাধ্যমে তাঁর নিকট সন্তান কামনা করতে পারে।
দোয়াটি হলো-
ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ
উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিনাস ছোয়া-লিহিন।’
(সুরা সাফফাত : আয়াত ১০০)
অর্থঃ হে আমার লালন পালনকারী! আমাকে এক সৎপুত্র সন্তান দান করুন।

*নেক সন্তান লাভের দোয়া নং ৩
——————————————-
আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (ﺍَﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِّﺮُ ) ‘আল-মুতাকাব্বিরু’। যার অর্থ হলো ‘অত্যন্ত সম্মানিত; গৌরবান্বিত; ` এ নামটি কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর গুণবাচক নামের মধ্যে একটি। এ নামের রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। মানুষের সম্মান বৃদ্ধি, মর্যাদা লাভ এবং সফলতা লাভের উদ্দেশ্যে এ নামের জিকির বা আমল করলে আল্লাহ তাআলা পূর্ণ করে দেন।
আলমটি হলো-
উচ্চারণ: আল-মুতাকাব্বিরু।
অর্থ : অত্যান্ত সম্মানিত বা হে গৌরবান্বিত।
ফজিলত
♦♦যে ব্যক্তি সব সময় গুণবাচক নাম (ﺍَﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِّﺮُ ) ‘আল-মুতাকাব্বিরু’-এর জিকির করেন; তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং উন্নতি লাভ হয়।
★ যে ব্যক্তি স্ত্রী সহবাসের পূর্বে এ পবিত্র গুণবাচক নাম (ﺍَﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِّﺮُ ) ‘আল-মুতাকাব্বিরু’- ১০ বার পাঠ করবে; আল্লাহ তাআলা তাকে সৎ সন্তান দান করবেন।(উর্দু অামালে কুরঅানী-১৪০)
♦♦ যে ব্যক্তি স্ত্রী সহবাসের পূর্বে এ পবিত্র গুণবাচক নাম (ﺍَﻟْﻤُﺘَﻜَﺒِّﺮُ ) ‘আল-মুতাকাব্বিরু’-১০০ বার পাঠ করবে; আল্লাহ তাআলা তাকে ভাগ্যবান সু-সন্তান দান করবেন।

★ বুজুর্গ আলেমদের অনেকে বলেছেন,যে ব্যক্তির ছেলে-মেয়ে হয়না ওই ব্যক্তি ৪০দিন পর্যন্ত একাধারে ৪০ বার আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْاَوَّلُ) ‘আল-আউয়ালু’ পাঠ করলে তার সন্তান লাভের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।

*নেক সন্তান লাভের দোয়া নং ৪
——————————————
সূরা আম্বিয়ার ৮৯ নং আয়াতের এ অংশ প্রতি নামাযের পর তিনবার তিলাওয়াত করবে। ইনশাআল্লাহ সন্তান হবে।

ﺭَﺏِّ ﻟَﺎ ﺗَﺬَﺭْﻧِﻲ ﻓَﺮْﺩًﺍ ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﻮَﺍﺭِﺛِﻴﻦَ ‏[ ٢١: ٨٩
*বাংলা উচ্চারণঃ রাব্বি লা তাজারনী ফারাদান ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিছীন।

*অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস।

*উৎসঃ হাকিমুল উম্মত অাশরাফ অালী থানবী (রাহ) সংকলিত “অামালে কুরঅানী”।

*নেক সন্তান লাভের দোয়া নং ৫
——————————————
ﻟَﺌِﻦْ ﺁﺗَﻴْﺘَﻨَﺎ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻟَّﻨَﻜُﻮﻧَﻦَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺎﻛِﺮِﻳﻦَ
উচ্চারণঃ [লায়িন্ আ-তাইতানা-ছোয়া-লিহাল্ লানাকূনান্না মিনশ্ শা -কিরীন্]
(সূরা আল আরাফ – ৭:১৮৯)

অর্থঃ যদি আপনি আমাদেরকে সুসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।

