জয়পুরহাট জালার কালাই পৌর শহর এলাকার এক ঋণগ্রহিতা ও তার পরিবারকে মারধরের অভিযোগ ওঠেছে গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) নামে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ঋণগ্রাহিতা রহেদুল ইসলাম, তার স্ত্রী মনিষা বেগম এবং মা মোমেনা বেগম। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জাননিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রহেদুল গাক থেকে ২৬ হাজার টাকা ঋণ নেয়। এর মধ্যে তার বড় ভাই ও অন্যান্যদের নামে কিস্তি বকেয়া দেখিয়ে ২২ হাজার টাকা কেটে নিয়ে ৪ হাজার টাকা তার হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপরও সব মেনে নিয়ে ভাইয়ের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ৬৫০ টাকা কিস্তি দিয়ে আসছিল। কিন্তু সাংসারিক অভাব অনটনের কারনে গত দেড় মাস কিস্তি দিতে না পেরে গাক কর্মকর্তাদের কাছে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত টাকা পরিশোধের সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা তার কোন কথা না শুনে ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য কালাই পৌর শহরের সোনালী ব্যাংক এলাকায় তার ভাড়া বাসায় যান গাক-এর উপজেলা ব্যবস্থাপক আব্দুল ওহাব, মাঠকর্মী আনছার আলীসহ চার কর্মী। সেখানে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা রহেদুল ইসলামকে মেঝেতে ফেলে মারধর শুরু করেন। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তার মা মোমেনা বেগম ও স্ত্রী মনিষা বেগমকেও তারা মারপিট করেন। এক পর্যায়ে তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে প্রতিবেশিরা উত্তেজিত হলে ব্যবস্থাপক আব্দুল ওহাব তার কর্মীদের নিয়ে উপজেলার ডাকবাংলোতে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
আহত রহেদুল বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমার নামে ২৬ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হলেও বড় ভাই এবং অন্য সদস্যদের বকেয়া দেখিয়ে ২২ হাজার টাকা কেটে নিয়েছেন। তারপরও আমি ৬৫০ টাকা হারে সাপ্তাহিক কিস্তি দিয়েছি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে গত দেড় মাস কিস্তি দিতে পারিনি। ফেব্রুয়ারী মাসটা সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার কোন কথা না শোনে তারা আমাকে মারধর করে। আমাকে বাঁচাতে এসে আমার মা ও স্ত্রীও আহত হয়।
রহেদুলের মা মোমেনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘মাত্র ৬৫০ টাকা কিস্তির জন্য ওরা আমাদের নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। অনেক হাত-পা ধরেছি তারা কোনো কথায়ই শোনেনি।’
রহেদুলের ভাবি ফাতেমা বেগম বলেন, ‘সমস্যার কারণে রহেদুল কিস্তির টাকা সময় মতো পরিশোধ করতে পারেনি। এজন্য সময় চেয়েছিলো। কিন্তু গ্যাক সংস্থার লোকজন বাড়িতে এসে রহেদুলকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং মারধর করেন। আমরা এর বিচার চাই।’
গাক’র শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল ওহাব বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘রহেদুল ঋণ নিয়ে টাকা না দিয়ে কয়েক মাস থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার খোঁজ পেয়ে আমরা দু’জন তার বাড়িতে কথা বলতে যাই। সেখানে গিয়ে উল্টো তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছি। আমরা তাকে মারপিট করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে রহেদুল এবং তার পরিবার ঋণের টাকা না দেওয়ার ফন্দি এঁটেছে। বরং প্রতিবেশীদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা দ্রুত পালিয়ে রক্ষা পেয়েছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নুর আলম রিকো বলেন, ‘আহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।’
কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শফিউল বারী রাসেল, জয়পুরহাট থেকে।
Some text
ক্যাটাগরি: খবর, নাগরিক সাংবাদিকতা
[sharethis-inline-buttons]