মহানবী (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে এলেন। তখন মদীনাবাসীকে তিনি দু’টো দিবসে আনন্দ উল্লাস উৎসব করতে দেখেন। পারসিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমা রজনীতে ‘মেহেরজান’ আর হেমন্তের পূর্ণিমা রজনীতে ‘নাওরোজ’ নামক উৎসবে মদীনাবাসীকে এমন সব আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতে দেখলেন, যা সুস্থ বিবেকের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ বিশেষ দিনে তোমাদের আনন্দ উল্লাসের কারণ কি? মদীনার নওমুসলিমগণ বললেন, ‘আমরা জাহেলী যুগ হতে এ দু’টি দিন এভাবে পালন করে আসছি।’
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের আনন্দ উৎসবের জন্য এর চেয়েও দুটো উত্তম দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হল ‘ঈদুল ফিতর’ অন্যটি ঈদুল আযহা’। তোমরা পবিত্রতার সাথে এ দু’টি উৎসব পালন করবে।’ –(আবু দাউদ ও নাসায়ী)।
মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘লি-কুল্লিকাওমিন ঈদ-হাজা ঈদুন’ অর্থাৎ প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব খুশির উৎসব রয়েছে। আমাদের জন্য এ দুটো হলো সেই খুশির উৎসব। ইসলামের ইতিহাসে মহানবী (সা.)-এর জীবনে দ্বিতীয় হিজরীতে এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ১ শাওয়াল ঈদুল ফিতর আর ১০ জিলহজ্জ ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ প্রথম পালিত হয়। এ হিসেবে মুসলিম মিল্লাতের এবারের ঈদুল ফিতর হল ১৪৩৯তম।
‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ, উৎসব পর্ব। আর ফিতর অর্থ ভাঙ্গা, চিড়, ভাঙ্গন। এদিক হতে ঈদুল ফিতর অর্থ হলো রোজা ভাঙার পর্ব বা উৎসব। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আল্লাহর নির্দেশে আমরা এদিনে রোজা ভঙ্গ করি বলে এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর।
ঈদের আর একটি অর্থ ফিরে আসা, বার বার আসা। আর ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা। যেহেতু ঈদুল ফিতর প্রতি বছরই যথাসময়ে আমাদের মাঝে বার বার ফিরে আসে। এ দিনটিতে আমরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগে লিপ্ত না হওয়ার যে বিধান ছিল তা ভঙ্গ করি বলে এদিনটিকে ঈদুল ফিতর বলা হয়েছে।
ইসলাম কোন অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্ম নয়। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ঈদ একটি ইবাদতের নাম। আল্লাহর হুকুমে নির্ধারিত সীমার মধ্যে আনন্দ, উৎসব ও নির্মল চিত্তবিনোদন করার বিধান রয়েছে। রাসূল (সা.) এদিন সম্পর্কে বলেছেন, এ দিনটিতে তোমরা রোজা রেখো না। এ দিনটি তোমাদের জন্য আনন্দ উৎসবের দিন। খাওয়া, পান করা আর পরিবার-পরিজনদের সাথে আনন্দ-উৎসব করার দিন। আল্লাহকে স্মরণ করার দিন। [মুসনাদ আহমদ]।
এ দিনটি আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কিন্তু আমরা অনেকেই এ দিনটিকে নিয়ামত হিসাবে গ্রহণ করি না। এ দিনে এমন অনেক কাজ রয়েছে যা আমাদের জন্য ইবাদত। রাসূল (সা.) স্বয়ং যে আমলগুলো করেছেন। আবার এমন বহু কাজ আছে যা বর্জন করা আমাদের জন্য আবশ্যক। নিচে ঈদের দিনে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো-
ঈদুল ফিতরে করণীয় আমল সমূহ
গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা সুন্নাত,
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াতা ইমাম মালিক)।
ঈদের দিনে আরেকটি করণীয় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা।
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর একটি সুন্দর জুব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুময়ার দিনে পরিধান করতেন।
(মুসনাদ বায়হাকী)।
ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, মুসলিম প-িতগণ প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। (আল-মুগনী)।
(২) হালকা কিছু খাওয়া : ঈদুল ফিতরে নামাযে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। (সহি আল-বুখারী)।
(৩) সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা :
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ পাক সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যা একদিকে অশ্লীল, বেহুদা কথা ও কাজ দ্বারা কলুষিত রোজাকে পবিত্র করে। অন্যদিকে অসহায়-নিঃস্ব গরীবকে খাদ্যদানে সহায়তা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি সাদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করবে। তা কবুল করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে। তা সাধারণ সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ; ইবনে মাজাহ)।
(৪) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : ঈদের নামায আদায়ের জন্য তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যাওয়া উচিত। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত।