*নেক সন্তান লাভের দোয়া নং ৬
—————————————–
যদি কোন ব্যক্তি চান তার পত্নী সন্তান ধারন করুক তাহলে জুম্মা নামাযের পর ২ (দুই) রাকাআত নফল নামাজ আদায় করতে হবে এবং নিম্ন দোয়াটি রুকু ও সেজদায় পাঠ করতে হবে।

বাংলা উচ্চারনঃ“আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা বেমা সা আলাকা বেহী যাকারিয়া রাব্বেলা তাযারনি ফারদ ওয়ান ওয়া আন্তা খাইরোল ওয়ারেসিনা আল্লাহুম্মা হাবলি মিল লাদুকনা যোরইয়াতান ইন্নাকা সামিয়ুদ দোয়ায়ে আল্লাহুম্মা বে ইসমেকা ইসতা লাল তুহা ওয়া ফি আমানাতেকা আখাযতোহা ফা ইন ক্বাযায়তা ফি রাহমিহা ওয়ালাদাওঁ লিআহ শাইতানে ওয়ায আলহো গোলামান মোবারাকান যাকিয়ান ওয়ালা তাজ আল লিস শাইতান ফিহি শিরকাওঁ ওয়ালা নিসিবান”।

*বেশী বেশী ইস্তেগফারের আমল করুন-৭
——————————————————-
আল হাসান ইবনে আবিল হাসান আল বসরি ;(৬৪২ – ৭২৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক।

হযরত হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, আমি সম্পদশালী, কিন্তু নিঃসন্তান। আমাকে এমন আমল বলে দিন,যাতে আমার সন্তান হয়। তখন তিনি লোকটিকে বললেন, عليك بالاستغفار ‘তুমি ইস্তেগফারকে আবশ্যক করে নাও।’ ফলে লোকটি নিয়মিত ইস্তেগফারের আমল করতে লাগল। এমনকি দৈনিক ৭০০ বার সে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ত। এ আমলের বরকতে আল্লাহ তাকে একে একে দশ সন্তান দান করেছিলেন।আলহামদুলিল্লাহ।
তারপর লোকটি একদিন হযরত হাসান বসরি (রহ.)কে এই আমলের রহস্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন,”তুমি কি হুদ (আ.)-এর ঘটনায় আল্লাহর বাণী দেখনি? আল্লাহ অধিক ইস্তেগফারের ফলাফল বলতে গিয়ে বলেছেন, وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إلى قُوَّتِكُمْ ‘তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সূরা হুদ ৫২) এবং নূহ (আ.)-এর ঘটনায় আল্লাহর বাণী দেখনি? সেখানে তিনি বলেছেন, وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ ‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন।’ (সূরা নূহ ১২)

মনের সকল পেরেশানি দূর করণের ট্যাবলেট হচ্ছে-ইস্তেগফার।প্রিয় নবী ও রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب

“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)

*নেক সন্তান লাভের আরেকটি কুরআনিক আমল-৮
———————————————————————-
হযরত বাকের (রহ.)-এর কাছে এক বৃদ্ধ এসে বললেন, আমার বয়স ষাট বছর; কিন্তু এখনও নিঃসন্তান। তখন তিনি তাকে বললেন, ‘প্রত্যেক ফরয-নামাজের পর سبحان الله (সুবহানাল্লাহ) ৭০ বার এবং أستغفر الله ( আস্তাগফিরুল্লাহ) ৭০ বার পড়বেন। তারপর তেলাওয়াত করবেন সূরা নূহ-এর ১০,১১, ১২ নং আয়াত অর্থাৎ,

اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا

[উচ্চারণঃ
১০। ফাকুল্তুস্ তাগ্ফিরূ রব্বাকুম্; ইন্নাহূ কা-না গাফ্ফা-রইঁ।
১১। ইর্য়ুসিলিস্ সামা-য়া ‘আলাইকুম্ মিদ্রা-র- ।
১২। অ ইয়ুম্দিদ্কুম্ বিআম্ওয়া-লিঁও অবানীনা অইয়ুজ‘আল্ লাকুম্ জ্বান্না-তিঁও অইয়াজ‘আল্ লাকুম্ আন্হা-র-। ]

‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’

এ আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন। আমলটি তিন দিন করবেন। তৃতীয় দিনে স্ত্রী-সহবাস করবেন। ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করবেন।’

লোকটি বলেন, আমি এই আমল করলাম, ফলে এক বছর পূর্ণ না হতেই আল্লাহ আমাকে আমার চোখের শীতলতা পুত্র সন্তান দান করেছেন। (তিব্বুল আইম্মাহ ১৩০)

পরিশেষ,
নেক সন্তান লাভের আমল করি,
কুরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ি।
মহান অাল্লাহ পাক উপরোক্ত বিষয়াদি অনুধাবন করে অামাল করার তৌফিক দান করুন।অামীন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

কুরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে বজ্রপাতের কারণ: এস এম শাহনূর

| ১৭ জুলাই ২০১৯ | ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

কুরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে বজ্রপাতের কারণ: এস এম শাহনূর

বজ্রপাত মহান আল্লাহ পাকের নেয়ামত
অবিশ্বাসীদের জীবনে আনে কেয়ামত।
★বজ্রপাত বলতে বিকট শব্দ সহকারে চোঁখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিকে বুঝায়।এর শাব্দিক অর্থ ভূমিতে বিদ্যুৎ পতিত হওয়া”।আমাদের দেশে একে ঠাডাও বলা হয়ে থাকে।

★বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ
জলীয়বাষ্প ঘণীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার সময় এতে প্রচুর স্থির বৈদ্যুতিক চার্জ জমা হয়।পানিচক্রে জলকণা যখন ক্রমশ উর্ধ্বাকাশে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচের দিকের বেশি ঘনীভূত বৃষ্টি বা তুষার কণার সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। যার ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা অনেক বাষ্প পরমাণু বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায়। যে পরমাণু ইলেকট্রন হারায় তা পজিটিভ চার্জে এবং যে পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে তা নেগেটিভ চার্জে চার্জিত হয়। অপেক্ষাকৃত হাল্কা পজিটিভ চার্জ থাকে মেঘের উপর পৃষ্ঠে এবং ভারী নেগেটিভ চার্জ থাকে নিচের পৃষ্ঠে। যথেষ্ট পরিমাণ পজিটিভ (+) ও নেগেটিভ (-) চার্জ জমা হওয়ার পর পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণের দরুণ electrostatic discharge প্রক্রিয়া শুরু হয়। discharge তিন ভাবে হতে পারে-
(ক) মেঘের নিজস্ব পজিটিভ (+) ও নেগেটিভ (-) চার্জের মধ্যে
(খ) একটি মেঘের পজেটিভ (+) কিংবা নেগেটিভ (-) চার্জের সাথে অন্য মেঘের নেগেটিভ (-) কিংবা পজেটিভ (+) চার্জের সাথে
(গ) মেঘের পজেটিভ (+) চার্জের সাথে ভূমির Discharge হওয়ার সময় পজেটিভ (+) চার্জ থেকে নেগেটিভ (-) চার্জের দিকে বাতাসের মধ্য দিয়ে স্পার্ক আকারে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এ ঘটনাই হল বজ্রপাত।


★পবিত্র কুরআনের আলোকে বজ্রপাতের কারণঃ
*বজ্রপাতের নামে নাজিলকৃত সূরার নাম
‘সূরা- রদ।’ ১৩ নম্বর পারা, ১৩ নং সূরা।

*বজ্রপাতের কারণ হিসেবে পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
বলেছেন -দেশে যুলুম অত্যাচার অতি মাত্রায়
বেড়ে গেলে বজ্রপাত হয়। সূরা নিসা,
আয়াত-১৫৩।

*বজ্রপাত আল্লার গজবের প্রমাণ। সূরা
আনকাবুত, আয়াত-৪০।

*আল্লার বিধান অমান্য করার কারণেই
বজ্রপাত হয়। যুলুম-অত্যচার ও গুণাহের কাজ
যত বাড়বে বজ্রপাত তত বাড়বে। সূরা
যারিয়াত, আয়াত-৪৪।

