এক সময় গ্রামে কলেরার মহামারী দেখা দিত। কলেরার লক্ষণ হলো বমি, জলের মতো মুহূর্মহু প্রচুর পাতলা পায়খানা।
সঙ্গে পেটব্যথা।
কলেরায় জলাভাবে শারীরিক দৌর্বল্য এবং চিকিৎসা না হলে শেষপর্যন্ত মৃত্যু হয়।কোথাও কলেরা দেখা দিলে গ্রামগুলো নিঝুম হয়ে ওঠত।
এ পাড়া, ও পাড়া থেকে ভেসে আসতো হঠাৎ করুণ বিলাপের সুর।
উত্তর পাড়ায় কারো পেট ব্যথা শুরু হয়েছে।
ও পাড়ায় কেউ বমি করেছে।
ঐ গ্রামে কলেরা দেহা দিছে।
দক্ষিণ পাড়ায় দুই দিনে সাতজনের কলেরা অইছে।
ছয়জন মইররা গেছে।
নামা পাড়ায়ও দেহা দিছে কাইল।
সংবাদ আসতো বাতাসে উড়ে।
প্রতিটি সংবাদেই শিউরে ওঠতো সারা গ্রাম।
গ্রামের শিশুরা।
মেয়েরা।
যুবকেরা।
বুড়োরা।
একটা অলৌকিক ভয় ছড়িয়ে পড়তো চতুর্দিকে।
ঘরের আওয়াজ পাশের ঘর থেকে শোনা যেত না।
চলত ফিসফিসে আলাপ।
কোনো ঘর থেকে কান্নার সুর ভেসে আসলেই পাশের বাড়ি থেকে আরেকজন উঁচুস্বরে চিৎকার করে প্রশ্ন করতো ‘কী অ-ই-ছে রে ?
আরেকজন জবাব দিত, ক-লে-রা।
মইজ্যা মইররা গ্যাছে।
সে রাতে গ্রামের কেউ আর ঘুমাতো না।
কিছুক্ষণ পর বাড়ির সামনে থেকে ডাক আসতো- চাচা বাড়িত আছুইন ?
বাতি নেভানো অন্ধকার ঘর থেকে জবাব আসতো- কেডা ?
– আমি মইজ্যার চাচা।
– অত রাইতে কী অইছে ?
– মইজ্যা ম’রে গেছে।
– আগরবাতি, গোলাপজল আর কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা কর গিয়া। আমি বাঁশ কাইটা লইয়া আইতাছি।
গ্রামের দুই চারজন ময়-মুরুব্বি নিয়া খোঁড়া হতো ছোট্ট কবর।
একমুঠো কবর।
বিহান হওয়ার আগেই কোনোরকম জানাযা দিয়ে লাশ নামিয়ে দেওয়া হতো সেই কবরে।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]