(৫) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা : ঈদের আরেকটি সুন্নাত হলো এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। এতে দীর্ঘ হাঁটা এবং বেশি মানুষের সাথে মিশার উপকারিতা রয়েছে। ইবনু জুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এক রাস্তা দিয়ে ঈদের নামাযে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (সহী আল বুখারী)। এটা এ জন্য যে, যাতে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)।
(৬) তাকবীর বলা : তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। কুরআনে এসেছে, তোমরা (রমযানের) রোজা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। [সূরা আল-বাকারা: ১৮৫]
ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। ইবনে উমার (রা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন।
তাকবীর বলতে হবে এভাবে : ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
(৭) ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে নামায
ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কোন সালাত আদায় করা ঠিক নয়। রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ ঈদগাহে যাওয়ার পর নামাযের আগে বা পরে কোন নামায আদায় করতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) ঈদের দিন বের হয়ে শুধুমাত্র ঈদের দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে নফল বা অতিরিক্ত কোন নামায আদায় করতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)।
সুতরাং ঈদের দিন সালাতুল ইশরাক না পড়া চাই,
মহানবী (সা.) খুৎবাহর আগে ঈদের সালাত আদায় করতেন। (সহি বুখারী ও সহি মুসলিম)
(৮) ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় : ঈদের দিনে পারস্পরিক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা ঈদের আরেকটি সুন্নাত। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিনিময়ের মাধ্যমে সকলের মাঝে সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা গড়ে উঠে। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন-ক) রাসূলে করীম (সা.)-এর সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন যখন পরস্পর মিলিত হতেন তখন একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’ অর্থ আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন। (ফতহুল বারী)।
খ) ‘ঈদ মুবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লেখিত বাক্য দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবীগণ এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া রয়েছে।
৯. ঈদের সালাত আদায়, খুতবা শ্রবণ ও দু’আ করা
জামাতের সাথে ঈদের সালাত আদায় করতে হবে। ঈদের সালাতের পর ইমাম সাহেব খুতবাহ প্রদান করবেন। এবং মুসল্লিগণ তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবেন। এটি পালন করা ওয়াজিব, ঈদুল ফিতর হলো মুসলিম উম্মাহর মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অনুশীলনের সমাপনী উৎসব, খুতবাহ অর্থ ভাষণ, বক্তৃতা। খুতবাহতে মুসলিম উম্মাহর দিকনির্দেশনামূলক বাণী ও সকলের কল্যাণের জন্য দু’আ থাকা বাঞ্ছনীয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যে তাকওয়ার গুণ ও বহুবিধ মনুষ্যত্বের গুণাবলি অর্জিত হয়েছে, তা বাকী এগারো মাসে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটানো উচিত।
যে বা যারা খুতবাহ না শোনে চলে যায় তাদের ঈদের নামাজ টা অপূর্নাংগ থেকে যায়।
১০. ঈদের মাঠে নারী, পুরুষ ও শিশুদের গমন : রাসূলের (সা.) যুগে নারী, পুরুষ, বালক-বালিকা, শিশু, মুকিম, মুসাফির সকলকে ঈদগাহে গমন করার জন্য গুরুত্ব সহকারে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) তার স্ত্রী ও মেয়েদেরকে উভয় ঈদে ঈদগাহের দিকে পাঠাতেন। যাতে মুসলমানদের শানশত্তকত এবং সংখ্যাধিক্য প্রকাশ পেতে পারে। উম্মে আতিয়াহ (রা.) থেকে সহীহ হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের নারীদের ঈদগাহে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি ঋতুবতী নারী ও প্রসূতিদেরকেও ঈদগাহে গিয়ে মুসলমানদের দোয়ায় শামিল হতে বলেছেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) এর সাথে ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহার দিন বের হলাম। তারপর তিনি নামাজ পড়ালেন ও খুতবা দিলেন। তারপর মহিলাদের কাছে এলেন, তাদেরকে সদুপদেশ দিলেন, আখেরাত স্মরণ করালেন এবং সদকা বা দান করার আদেশ দিলেন। (বুখারী)।
১১। যাদের জন্য ঈদের নামায পড়া বৈধ : পুরুষ, মহিলা, শিশু, মুকীম, মুসাফির সকলেরই ঈদের নামায পড়া বৈধ। মসজিদে বা ঈদগাহে যেখানেই পড়ুক। জামায়াতের সাথে ঈদের নামায ছুটে গেছে এমন ব্যক্তি দু’রাকাত নামায পড়ে নেবে। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন : ঈদের নামায ছুটে গেলে দু’রাকাত পড়ে নেবে। অনুরূপভাবে তা নারীদের জন্যও প্রযোজ্য।
ঈদের দিনে খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন : ঈদের দিন বৈধ খেলা-ধুলা ও নির্দোষ চিত্ত-বিনোদনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেছেন, ঈদের দিন হাবশীরা রাসূল (সা.) এর নিকট খেলাধুলা করতো। আমি তার ঘাড়ের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে তা দেখার চেষ্টা করছিলাম, তিনি তার ঘাড় নীচু করলেন। ফলে আমি তাঁর ঘাড়ের উপর দিয়ে দেখলাম এবং তৃপ্ত হয়ে ফিরে গেলাম। (আহম্মদ, বুখারী, মুসলিম)।
হাদিসে বর্ণিত আছে, একবার নবী করিম (সা.) নিজের ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন হযরত আয়েশা (রা.) এর পাশে বসে প্রতিবেশীদের দু’টি বালিকা গান করছে। সে গান কোন অশ্লীল ছিল না। বরং বুআস, যুদ্ধের কাহিনী সম্বলিত ছিল। রাসূল (সা.) তাদের এই বিনোদনের কোন গুরুত্ব দেননি। বরং ঘরের এক কোণে গিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে নীরবে শুয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত আবু বকর (রা.) প্রবেশ করে এ গানের আসর দেখে রেগে যান এবং ধমক দিয়ে বললেন, কি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ঘরে এই শয়তানী অনুষ্ঠান। তার কণ্ঠস্বর শুনে নবী করিম (সা.) নিজের মুখ মন্ডলের কাপড় সরালেন এবং বললেন, ‘এদের ছেড়ে দাও। প্রত্যেক জাতির একটা খুশির দিন রয়েছে। আর আজ আমাদের খুশির দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এ কথায় হযরত আবুবকর (রা.) চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু গানের আসর আর অব্যাহত থাকল না। তিনি পীঠ ফিরাতেই হযরত আয়েশা (রা.) মেয়ে দু’টিকে চোখের ইশারা করল এবং তারা নিজেদের ঘরে চলে গেল।
নবীর যুগে ঈদ উৎসব ছিল অত্যন্ত পূত পবিত্র, মার্জিত ও নোংরামি বর্জিত। কিন্তু পরবর্তীতে হালকা আমোদ-প্রমোদের ছত্রছায়ায় ঈদের অনুষ্ঠান বিকৃত ও অনেক ক্ষেত্রে অশ্লীল হয়ে পড়েছে।
ঈদের দিনে আরো কিছু করণীয় :
ক) নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে সময় অতিবাহিত করা এবং উত্তম উপদেশ দেয়া। যা পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।
খ) আত্মীয়-স্বজন, মাতা-পিতার সাথে দেখা করা ও খোঁজ-খবর নেয়া।
গ) পাড়া প্রতিবেশী, গরীব-অসহায় নির্বিশেষে সকলের সাথে মিশা, তাদের খোঁজ খবর নেয়া ও কুশল বিনিময় করা।
ঘ) সম্ভব হলে পরস্পরকে দাওয়াত দেয়া এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা।
ঙ) ঝগড়া, বিবাদ, কলহ, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে সবার সাথে মোলাকাত আলিঙ্গন ও একাকার হয়ে যাওয়া।
চ) জীবন মানে সময়ের যোগফল। অর্থহীন কাজে সময় ব্যয় করা ও টিভির অনুষ্ঠান দেখার নামে মূল্যবান জীবন শেষ করা থেকে বিরত থাকা ও বিরত রাখা। বিশেষ করে নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে।
ঈদে দিনের বর্জনীয় আমল সমূহ
বর্তমানে মুসলিম মিল্লাতের অনেক পদস্খলন হয়েছে, চারিত্রিক অনেক অবক্ষয় ঘটেছে। ঈদের দিনে অনেক বর্জনীয় কাজ করা হচ্ছে। বর্জনীয় আমলগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
১। বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন : বর্তমান কালে বিজাতীয় আদর্শ অনুসরণে বিজাতীয় আচরণ মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজস্ব সংস্কৃতি, আদর্শ উপেক্ষা করে পোশাক পরিচ্ছদে, চালচলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (সহিহ আবু দাউদ)।
২। জুয়া, মদ, জেনা ব্যভিচার ও মাদকদ্রব্য সেবন : আজকাল ঈদের দিনে আনন্দ ফুর্তির নামে কবিরাহ গুণাহর কাজ হতে দেখা যায়। অশ্লীল গান-বাজনার জমজমাট আসর বসে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে।” (সহীহ বুখারী)।
এদিনে জুয়ার আসর, মদ ও মাদকদ্রব্যের ছড়াছড়ি, ব্যাপকভাবে চলে। এগুলো সমাজকে কলুষিত ও ধ্বংস করছে।
৩। নারী-পুরুষ একে অপরের বেশ ধারণ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর বেশ ধারণ ও নারী পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। রাসূল (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিশপ্ত করেছেন। (আবু দাউদ)।
৪। নারীদের অশালীন পোশাকে রাস্তায় বের হওয়া : খোলামেলা, অশালীন পোশাকে, নগ্ন, ও অর্ধনগ্ন পোশাকে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন, একদল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম)।
৫। নারীদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ : প্রয়োজনে ও পর্দার আড়ালে নারীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে। কিন্তু গাইর মহররমা তথা শরিয়ত অনুমোদিত নয় এমন নিকট আত্মীয় নারীদের সাথে অবাধে দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে না।
আমরা যদি ঈদকে ইবাদত হিসাবে পালন করতে চাই তবে অবশ্যই আমাদেরকে উল্লেখিত বিষয়সমূহ মেনে চলতে হবে।
আল্লাহ পাক আমাদের কে দ্বীনের উপর চলার তাওফিক দান করুন – আমিন,
Some text
ক্যাটাগরি: ধর্ম
[sharethis-inline-buttons]