সড়কে শৃঙ্খলা এবং দুর্ঘটনার হার কমাতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু তারপরও কিছুতেই সড়কে মৃত্যুর মৃত্যুর মিছিল থামছে না। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই সারাদেশে ৩৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৪৫ জন। আহত হয়েছেন ৮৩৪ জন।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’। সাতটি জাতীয় দৈনিক, চারটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এক মাসে সারাদেশে মোট ৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৩ জন। যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এছাড়া দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছেন ১২২ জন, বাসযাত্রী ৩৩ জন, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস যাত্রী ২৮ জন, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান যাত্রী ২৪ জন, তিন চাকার বাহনের যাত্রী ১০৬ জন। বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২৯ জন।
এসব দুর্ঘটনায় ৩১৭ জন কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছর। যা মোট নিহতের ৭১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া ৩৯ জন শিশুসহ ৮১ জন নারী নিহত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, জানুয়ারি মাসে সারাদেশে হওয়া সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৪টি অর্থাৎ ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে এবং ১৫৬টি অর্থাৎ ৪৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ হয়েছে মহাসড়কগুলোতে।
এসব দুর্ঘটনার ধরন পর্যবেক্ষণ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, চলতি বছরের শুরুতে হওয়া দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৬১টি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বা যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৯টি। সড়কে অন্য যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৬টি। সড়কে পথচারী বা ছোট যানবাহন চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১২২টি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এসব দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের সংখ্যা ৪৬৯টি। এর মধ্যে ট্রাক ও পিকআপ ৯৭টি, বাস ৭০টি, কাভার্ড ভ্যান ১৬টি, লরি ও ট্রাক্টর ২৩টি, মোটরসাইকেল ৮৯টি, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ৩৩টি, বাইসাইকেল ১৬টি, সিএনজি ও ইজিবাইক ৩৩টি ও নসিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, আলমসাধু ৮৭টি। এছাড়া একটি ট্রলি, একটি পাওয়ার টিলার ও একটি পুলিশের জিপ জানুয়ারি মাসে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এর বাইরে রেল দুর্ঘটনা ১১টি এবং নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮টি। এসব দুর্ঘটনায় যথাক্রমে ৯ জন ও ৮ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল, চালকের অদক্ষতা, চালকের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দেশের দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটি এর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছে।
সংগঠনটি বেশ কয়েকটি সুপারিশও করেছে। সেগুলো হচ্ছে-
- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো।
- চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট করা।
- বিআরটি এর সক্ষমতা বাড়ানো।
- সড়কে পরিবহন মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে যাত্রী ও পথচারীদের জন্য বাধাহীন ট্রাফিক আইন নিশ্চিত করা।
- মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এসব যানবাহনের জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করা।
- পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা।
- গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।
- রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়কের ওপর চাপ কমানো।
- টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করা।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]