*বজ্রপাত আল্লাহ গজবের স্পষ্ট প্রমাণ।
সূরা তুর, আয়াত ৪৫।
*অতএব বজ্রপাত প্রতিহত করার বা রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা আল্লাহপাকের নির্দেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।

ইদানিং বজ্রপাত বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করে থাকেন।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে জীন ও মানুষ ছাড়া সৃষ্টির সবকিছু সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকে। সুরা রাদের ১৩ নম্বর আয়াতে বজ্রপাত সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ফেরেশতা ও আসমানে থাকা বজ্র সর্বদা আল্লাহর প্রশংসায় মত্ত থাকেন। অত:পর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে বজ্র দ্বারা আঘাত করেন।

★ পবিত্র কুরঅানের ১১৪টি সুরার মধ্যে সুরা-অার রা’দ(১৩তম)একটি।যার বাংলা অর্থ বজ্রপাত বা ঠাডা।
★সূরা রা’দের ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
ﻟَﻪُ ﻣُﻌَﻘِّﺒَﺎﺕٌ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﻦِ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻣِﻦْ ﺧَﻠْﻔِﻪِ ﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﻧَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳُﻐَﻴِّﺮُ ﻣَﺎ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﻐَﻴِّﺮُﻭﺍ ﻣَﺎ ﺑِﺄَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﺳُﻮﺀًﺍ ﻓَﻠَﺎ ﻣَﺮَﺩَّ ﻟَﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻧِﻪِ ﻣِﻦْ ﻭَﺍﻝٍ ‏( ১১)
“মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী থাকে, তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। আল্লাহ অবশ্যই কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। কোন সম্প্রদায় সম্পর্কে আল্লাহ যদি অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তবে তা রদ করার কেউ নেই। এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন অভিভাবক নেই।” (১৩:১১)
এর আগে বলা হয়েছে, সৃষ্টি জগতের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহ জানেন। কোন কিছুই তাঁর অজানা নয়। এই আয়াতে বলা হচ্ছে ,আল্লাহ তা’লা প্রত্যেক মানুষের জন্য একজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন,এই ফেরেশতা মানুষকে নানা বিপদাপদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে। বিশ্ব প্রকৃতি আল্লাহরই সৃষ্টি এবং আল্লাহরই বেধে দেয়া নিয়মে প্রকৃতির সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। কাজেই প্রকৃতিতে যে সব ঘটনা বা দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, তা আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। ফলে প্রকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ফেরেশতারাই মানুষকে রক্ষা করে।
এ আয়াতে আরেকটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, বলা হয়েছে প্রকৃতিতে কোন কিছু সংঘটিত করার শক্তি বা সামর্থ মানুষের নেই, কিন্তু মানুষকে তার ভাগ্য গড়ার সামর্থ দেয়া হয়েছে। সেটি ব্যক্তিগত হোক কিংবা সামাজিক হোক, মানুষ তার ভবিষ্যত বিনির্মাণের ক্ষেত্রে সামর্থবান। এটা প্রত্যাশা করা উচিত নয় যে, মানুষের ভাগ্য গড়ে দেয়ার জন্য আল্লাহপাক ফেরেশতা নিয়োগ করবেন। মানুষ যদি তার ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে সফলতা আনতে চায় তাহলে এজন্য তাকেই উদ্যোগী হতে হবে, নৈরাজ্য পরিহার করে সঠিক পথে চলার উদ্যোগ নিতে হবে এবং জুলুম-অত্যাচারের মূলোৎপাটন করে ন্যায়পরায়নতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অলৌকিকভাবে আদর্শ সমাজ বা আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে উঠে না,এজন্য মানুষকেই সম্মিলিতভাবে সচেষ্ট হতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ঐশী নিয়মের কথাও এই আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোন জাতি যতক্ষণ না নিজেরা নিজেদের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হয় ততক্ষণ আল্লাহও তাদের উন্নতি নিশ্চিত করেন না। আবার এটাও বলা হয়েছে,যারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট হয় না তারা সমুহ বিপদে নিমজ্জিত হয় এবং ঐশী শাস্তিও তাদেরকে গ্রাস করে। যদি কেউ বা কোন জাতি এ অবস্থায় উপনিত হয় তাহলে কারো সাহায্যই তাদের কাজে আসে না।
