বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৪৫, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

জয়পুরহাটের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে হালনাগাদ তথ্য নেই: ভোগান্তিতে জনসাধারণ

৫৮৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

জয়পুরহাটের অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের ওয়বসাইটগুলো হালনাগাদ তথ্য না থাকায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। সেই সাথে ভুলে ভরা এসব ওয়েবসাইট থেকে সুবিধাভোগী নাগরিকরা পাচ্ছেন না সঠিক তথ্য। কেবলমাত্র জেলার সরকারি অফিসের ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঘেটে এমন দৃশ্য দেখা যায়। বিভিন্ন উপজেলার ওয়েবসাইটের চিত্রও একই রকম।

দেখা গেছে, জেলা প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত ৭০টি সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইট দীর্ঘদিন ধরে আপডেট না হওয়ায় বাস্তবতার সাথে এর তথ্যের কোন মিল নেই। জয়পুরহাট জেলা তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপডেট তথ্য । তার বদলে পাওয়া যাচ্ছে বদলি হওয়া এবং চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম।

জেলা পুলিশের তথ্য বাতায়ন সাইটটি শেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৬ মে। ২০১৯ সালের ২০ জুন পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বদলি হয়ে অন্য জেলায় চলে গেলেও তার নাম  এখনো রয়ে গেছে। নেই বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবিবের নাম।

একই সাইটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বেলায়েত হোসেনের নাম ও ছবি থাকলেও তিনি ২০১৮ সালের ৩০ মে রাজশাহী রেঞ্জ অফিসে পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি হয়েছেন। ২০১৮ সালের ২৪ জুন  উজ্জল কুমার রায় তার স্থলাভিসিক্ত হন। তিনিও ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর বদলি হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে এই পদে চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) হিসেবে যোগদান করেন তরিকুল ইসলাম। কিন্তু এখনো তার নামটি ওয়েবসাইটে সন্নিবেশিত করা হয়নি। ফলে বিভ্রান্তিতে সাধারণ মানুষ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অপর গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর সাইটটিতে শুধুমাত্র একজন কোম্পানি অধিনায়কের মোবাইল নম্বর ছাড়া কোন তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি। এই সাইটটি সর্বশেষ হাল নাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর।

বিজিবি’র ওয়েবসাইটটিতে কোনো কর্মকর্তা নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর নেই। আর এর সর্বশেষ হালনাগাদ কবে হয়েছে, তার দিনক্ষণও উল্লেখ নেই।  জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের ওয়েব সাইটটিতে দেখা যায়, জেলা কমান্ডেন্ট হিসেবে জানে আলম সুফিয়ানের নাম, ছবি ও মোবাইল নম্বর রয়েছে। অথচ তিনি বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পর তার পদে সঞ্জয় চৌধুরী দায়িত্ব পালন শেষে তিনিও অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে এই পদে আশরাফুজ্জামান দায়িত্ব পালন করলেও তার নাম ও ছবি এখনো সংযোজন করা হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ওয়েবসাইটে কর্মকর্তাদের তালিকাটি রয়েছে এলোমেলো অবস্থায়। সেখানে প্রথমেই দেখানো হয়েছে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল কবীরের নাম, পরে দেখানো হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামানের নাম। আবার সেখানেই তৃতীয় অবস্থানে দেখানো হয়েছে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল কবিরের নাম। অথচ এর শেষ হাল নাগাদ দেখানো হচ্ছে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর।

স্বাস্থ্য বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের’ ওয়েবসাইটটিতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডা. এফএম মুছা আল-মানছুরের নাম দেখানো হলেও অনেক আগেই এই হাসপাতালে যোগদান করেছেন ডা. আবুল হোসেন। এছাড়াও ডা. পারভীন আক্তার, ডা. সাইদুর রহমান, ডা. শহীদ হোসেনসহ অধিকাংশ ডাক্তার অবসর কিংবা বদলি জনিত কারণে অন্য হাসপাতালে যোগদান করলেও এখনো তাদের ছবি, নাম ও মোবাইল নম্বর শোভা পাচ্ছে। এর শেষ হালনাগাদ দেখানো হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর।

সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম মাধ্যম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাইটটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম সঠিকভাবেই উপস্থাপন করা হলেও জেলা কালচারাল অফিসার মাহতাব হোসেনের ছবি ও মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করা হয়নি। এর শেষ হালনাগাদ করা হয় ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। ।

২০১৯ সালের ৭ আগস্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের শেষ হালনাগাদ দেখানো হলেও এই সাইটটিতে উপ-পরিচালক হিসেবে দেখানো হয়েছে সেলিম শাহ্কে। যিনি অনেক আগেই অন্যত্র বদলি হয়ে চাকরি করছেন। জেলা তথ্য অফিসের সাইটে প্রবেশ করে দেখা যায়, তারা শেষ হাল নাগাদ করেছেন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে। জেলা ক্রীড়া অফিস তাদের সাইট শেষ হাল নাগাদ করেছে ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই, জেলা বিএডিসি তাদের সাইট শেষ হাল নাগাদ করেছে ২০১৮ সালের ১৪ মে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের সাইট শেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ৮ মে, বিটিসিএলের শেষ হাল নাগাদ হয়েছে ২০১৮ সালের ৭ মে, রেলওয়ের শেষ হালনাগাদ রয়েছে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর, জেলা নির্বাচন অফিসের ওয়েব সাইটটি হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই, জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ের শেষ হালনাগাদ হয়েছে চলতি বছরের ১ অক্টোবর।  এছাড়াও ডাক বিভাগের সাইটটিতে হাল নাগাদের কোনো তারিখই উল্লেখ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের তথ্য বাতায়ন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্প হতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে একাধিকবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও এসব অফিসের সাইটগুলো আপডেট করা হচ্ছে না। ফলে সহজেই তথ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জয়পুরহাটবাসী।

জেলা প্রশাসনের আইসিটি বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার মোনাববর হোসেন বলেন, জেলার সবকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটগুলো হালনাগাদ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দেওয়া হবে।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের হলরুমে ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক এক সেমিনারে জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চন্দ্র রায় ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ইশরাত ফারজানা বলেন-, এটি খুবই হতাশাজনক তথ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস করেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের ওয়েব সাইটগুলো হালনাগাদ না করেন, তাহলে জনগণ প্রত্যাশা অনুযায়ী তথ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।

শফিউল বারী রাসেল, জয়পুরহাট থেকে

 

Some text

ক্যাটাগরি: খবর, নাগরিক সাংবাদিকতা

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি