বাংলাদেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পুর্ণ হয়েছে কৃষির ফলে। গোটাবিশ্ব যখন লকডাউনে, কৃষক তখন কৃষি জমিতে। তবে সবজি চাষীরা আজ মহাসংটে। ডেইরী ফার্মাররাও আছেন মহাবিপদে। সবমিলিয়ে কৃষিরও যেন দৈন্যদশা। কৃষিকে বাঁচাতে না পারলে খাদ্যসংকট অতিসন্নিকটে। দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে কৃষকের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিলে তা হবে জাতির জন্য আত্মঘাতী। যার দরুন ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যটি পুরণ করতে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, আমাদের ফসল ফলাতে হবে। আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ এই কৃষিটাই এখন আমাদের সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচনে এবং খাদ্যের পুষ্টিমানের দৃষ্টিকোণ থেকে কৃষির ভূমিকা অনন্য। দেশে এখনো কৃষির গুরুত্ব অনেক বেশি। জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৭ থেকে ১৮ ভাগ।
বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গোটা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। ভেস্তে যাচ্ছে সব পরিকল্পনা। একমাত্র কৃষিই হতে পারে আমাদের ভরসা। আমাদের উচিত কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখা। দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে কৃষির সুব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। তাই এবারের বাজেক হোক কৃষি বান্ধব বাজেট, এবারের বাজেট হোক কৃষক বাঁচার বাজেট।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র এবং এর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ অতিদরিদ্র। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, করোনার পরবর্তী দিনগুলোতে বিশ্বমন্দার ভয়াল থাবায় হানা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। এমন প্রেক্ষাপটে কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশকে।
বিদ্রোহী কবির সুরে ‘গাহি তাহাদের গান, ধরনীর হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান’ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই কৃষকদের। তারা সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদনের ধারা বজায় রেখেছে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় প্রণোদনা বা সহযোগিতা পায়নি, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়নি এবং নানা দুর্যোগ দুর্বিপাকে প্রায়ই ফসল হাড়িয়েছে; তারপরও তারা কৃষিকে ছাড়েনি। তারপরও এগিয়ে যায় উন্নতশীরে জলন্ত চোখে বজ্রমুষ্ঠীতে অস্ত্র হাতে সিংহ গর্জনে। কৃষি তাদের জীবিকার অবলম্বন। একইসাথে তারা পালন করছে একটা বিশাল দায়িত্ব।
বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, খাদ্যশস্য উৎপাদনে দশম ( কৃষি মন্ত্রনালয়, কৃষির- সালতামামি,৭ জানুয়ারী ২০২০) এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষাই এখন চেলেন্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় উদ্ভাবিত ফসলের উন্নত জাত এবং প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত ফসল আবাদ ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের উচ্চ আগ্রহ রয়েছে। এমতাবস্থায়, কৃষকের কাছে সহজ ও সুলভে ফসলের জাত ও প্রযুক্তি পৌঁছাতে হবে।
কবিগুরু ‘আমাদের জমির উপর জ্ঞানের আলো ফেলিবার সময় আসিয়াছে’ বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারই অনুসরণে জ্ঞানের আলো অবহেলিত জনগোষ্ঠীর দ্বারে পৌঁছে দেয়ার বিকল্প নেই। কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবার যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত তা যেন উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদী জমির ৯০-৯২ শতাংশে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। চাষাবাদের সব পর্যায়ে অর্থাৎ জমি তৈরি থেকে চাল উৎপাদন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আওতায় এলে উৎপাদন যে আরো বৃদ্ধি পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
উন্নততর জাত ও প্রযুক্তি যতদ্রুত সম্ভব কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। যেসব কৃষিযন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় সেগুলো যাতে দেশেই তৈরি করা যায় তার ব্যবস্থা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিতে হবে। এখন সরকার কৃষিযন্ত্রপাতিতে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। প্রয়োজনে এই ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। জাতীয় স্বার্থেই কৃষিকে বাঁচাতে হবে । কৃষি বাচঁলে দেশ বাচঁবে, দেশ বাচঁলে মানুষ বাচঁবে।
রিফাত রাজ: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]