জনগণের প্রচেষ্টায়ই প্রত্যেক জাতি বা রাষ্ট্রের উন্নতি সাধিত হয়। জনগণ যখন আল্লাহর উপর নির্ভর করে নিজেদের ভাগ্য গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে সেই সামর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।
এই সূরার ১২ ও ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﻜُﻢُ ﺍﻟْﺒَﺮْﻕَ ﺧَﻮْﻓًﺎ ﻭَﻃَﻤَﻌًﺎ ﻭَﻳُﻨْﺸِﺊُ ﺍﻟﺴَّﺤَﺎﺏَ ﺍﻟﺜِّﻘَﺎﻝَ ‏( ১২‏) ﻭَﻳُﺴَﺒِّﺢُ ﺍﻟﺮَّﻋْﺪُ ﺑِﺤَﻤْﺪِﻩِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻣِﻦْ ﺧِﻴﻔَﺘِﻪِ ﻭَﻳُﺮْﺳِﻞُ ﺍﻟﺼَّﻮَﺍﻋِﻖَ ﻓَﻴُﺼِﻴﺐُ ﺑِﻬَﺎ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻫُﻢْ ﻳُﺠَﺎﺩِﻟُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﺍﻟْﻤِﺤَﺎﻝِ ‏( ১৩)
“তিনিই তোমাদেরকে বিজলী দেখান-যা ভয় ও ভরসা সঞ্চার করে এবং তিনি সৃষ্টি করেন ঘন মেঘমালা।” (১৩:১২)
“বজ্র নির্ঘোষ ও ফেরেশতারা সভয়ে তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে আঘাত করেন, তারপরও তারা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে। যদিও তিনি মহাশক্তিশালী।” (১৩:১৩)
বজ্রপাত এবং আকাশে মেঘের গর্জন মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করলেও প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহর নেয়ামত বা অনুগ্রহের বার্তাই বহন করে। কারণ এর মাধ্যমেই বৃষ্টিপাতের সূচনা হয়। আর এই বৃষ্টির পানিই বৃক্ষ-তরুলতা এবং মানুষ ও জীবজন্তু বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপকরণ।
বজ্র নিনাদ বা মেঘের গর্জন প্রকৃতিরই নিয়ম। মহান আল্লাহই প্রকৃতির জন্য এই নিয়ম নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে বজ্র নিনাদের মাধ্যমে প্রকৃতি মহান আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্য,তাঁর পরিপূর্ণতা এবং মহিমা বর্ণনা করে থাকে। এছাড়া, মেঘমালা সৃষ্টি এবং বৃষ্টিপাত ঘটানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতারা মেঘের গর্জনের ফলে সৃষ্ট আতঙ্কে আরো বেশি আল্লাহর মহিমা কীর্তন করে।
এ সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সংঘটিত হয়,তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত বজ্রপাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

★ বজ্রপাতের সময় মহানবী (স:) একটি আয়াত পাঠ করতে বলেছেন।সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এ আয়াত পাঠ করতেন-
★ উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খি-ফাতিহি।
★ অর্থ : আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার পবিত্র ঘোষণা করছে মেঘের গর্জন তাঁর
প্রশংসার সাথে। আর ফেরেশতাকুল প্রশংসা করে
ভয়ের সাথে। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)

প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গুলোর মধ্যে একটি হল বজ্রপাত। এটি মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর একটিও বটে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বজ্রপাতের
সময় উপরোক্ত আয়াত পাঠের তাওফিক দান করুন। আমিন।

💻এস এম শাহনূর
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)

Some text

ক্যাটাগরি: বিবিধ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি