ঢাকা: আজ (বৃহস্পতিবার ১৯ মে) সকাল ৬:৩০ মিনিটে রাজধানীর সদরঘাট থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলাম।
দাড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন রিকশাচালকদের মধ্যে চোখ পরলো এক বৃদ্ধের দিকে। অন্য কোনো চালকের সাথে আর কথা না বলেই চলে গেলাম সেই বৃদ্ধ রিকশা চালকের কাছে। জিজ্ঞেস করলাম: চাচা! যাত্রাবাড়ী যাবেন? বললো, হ্যাঁ। বললাম, ভাড়া কতো দিতে হবে? বললেন ১০০৳ দিয়েন। আর কিছু না বলেই রিকশায় উঠলাম। উনি চালাতে শুরু করলো, অন্যান্য চালকের সাথে মিল রেখে জোরে চালাতে চাইলেও কিন্তু পারছেন না জোরে চালাতে। বললাম চাচা আপনার জোরে চালাতে হবেনা আস্তে আস্তেই চালান আমার কোন তারা নেই। কতটুকু যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম চাচা আপনার বাসা কোথায়? বললো: দেশের বাড়ী মাদারীপুর কিন্তু থাকি গেন্ডারিয়ায়।
বৃদ্ধের চেহারা দেখে আর মুখের কথা শুনে যে কেউরই চোখে পানি চলে আসাটাই স্বাভাবিক।
তার বয়স, ছেলে/মেয়ে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও এই বয়সেও রিকশা চালানোর কারন জানতে চাইলাম: তিনি বললেন, আমার বয়স দুমাস আগে (৮৮)’বছর পূর্ণ হয়েছে। আমার ছেলে নেই আছে চার মেয়ে ও স্ত্রী। তিন(৩) মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছি, বাকী এক মেয়ে (আই.এ) পড়ে তারে এখনো বিয়ে দিতে পারিনাই।
পরে জিজ্ঞেস করলাম: মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার খরচ চালান কিভাবে? তিনি বললেন, যে তিন মেয়ে বিয়ে দিছি তাদের জামাইদের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো না, তারপরও মাঝেমধ্যে ছোটো মেয়ের পড়াশোনার খরচের জন্য তারা কিছু দেয়, কিন্তু তাতে কি আর হয়রে বাপ!! আমারতো সংসারও আছে।
এরমধ্যে কোনো উপায় না পেয়ে বিশ হাজার টাকার একটা লোন নিয়েছি। সপ্তাহে ছয়শত টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। আজকেও আবার কিস্তির তারিখ। তারপর জানতে চাইলাম: দৈনিক আয় কত টাকা? কাঁদা কন্ঠে বললো,বাবারে বয়স বেশি দেখে কেউ আমার রিকশায় উঠতে চায় না। আর আমিও সারাদিন গাড়ি চালাতে পারিনা, একবেলাই গাড়ি চালাই। যোহর নামাজের আগে বেলা বারোটা-সাড়ে বারোটার দিকেই বাসায় চলে যাই। তাইলে এবার বুঝেন আয়’ই আর কত?
কথাবার্তা বলার মধ্য দিয়েই পৌছালাম গন্তব্যে (যাত্রাবাড়ী টনি টাওয়ার)। রিকশা থেকে নেমে- তিনি ভাড়া যা চেয়েছেন তাই দিলাম, সাথে এক সপ্তাহের কিস্তির টাকাও। নাস্তা করাতে চেয়েছিলাম। বললো, না করবো না! সকালে নাস্তা করেই বাসা থেকে বের হই।
টাকা পেয়ে, কষ্টের মাঝে প্রাকৃতিক হাসি আর আনন্দ যে কি তাই দেখতে পেলাম (৮৮)বছর বয়সের এ বৃদ্ধের মুখে। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং আমার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন।
বৃদ্ধের এ আনন্দ ও প্রাকৃতিক হাসি স্মরণ করিয়ে দিলো- রাসুল (স:)’র হাদিস: ‘তাই উত্তম দান, যা দাতার নিকট সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’
পরে স্মৃতি হিসিবে তার সাথে একটি ছবি তুলতে চাইলে, গলায় থাকা গামছাটি সরিয়ে সুন্দরভাবে দাড়ান তিনি। অতঃপর একটি ছবি তুলি, দোয়া চেয়ে বিদায় নেই।
প্রিয় পাঠক!! বৃদ্ধ লোকটি সম্পর্কিত উপরোক্ত লিখাগুলো পাবলিশ আমি আমার পাবলিসিটির জন্য করিনি, করেছি শুধুমাত্র (৮৮)” বছর বয়সেও যে এক অসহায় বাবা জীবনযুদ্ধ ও সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন, তা বোঝানোর জন্যই।
মনে রাখবেন!! সত্যিই একটি ভালো কাজ অনেক গুলো ভালো কাজের জন্ম দিতে পারে। ধন্যবাদ।
হাসনাইন আহমেদ হাওলাদার,(সংবাদকর্মী) ভোলা।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]